(১) স্বদেশপ্রেম কী?
স্বদেশ হলো নিজ দেশ বা নিজ মাতৃভূমি। যে দেশে মানুষ জন্মগ্রহণ করে, যে স্থানের আলো-বাতাসে প্রতিপালিত হয় এবং বড় হয়ে উঠে সে স্থানকেই তার স্বদেশ বলা হয়। স্বদেশ হলো কারও জন্মভূমি বা মাতৃভূমি।
স্বদেশের প্রতি মায়া-মমতা, আকর্ষণই হলো স্বদেশপ্রেম।
নিজ দেশ ও মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা মানুষের সহজাত স্বভাব। কেননা মানুষ স্বদেশে জন্ম নেয়, সেখানের আলো-বাতাস গ্রহণ করে, সেখানের ফল-ফসল, খাদ্য-পানীয় দ্বারা তার দেহের পুষ্টি হয়। সেখানকার পরিবেশ, পাহাড়, পর্বত, সাগর-নদী, আবহাওয়া, ঋতুবৈচিত্র্য দেখে সে বড় হয়। মানুষের প্রতি স্বদেশ বা মাতৃভূমির অবদান অনস্বীকার্য।
সুতরাং স্বভাবগতভাবেই স্বদেশের প্রতি এক ধরনের মায়া-মমতা, ভালোবাসা জন্ম নেয়। এ আকর্ষণ মানুষের অন্তর থেকে উৎসারিত। আজীবন মানুষ এ আকর্ষণ ও ভালোবাসা অনুভব করে।
কোনো কারণে দেশ ছেড়ে বাইরে গেলেও দেশপ্রেমের এ অনুভূতি হ্রাস পায় না। বরং স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা সর্বক্ষণই মানবমনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। স্বদেশ ও জন্মভূমির প্রতি এ আকর্ষণই স্বদেশপ্রেম।
(২) স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব
স্বদেশপ্রেম একটি মহৎ মানবিক গুণ। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা ইমানের অঙ্গ।
কথিত আছে, স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ।
প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি নিজ জন্মভূমিকে ভালোবাসেন। দেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেন। অপরদিকে যারা দেশকে ভালোবাসে না, তারা চরম অকৃতজ্ঞ। তারা দেশদ্রোহী ও জঘন্য চরিত্রের অধিকারী। আর এরূপ ব্যক্তিরা কখনো প্রকৃত ধার্মিক ও মুমিন হতে পারে না।
আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ) ছিলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। কাফিরদের অত্যাচারে তিনি প্রিয় জন্মভূমি মক্কা নগরী ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মক্কা ত্যাগকালে তিনি বারবার অশ্রুসজল নয়নে মক্কার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন,
“হে আমার স্বদেশ! তুমি কত সুন্দর। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার নিজ গোত্রের লোকেরা যদি ষড়যন্ত্র না করত, আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।” দেশপ্রেম ও দেশের সেবা করা ইবাদত স্বরূপ। আল্লাহ তায়ালা পরকালে দেশরক্ষীদের বিরাট কল্যাণ দান করবেন। একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দেশরক্ষার জন্য সীমান্ত পাহারায় আল্লাহর রাস্তায় বিনিদ্র রজনী যাপন করা দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম।”
(তিরমিযি)
(৩) স্বদেশপ্রেমের উপায়
স্বদেশপ্রেম বা দেশের প্রতি ভালোবাসা অনুভূতির বিষয়। এটি প্রকাশ্যে দেখা যায় না। নিজের কাজ ও সেবার দ্বারা এ ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়। দেশের স্বার্থে কাজ করার দ্বারা দেশপ্রেম প্রমাণিত হয়।
দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা, জাতীয় উন্নতিতে অবদান রাখা, দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে কাউকে সাহায্য না করা, দেশের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা, দেশের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করা ইত্যাদি দ্বারা দেশকে ভালোবাসা যায়। দেশের মঙ্গলের জন্য জীবন উৎসর্গ করা দেশপ্রেমের সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
দেশের মানুষকে ভালোবাসা, মানুষের জন্য কাজ করাও স্বদেশপ্রেমের পরিচায়ক। দেশের কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য ইত্যাদির উন্নতিতে অবদান রাখার দ্বারাও দেশপ্রেমের নিদর্শন প্রকাশ করা যায়।
আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসব। নিজেকে শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞানে-গুণে সুন্দর ও যোগ্য করে তুলব। অতঃপর দেশের উন্নতির জন্য একযোগে কাজ করব।
দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ হতে দেব না। দেশের সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার করব। অপচয়, অপব্যয় ও বিনষ্ট করব না। দেশের প্রয়োজনে নিজ প্রাণ উৎসর্গ করতেও দ্বিধা বোধ করব না।
[সূত্র: এনসিটিবি]