Skip to content

 

খুলাফায়ে রাশেদিন বলতে কী বুঝায়? চার খলিফার নাম ও জীবনী

খুলাফায়ে রাশেদিন বলতে কী বুঝায় চার খলিফার নাম ও জীবনী

(১) খুলাফায়ে রাশেদিন বলতে কী বুঝায়?

খুলাফায়ে রাশেদিন বলতে ইসলামের প্রথম চারজন খলিফাকে বোঝায়। তাঁরা হলেন-

  1. হযরত আবু বকর (রা.)
  2. হযরত উমর (রা.)
  3. হযরত উসমান (রা.)
  4. হযরত আলি (রা.)

তাঁরা সকলেই মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে সরাসরি ইসলামের শিক্ষা লাভ করেছেন। বাস্তব জীবনে তা যথাযথভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করেছেন। তাই তাঁদের জীবনকর্ম আমাদের আদর্শ।

(২) চার খলিফার নাম ও জীবনী

ক) হযরত আবু বকর (রা.)

  • ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.)।
  • ৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশের তায়িম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন।
  • তাঁর নাম আব্দুল্লাহ এবং তাঁর উপাধি সিদ্দিক ও আতিক।
  • ছোটকাল থেকেই মহানবি (সাঃ)-এর সাথে তাঁর ছিল গভীর বন্ধুত্ব।
  • বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম কবুল করেন।

হযরত আবু বকর (রা.) সুখে- দুঃখে, আপদে-বিপদে সর্বদা তিনি মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে থাকতেন।

তাবুক যুদ্ধের সময় তিনি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় এরূপ সর্বস্ব ব্যয়ের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি হযরত আবু বকর (রা.)-এর ছিল অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর মুখে মি’রাজের ঘটনা শোনামাত্র নিঃসন্দেহে তা বিশ্বাস করেন। তাই তাঁকে সিদ্দিক (মহাসত্যবাদী) উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ইন্তিকালের পর খলিফা নির্বাচন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওফাতের পর দাফন ও রাসুলের উত্তরাধিকারীর বিষয়ে তাঁর থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা সমাধা হয়। ফলে মুসলমানগণ এক অবশ্যম্ভাবী বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা পান।

খলিফা নির্বাচিত হয়ে তিনি জনতার উদ্দেশে বললেন,

“যতদিন আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)-এর অনুসরণ করি ততদিন তোমরা আমার অনুসরণ করবে এবং আমাকে সাহায্য করবে। আর ভুল পথে চললে তোমরা আমাকে সাথে সাথে সংশোধন করে দেবে। তোমাদের মধ্যে যারা দুর্বল তাদের হক আদায় না করা পর্যন্ত তারা আমার নিকট শক্তিশালী। আর যারা সবল তাদের নিকট থেকে পাওনাদারের হক আদায় না করা পর্যন্ত তারা আমার নিকট দুর্বল।”

হযরত আবু বকর (রা.)

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর শাসন সর্বকালের শাসকদের জন্য আদর্শ।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ইন্তিকালের পর মুসলিম রাষ্ট্রে কতিপয় সমস্যা দেখা দেয়। কেউ কেউ মিথ্যা নবুয়তের দাবি করে, কতিপয় লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করে, আবার কতিপয় লোক ইসলাম ত্যাগ করে।

হযরত আবু বকর (রা.) অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এসব মোকাবিলা করেন, ইসলাম ও মুসলমানদের বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করেন।

আমাদেরও উচিত হযরত আবু বকর (রা.)-এর মতো অত্যন্ত দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতার সাথে শাসনকাজ পরিচালনা করে দেশ ও জাতিকে বিশৃঙ্খলার হাত থেকে রক্ষা করা।

আল-কুরআন সংরক্ষণ

ইয়ামামার যুদ্ধে কুরআনের অনেক হাফিয শাহাদাতবরণ করেন। এতে কুরআন বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দিলে তিনি পবিত্র কুরআনকে একত্র করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার কারণে তাঁকে ইসলামের ‘ত্রাণকর্তা’ বলা হয়।

খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরও হযরত আবু বকর (রা.) ব্যবসা করতেন। নিজ হাতের উপার্জন খেতেন। পরবর্তীতে মুসলমানদের দাবির মুখে তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সামান্যমাত্র ভাতা নিতেন।

See also  হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও খুলাফায়ে রাশিদুনের জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

মুসলিম জাহানের খলিফা হয়েও হযরত আবু বকর (রা.) রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে যে সতর্কতা অবলম্বন করেছেন, তা সকল রাজা-বাদশাহ ও রাষ্ট্র-প্রধানের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ।

খ) হযরত উমর (রা.)

  • মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা.)।
  • ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশের আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন।
  • তাঁর পিতার নাম খাত্তাব।
  • মাতার নাম হানতামা।
  • তিনি ছিলেন শিক্ষিত, মার্জিত ও সৎ চরিত্রের অধিকারী।
  • যুবক বয়সে নামকরা কুস্তিগির, সাহসী যোদ্ধা, কবি ও সুবক্তা ছিলেন।

ইসলাম গ্রহণ

হযরত উমর ফারুক (রা.) প্রথম দিকে ইসলামের ঘোর শত্রু ছিলেন।

একদা মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে হত্যার জন্য তিনি খোলা তরবারি হাতে নিয়ে বের হলেন।

পথে শুনলেন যে, তাঁর বোন ফাতিমা ও ভগ্নিপতি সাঈদ মুসলমান হয়ে গেছেন। তখন তিনি তাঁদের হত্যা করার জন্য তাঁদের বাড়ি যান। তাঁদের উপর অনেক অত্যাচার চালান। তাঁদের ইসলাম ত্যাগ করতে বলেন, কিন্তু তাঁরা প্রাণের বিনিময়েও ইসলাম ত্যাগ করতে চাইলেন না।

তাঁদের অনড় অবস্থা দেখে তাঁর ভাবান্তর ঘটল। তিনি মুসলমান হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন।

তিনি মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দরবারে গিয়ে নিজের তরবারিটি মহানবি (সাঃ)-এর পায়ের কাছে রেখে মুসলমান হয়ে গেলেন।

হযরত উমর ফারুক (রা.) মহানবিকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আপনি যে দাওয়াত দিচ্ছেন তা কি সত্য? মহানবি (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন হযরত উমর (রা.) বললেন- তাহলে আর গোপন নয়, এখন থেকে আমরা প্রকাশ্যে কাবা ঘরের সামনে সালাত আদায় করব।

মহানবি অত্যন্ত খুশি হয়ে তাঁকে ‘ফারুক’ (সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দিলেন। তিনি নবুয়তের ষষ্ঠ বছরে ৩৩ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।

হযরত উমর ফারুক (রা.) ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য স্বীয় ধন-সম্পদ অকাতরে ব্যয় করেন। তাবুক অভিযানে হযরত উমর ফারুক (রা.) তাঁর সমুদয় সম্পদের অর্ধেক আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেন।

হযরত উমর ফারুক (রা.)-এর ন্যায় সাহসী হয়ে আমরাও সত্য পথে চলব ও সত্য কথা বলব।

ন্যায় বিচারক

হযরত উমর ফারুক (রা.) ছিলেন ন্যায় ও ইনসাফের এক মূর্ত প্রতীক।

আইনের চোখে তিনি ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু, আপন পরের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করতেন না। মদ্যপানের অপরাধে স্বীয় পুত্র আবু শাহমাকে তিনি অত্যন্ত কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন।

হযরত উমর (রা.) রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে তিনি সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন এবং তাঁদের মতামতের প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন।

চরিত্র

হযরত উমর ফারুক (রা.) ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর মানবীয় গুণটি আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তিনি সত্য ও অসত্যের বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ থাকতেন।

তিনি রাষ্ট্রের সকল অধিবাসীর খোঁজ- খবর রাখার জন্য পুলিশ বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।

সেনাবাহিনীকে সুশৃঙ্খল করার জন্য প্রতি চার মাস পর বাধ্যতামূলক ছুটির ব্যবস্থা করেন।

কৃষি কাজের উন্নয়নে খাল খননের ব্যবস্থা করেন।

জনসাধারণের অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য তিনি রাতের অন্ধকারে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াতেন।

ক্ষুধার্ত শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে নিজ কাঁধে করে আটার বস্তা নিয়ে তিনি তাঁবুতে দিয়ে আসেন।

স্বীয় স্ত্রী উম্মে কুলসুমকে, প্রসব বেদনায় কাতর এক বেদুইনের স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য তার ঘরে নিয়ে যান। পৃথিবীর রাজা বাদশাহদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমন প্রজাবৎসল শাসক আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

See also  হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও খুলাফায়ে রাশিদুনের জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

মানব দরদি হযরত উমর ফারুক (রা.) ছিলেন সাম্য ও মানবতাবোধের মহান আদর্শ।

জুমুআর সময় তিনি জনসাধারণের জন্য শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ব্যবস্থা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক লোক স্বয়ং তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল যে, বাইতুলমাল থেকে প্রাপ্ত কাপড় দিয়ে কারও পুরো একটি জামা হয়নি। অথচ খলিফার গায়ে সে কাপড়ের একটি পুরো জামা দেখা যাচ্ছে। খলিফা অতিরিক্ত কাপড় কোথায় পেলেন? খলিফার পক্ষ থেকে তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ (রা.) উত্তর দিলেন যে, আমি আমার অংশটুকু আমার আব্বাকে দিয়ে দিয়েছি, এতে তাঁর পুরো জামা হয়েছে।

আমাদের দেশেও যদি শাসনকার্যে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায় তাহলে আমাদের শাসনকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণও হযরত উমরের মতো ন্যায়পরায়ণ হবেন।

গ) হযরত উসমান (রা.)

  • মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলিফা ছিলেন হযরত উসমান (রা.)।
  • তিনি ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের উমাইয়া গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন
  • বাল্যকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও লজ্জাশীল ছিলেন।
  • শিক্ষা-দীক্ষায়ও ছিলেন স্বনামধন্য।
  • মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর দু’কন্যা রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে (একজনের মৃত্যুর পর আরেকজনকে) তাঁর সাথে বিবাহ দেন। এ কারণে তাঁকে যুননুরাইন (দুই জ্যোতির অধিকারী) বলা হয়।
  • তিনি ৩৪ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।

ইসলাম গ্রহণ করার কারণে তাঁর চাচা হাকাম তাঁকে নানা রকম নির্যাতন করে। সব নির্যাতন তিনি সহ্য করেন। আত্মীয়দের নির্যাতন অসহ্য পর্যায়ে পৌঁছালে তিনি মহানবি (সাঃ)-এর কন্যা ও স্বীয় সহধর্মিণী রুকাইয়াকে নিয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন।

ইসলামের খেদমত

হযরত উসমান (রা.) ছিলেন আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী। ব্যবসা করে এসব ধন-সম্পদ অর্জন করেন। যার কারণে তাঁকে গনি (ধনী) বলা হতো। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ইসলাম ও মানবতার সেবায় অকাতরে তাঁর সম্পদ ব্যয় করেন।

মদিনার অধিবাসীদের পানির অভাব দূর করার জন্য তিনি ১৮০০০ (আঠার হাজার) দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) ব্যয় করে একটি কূপ ক্রয় করে তা ওয়াকফ্ করে দেন।

মদিনায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি মদিনাবাসীদের মাঝে ত্রাণ হিসেবে খাবার বিতরণ করেন।

মসজিদে নববিতে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় তিনি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে মসজিদ সম্প্রসারণ করেন।

তাবুক যুদ্ধের ৩০০০০ (ত্রিশ হাজার) সৈন্যের এক তৃতীয়াংশ তথা দশ হাজার সৈন্যের ব্যয়ভার তিনি গ্রহণ করেন। রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালিত এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে শক্তিশালী করতে তিনি একাই এক হাজার উট দান করেন। এ ছাড়াও তিনি সাতটি ঘোড়া ও এক হাজার দিনার মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দরবারে দান করেন।

হযরত উসমান (রা.)-কে আল্লাহ যেমন প্রচুর সম্পদ দান করেছেন তেমনি তিনি তা অকাতরে আল্লাহর পথে ব্যয় করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সর্বকালের সম্পদশালী লোকদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ।

কুরআন সংকলন

আরবের বিভিন্ন এলাকার লোকজন বিভিন্ন উপভাষায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করত। হযরত উসমান (রা.)-এর খেলাফতকালে মুসলিম সাম্রাজ্যের আরও বিস্তৃতি ঘটে। এতে কুরআন তিলাওয়াত নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। ফলে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

হযরত উসমান (রা.) এ অবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি উম্মুল মু’মিনিন হযরত হাফসা (রা.)-এর নিকট সংরক্ষিত পবিত্র কুরআনের মূল কপি সংগ্রহ করেন। হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রা.)-কে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দেন।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.), হযরত সাঈদ ইবনে আল-আস (রা.) ও হযরত আব্দুর রহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশাম (রা.)।

See also  হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও খুলাফায়ে রাশিদুনের জীবনাদর্শ ও শিক্ষা

হিজরি ৩০ মোতাবেক ৬৫১ খ্রি. তাঁরা হযরত হাফসা (রা.) থেকে সংগৃহীত কপির আলোকে আরও ৭টি কপি তৈরি করেন এবং তা মুসলিম সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন। একে ‘মাসহাফে উসমানি’ বলা হয়। ফলে সারাবিশ্বে একটি রীতিতে কুরআন তিলাওয়াত আরম্ভ হয়। এজন্য তাঁকে ‘জামিউল কুরআন’ (কুরআন একত্রকারী বা কুরআন সংকলক) বলা হয়। বিশ্বে বর্তমানে প্রচলিত কপিগুলোও মাসহাফে উসমানির প্রতিলিপি।

ঘ) হযরত আলি (রা.)

  • হযরত আলি (রা.) ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা।
  • তিনি ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন।
  • তিনি মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চাচা আবু তালিবের পুত্র ছিলেন।
  • তাঁর ডাকনাম ছিল আবু তোরাব ও আবুল হাসান।
  • দশ বছর বয়সেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। বালকদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবি।

বাল্যকাল থেকেই হযরত আলি (রা.) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে থাকতেন। মহানবি (সাঃ)-এর প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিজরত করে মদিনা যাওয়ার সময় হযরত আলি (রা.)-কে আমানতের মালের দায়িত্ব দিয়ে তাঁর বিছানায় রেখে যান। জীবনের কঠিন ঝুঁকি সত্ত্বেও তিনি এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।

মহানবি (সাঃ)-এর দেওয়া দায়িত্বের চেয়ে তিনি তাঁর জীবনের মূল্য তুচ্ছ মনে করেছেন। দায়িত্ব পালনই ছিল তাঁর কাছে বড় ব্যাপার। হযরত আলি (রা.)-এর মতো সত্যের পথে জীবনবাজি রাখা যুবক খুব কম আছে। আমরাও সত্যের পথে একনিষ্ঠ থাকব এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করব।

বীরত্ব হযরত আলি (রা.) ছিলেন শৌর্য-বীর্য ও অসাধারণ শক্তির অধিকারী। তাঁর নাম শুনলে কাফিরদের মনে ত্রাস সৃষ্টি হতো। বদর যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য রাসুল (সাঃ) তাঁকে ‘যুলফিকার’ তরবারি উপহার দেন।

খায়বারে কামুস দুর্গ জয় করলে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকে ‘আসাদুল্লাহ’ (আল্লাহর সিংহ) উপাধি প্রদান করেন। হুদায়বিয়া সন্ধিপত্র তিনি নিজ হাতে লিখেছিলেন। মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর পতাকা তাঁর হাতে ছিল।

জ্ঞান সাধনা

হযরত আলি (রা.) অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন জ্ঞান তাপস ও জ্ঞান সাধক। তিনি সর্বদা জ্ঞানচর্চা করতেন হাদিস, তাফসির, আরবি সাহিত্য ও আরবি ব্যাকরণে তিনি তাঁর যুগের সেরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

কথিত আছে যে, ‘হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন জ্ঞানের শহর, আর আলি হলেন তার দরজা’ । তাঁর রচিত ‘দিওয়ানে আলি’ নামক কাব্য গ্রন্থটি আরবি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

আমরাও সর্বদা হযরত আলি (রা.)-এর মতো জ্ঞান সাধনা করব।

অনাড়ম্বর জীবনযাপন

হযরত আলি (রা.) সারা জীবন জ্ঞান সাধনায় ব্যস্ত থাকায় সম্পদ উপার্জন করার সময় পাননি। তিনি অনাড়ম্বর ও সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন।

নিজ হাতে কাজ করে উপার্জন করতেন। কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কখনো না খেয়ে থাকতেন। তবুও আক্ষেপ করতেন না।

বাসায় কোনো কাজের লোক ছিল না। তাঁর স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদরের কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.) নিজ হাতে জাঁতা পিষে গম গুঁড়ো করতেন ও রুটি তৈরি করতেন।

মুসলিম জাহানের খলিফা হওয়ার পরও তিনি বাসায় কোনো কাজের লোক রাখেননি।

ইসলামের সেবা

তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় ধন-সম্পদ দিয়ে ইসলামের উল্লেখযোগ্য সেবা করতে পারেননি। তবে তাঁর শৌর্য-বীর্য, সাহসিকতা ও লেখনীর মাধ্যমে তিনি ইসলামের অনেক সেবা করেছেন।

সাহসিকতা, বীরত্ব, জ্ঞানচর্চা, আত্মসংযম ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনে হযরত আলি (রা.) আমাদের সকলের আদর্শ। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে আমরা অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page