Skip to content

 

শরিয়তের পরিভাষা: ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, মুবাহ, হালাল-হারাম কী, কাকে বলে, কত প্রকার?

শরিয়তের পরিভাষা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, মুবাহ, হালাল হারাম কি, কাকে বলে, কত প্রকার

(১) শরিয়তের আহকামের পরিভাষা বলতে কী বুঝায়?

শরিয়ত হলো ইসলামি বিধি-বিধানের সমন্বিত রূপ।

পরিভাষায়, শরিয়ত বলতে এমন সুদৃঢ় সোজাপথকে বুঝায় যার দ্বারা তার অবলম্বনকারী ব্যক্তি হিদায়াত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মপন্থা লাভ করতে পারেন। আর আহকাম হলো বিধানাবলি।

প্রতিটি বিষয়েরই নিজস্ব কিছু পরিভাষা থাকে। ইসলামি শরিয়তেরও এরূপ বেশ কিছু পরিভাষা বিদ্যমান। এসব পরিভাষার মাধ্যমে শরিয়তের বিধানাবলির পর্যায়ক্রমিক গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।

ইসলামি শরিয়তের আহকাম বা বিধানাবলি সংক্রান্ত পরিভাষাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, মুবাহ ইত্যাদি।

এখানে আমরা উল্লিখিত পরিভাষাগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানব।

(২) ফরজ কী, কাকে বলে, কত প্রকার?

ফরজ অর্থ: অবশ্য পালনীয়, অত্যাবশ্যক।

শরিয়তের যেসব বিধান কুরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলিল দ্বারা অবশ্য কর্তব্য ও অলঙ্ঘনীয় বলে প্রমাণিত তাকে ফরজ বলা হয়।

ফরজ কাজ কোনো অবস্থাতেই পরিত্যাগ করা যায় না। ফরজ অস্বীকার করলে ইমান থাকে না বরং এর অস্বীকারকারী কাফির হয়। আর এগুলো পালন না করলে কবিরা গুনাহ বা মারাত্মক পাপ হয়। ফরজ কাজ পালন না করলে আখিরাতে ভয়ঙ্কর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

ফরজ দুই প্রকার। যথা-

  1. ফরজে আইন;
  2. ফরজে কিফায়া;

ক) ফরজে আইন

যে সকল ফরজ বিধান সকলের উপর পালন করা অত্যাবশ্যক তাকে ফরজে আইন বলে।

অর্থাৎ যেসব ফরজ কাজ ব্যক্তিগতভাবে সকল মুসলমানকেই আদায় করতে হয় তা-ই ফরজে আইন।

যেমন- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, রমযান মাসে রোযা রাখা, এসব কাজ প্রত্যেক ব্যক্তিকেই নিজে আদায় করতে হয়।

খ) ফরজে কিফায়া

যেসব কাজ মুসলমানের উপর ফরজ, কিন্তু সমাজের কতিপয় মুসলমান যদি আদায় করে ফেলে তবে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়।

ফরজে কিফায়া হলো সামষ্টিকভাবে ফরজ কাজ।

ফরজে কিফায়াসমূহ কিছু লোকের আদায় করার দ্বারা সমাজের বাকি সবাই সে দায়িত্ব থেকে মুক্তি পায়। তবে যদি সমাজের কেউই আদায় না করে তবে সকলেই গুনাহগার হবে।

যেমন- জানাযার সালাত। কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে ঐ এলাকার সবার উপর তার জানাযার সালাত আদায় করা ফরজ। এ পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের কতিপয় মুসলমান যদি তার জানাযার সালাত আদায় করে ফেলে তবে সকলেই এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। কিন্তু কেউই যদি মৃতব্যক্তির জানাযার সালাত আদায় না করে তবে সকলেই ফরজ ত্যাগের কারণে গুনাহগার হবে।

(৩) ওয়াজিব কী, কাকে বলে?

ওয়াজিব অর্থ: অবশ্য পালনীয়, কর্তব্য, অপরিহার্য ইত্যাদি।

শরিয়তের এমন কিছু বিধান রয়েছে যা পালন করা কর্তব্য। তবে ফরজ নয়। এরূপ বিধানকে ওয়াজিব বলা হয়।

শরিয়তে ফরজের পরই ওয়াজিবের স্থান। এটি ফরজের কাছাকাছি। অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত না হলেও এটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। ওয়াজিব অস্বীকার করলে মানুষ কাফির হয় না। তবে সে বড় রকমের অপরাধী হিসেবে গণ্য হয়। ওয়াজিব কাজ আদায় না করলেও কঠিন পাপ হয়। এর জন্য আখিরাতে শাস্তি পেতে হবে। ইসলামি শরিয়তে বহু ওয়াজিব কাজ রয়েছে।

যেমন- দুই ঈদের সালাত, বিতরের সালাত ইত্যাদি। সালাত আদায়ের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ওয়াজিব কাজ রয়েছে। যেমন- সূরা ফাতিহা পড়া, রুকুর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো, সিজদাহর মধ্যে সোজা হয়ে বসা ইত্যাদি। সালাতের এসব ওয়াজিব কাজ বাদ পড়লে সিজদাহ সাহু দিতে হয়। নতুবা সালাত শুদ্ধ হয় না। পুনরায় তা আদায় করতে হয়।

(৪) সুন্নত কী, কাকে বলে, কত প্রকার?

সুন্নত অর্থ: পথ, পন্থা, রীতি, নিয়ম, পদ্ধতি ইত্যাদি।

শরিয়তের পরিভাষায়, মহানবি (সাঃ) থেকে যে সমস্ত কাজ ইসলামি শরিয়তের বিধান হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় সুন্নত।

অর্থাৎ যে সকল কাজ মহানবি (সাঃ) নিজে করেছেন বা যা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন কিংবা অনুমোদন করেছেন তাকে সুন্নত বলা হয়।

সুন্নত দুই প্রকার। যথা-

  1. সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ;
  2. সুন্নতে যায়িদাহ;

ক) সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ

যে সকল কাজ মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে সর্বদাই পালন করতেন, অন্যদেরকে তা পালনের তাগিদ দিতেন তাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলে।

যেমন- আযান ও ইকামত দেওয়া, ফজরের ফরজ নামাযের পূর্বে দুই রাকআত, যোহরের ফরজের পূর্বে চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত, মাগরিব ও এশার ফরজের পর দুই রাকআত নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ওয়াজিবের কাছাকাছি। এগুলো পালন করা কর্তব্য। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলাবশত বিনা কারণে এগুলো পালন না করলে গুনাহ হয়।

খ) সুন্নতে যায়িদাহ

সুন্নতে যায়িদাহ হলো অতিরিক্ত সুন্নত।

পরিভাষায়, যে সকল কাজ নবি (সাঃ) করেছেন বলে প্রমাণিত তবে তিনি সর্বদা তা পালন করতেন না, বরং কখনো করতেন আবার কখনো ছেড়ে দিতেন এসব কাজকে সুন্নতে যায়িদাহ বলা হয়।

মহানবি (সাঃ) এরূপ কাজ করার জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। তবে এ ব্যাপারে তিনি তাগিদ করেননি এবং তা না করলে গুনাহ হয় না। সুন্নতে যায়িদাহকে সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদাহও বলা হয়।

যেমন- আসর ও এশার ফরজের পূর্বে চার রাকআত সুন্নত নামায আদায় করা।

সুন্নতে যায়িদাহ পালনে অনেক সাওয়াব অর্জন করা যায়।

(৫) মুস্তাহাব কী, কাকে বলে?

মুস্তাহাব অর্থ পছন্দনীয়। যে সকল কাজের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উম্মতকে উৎসাহ প্রদান করেছেন এবং তা করলে নেকি পাওয়া যাবে, কিন্তু না করলে গুনাহ হবে না সেসব কাজকে শরিয়তে মুস্তাহাব বলে।

ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত ব্যতীত অতিরিক্ত সবধরনের ইবাদত ও ভালো কাজই মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য। এ মুস্তাহাবকে নফল বা মানদুবও বলা হয়।

(৬) মুবাহ কী, কাকে বলে?

যে সকল কাজ করলে কোনোরূপ সাওয়াব নেই, আবার না করলে কোনোরূপ গুনাহও হয় না এরূপ কাজকে মুবাহ বলা হয়।

মানুষ ইচ্ছা করলে এরূপ কাজ করতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে তা না-ও করতে পারে।

(৭) হালাল-হারাম কী, কাকে বলে?

পার্থিব জীবন মানুষের জন্য পরীক্ষাগার। আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্যই এ বিশ্বজগতের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।

তিনি বলেন-

“তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদের জন্য এ পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৯)

আর এ সবকিছু সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো মানুষকে পরীক্ষা করা। এজন্য আল্লাহ তায়ালা সৃষ্ট বস্তুর কিছু কিছু হালাল করে দিয়েছেন আর কিছু কিছু বস্তুকে হারাম করে দিয়েছেন। যেসব বস্তু মানুষের জন্য সামগ্রিকভাবে কল্যাণকর সেগুলোকে হালাল করেছেন। আর যেসব বস্তু মানুষের জন্য অকল্যাণকর তা হারাম করে দিয়েছেন। অতঃপর নবি-রাসুলও আসমানি কিতাবের মাধ্যমে হালাল-হারামের পরিচয় সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের উচিত হালালকে গ্রহণ করা ও যাবতীয় হারাম বস্তু ও কাজকে বর্জন করা।

ক) হালাল

হালাল অর্থ: বৈধ, সিদ্ধ, আইনানুগ বা অনুমোদিত বিষয়। এছাড়া পবিত্র, গ্রহণযোগ্য ইত্যাদি অর্থেও হালাল শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

ইসলামি পরিভাষায়, যে সকল বিষয়ের বৈধ হওয়া কুরআন-হাদিস দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত, শরিয়তে তাকে হালাল বলা হয়। হালাল কথা, কাজ বা বস্তু সবই হতে পারে।

যেমন- যেসব বস্তু বা দ্রব্য ব্যবহার করা শরিয়তে বৈধ তা হালাল দ্রব্য হিসেবে পরিচিত, উদারণস্বরূপ গরুর গোশত, চাল-ডাল, ফলমূল আহার করা, শালীন ও রুচিসম্মত পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি।

তেমনি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (সাঃ) যেসব কথা বা কাজের অনুমতি দিয়েছেন সেগুলো হালাল কাজ হিসেবে স্বীকৃত।

যেমন- সত্য কথা বলা, সুন্নত সম্মত পন্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য করা, মানুষের উপকার করা ইত্যাদি।

খ) হারাম

হারাম অর্থ: নিষিদ্ধ, মন্দ, অসংগত, অপবিত্র ইত্যাদি। হারাম হলো হালালের বিপরীত।

পরিভাষায়, যে সকল কাজ বা বস্তু কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট নির্দেশে অবশ্য পরিত্যাজ্য, বর্জনীয় তাকে হারাম বলা হয়।

অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (সাঃ) যেসব কাজ করতে বা যেসব বস্তু ব্যবহার করতে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন সেসব কাজ বা বস্তু মানুষের জন্য হারাম।

যেমন সুদ, ঘুষ, জুয়াখেলা, শূকরের গোশত খাওয়া, মদ পান করা ইত্যাদি হারাম।

গ) হালাল-হারামের সংখ্যা

আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে হালাল ও হারাম সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। মহানবি (সাঃ) বলেছেন,

“হালাল বিষয় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত। আর হারামও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত।”

(বুখারি ও মুসলিম)

পৃথিবীতে হালাল জিনিস বা বস্তু অগণিত। এর কোনো সীমা পরিসীমা নেই। এগুলো আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত হিসেবে চিহ্নিত।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমরা যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা করতে চাও তবে গুনে তা শেষ করতে পারবে না।”

(সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৩৪)

শরিয়তের ভাষ্য অনুযায়ী প্রত্যেক বিষয় মুবাহ বা বৈধ। তবে এর বিপক্ষে কুরআন ও হাদিসে যদি কোনোরূপ নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় তবে তা হারাম হবে। সুতরাং বোঝা গেল যে, হালালের সংখ্যা অগণিত। আর হারাম বস্তুর সংখ্যা সীমিত।

এসব হালাল ও হারাম বিষয়গুলো চিনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেননা হালালকে হারাম মনে করা ও হারাম বিষয়কে হালাল বলে বিশ্বাস করা কুফর।

যেহেতু হারাম সীমিত সংখ্যক, সেহেতু নিম্নে বর্তমান সমাজে প্রচলিত কতিপয় হারাম বিষয় ও দ্রব্যের তালিকা উল্লেখ করা হলো:

  • মৃত জীবজন্তু খাওয়া (তবে মৃত মাছ খাওয়া হারাম নয়)।
  • রক্ত পান করা (তবে হালাল জন্তুর গোশতে লেগে থাকা রক্ত হারাম নয়)।
  • মানুষের গোশত খাওয়া।
  • শূকরের গোশত খাওয়া।
  • আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গীকৃত পশুর গোশত খাওয়া।
  • মদ্যপান করা।
  • মাদকদ্রব্য যেমন- হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, আফিম সেবন করা।
  • গলা টিপে, উঁচু থেকে ফেলে দিয়ে হত্যাকৃত পশুর গোশত খাওয়া।
  • হিংস্র প্রাণী যেমন- বাঘ, সিংহ, ভল্লুক ইত্যাদির গোশত খাওয়া।
  • বিষাক্ত ও ক্ষতিকর প্রাণীর গোশত খাওয়া। যেমন- সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি।
  • যেসব প্রাণী ময়লা ও নাপাক দ্রব্য খেয়ে বাঁচে তাদের গোশত খাওয়া। যেমন- কাক, শকুন, কুকুর ইত্যাদি।
  • গাধা, খচ্চর, হাতি ইত্যাদির গোশত খাওয়া।
  • সুদ, ঘুষ ও জুয়ার মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ।
  • চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত দ্ৰব্য।
  • অবৈধ পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন।
  • মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, মিথ্যা হলফ করা, গিবত, গালি-গালাজ করা।
  • সর্বোপরি অশ্লীল, অশালীন ও মানুষকে কষ্টদায়ক সকল দ্রব্য, কথা ও কাজ।

প্রকৃতপক্ষে, কুরআন ও সুন্নতে নিষেধকৃত সকল বস্তুই হারাম। এগুলো থেকে বেঁচে থাকা সকল মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য।

ঘ) মানবজীবনে হালালের প্রভাব

আল্লাহ তায়ালা সকল কিছুর স্রষ্টা। তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন কোনটা উপকারী ও কোনটা অপকারী। যেসব দ্রব্য ও বিষয় মানুষের জন্য কল্যাণকর আল্লাহ তায়ালা তা হালাল করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন,

“হে মানবজাতি! তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার কর।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৬৮)

হালাল বস্তু গ্রহণ করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত গ্রহণ করে এবং সর্বোচ্চ কল্যাণ প্রাপ্ত হয়। হালাল দ্রব্য মানুষকে ইবাদতে উৎসাহিত করে। মানুষ অধিক পরিমাণে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে পারে।

আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

“হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার কর এবং সৎকাজ কর।”

(সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত ৫১)

হালাল ও পবিত্র দ্রব্য মানুষের দেহ ও মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে। অন্তরে নুর সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ অন্যায় ও অসৎ চরিত্রকে ঘৃণা করতে থাকে। মানুষ সৎগুণাবলি সম্পন্ন হয়ে গড়ে ওঠে। বস্তুত হালাল খাদ্য মানুষের মধ্যে পবিত্র ভাব ও আত্মশুদ্ধির উদ্রেক করে। ফলে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে প্রভূত কল্যাণপ্ৰাপ্ত হয়।

ঙ) মানবজীবনে হারামের প্রভাব

মানব জীবনে হারাম বস্তু, কথা ও কাজের পরিণাম ও কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ। কোনো কোনো হারাম দ্রব্যের মধ্যে এমন উপাদান বিদ্যমান থাকে যা মানুষের মন, মস্তিষ্ক ও শরীরের জন্য চরম ক্ষতিকর। এগুলো অনেক সময় মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃত করে। এমনকি অনেক মারাত্মক ও প্রাণনাশক রোগ সৃষ্টি করে। যেমন- মদ, গাঁজা, হেরোইন ইত্যাদি।

তা ছাড়া আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, হিংস্র প্রাণীর দেহে এমন সব জীবাণু আছে যা মানুষের দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

হারাম কাজ মানবসমাজেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যেমন- সুদ, ঘুষ, জুয়া, লটারি ইত্যাদি। এতে সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হয়, নৈতিক মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়, সমাজে বৈষম্য দেখা দেয়, অনেকে সর্বস্বান্ত ও দেউলিয়া হয়ে যায়। এমনকি অনেকে আত্মহত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে না।

হারাম খাদ্যদ্রব্য মানুষের অন্তরে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। মানুষ অন্যায়, অশ্লীলতা ও অসৎচরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়। মানব চরিত্রের সৎগুণাবলি নষ্ট হয়ে যায়। মানুষ ইবাদতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তার ইবাদত- দোয়া কবুল হয় না।

মহানবি (সাঃ) বলেছেন,

“কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে আসে এবং অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে তার দু’হাত তুলে আল্লাহর নিকট বলতে থাকে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! কিন্তু তার পানাহার হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম। সুতরাং এমতাবস্থায় তার দোয়া কীভাবে কবুল হতে পারে?”

(মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অন্য হাদিসে বলেছেন,

“যে শরীর হারামের মাধ্যমে গঠিত, তা জাহান্নামের ইন্ধন হবে।”

(আহমাদ, বায়হাকি ও দারিমি)

প্রকৃতপক্ষে, হারাম মানুষকে অকল্যাণ ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং আমরা সদা সর্বদা হারামের ব্যাপারে সতর্ক থাকব। সকল কথা, কাজ ও পানাহারে হালাল পন্থা গ্রহণ করব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page