Skip to content

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও খুলাফায়ে রাশিদুনের জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

হযরত মুহাম্মদ (স.) ও খুলাফায়ে রাশিদুনের জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পৃথিবীতে আল্লাহ তা’য়ালার প্রেরিত ‘সর্বশেষ নবি ও রাসূল’। তিনি বিশ্বনবি। তাঁর শিক্ষা ও জীবনাদর্শ মানব জাতির মুক্তির চিরন্তন ও শাশ্বত সনদ। তাঁর বাস্তব অনুসারী ও খুলাফায়ে রাশিদুন হযরত আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.), হযরত উসমান (রা.) ও হযরত আলী (রা.)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা সকল বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। তাঁর জীবনই মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ।

ইসলামের জন্য খলিফাতু রাসূলিল্লাহ হযরত আবু বকর (রা.)-এর ত্যাগ ও কুরবানি উম্মতের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আমিরুল মুমিনীন হযরত উমর (রা.) ছিলেন মহৎ এবং গুণাবলীতে বিভূষিত মহানবীর (সাঃ) বাস্তব প্রতিচ্ছবি। ন্যায় বিচার ও বীরত্বের জন্য ইসলামের ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন।

হযরত উসমান (রা.)-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সৌজন্যবোধ লজ্জাশীলতা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ। তাঁর শাসনামলে আল-কুরআন গ্রন্থায়ন করা হয়। তাঁর আমলে নৌবাহিনী গঠিত হয়।

হযরত আলী (রা.) ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.)-এর জীবন সঙ্গী।

এখানে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও খুলাফায়ে রাশিদুনের জীবনাদর্শ ও শিক্ষা আমরা জানবো।

প্রথমেই জেনে নিই আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) জীবনাদর্শ ও শিক্ষা-

(১) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। সমগ্র বিশ্বজাহানের জন্য তিনি রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। মানব চরিত্রের সকল সুন্দর গুণাবলীর সমাবেশ ঘটেছিল তাঁর পবিত্র জীবনে।

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

“আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।”

(সূরা আল-কলম ৬৮:৪)

তিনি মানব জাতির জন্য উত্তম আদর্শ।

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

“তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।”

(সূরা আল-আহযাব ৩৩:২১)

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মানব জীবনের প্রতিটি আদর্শকে তাঁর জীবনে বাস্তবায়িত করে এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

ক) জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

এখানে তাঁর জীবনাদর্শ ও শিক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো-

i) সত্যবাদিতা

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সত্যবাদিতার মূর্ত প্রতীক। তিনি সদা সত্য কথা বলতেন। জীবনে কখনও মিথ্যা কথা বলেন নাই।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“সত্যবাদিতা মানুষকে মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ধ্বংস করে।”

(কানযুল উম্মাল)

ii) আমানত বা বিশ্বস্ততা

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন মহান আমানতদার ও বিশ্বস্ত। সকলের নিকট তাঁর আমানতদারিতা ছিল প্রশ্নাতীত। তাঁর আমানতদারিতার কারণে মুগ্ধ হয়ে আরবের কাফির, মুশরিক, ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানগণ তাঁর নিকট ধন সম্পদ আমানত রাখতেন।

নবুওয়াত লাভের আগেই তিনি শত্রুমিত্র সকলের নিকট আল-আমীন উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। হিজরতের সময় তাঁর নিকট রক্ষিত সকল আমানত মালিকদের নিকট ফেরত দেয়ার জন্য হযরত আলী (রা) কে দায়িত্ব দিয়ে যান। আমানতের ক্ষেত্রে তিনি এমনই উজ্জ্বল আদর্শের প্রতীক ছিলেন।

iii) ওয়াদা বা অঙ্গীকার পালন

মহানবী (সা.) ওয়াদা বা অঙ্গীকার পালনে সর্বদা যত্নবান ছিলেন। তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ওয়াদা পূরণ করা।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে মুমিনগণ। তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করবে।”

(সূরা আল-মায়িদা ৫:১)

ওয়াদার গুরত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে রাসূল (সাঃ) বলেন,

“যে ব্যক্তি ওয়াদা পালন করে না তার ধর্ম নাই।”

(বায়হাকি)

iv) আদল বা ন্যায়বিচার

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন আজীবন আদল বা ন্যায় বিচারের অনুকরণীয় আদর্শ। মহানবি (সাঃ)-এর আদল বা ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ভেদাভেদ ছিল না।

চুরির অপরাধে অভিজাত মখজুম গোত্রের এক রমণীর হাত কাটা নিয়ে কথা উঠলে তিনি কঠোর ভাষায় ঘোষণা করেন,

“আল্লাহর শপথ! আজ যদি আমার কন্যা ফাতিমা চুরির অপরাধে ধরা পড়ত, তা হলে আমি তার হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দিতাম।”

(তিরমিযি)

v) ক্ষমা ও মানুভবতা

রাসূল (সাঃ) ক্ষমা ও মহানুভবতার জীবন্ত নিদর্শন ছিলেন। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত শত্রুর উপর কখনও প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের ঘোর শত্রুদের ক্ষমা করা এবং হত্যার উদ্দেশ্যে ঘাতকদের বারবার মুক্তি প্রদান তার চারিত্রিক মহত্বের উজ্জল উদাহরণ।

vi) ধৈর্য্য সহিষ্ণুতা

মহানবি (সাঃ)-এর ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা ছিল পর্বতসম। কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য ধারণ করেছেন। আল্লাহর একত্ববাদ প্রচারকালে তিনি কাফির-মুশরিকদের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। তবুও তিনি বিচলিত না হয়ে ধৈর্য্য ধারণ করেছেন। আল্লাহর প্রতি অটল ভরসা রেখে অবিচল ধৈর্য্যরে সাথে শত্রুর মুকাবিলা করেছেন।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন,

“ধৈর্য্য অপেক্ষা অধিক উত্তম ও অত্যধিক কল্যাণকর বস্তু আর কিছুই কাউকেও দান করা হয় নাই।” (সহিহ বুখারি)

vii) বিনয় ও নম্রতা

বিনয়, নম্রতা কোমলতায় পরিপূর্ণ ছিল মহানবি (সাঃ)-এর অন্তর। তিনি জীবনে কোনদিন কারো সাথে রূঢ় ব্যবহার করেন নি এবং কাউকেও কটুবাক্য দ্বারা কষ্ট দেননি।

তাঁর খাদেম হয়রত আনাস (রা) বলেছেন,

“আমি বাল্যকাল হতেই হযরত (সাঃ)-এর সাথে রয়েছি এবং তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁর খিদমতেই ছিলাম। আমি মাঝে মধ্যে তাঁর অনেক ক্ষতি এবং অসুবিধার সৃষ্টি করতাম। কিন্তু তিনি কোনদিনই আমাকে সে জন্য তিরস্কার বা বকাঝকা করেন নি।”

(আল-হাদিস)

vii) অনাড়ম্বর জীবন যাপন

মহানবি (সাঃ) সহজ সরল সাধারণ ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। বিলাসিতা, জাঁকজমকপূর্ণ জীবনাচার তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না। দরিদ্রতা আর প্রাচুর্য উভয় অবস্থাতেই তিনি ছিলেন সহজ-সরল ও নিরহংকার।

viii) বদান্যতা ও দানশীলতা

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বলেন,

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দানশীলতা প্রবাহমান বায়ু অপেক্ষা অধিকতর ছিল, বিশেষত রমযানে।”

(সহিহ বুখারি)

হযরত জাবির (রা.) বলেন,

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট যখনই যা কিছু চাওয়া হয়েছে, তিনি কখনও দিতে অস্বীকার করেন নি।”

(মুসলিম)

তিনি আপন-পর, শত্রু-মিত্র নির্বেশেষে সকলের জন্য মুক্ত হস্তে দান করতেন।

ix) স্থির সংকল্প ও দৃঢ়চিত্ততা

মহানবী (সাঃ) ছিলেন কঠোর সংকল্প ও দৃঢ়চিত্ততার উজ্জ্বল নিদর্শন। একদা জনৈক শত্রু মহানবি (সাঃ)-কে একাকী একটি বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম করতে দেখে তলোয়ার উত্তোলন করে বলেন, ওহে মুহাম্মদ! এখন তোমাকে আমার হাত হতে কে রক্ষা করতে পারে? নবি করিম (সাঃ) দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, আল্লাহ! এ উত্তর শ্রবণ করে বেদুঈন ভয়ে কম্পিত হয়ে উঠে এবং তার হাত হতে তলোয়ার পড়ে যায়। মহানবি (সাঃ) তাকে ক্ষমা করে দেন। তাঁর কর্মতৎপর জীবনে এরূপ বহু সংকটজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যখন তাঁর দৃঢ়চিত্ততা ও অটল সংকল্পের প্রকাশ ঘটেছে।

x) দৈনন্দিন ও ব্যবহারিক জীবনাদর্শ

মহানবি (সাঃ) দৈনন্দিন ও ব্যবহারিক জীবনের সকল কিছুতে ছিল এক অনুপম আদর্শ। তিনি অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও স্পষ্ট ভাষায় ধীরস্থিরভাবে কথাবার্তা বলতেন।

খাদ্য গ্রহণের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে সম্মুখ ভাগ থেকে আদবের সাথে বসে খেতেন। পেট ভরে খেতেন না। তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল খুবই মার্জিত, রুচিশীল। চাকচিক্যময় ও অহংকার প্রকাশ পায় এমন পোশাক পছন্দ করতেন না।

কারো সাথে দেখা হলে সালাম দিতেন, কুশলাদি জানতেন। কখনো উচ্চস্বরে বা অট্টহাসি দিতেন না। মুচকি হাসতেন। ঘুমানোর আগে তিনি অযু করতেন। ডান কাত হয়ে শুতেন। লজ্জাশীলতা ছিল তাঁর চরিত্রের ভূষণ।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

“লজ্জা হলো ইমানের অংশ।”

(সহিহ বুখারি)

খ) সার সংক্ষেপ

  • মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতিটি কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, আচরণ এবং তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনা সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ উৎকৃষ্ঠতম আদর্শ।
  • তিনি তাঁর উৎকৃষ্ঠতম আদর্শের মাধ্যমে বিশ্বমানবতাকে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় সমবেত করেছেন। তাঁর জীবনের সকল কিছুই ছিল আল-কুরআনভিত্তিক।

রাসূল (সাঃ) বলেন,

“আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রাবলীকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্য।”

(মিশকাত)

চলুন এবার জেনে নিই আমাদের খুলাফায়ে রাশিদুনের জীবনাদর্শ ও শিক্ষা-

(২) হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

ক) পরিচিতি

‘খলিফাতু রাসূলিল্লাহ’ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ছিলেন বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি। মহানবী (সা)-এর অকৃত্রিম বন্ধু। হিজরতের সঙ্গী, ইসলামের প্রথম খলিফা। ইসলামের জন্য সকল সম্পদ তিনি অকাতরে বিলিয়ে দেন। তিনি ছিলেন উন্নত চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী। সীমাহীন দৃঢ়তা ও সীমাহীন কোমলতা ছিল তাঁর স্বভাবে। তাঁর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা সকলের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়।

নাম: নাম ‘আব্দুল্লাহ’ ডাক নাম বা কুনিয়াত আবু বকর। পিতার নাম আবূ কুহাফাহ। মাতার নাম সালমা এবং কুনিয়াত উম্মুল খায়ের। ‘সিদ্দীক’ ও ‘আতীক’ তাঁর উপাধি।

জন্ম: আবু বকর সিদ্দিক (রা.) হস্তি সনের ঘটনার দু’বৎসর ছয় মাস পর ‘মাক্কাতুল মুকাররামার’ মিনায় জন্ম লাভ করেন। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ও সুদৃঢ় ইমান

হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন পূর্ণ ও সুদৃঢ় ঈমানের অধিকারী। ইমান তাঁর অন্তরে-মননে-চিন্তা-চেতনায় এমন গভীরভাবে স্থান দখল করে নিয়েছিল যে, তাঁর কথা-বার্তায়, আচার-আচরণে ও কথাকর্মে ঈমানের উজ্জ্বলতম পরিচয় পাওয়া যায়।

আবু বকর (রা.)-এর ইমান সম্পর্কে উমর (রা.) এভাবে মন্তব্য করেন,

“যদি আবূ বকর (রা.)-এর ইমান ও সমগ্র বিশ্ববাসীর ইমান দাঁড়িপাল্লায় ওযন করা হয়, তবে নি:সন্দেহে আবু বকর (রা.)- এর পাল্লায় ভারী হবে।”

(বাইহাকি)

খ) জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

নিম্নে তাঁর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-

i) জীবন যাপন আল্লাহর জন্য নিবেদিত

হযরত আবু বকর (রা.) আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেতন। তাঁর জীবন-মরণ, ধন-সম্পদ, ইযযাত আব্রু তথা সবকিছুই একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য নিবেদিত ছিল। তাবুক অভিযানের সময় আবু বকর (রা.) নিজের যাবতীয় সম্পদ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খিদমাতে হাজির করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছো? তিনি উত্তর দেন, আমি তাদের জন্যে আল্লাহ ও রাসূলকে রেখে এসেছি।

ii) দানশীলতা ও বদান্যতা

হযরত আবু বকর (রা.)-এর দানশীলতা ও বদান্যতা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“অচিরেই আল্লাহভীরু ব্যক্তিকে তা (অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন) থেকে দূরে রাখা হবে। যে স্থায়ী সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য এবং তার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদান নয়, কেবল তার মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়; সেতো অচিরেই সন্তোষ লাভ করে।”

(সূরা আল-লায়ল, ৯২:১৭-২১)

রাসূল (সাঃ) ও দ্বীনের জন্য তিনি তাঁর সকল সম্পদ নির্দ্বিধায় ব্যয় করেন।

See also  খুলাফায়ে রাশেদিন বলতে কী বুঝায়? চার খলিফার নাম ও জীবনী

রাসূল (সাঃ) বলেন,

“আমার প্রতি যত লোকের যত অবদান ছিল, সব অবদানের প্রতিদানই আমি দিয়ে ফেলেছি, কিন্তু আবু বকর (রা.)-এর অবদানের প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তায়ালই কিয়ামতের দিন তাঁকে দান করবেন। আবু বকর এর সম্পদ দ্বারা আমি যতটুকু উপকৃত হয়েছি, আর কারো সম্পদ দ্বারা কখনোই সে পরিমাণ উপকৃত হয়নি।”

(তিরমিযি)

iii) ইবাদাতে অগ্রগামিতা

সকল ধরনের ইবাদাতের ক্ষেত্রে আবু বকর (রা.) অগ্রগামী ছিলেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,

“আজ তোমাদের মধ্যে কে রোযা রেখেছো?” আবু বকর (রা.) বললেন আমি। আবার রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, “আজ তোমাদের মধ্যে কে জানাযায় অংশগ্রহণ করেছো?” আবু বকর (রা.) বললেন আমি। রাসূল (সাঃ) পুনরায় বিজ্ঞেস করলেন, “আজ তোমাদের মধ্যে কে কোনো অভাবীকে খাবার দিয়েছো?” আবু বকর (রা.) বললেন, আমি, রাসূল (সাঃ) আবার জিজ্ঞেস করলেন, “আজ তোমাদের মধ্যে কে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করেছো?” আবু বকর (রা.) বললেন- আমি। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “এ সকল মহৎ কাজ কোনো ব্যক্তির মধ্যে একসাথে পাওয়া গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেই।”

(সহিহ মুসলিম)

iv) বীরত্ব ও সাহসিকতা

হযরত আবু বকর (রা.) বিনয়ী ও বিনম্র হবার পাশাপাশি একজন অকুতোভয়, শ্রেষ্ঠ বীর পুরুষ ও ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনিই মহানবি (সাঃ)-এর তাঁবুর পাহারাদার ছিলেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জীবনে এমন কোনো যুদ্ধবিগ্রহ ছিল না, যেখানে আবু বকর (রা.) সক্রিয় অংশগ্রহণ করেননি। খলিফা হবার পর যাকাত অস্বীকারকারী, ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রয়োজনের সময় দীনের খাতিরে তাঁর কঠোরতা অবলম্বনের একটি উজ্জ্বলতম উদাহরণ।

v) পার্থিব ভোগ বিলাসের প্রতি অনাসক্তি

হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন অত্যন্ত আড়ম্বরহীন, সহজ-সরল। দুনিয়ার বিত্ত-বৈভব, ভোগ-বিলাস, মান-মর্যাদা ও আসবাবপত্রের প্রতি তাঁর কোন ধরনের লোভ ও আগ্রহ ছিল না। অনাড়ম্বর পোশাক-পরিচ্ছদ, সাধারণ খাদ্য, জাঁকজমকহীন মামুলী বাড়ি-ঘর, সাদা-সিধে ও গরীবানা জীবন যাপন ছিল তাঁর জীবনের বৈশিষ্ট্য।

তিনি প্রায় এ বলে দু’আ করতেন,

“হে আল্লাহ, দুনিয়া আমার জন্য প্রশস্ত করে দাও। কিন্তু এর ঘূর্ণাবর্তে নিমগ্ন ও আসক্ত হওয়া থেকে আমাকে রক্ষা কর।”

(আল-হাদিস)

vi) উত্তম চরিত্র

হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন উম্মতের মধ্যে সবার চেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। জাহেলি যুগের পাপ পঙ্কিলতার প্রবল স্রোত আবু বকর (রা.)-এর পবিত্রতার চাদরে কোন প্রকার দাগ কাটতে পারেনি।

তাঁর সততা, নিষ্ঠা, আমানাতদারিতা, সত্যবাদিতা, দানশীলতা, বিপদে সহায়তা, গরীব ও অভাবগ্রস্থদের সাথে সদ্ব্যবহার, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচার এবং আর্ত ও বিপন্ন মানবতার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন প্রভৃতি গুণের কথা মক্কার মুশরিকরা ও দ্বিধাহীন চিত্তে স্বীকার করতো।

vii) আত্মিক পরিশুদ্ধি

হযরত আবু বকর (রা.) একদিকে যেমন তিনি কপটতা, অন্তরের বক্রতা, প্রদর্শনেচ্ছা, স্বার্থপরতা ও পার্থিব লোভ-লালসা প্রভৃতি আত্মিক দোষ থেকে পরিপূর্ণরূপে মুক্ত ছিলেন, অপরদিকে তাঁর মধ্যে সবর, তাওয়াক্কুল, শোকর, যুহদ (দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি) কানা’আত (অল্পে তুষ্টি) বিনয়, সরলতা ও কোমলতা প্রভৃতি আত্মিক সদগুণগুলো পুরোপুরি বিদ্যমান ছিল।

viii) মানব সেবা

হযরত আবু বকর (রা.) দ্বিধাহীন চিত্তে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের ব্যক্তিগত সাধারণ প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করতেন। তিনি অত্যন্ত গোপনে এ ধরনের কাজ করতে আনন্দ অনুভব করতেন।

ix) সহনশীলতা ও ক্রোধ দমন

হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন একজন অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তি। রাগ সংবরণ করাই ছিল তাঁর নিয়মিত স্বভাব। একজন নম্র, ভদ্র ও সহিষ্ণু ব্যক্তি হিসেবে ও সমাজে তাঁর প্রভূত খ্যাতি ছিল। বলা হয় যে, আসমানে ও তিনি ফেরেশতাদের নিকট সহিষ্ণু নামে পরিচিত।

তবে তাঁর রাগ ছিল একান্তই আল্লাহ ও রাসূলের খাতিরে, যখন তিনি আল্লাহর নির্দেশাবলী লঙ্ঘন ও অমান্য হতে দেখতেন তখন প্রচ-ভাবে রাগান্বিত হতেন।

x) সাধারণ জীবন যাপন

হযরত আবু বকর (রা.) অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করতনে।

খলিফা হবার পর মসজিদে নববীর পাশে একটি সাধারণ হুজুরায় চলে আসেন। মাটিতে বিছানায় শুইতেন। ঘরের সকল কাজ নিজেই করতেন, নিজেই ঘর ঝাড়– দিতেন, চুলা জালাতেন ও দুধ দোহন করতেন।

রাজকার্য পরিচালনার জন্যে স্বতন্ত্র কোনো কার্যালয় তাঁর ছিল না। মসজিদে নববীতে বসেই তিনি সারাদিন রাষ্ট্রীয়কার্য সম্পন্ন করতেন।

তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল অত্যন্ত সাধারণ। তিনি প্রায়ই মোটা কাপড় পরিধান করতেন। ছেঁড়া ও পুরাতন কাপড় পড়তেও কোনোরূপ সঙ্কোচ করতেন না। তিনি প্রায় সময় অতি নগন্য রুটির একটি টুকরো, কয়েকটি খেজুর ও দু চার চুমুক পানি খেয়ে থাকতেন।

viii) অসীম সাহস ও দৃঢ়তা

কিছু লোক নবুওয়াতের মিথ্যা দাবিদার ছিলো। আবু বকর (রা.) অসীম সাহস ও দৃঢ়তা সহকারে এমন ভন্ড নবীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ইসলামের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র নসাৎ করে দেন। তা ছাড়া তিনি যাকাত দিতে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

তাঁর জীবনের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।

গ) সারসংক্ষেপ

  • হযরত আবু বকর (রা.) বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। উম্মাতের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম লোকদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত জানিয়েছেন এবং তাঁর দাওয়াতেই সে সময়কার অনেক নেতৃস্থানীয় লোক ইসলাম গ্রহণ করেন।
  • ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য অকাতরে নিজের অর্থসম্পদ ব্যয় করেছেন। তিনিই হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সর্বপ্রথম খলিফা। তিনি সর্বপ্রথম কুরআন মাজিদ গ্রন্থাবদ্ধকরণের ব্যবস্থা করেন। তিনি যেমন কোমল ছিলেন, আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ পালনে ছিলেন তেমনি কঠোর। তাঁর মধ্যে সকল উত্তম গুণাবলীর সমাবেশ ঘটেছিল।

(৩) হযরত উমর (রাঃ)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

ক) পরিচয়

ইসলামের মহান খলিফা হযরত উমর (রা.) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্মের তের বছর পর কুরাইশ বংশের আদি গোত্রে জন্মাগ্রহণ করেন। উপাধি ফারুক। কুনিয়াত আবু হাফস। পিতা খাত্তাব ও মাতা হানতামা। ‘হযরত উমর (রা.)-এর অষ্টম উর্ধ্ব পুরুষ কা’ব নামক ব্যক্তির মাধ্যমে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) বংশের সাথে তাঁর বংশ মিলিত হয়েছে।

আল-কুরআন ও সুন্নাহর স্বার্থক রূপকার ছিলেন হযরত উমর (রা.)। তাঁর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা মানব জাতির জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।

খ) জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

i) ইসলাম গ্রহণের আগে

হযরত ফারুকে আযম (রা.) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে উকাযের মেলাতে মল্লযুদ্ধে অংশ নিতেন। তখন তাঁকে আরবের অন্যতম বিখ্যাত মল্ল যোদ্ধা হিসাবে গণ্য করা হতো।

অশ্বারোহণে তিনি এতই পারদর্শী ছিলেন যে, এক লাফে ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে এ রূপ স্থির হয়ে বসতেন যে, তাঁর দেহ মোটেই এদিক ওদিক হত না।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নবুওয়াত প্রকাশের সময় কুরায়শ বংশে যে ক’জন লোক লেখা পড়া জানতেন, হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রা.) ছিলেন তাঁদের অন্যতম।

ii) ইসলাম গ্রহণ

হযরত উমর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ এক চিত্তাকর্ষক ঘটনা।

সর্বপ্রথম যখন ইসলামের কথা শুনলেন, ক্রোধে জ্বলতে লাগলেন। এক পর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ইসলামের মূল প্রচারক মুহাম্মাদকেই (সাঃ) দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

যে কথা সেই কাজ। একদিন তিনি খোলা তরবারি হাতে মহানবি (সাঃ)-কে হত্যা করার জন্য রওয়ানা হন। পথিমধ্যে নাঈম ইবন আব্দুল্লাহর মাধ্যমে জানতে পারলেন যে, তাঁর বোন ফাতিমা এবং ভগ্নিপতি সাঈদ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে তাঁর বোনের বাড়ির দিকে ছুটলেন। সেখানে পৌঁছে বোন ফাতিমার কণ্ঠে আল-কুরআনে সূরা ত্বাহা-এর কয়েকটি আয়াতের তিলাওয়াত শুনে তাঁর মন বিগলিত হয়ে যায়। তিনি কালিমায়ে শাহাদাত পড়ে ইসলাম কবুল করেন।

iii) আশারায়ে মুবাশ্শারার অন্যতম ব্যক্তি

হযরত উমর (রা.) ‘সাবিকীন’ (ইসলাম গ্রহণে অগ্রবর্তী ব্যক্তিবৃন্দ) ও ‘আশারায়ে মুবাশ্শারা’ (জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ ব্যক্তি)-এর অন্যতম। তিনি আলিম (জ্ঞানী) ও যাহিদ (দ্বীনের জন্য উৎসর্গিকৃত প্রাণ) হিসাবে সাহাবিদের মধ্যে পরিগণিত হতেন।

iv) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ

খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) যখন বুঝতে পারলেন তাঁর অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে, মৃত্যুর পূর্বেই পরবর্তী খলিফা মনোনীত করে যাওয়াকে তিনি কল্যাণকর মনে করলেন।

তিনি উঁচু পর্যায়ের সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করে সর্বসম্মত মতের ভিত্তিতে হযরত উমর (রা.)-কে পরবর্তী খলিফা মনোনীত করেন।

এভাবে হযরত উমর (রা.) ১৩ হিজরির ২২ জামাদিউস সানি মুতাবিক ১৩ আগস্ট ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় মহান খলিফা নির্বাচিত হন।

হযরত উমর (রা.) প্রথম খলিফা যিনি আমিরুল মুমিনীন উপাধি লাভ করেন।

তিনিই সর্বপ্রথম হিজরি সন প্রবর্তন করেন।

v) হযরত উমর (রা.)-এর আমলে ইসলামি সাম্রাজ্যের বিস্তার

আমিরুল মুমিনীন হযরত উমর (রা.)-এর দশ বছরের খিলাফাতকালে ইসলামি সাম্রাজ্যে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিলো। অঞ্চলসমূহের মধ্যে রোম, পারস্য, ইরাক, খুরাসান, বেলুচিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিশর, আর্মেনিয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

তিনি ইসলামি সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করেন। তিনি সমগ্র রাজ্যে সুষ্ঠ শাসন পদ্ধতি ও বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

vii) খিলাফতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সূচনা

ইসলামি হুকুমাতের নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা মূলত তাঁর যুগেই হয়। সরকার বা রাষ্ট্রের সকল শাখা তাঁর যুগেই আত্মপ্রকাশ করে। যেমন-

  1. প্রদেশ বা জিলার সৃষ্টি
  2. কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণ
  3. ভূমির খারাজ বা রাজস্বের ব্যবস্থা
  4. কৃষি কার্যে উন্নতি বিধান
  5. উশর আদায়
  6. বিচার বিভাগ স্থাপন ও আইন প্রণয়ন
  7. ফৌজদারিও পুলিশ বাহিনী গঠন
  8. বায়তুলমাল প্রতিষ্ঠা
  9. সেনাবাহিনী গঠন
  10. কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব প্রতিষ্ঠা
  11. ইমাম ও মুয়াযিযনদের বেতন নির্ধারণ
  12. আদম শুমারি
  13. শাস্তির জন্য চামড়ার দুররা ব্যবহার
  14. শিক্ষক ও অধ্যাপকদের বৃত্তিদান
  15. রমযান মাসে তারাবীহ নামাজের জামাআত কায়েম
  16. মদ পানের জন্য আশি কোড়া (বেত্রাঘাত) শাস্তিরূপে ধার্য করা
  17. ওয়াক্ফ প্রথার উদ্ভাবন প্রভৃতি।

viii) মহানবী (সা.)-এর বাস্তব প্রতিচ্ছবি

হযরত উমর (রা.) ছিলেন মহৎ গুণাবলীতে বিভূষিত মহানবির (সাঃ) বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তাঁর অপূর্ব নিষ্ঠা, আল্লাহর প্রতি অনুরাগ, দুনিয়ার ভোগ বিলাস পরিহার, বাক্যের সত্যতা ও সত্যনুরাগ প্রভৃতি উন্নত গুণগুলো মানুষের মনে গভীরভাবে দাগ কেটে যেত। যে কোন ব্যক্তি কিছুসময় তাঁর সাহচর্যে থাকলে আপনা হতেই এই সমস্ত গুণাবলীতে ভূষিত হতো।

কঠোরতা ও কোমলতার সংমিশ্রণ হযরত উমর (রা.) যেমন কঠোর ছিলেন তেমনি ছিলেন, কোমল। পরিস্থিতির প্রয়োজনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোরতা অবলম্বন করতে হয়েছিল।

নিজের চরিত্র সম্বন্ধে ওমর নিজেই বলেছেন,

“আল্লাহর শপথ আমার হৃদয় আল্লাহর ব্যাপারে যখন নরম হয়, তখন পানির ফেনা অপেক্ষাও অধিক নরম ও কোমল হয়ে যায়। আর আল্লাহ দ্বীন ও শরীয়তের ব্যাপারে প্রয়োজন মোতাবেক যখন শক্ত ও কঠোর হয়, তখন তা প্রস্তর অপেক্ষা ও অধিক শক্ত ও দুর্ভেদ্য হয়ে পড়ে।”

(আল-হাদিস)

অনাথ, গরীব, দুস্থ ও প্রসূতিদের সাহায্যার্থে তিনি গভীর রজনীতে নগরীর পথে পথে ঘুরে বেড়াতেন। ১৮ হিজরির দুর্ভিক্ষ কবলিত জনগণের জন্য তিনি দয়া ও সেবার যে মহান দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা অবিস্মরণীয়।

See also  সংক্ষেপে ৯ জন ইসলামিক জীবনাদর্শ/জীবনচরিত

ix) সাদাসিধে আহার ও পোশাক

হযরত ফারুকে আযম (রা.)-এর খাবার ছিল খুবই সাদাসিধে ধরনের। তাঁর পোশাকও ছিল সাদাসিধে। তাঁর বেশির ভাগ পোশাকাই ছিল তালিযুক্ত। এমন কি, কোন কোন সময় তার পরিহিত সুতিবস্ত্রের মধ্যে চামড়ার তালিও থাকত।

একদিন বাইরে কিছু দর্শনার্থীকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁর একটি মাত্র পরিধেয় ধূয়ে শুকাতে দেওয়া হয়েছিল, তাই তাঁর বাইরে আসতে বিলম্ব হয়।

x) জীর্ণ কুটিরে বসবাস

মুসলিম দুনিয়ার এই খলিফা সারা জীবন এক জীর্ণ কুটিরে বসবাস করেছেন। মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করার পর প্রথমে তিনি মদীনার শহরতলীতে অবস্থান করেন। পরে মদিনা শহরে এসে মসজিদে নববীর কাছে এসে কুটির নির্মাণ করে বাস করতে থাকেন। এখানে আমিরুল মু’মিনীন উমরের (রা.) জীবনাবসান হয়।

মৃত্যুর সময় এই কুটিরটি বিক্রয় করে তাঁর ঋণ আদায়ের জন্য ওছিয়ত করে যান। মৃত্যুর পর ঘরটি হযরত আমীর মুআবিয়ার নিকট বিক্রয় করে তাঁর ঋণ পরিশোধ করা হয়।

xi) সফরকালীন সময়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র

হযরত উমর (রা.) বহুবার মদিনা থেকে মক্কা এবং মক্কা থেকে মদীনা পর্যন্ত সফর করেছেন। কিন্তু তাঁর সাথে কখনো কোন তাঁবু বা ছোট খাটো শামিয়ানাও থাকত না। প্রয়োজন মত কোন বাবলা বৃক্ষের উপর কাপড় ছড়িয়ে দিতেন, তারই ছায়ায় তিনি বিশ্রাম নিতেন। শোয়ার প্রয়োজন হলে মাটির উপরস্থ কংকর ও পাথরসমূহ সমান করে, তারপর কয়েকটি পাথর স্তপীকৃত করে সেগুলোকে বালিশ বানিয়ে এবং নীচে একটি কাপড় বিছিয়ে তিনি শুয়ে পড়তেন।

xii) আমানতদারিতা

একদা কোন একটি অসুখের কারণে জনৈক ব্যক্তি তাঁকে মধু সেবন করতে বলেছিল। কিন্তু তার কাছে মধু ছিল না এবং কোথাও তা পাওয়া যাচ্ছিলো না। অবশ্য বায়তুল মালে সামান্য পরিমাণ মধু ছিল। লোকেরা বললো, আপনি এ মধুই ব্যবহার করুন। তিনি উত্তর দিলেন, এটা সকল মুসলমানের সম্পত্তি। যতক্ষণ পর্যন্ত জনসাধারণ আমাকে অনুমতি না দেবে, ততক্ষণ আমি এ মধু ব্যবহার করতে পারি না। শেষ পর্যন্ত তিনি ঐ মধু ব্যবহার করেন নি।

xiii) আল্লাহ ভীতি

আল্লাহভীতি তাঁর চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। সাধারণত তাঁর অভ্যাস ছিল, সারা রাতব্যাপী তিনি নফল ইবাদত করতেন। শেষ রাতে পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।

কিয়ামতের হিসাবকে তিনি অত্যন্ত ভয় করতেন।

একটি হাদিস থেকে জানা যায়,

“একদা তিনি হযরত আবু মূসা আশআরিকে (রা.) বললেন,

আবু মূসা! আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ডাকে আল্লাহর উপর ইমান আনলাম। জন্মভূমি ত্যাগ করে হিজরত করলাম। অত:পর অনুক্ষণ তাঁর সেবায় নিযুক্ত রইলাম। এত সবের পরিবর্তে যদি আমরা কিয়ামতের দিন বিনা হিসাবে মুক্তি পাই, তবে কি তুমি সুখী হওনা?

হযরত আবু মূসা (রা.) বললেন,

কিছুতেই নয়, এত ত্যাগের পরিবর্তে আমরা আল্লাহর নিকট পুরস্কার আশা করি।

তখন হযরত উমর (রা.) বললেন,

আমার জীবন যাঁর হাতে সেই আল্লাহর শপথ! আমি কেবল বিনা হিসাবে কোন মতে ছুটে যেতে চাই।”

(আল-হাদিস)

xiv) জ্ঞান তাপস

জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও প্রসারে হযরত উমর (রা.)-এর অবদান অপরিসীম। একমাত্র হযরত আলী (রা.) ব্যতীত বিদ্যা বুদ্ধিতে কোন সাহাবীই হযরত উমরের (রা.) সমকক্ষ ছিলেন না। তবুও তিনি জ্ঞানী সাহাবীদের সমীহ করতেন। অনেক সাহাবীকে তিনি কেবল জ্ঞান-গরিমার জন্য বৃত্তি দান করতেন।

বিশুদ্ধভাবে আরবি ভাষা শিক্ষা করাকে তিনি দ্বীনের অঙ্গ বলে বিশ্বাস করতেন। হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে উমর (রা.) ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। একই হাদিস বিভিন্ন সনদের মাধ্যমে বর্ণনার প্রতি তিনি তাগিদ দেন।

গ) সারসংক্ষেপ

  • আমিরুল মু’মিনীন হযরত উমর (রা.) ৫৮০ খ্রিস্টাব্দে কোরায়শের আদি বংশে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত উমর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ ইসলামের ইতিহাসে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয়। তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিলেন এবং অন্যদের সঙ্গে নিয়ে কা’বা ঘরে সালাত আদায় করেন। মক্কা থেকে মদিনায় তাঁর হিজরত ছিল প্রকাশ্য।
  • ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি খিলাফতে অধিষ্ঠিত হন। দশ বছরের খিলাফতকালে সমগ্র বাইজান্টাইন, রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যে ইসলামি শাসন বিস্তার করেন। তাঁর যুগে বিভিন্ন অঞ্চলসহ মোট ১০৩৬টি শহর বিজিত হয়।
  • তিনিই সর্বপ্রথম হিজরি সন প্রবর্তন করেন। সেনাবাহিনীর স্তরভেদ ও বিভিন্ন ব্যাটালিয়ান নির্দিষ্ট করেন। জাতীয় রেজিস্টার বা নাগরিক তালিকা তৈরি করেন। কাজী নিয়োগ করেন এবং রাষ্ট্রকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন,

“উমরের (রা.) ইসলাম গ্রহণ ইসলামের বিজয়। তাঁর হিজরত আল্লাহর সাহায্য এবং তাঁর খিলাফত আল্লাহর রহমত।”

(আল-হাদিস)
  • আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) নিকট তাঁর স্থান ছিলো অতি-উচ্চে। তাঁর শাসনকাল ইসলামের ইতিহাসে একটি সোনালী অধ্যায়। তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন।
  • তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী অবশ্য দ্বীনের নির্দেশ পালনে ছিলেন বজ্র কঠোর।

(৪) হযরত উসমান (রাঃ)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

ক) পরিচয়

খুলাফায়ে রাশেদার তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ইবন আফফান (রা.) হস্তী সনের ৬ বছর পরে ৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। কুনিয়াত আবু ‘আমর। লকব যুন নুরাইন। কুরায়শ বংশের উমাইয়া শাখার সন্তান। হযরত উসমান (রা.)-এর মাতামহ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পিতা আব্দুল্লাহ ইবন আবদুল মুত্তালিবের সহোদরা ছিলেন এবং তাঁরা ছিলেন যমজ ভাই বোন।

খ) জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

নিম্নে হযরত উসমান (রা.)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-

i) ইতিহাসবিদ ও বংশবিদ্যা বিশারদ

হযরত উসমান (রা.) ছিলেন কুরায়শ বংশের অন্যতম বংশবিদ্যা বিশারদ। কুরায়শদের প্রাচীন ইতিহাসেও ছিল তাঁর গভীর জ্ঞান। তাঁর প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্য ও লৌকিকতাবোধ ইত্যাদি গুণাবলীর জন্যে সব সময় তাঁর পাশে মানুষের ভীড় লেগে থাকতো। জাহিলি যুগের কোন অপকর্ম তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি।

ii) খিলাফত লাভ

দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.)-এর শাহাদাতের পর হযরত উসমান (রা.) হিজরী ২৪ সনের ১ মুহাররম সোমবার মুতারিক ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে সকালে খিলাফতের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন।

iii) লজ্জা ও আত্মমর্যাদাবোধ

লজ্জা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিল তাঁর মহান চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যৌবনে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মত ব্যবসায় শুরু করেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে ব্যবসায়ে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেন। মক্কার সমাজে একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসাবে ‘গণি’ উপাধি লাভ করেন।

iv) জনসাধারণের জন্য কূপ ওয়াক্ফ

হযরত উসমান গণি (রা.) হযরত আবু বকর (রা.)-এর তাবলীগ বা প্রচারের ফলে মুসলমান হয়েছিলেন। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে তিনি যেমন প্রভূত ধন সম্পদের মালিক ছিলেন, তেমনি ছিলেন সর্বাধিক বদান্য ও মহান আল্লাহর পথে বড় দানশীল।

এক সময় মদিনায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি অভাবগ্রস্ত সকল লোকের আহার্যের ব্যবস্থা করেন।

মুসলমানগণ যখন মদিনায় আসেন, তখন পানির খুব অভাব ছিল। জনৈক ইয়াহুদির একটি কুঁয়া ছিল, সে ঐ কুঁয়ার পানি অত্যন্ত চড়া দামে বিক্রি করত। হযরত উসমান (রা.) পঁয়ত্রিশ হাজার দিরহাম দিয়ে ইয়াহুদির কাছ থেকে ঐ কুঁয়াটি খরিদ করে জনসাধারণের জন্য ‘ওয়াক্ফ’ (উৎসর্গ) করেছেন।

তাবুক যুদ্ধে তিনি সাড়ে ছয়শ উট ও পঞ্চাশটি ঘোড়া মহান আল্লাহর পথে দান করে ছিলেন।

v) ইবাদত-বন্দেগি

ইবাদতে গভীর নিমগ্নতার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে তাঁর বিশেষ খ্যাতি ছিল। তিনি সারা রাত নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং বছরের পর বছর রোযা রাখতেন।

মসজিদ নববীর পাশের কিছু জমি তিনি নিজস্ব অর্থ দ্বারা ‘আযওয়াজে মুতাহ্হারাত’ (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সহধমির্ণীবৃন্দ)-এর জন্য খরিদ করে দিয়েছিলেন।

vi) আল-কুরআনের গ্রন্থায়ন

হযরত উসমান (রা.)-এর আমলে ইসলামি সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটলে একেক স্থানে একেকভাবে কুরআন পাঠে পার্থক্য ও মতভেদ দেখা দেয়। হযরত হুযায়ফা ইবন ইয়ামান (রা.)-এর পরামর্শে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনার জন্য মজলিশে শুরার বৈঠক আহ্বান করেন। সকলেই হযরত হুযায়ফা ইবন ইয়ামানের অভিমত পছন্দ করেন।

তারপর হযরত উসমান গণি (রা.) হযরত হাফসা (রা.)-এর নিকট থেকে আল-কুরআনের সেই কপি চেয়ে নেন, যা হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা.)-এর খিলাফতকালে হযরত যায়দ ইবন সাবিত (রা.)-এর নেতৃত্বে সংগৃহীত ও গ্রন্থিত হয়েছিল। এ লক্ষ্যে তিনি ৬৫১ খ্রিস্টাব্দে একটি কমিটি গঠন করেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন হযরত যায়দ ইবন সাবিত (রা.)। তাঁরা হযরত হাফসা (রা.)-এর কপির আলোকে আরো ৭টি কপি করে তা বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেন। একে ‘মাসহাফে উসমানি’ বলা হয়। এর ফলে সারা বিশ্বে একটি মাত্র রীতিতে কুরআন তিলাওয়াত আরম্ভ হয়। এ খিদমতের জন্য তাকে ‘জামিউল কুরআন’ বলা হয়।

vii) নৌবাহিনী গঠন

হযরত উসমান (রা.)-এর আমলে প্রথম নৌ অভিযান শুরু হয়। তাঁর শাসনামল সিরিয়ার শাসক হযরত মুআবিয়া (রা.) ও মিসরের শাসককর্তা আবদুল্লাহ (রা.) প্রথম নৌ শক্তির প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। তাঁর শাসনামলে হযরত মুআবিয়া (রা.) এর নেতৃত্বে আরব নৌবাহিনী দুধর্ষ রোমান নৌবহরকে ধ্বংস করে সাইপ্রাস দ্বীপ অধিকার করে।

viii) জনহিতকর কার্যাবলি

ইসলামের খিদমত ও সাধারণ জনগণের কল্যাণের জন্য হযরত উসমান (রা.) বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী। তিনি রাজস্ব বিভাগের উন্নতি সাধন করে রাষ্ট্রীয় আয় বৃদ্ধি করেছিলেন। শুধু মিসর হতে সরকারি আয় বিশ হতে চল্লিশ লাখে উন্নীত হয়। এ বর্ধিত আয় দ্বারা তিনি ব্যয়ের খাত বৃদ্ধি করেন। এর ফলে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কার্যসম্পন্ন হয়েছিল।

তিনি বৃত্তি বা ভাতা হিসাবে বিপুল অর্থ জনসাধারণের মধ্যে বণ্টন করেন।

হযরত উসমান (রা.) মদিনার মসজিদের পুনর্নিমার্ণ ও কাবাগৃহের উন্নতি সাধন করে ইসলামের গৌরব বৃদ্ধি করেছিলেন।

জনসাধারণের কল্যাণার্থে তিনি সাম্রাজ্যে বহু রাস্তা-ঘাট, খাল, মসজিদ, সরাইখানা, বাঁধ, পয়ঃপ্রণালি ইত্যাদি নির্মাণ করে ছিলেন। তিনি বায়তুলমাল হতে এক টাকাও গ্রহণ করেতেন না, বরং জনসাধারণের জন্য নিজ তহবিল হতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন।

viii) চারিত্রিক গুণাবলি

হযরত উসমান (রা.)-এর মধ্যে মানব চরিত্রের সকল প্রকার মহৎগুণের সমাবেশ হয়েছিল। স্বীয় চারিত্রিক গুণাবলির জন্য আরব সমাজে হযরত উসমান (রা.)-এর বিশেষ খ্যাতি ছিল।

শৈশব হতেই তিনি চরিত্রবান ও উদার ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি অবশিষ্ট জীবনকে ইসলামের সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠ, কর্তব্যপরায়ণ ও মহৎপ্রাণ ব্যক্তি। সততা ও ব্যক্তিত্বের দিক হতে তিনি ছিলেন পাহাড়ের মত। বিনয় ছিল তাঁর চরিত্রের প্রধান ভূষণ।

আরবের বিত্তবান লোকদের মধ্যে হযরত উসমান (রা.) একজন হলেও তিনি ছিলেন নিরহঙ্কার ও অনাড়ম্বর।

ix) দেশ প্রেম ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ

হযরত উসমান (রা.) ছিলেন খাঁটি দেশ প্রেমিক। মুসলমানদের তিনি ভাইয়ের মতই মনে করতেন। ঐতিহাসিক আমীর আলীর মতে, ধর্মপরায়ণতা ছিল তাঁর প্রকৃত গুণ। নিজের জীবন উৎসর্গ করেও ইসলামের সংহতিকে অক্ষুণ্ণ রাখা ও কল্যাণ বিধান ছিল তাঁর জীবনের লক্ষ্য।

See also  সংক্ষেপে ৯ জন ইসলামিক জীবনাদর্শ/জীবনচরিত

x) হযরত উসমান (রা.)-এর ফযিলত ও মর্যাদা

হযরত উসমান (রা.)-এর ফযিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সা.) হতে যত হাদিস বর্ণিত হয়েছে তার সারকথা: তিনি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নিকটতম ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁর বিশেষ স্থান ছিল। রাসূল (সাঃ) বারবার তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

মহানবি (সাঃ) বলেছেন, .

“প্রত্যেক নবীরই বন্ধু থাকে, জান্নাতে আমার বন্ধু হবে উসমান।”

(তিরমিজি)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য বারবার এ বলে দু’আ করতেন:

“হে আল্লাহ! আমি উসমানের উপর রাজি আছি; আপনিও তাঁর উপর রাজি হয়ে যান। হে আল্লাহ! আমি উসমানের উপর সন্তুষ্টি আছি, আপনিও তাঁর উপর সন্তুুষ্ট হয়ে যান।”

(আল-হাদিস)

xi) শান্তিকামী ও ধৈর্যশীল

হযরত উসমান গণি (রা.) প্রকৃতিগতভাবেই ছিলেন শান্তিকামী ও ধৈর্যশীল। জাহিলিয়া যুগেও তিনি মদপানকে অবৈধ মনে করতেন। সে যুগেও তিনি কখনো ব্যভিচারের ধারে কাছে ঘেষেন নি।

তিনি প্রত্যেক বছরই হজ্জ করতেন এবং মিনায় তাঁবু স্থাপন করতেন। তিনি যতক্ষণ হাজীগণকে পানাহার না করাতেন, ততক্ষণ নিজের তাঁবুতে ফিরে আসতেন না।

তিনি তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকেই জনসাধারণকে এভাবে দাওয়াত করে খাওয়াতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পরিবারের নিকট প্রায় তিনি প্রয়োজনীয় আহার্য সামগ্রী পাঠিয়ে দিতেন।

হযরত উসমান গণী (রা.) ১২ বছর খিলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত থেকে ৮২ বছর বয়সে শাহাদাত লাভ করেন। তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।

গ) সারসংক্ষেপ

  • খিলাফাতে রাশেদার তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা.) ছিলেন কুরায়শ বংশের উমাইয়া শাখার সন্তান। তাঁর লকব ছিল যুন-নুরাইন। পিতা ‘আফফান, মাতা আরওয়া বিনতু কুরাইয। হযরত উসমান (রা.)-কে আসসাবিকুনাল আওয়ালুন (প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারী), ‘আশারায়ে মুবাশ্শারাহ্’ এবং সে ছ’জন শ্রেষ্ঠ সাহাবীর মধ্যে গণ্য করা হয় যাঁদের প্রতি রাসূলে করীম (সাঃ) আমরণ খুশি ছিলেন।
  • রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নবুওয়াতে সূচনা পর্বেই তাঁর দাওয়াতে সাড়া দেন এবং আজীবন জানমাল ও সহায় সম্পত্তি দ্বারা মুসলমানদের কল্যাণকামী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কন্যা হযরত রুকাইয়্যা (রা.)-এর ইনতিকালের পর রাসূল (সাঃ), রুকাইয়্যার ছোট বোন উম্মু কুলসুমকে হযরত উসমান (রা.)-এর সাথে বিয়ে দেন হিজরী তৃতীয় সনে।
  • লজ্জা ও শালীনতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সবিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তিনি প্রথমে আবিসিনিয়া তারপর মদিনা তাইয়িবাতে হিজরত করেন। আকার-আকৃতি ও স্বভাব-প্রকৃতিতে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে তাঁর অনেক মিল ছিল।
  • তিনি অনেক ধনাঢ্য হওয়া সত্ত্বে অত্যন্ত সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। তিনি ছিলেন সকল প্রশংসনীয় চরিত্রের অধিকারী। মানুষের প্রতি ছিল তাঁর সীমাহীন মতত্ববোধ।

(৫) হযরত আলী (রাঃ)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

ক) পরিচয়

নাম আলী, পিতা আবূ তালিব ইবন আবদুর মুত্তালিব। মাতা ফাতিমা বিনত আসাদ ইবন হিশাম। পিতা-মাতা উভয়ই কুরায়শ বংশের হাশিমী শাখার সন্তান। হযরত আলী (রা.) একাধারে হযরত রাসূলুল্লাহ (আঃ)-এর চাচাত ভাই ও জামাই ছিলেন। তিনি ছিলেন হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রাণ প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.)-এর স্বামী।

খ) জন্ম ও শৈশব

রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নবুওয়াত প্রাপ্তির দশ বছর পূর্বে তাঁর জন্ম। চাচাকে সাহায্যের জন্য হযরত আলী (রা.)-কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজ দায়িত্বে নিয়ে নেন। এভাবে নবী পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে তিনি বেড়ে ওঠেন।

রাসূল (সাঃ) যখন নবুওয়াত লাভ করেন, হযরত আলী (রা.)-এর বয়স তখন নয় থেকে এগারো বছরের মধ্যে। একদিন ঘরের মধ্যে দেখলেন, রাসূলে কারীম (সাঃ) ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাজিদা (রা.) সিজদাবনত, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, একি? উত্তর পেলেন, এক আল্লাহর ইবাদাত করছি। তোমাকেও এর দাওয়াত দিচ্ছি। আলী তাঁর মুরব্বির দাওয়াত বিনা দ্বিধায় কবুল করেন। মুসলমান হয়ে যান। কুফর, শিরক ও জাহিলিয়াতের কোন অপকর্ম তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি।

গ) জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

নিম্নে হযরত আলী (রা.)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা বর্ণনা করা হল-

i) নির্ভীক

মহানবী (সাঃ) মদিনায় হিজরতের সময় হযরত আলী (রা.)-কে তাঁর নিজের বিছানায় ঘুমাবার নির্দেশ দেন। হযরত আলী (রা.) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চাদর মুড়ি দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে অত্যন্ত আনন্দ সহকারে ঘুমালেন। রাসূল (সাঃ)-এর কাছে মক্কার লোকদের যে সব আমানত ছিল তা তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে রাসূল (সাঃ) তাঁকে রেখে যান।

সুবহে সাদিকের সময়ে মক্কার পাষন্ডরা রাসূল (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলো, রাসূল কারীমের (সাঃ) স্থানে তাঁরই এক ভক্ত জীবন কুরবানির জন্য প্রস্তুত হয়ে শুয়ে আছে। তারা ব্যর্থ হয়। আল্লাহ তায়ালা হযরত আলী (রা.)-কে হিফাজত করেন।

ii) সাহসিকতা ও বীরত্ব

হিজরি দ্বিতীয় সনে রাসূলুল্লাহর প্রিয়তমা কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা (রা.) সাথে তাঁর বিয়ে হয়।

ইসলামের জন্য হযরত আলী (রা.)-এর অবদান অবিস্মরণীয়। রাসূল (সাঃ)-এর যুগের সকল যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় তিনিই দেন। এ কারণে রাসূল (সাঃ) তাঁকে ‘হায়দার’ উপাধিসহ ‘যুল-ফিকার’ নামক তরবারি বীরত্বের প্রতীক স্বরূপ উপহার দেন। তাছাড়া তিনি বীরত্বের জন্য ‘আসাদুল্লাহ’ উপাধি লাভ করেন।

iii) খায়বারের দুর্গের বিজয়

সপ্তম হিজরিতে খায়বার অভিযান চালানো হয়। সেখানে ইয়াহুদিদের কয়েকটি সুদৃঢ় দুর্গ ছিল। প্রথমে সিদ্দীকে আকবার (রা.) পরে ফারুকে আযম (রা.)-কে দুর্গগুলো পদানত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কেউই সফলকাম হতে পারলেন না।

এরপর মহানবি (সাঃ) ঘোষণা করলেন: কাল আমি এমন এক বীরের হাতে ঝান্ডা তুলে দেব, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রিয়পাত্র। তাঁরই হাতে দুর্গগুলোর পতন হবে।

পরদিন সকালে সাহাবীদের সকলেই আশা করছিলেন এই গৌরবটি অর্জন করার। হঠাৎ হযরত আলীর (রা.) ডাক পড়লো। তাঁরই হাতে খায়বারের সেই দুর্জয় দুর্গগুলোর পতন হয়।

iv) খিলাফত লাভ

হযরত উসমান গণী (রা.)-এর শাহাদাতের এক সপ্তাহ পর হিজরি ৩৫ সনের ২৫ যিলহজ্জ তারিখে মদীনা শরীফে হযরত আলী (রা.)-এর হাতে সাধারণ বায়আত অনুষ্ঠিত হয় (ইসলামের ইতিহাস ১ম খন্ড, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রথম প্রকাশ, এপ্রিল ২০০৩, পৃ. ৪৪৭)।

তিনি যখন খিলাফাত লাভ করেন তখন মুসলিম উম্মাহ একটি কঠিন সংকটাপন্ন অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছিল। তিনি উসমান ইবন হানীফকে মক্কা মুকাররমায়, আম্মারা ইবন শিহাবকে কুফাতে উবায়দুল্লাহ ইবন আক্কাসকে ইয়ামেনে, কায়স ইবন সাআদকে মিসরে এবং সাহাল ইবন হানীফকে সিরিয়ায় কর্মকর্তা বা প্রশাসক নিয়োগ করে পাঠান।

v) জ্ঞানের দরজা

হযরত আলী (রা.) ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। সাহিত্য, ব্যাকরণ ও ন্যায়শাস্ত্রে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ছিল। তিনি মহানবী (সা.)-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষা লাভ করেন।

রাসূল সা. বলেন,

“আমি জ্ঞানের নগরী, আর আলী সেই নগরীর প্রবেশ দ্বার।”

(তিরমিযি)

তিনি ছিলেন হাফিজে কুরআন এবং একজন শ্রেষ্ঠ মুফাসসির। পূর্ববর্তী খলিফাদের যুগে তিনি ফত্ওয়া দিতেন। তিনি ছিলেন সুবক্তা ও কবি। তাঁর কবিতার একটি ‘দিওয়ান’ আমরা পেয়ে থাকি।

হযরত উমর (রা.) একবার বলেন, যে কোন বিষয় বুঝার ক্ষেত্রে হযরত আলী (রা.) আমাদের সবার অগ্রে।

vi) নিরপেক্ষ বিচারক

হযরত আলী (রা.) ছিলেন নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ বিচারক। তিনি ইয়ামেনে কিছুদিন প্রধান কাজীর পদে নিযুক্ত ছিলেন। শরিয়ত অনুযায়ী মামলা-মোকদ্দমার বিচার সম্পাদন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ছিল। সকল জটিল প্রশ্ন তাঁর কাছে অভিমতের জন্য পাঠানো হতো।

তাঁর সম্পর্কে হযরত উমর (রা.) বলেন, আমাদের মধ্যে বিচারক হিসাবে অধিক যোগ্য ব্যক্তি হযরত আলী (রা.)।

vii) সরল ও অনাড়ম্বর জীবন

তিনি সর্বদা সরল সহজ ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। খলিফা হওয়ার পরেও ক্ষুধা ও দারিদ্রেরর সাথে তাকে লড়তে হয়েছে।

তিনি ছিলেন প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী। কোন অভাবীকে তিনি ফেরাতেন না। এ জন্য তাঁকে অনেক সময় সপরিবারে অভুক্ত থাকতে হয়েছে।

তিনি ছিলেন বিনয়ী। নিজের হাতেই ঘর গৃহস্থালীল সব কাজ করতেন। সর্বদা মোটা পোশাক পরতেন। তাও ছেঁড়া, তালি লাগানো। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জ্ঞার্নাজনের জন্য তাঁর কাছে এসে দেখতে পেত তিনি উটের রাখালী করছেন, ভূমি কুপিয়ে ক্ষেত তৈরি করছেন।

তিনি এতই অনাড়ম্বর ছিলেন যে, মাঝে মধ্যে কেবল মাটির উপর শুয়ে যেতেন।

একবার রাসূল (সাঃ)-এ অবস্থায় দেখে সম্বোধন করেছিলেন ‘ইয়া আবা তুরাব’ ওহে মাটির অধিকারী। তাই তিনি পেয়েছিলেন ‘আবু তুবার’ লকব।

viii) হিকমতপূর্ণ বাণীসমূহ

হযরত আলী (রা.) এর বাণীগুলো ছিল হিকমতপূর্ণ। নিম্নে তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু বাণী তুলে ধরা হলো:

– হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের কথা ও কাজ এবং আত্মা ও দেহের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোল।

– তোমাদের আমল (কর্ম) যাতে আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হয়, সে জন্য ঐকান্তিক চেষ্টা কর। কেননা, কোন আমলই তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) ও আন্তরিকতা ছাড়া গ্রহণীয় হয় না।

– প্রকৃত আলিম সেই ব্যক্তি, সে যা পড়ে তার উপর আমল করে এবং ইলম ও আমলের মধ্যে সমন্বয় বিধান করে।

– প্রত্যেকটি বিপদের একটি সমাপ্তি আছে। আর যখন কারো উপর কোন বিপদ আসে তখন তা আপন সমাপ্তি পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। বুদ্ধিমানের উচিত, বিপদে পড়লে ব্যস্ত বা হতাশ না হওয়া এবং তা দূর করার জন্য অস্থির হয়ে না পড়া।

– বুদ্ধি সবচেয়ে বড় ঐশ্বর্য, আর মুখর্তা সবচেয়ে বড় দরিদ্র।

– কৃপণ থেকে দূরে থাকো। পাপিষ্টের কাছে বসো না।

– গুনাহ ছাড়া আর কোন নিজিসকেই ভয় করা উচিত নয়। মহান আল্লাহ ছাড়া কারো উপর ভরসা করা উচিত নয়। যে ব্যক্তি কোন জিনিস জানে না, তা জানার জন্য সে যেন কখনো লজ্জাবোধ না করে।

– ধৈর্য ও ইমানের মধ্যে সেরূপ সম্পর্ক, যে রূপ সম্পর্ক মাথা ও দেহের মধ্যে। যখন ধৈর্য চলে যেতে শুরু করে, তখন ধরে নিও তোমার ইমানও চলে যাচ্ছে। যখন মাথা চলে যায়, তখন দেহ বাঁচে কি করে।

ix) শাহাদাত লাভ

হযরত আলী (রা.) প্রায় পাঁচ বছর খিলাফত পরিচালনা করেন। একমাত্র সিরিয়া ও মিসর ছাড়া মক্কা ও মদিনাসহ সব এলাকা তাঁর অধীনে ছিল।

হিজরি ৪০ সনের ১৬ রমজান শুক্রবার দিবাগাত রাতে আততায়ী ইবন মুলজিম এর হাতে আহত হয়ে ১৭ রমজান ৪০ হিজরি শনিবার কুফায় শাহাদাত লাভ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

ঘ) সারসংক্ষেপ

  • হযরত আলী (রা.) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চাচাতো ভাই। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠেন। কিশোরদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী।
  • তিনি হলেন খাতুনে জান্নাত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রাণ প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা (রা.)-এর স্বামী এবং হযরত হাসান (রা.) ও হযরত হুসাইন (রা.)-এর পিতা খিলাফাতে রাশেদার চতুর্থ খলিফা।
  • খলিফা হওয়া সত্বেও তাঁর জীবন যাপন ছিল অতি সাধারণ। নিজ হাতেই সকল কাজ করতেন। তাঁর জামা ছিল তালি দেওয়া।
  • তিনি ছিলেন অনন্য প্রতিভার অধিকারী ও মেধাবী জ্ঞানী ব্যক্তি। রাসূল (সাঃ) তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি জ্ঞানের শহর আর আলী তার প্রবেশদ্বার’।
  • তিনি ছিলেন বিনয়ী, সাহসী ও বীর। নিষ্ঠা ও গভীর মনযোগ সহকারে ইবাদাত বন্দেগি করতেন। ইসলামে তাঁর অবদান অপরিসীম।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts