Skip to content

সূরা বাকারার ৮, ৯ ও ১০ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

সূরা বাকারার ৮, ৯ ও ১০ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন, এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সূরা বাকারার ৮ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবেন; সূরা বাকারার ৯ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবেন; সূরা বাকারার ১০ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ৮, ৯ ও ১০ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-

অনুবাদ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

৮.وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ

ওয়া মিনান্না-ছি মাইঁ ইয়াকূলু আ-মান্না- বিল্লা-হি ওয়া বিলইয়াওমিল আ-খিরি ওয়ামা-হুম বিমু’মিনীন।

আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে- যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান এনেছি; কিন্তু তারা মু’মিন নয়।
৯.يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ

ইউখা-দি‘ঊনাল্লা-হা ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ ওয়ামা- ইয়াখদা‘ঊনা ইল্লাআনফুছাহুম ওয়ামাইয়াশ‘উরূন।

তারা আল্লাহ এবং মুমিনদেরকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না; কিন্তু তারা বুঝতে পারে না।
১০.فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۢ بِمَا كَانُوا۟ يَكْذِبُونَ

ফী কুলূবিহিম মারাদুন ফাঝা-দাহুমুল্লা-হু মারাদাওূঁ ওয়ালাহুম ‘আযা-বুন আলীমুম বিমা- কা-নূ ইয়াকযিবূন।

তাদের অন্তঃকরণ ব্যাধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুত তাদের মিথ্যাচারের দরুন তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।

ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

৮নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

ব্যাখ্যা

এক শ্রেণির মানুষ এমন আছে, যারা প্রকাশ্যভাবে নিজদেরকে আল্লাহ, রাসূল ও আখিরাতে বিশ্বাসী বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু অন্তরে অন্তরে ঘোর অবিশ্বাস ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। মহান আল্লাহ মুসলিমগণকে তাদের হীনচক্রান্ত শত্রুতা হতে সতর্ক থাকার জন্য তাদের প্রকৃত পরিচয় ও স্বরূপ উন্মোচন করে দিয়ে ঘোষণা করেন- তারা আদৌ মুমিন নয়।

See also  সূরা বাকারার ১১ ও ১২ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

▣ মুনাফিকরা মুসলিমদের ঘোর শত্রু। তারা মুখে ইসলামের কথা বলে মুসলিমদের ভন্ড দরদী সাজে। কিন্তু অন্তরে মুসলিমদের ধ্বংস কামনা করে।

▣ মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়ে তারা বলে, আমরা ইমান এনেছি; কিন্তু যখন তারা কাফিরদের সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করে তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি। আমরা মুসলিমদের সাথে ধোঁকা ও প্রব না করেছি মাত্র।

▣ আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর কেবল ইমান আনার কথা বললেই চলবে না, ইসলামের সকল মৌলিক বিষয় এবং শাখাপ্রশাখায়ও ইমান আনতে হবে এবং তদনুযায়ী আমল করতে হবে। অন্যথায় মুনাফিক বা কাফির বলেই বিবেচিত হবে।

শিক্ষা

▣ মুখে মুখে ইমান আনলেই প্রকৃত ইমানদার হওয়া যায় না।

▣ ইমানদার হতে হলে ইসলামের সকল বিষয়ের প্রতি ইমান গ্রহণ করতে হবে।

▣ মিথ্যাচার ও কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।

▣ মুনাফিকরা মুসলিম নয় বরং কাফির। এদের থেকে সদা সতর্ক থাকতে হবে।

৯নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

ব্যাখ্যা

মহান আল্লাহ এবং ইমানদার মুসলিমদের সাথে মুনাফিকদের প্রতারণা ও প্রবঞ্চণামূলক আচরণ ও তার পরিণাম সম্পর্কে এ আয়াতে বলা আলোচনা করা হয়েছে।

▣ মুখে মুখে ইমান এনেছি- এ কথা বলে মুনাফিকরা মনে করছে যে, তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদেরকেই নিজেরা ধোঁকার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। তারা ভাবে তাদের মুনাফিকী চক্রান্ত তাদের পক্ষে বুঝি খুবই কল্যাণকর হবে। কিন্তু আসলে এ চাল ও চক্রান্ত তাদের দুনিয়ায় সাময়িক লাভবান করলেও পরকালে তারা নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

▣ মুনাফিক ব্যক্তি কিছু দিনের জন্য হয়ত লোকদেরকে প্রতারিত করে রাখতে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী হতে পারে না।

▣ মুনাফিকরা আখিরাতে পীড়াদায়ক নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি ভোগ করবে।

▣ আসলে আল্লাহকে কেউ ধোঁকা দিতে পারে না। বরং রাসূল (স) ও মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজি করার কারণেই আয়াতে বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করছে।

See also  সূরা বাকারার ১৩ ও ১৪ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

শিক্ষা

▣ মুনাফিক চক্রের সকল প্রকার ধোঁকা ও প্রতারণার জাল ফাঁস হয়ে যাবে এবং তারা লাঞ্ছিত হয়ে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

▣ পরকালে তারা ভীষণ শাস্তির সম্মুখীন হবে।

১০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, মুনাফিকদের অন্তরে কুফর, নিফাক, সংশয়, হিংসা, বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্রের ব্যাধি রয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাদের সেই ব্যাধিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর তাদের মিথ্যাচারের কারণে তাদের জন্য কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।

▣ আয়াতে (مرض) ‘মারাদুন’ অর্থ হলো রোগ-ব্যাধি। ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, এখানে এর দ্বারা সন্দেহ-দ্বিধা বোঝানো হয়েছে।

▣ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুনাফিকদের অন্তর্নিহিত কুফরকে রোগ বলা হয়েছে।

▣ আল্লাহ তাদের রোগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন- এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তারা ইসলাম ও মুসলিমদের উন্নতি ও ক্রমবিকাশ দেখে জ্বলে-পুড়ে ছাই হতে থাকে। আল্লাহ তো দিন দিন তাঁর ইসলাম ধর্মের উন্নতি দিয়েই যাচ্ছেন। ফলে তারা শুধু হিংসায় জ্বলছে। তাদের সেই অন্তরজ্বালা বাড়তেই থাকে।

শিক্ষা 

▣ মুনাফিকী বা কপট বিশ্বাস মারাত্মক রোগ। 

▣ মুনাফিকীর ব্যাধি মানসিক দিক দিয়ে যেমন অশান্তির কারণ, শারীরিক দিক দিয়েও তেমনি ধ্বংসাত্মক।

▣ এ ব্যাধি যার হৃদয়ে স্থান পেয়েছে, সে দুনিয়া ও আখিরাতকে বিনষ্ট করেছে।

▣ মিথ্যাচার তাদের জীবনাচার, তাই পীড়াদায়ক শাস্তি তাদের জন্য অবধারিত।

▣ কাজেই মুনাফিকী বর্জন করে খাঁটি মুসলিম হয়ে জীবন-যাপনের মধ্যেই শান্তি নিহিত। 

সারসংক্ষেপ

মানুষ তিন শ্রেণিভুক্ত- বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী ও কপট বিশ্বাসী। মানুষের মধ্যে ঐ কপট বিশ্বাসীরা খুবই ধূর্ত ও মানব সমাজের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। এদের থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্নে।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts