(১) ওয়াদা পালন অর্থ কী?
ওয়াদাকে আরবি ভাষায় বলা হয় আল-আহ্দু। আল-আহ্দু এর শাব্দিক অর্থ- ওয়াদা, অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি, চুক্তি, কাউকে কোনো কথা দেওয়া বা কোনো কাজ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি।
(২) ওয়াদা পালন কাকে বলে?
ইসলামি পরিভাষায়, কারও সাথে কোনোরূপ প্রতিশ্রুতি দিলে, অঙ্গীকার করলে বা কাউকে কোনো কথা দিলে তা যথাযথভাবে রক্ষা করাকে ওয়াদা পালন বলে।
(৩) ওয়াদা পালনের গুরুত্ব
ওয়াদা পালন আখলাকে হামিদাহর অন্যতম গুণ। মানবজীবনে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ওয়াদা পালন সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে।
যে ব্যক্তি ওয়াদা পালন করে তাকে সবাই ভালোবাসে। তার প্রতি সকলের আস্থা ও বিশ্বাস থাকে। সমাজে সে শ্রদ্ধা ও মর্যাদা লাভ করে।
ইসলামি জীবন দর্শনে ওয়াদা পালন করা আবশ্যক। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ওয়াদা পূর্ণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
তিনি বলেছেন,
“হে ইমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর।”
(সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ১)
অন্য আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন কর। নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।”
(সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৩৪)
প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদা পালন করা অত্যাবশ্যক। হাশরের ময়দানে প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে ওয়াদা পালন করে না, আখিরাতে সে শাস্তি ভোগ করবে।
ওয়াদা পালন করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। সৎ ও নৈতিক গুণাবলির অধিকারী ব্যক্তিগণ সর্বদা ওয়াদা রক্ষা করে থাকেন। যে ব্যক্তি ওয়াদা পালন করে না সে পূর্ণাঙ্গ মুমিন ও দীনদার হতে পারে না।
একটি হাদিসে মহানবি (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ওয়াদা পালন করে না, তার দীন নেই।”
(মুসনাদে আহমাদ)
আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ) সর্বদাই ওয়াদা পালন করেছেন। সাহাবি এবং আউলিয়া কেরামের জীবনী পর্যালোচনা করলেও আমরা দেখতে পাই যে, তাঁরা জীবনে কোনো ওয়াদা ভঙ্গ করেননি। কেননা ওয়াদা ভঙ্গ করা মুনাফিকের নিদর্শন।
মুনাফিকরা ওয়াদা করলে তা পূর্ণ করে না। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের এরূপ না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা মুমিন-মুসলমানের নিদর্শন হলো তারা ওয়াদা পালন করে।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
“হে মুমিনগণ! তোমরা যা পালন করো না এমন কথা কেন বলো?”
(সূরা আস- সাফ, আয়াত ২)
সুতরাং, কাউকে কোনো কথা দিলে তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে, প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করতে হবে। প্রতিজ্ঞা করলে বা চুক্তি সম্পাদন করলে তা পূর্ণ করতে হবে। তাহলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন। দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি-সফলতা লাভ করা যাবে।
[সূত্র: এনসিটিবি]