Skip to content

কুরআন অর্থ, কি, কাকে বলে? পবিত্র কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

কুরআন অর্থ, কি, কাকে বলে পবিত্র কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

(১) কুরআন অর্থ কি?

কুরআন শব্দটি আরবি। এটি কারউন শব্দমূল থেকে উদ্ভূত। কারউন অর্থ পড়া বা পাঠ করা। অতএব, কুরআন শব্দের অর্থ হলো পঠিত।

(২) কুরআন কি/কাকে বলে?

ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য হযরত জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর যে কিতাব নাজিল করেছেন তাকেই আল-কুরআন বলা হয়। এটি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। সর্বকালের সকল মানুষের জন্য এ কিতাব হিদায়াতের উৎস।

আল-কুরআন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পঠিত কিতাব। প্ৰত্যেক দিনই লক্ষ-কোটি মুসলমান এ গ্রন্থ তিলাওয়াত করে থাকে। আমরা মুসলিমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে এ গ্রন্থ থেকে বিভিন্ন সূরা ও আয়াত পাঠ করে থাকি। এ জন্য এ কিতাবের নাম রাখা হয়েছে আল-কুরআন।

(৩) আল কুরআন কোথায় সংরক্ষিত ছিল?

আল-কুরআন ‘লাওহি মাহফুযে’ বা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।

(৪) সর্বপ্রথম আল কুরআন কোথায় কখন অবতীর্ণ হয়?

এটি প্রথমে কদরের রাতে প্রথম আসমানের ‘বায়তুল ইয়্যাহ’ নামক স্থানে এক সাথে নাজিল করা হয়। এরপর সেখান থেকে আল-কুরআন আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাজিল করা হয়। মহানবি যরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ৪০ বছর বয়সে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকাকালে সর্বপ্রথম সূরা আলাকের ৫টি আয়াত অবতীর্ণ হয়। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় প্রয়োজন অনুসারে অল্প অল্প করে নাজিল করা হয়। এভাবে ২৩ বছরে খণ্ড খণ্ড আকারে পুরো কুরআন নাজিল হয়।

(৫) কুরআনের সূরা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?

কুরআনের এক একটি অধ্যায়কে সূরা বলে।

আল-কুরআনের সূরাসমূহ দুইভাগে বিভক্ত। যথা- মক্কি ও মাদানি।

মহানবি (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশে নবুয়তের ত্রয়োদশ বর্ষে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। নবি করিম (সাঃ)-এর এ হিজরতের পূর্বে নাজিল হওয়া সূরাসমূহ মক্কি সূরা হিসেবে পরিচিত। এ সূরাসমূহে সাধারণত আকাইদ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন- তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, বেহেশত-দোযখ, কিয়ামত ইত্যাদি হলো মক্কি সূরাগুলোর বিষয়বস্তু।

অন্যদিকে মহানবি (সাঃ)-এর মদিনায় হিজরতের পর নাজিলকৃত সূরাসমূহকে মাদানি সূরা বলা হয়। এ সূরাসমূহে সালাত, যাকাত, সাওম, হজ, জিহাদ, হালাল-হারাম, মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।

এর সূরা সংখ্যা মোট ১১৪টি। এগুলোর মধ্যে ৮৬টি সূরা মক্কি এবং ২৮টি সূরা মাদানি।

(৬) কুরআনের আয়াত সংখ্যা কত?

কুরআনের এক একটি বাক্যকে আয়াত বলে।

কুরআন মজিদ ৩০টি (ত্রিশটি) ভাগে বিভক্ত। এর প্রতিটি ভাগকে এক একটি পারা বলা হয়। আল-কুরআনে সর্বমোট ৭টি মনজিল, ৫৪০টি রুকু ও ১৪টি সিজদার আয়াত রয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা সর্বমোট ৬২৩৬টি, মতান্তরে ৬৬৬৬টি।

(৭) আল-কুরআনের নাম কি কি?

আল-কুরআনের বেশ কিছু নাম রয়েছে। আল-কুরআনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকে এ নামসমূহ রাখা হয়েছে। এগুলো আল-কুরআনের বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের পরিচয় বহন করে।

নিম্নে এর কতিপয় নাম উল্লেখ করা হলো-

ক) আল-ফুরকান (পার্থক্যকারী): আল-কুরআন সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী। এ জন্য একে আল-ফুরকান বলা হয়। 

খ) আল-হুদা (হিদায়াত, পথপ্রদর্শন): কুরআন মজিদের মাধ্যমে ন্যায় ও সত্যের দিকে পথ প্রদর্শন করা হয় বলে একে আল-হুদা নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

গ) আর রাহমাহ (রহমত, দয়া, করুণা): পবিত্র কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও করুণাস্বরূপ। তাই একে রাহমাহ বলা হয়েছে।

See also  আসমানি কিতাব কাকে বলে, বলতে কী বুঝায়? এটি কয়টি বা কয়খানা? আসমানি কিতাব ১০৪ খানার নাম কী কী?

ঘ) আয-যিকর (উপদেশ, আলোচনা): কুরআন মজিদে বহু ঘটনার আলোচনা ও বহু উপদেশ রয়েছে। তাই একে যিকর নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ঙ) আন-নুর (জ্যোতি, আলো): পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে হালাল-হারামের রহস্য উদ্ভাসিত হয়, তাই একে ‘নুর’ বলা হয়।

(৮) আল-কুরআনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

আল-কুরআন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাগ্রন্থ। আল-কুরআন আমাদের আল্লাহ তায়ালার পরিচয় দান করে।

আমরা আল্লাহ তায়ালাকে চিনতাম না। তাঁর ক্ষমতা ও গুণাবলি সম্পর্কে জানতাম না। আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ)-এর উপর কুরআন মজিদ নাজিল করেন। মহানবি (সাঃ) আমাদের আল-কুরআন শিক্ষা দেন। ফলে আমরা আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভ করি। তাঁর আদেশ- নিষেধ জানতে পারি। কী কাজ করলে তিনি খুশি হন আর কোন কাজ করলে তিনি অসন্তুষ্ট হন তাও জানতে পারি। আল-কুরআন না থাকলে এগুলো সম্ভব হতো না।

অতএব বোঝা গেল যে, মানব জীবনে আল-কুরআনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

আল-কুরআন মানব জাতির হিদায়াতের প্রধান উৎস। কোন পথে চললে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করবে আল-কুরআন তা আমাদের দেখিয়ে দেয়। পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ ইত্যাদির পরিচয় দান করে।

আল-কুরআনের নির্দেশনামতো চলে আমরা কল্যাণ লাভ করতে পারি। আখিরাতে আল-কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। দুনিয়াতে যে ব্যক্তি আল-কুরআনের নির্দেশ মেনে চলবে সে হবে মহাসৌভাগ্যশালী। সে পাবে চিরশান্তির জান্নাত। আর যে কুরআন মজিদের আদেশ নিষেধ মানবে না তার স্থান হবে যন্ত্রণাদায়ক জাহান্নামে৷

আল-কুরআন আমাদের নৈতিক ও মানবিক আদর্শ শিক্ষা দেয়। আল-কুরআন অনুসরণ করে আমরা উত্তম চরিত্রবান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারি। ফলে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্যায়, অত্যাচার, দুর্নীতি ইত্যাদি দূরীভূত হবে।

কুরআন মজিদ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। এটি কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা নির্দিষ্ট জাতির জন্য নাজিল হয় নি। বরং এটি সর্বজনীন ও সর্বকালীন মহাগ্রন্থ। কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে সকলের হিদায়াতের জন্য এ কুরআন নাজিল হয়েছে।

(৯) আল-কুরআনের শিক্ষা

কুরআন মজিদ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস। এটি যাবতীয় জ্ঞানের ভাণ্ডার। এছাড়া মানুষের জীবনে যেসব সমস্যার উদ্ভব হয়ে থাকে তার সমাধানের ব্যাপারে এতে ইঙ্গিত রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আমি এ কিতাবে কোনো কিছুই বাদ দেই নি।”

(সূরা আল-আনআম, আয়াত ৩৮)

আল-কুরআনের সকল জ্ঞান ও শিক্ষাই সুস্পষ্ট। সংক্ষিপ্ত ও প্রামাণ্য। এতে উল্লেখিত সকল প্রকার আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধান সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য, যুগোপযোগী ও যুক্তিসংগত। এ কিতাবে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। এটি সকল প্রকার ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে।

আল-কুরআনের প্রথমেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

“এটি সেই কিতাব, যাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২)

আল-কুরআন ইসলামি শরিয়াহ’র প্রধান উৎস। মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবন কেমন হবে তা এ কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। মানুষ কীভাবে ইবাদত করবে, কীভাবে চরিত্র গঠন করবে তাও এ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।

প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ হযরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ (রাঃ)-এর মতে, আল-কুরআনে বহু জ্ঞানের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলো মোট পাঁচভাগে বিভক্ত। যথা-

  1. ইলমুল আহকাম বা বিধি-বিধান সম্পর্কিত জ্ঞান।
  2. ইলমুল মুখাসামা বা বিতর্ক বিদ্যা।
  3. ইলমুত তাযকির বি আলা ইল্লাহ বা আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও নিদর্শন সম্পর্কিত জ্ঞান।
  4. ইলমুত তাযকির বি আইয়ামিল্লাহ বা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিজগতের অবস্থা, তাঁর প্রদত্ত পুরস্কার ও শাস্তি সংক্রান্ত জ্ঞান।
  5. ইলমুত তাযকির বিল মাউত ওয়ামা বাদাল মাউত বা মৃত্যু ও পরকাল সম্পর্কিত জ্ঞান।

প্রকৃতপক্ষে আল-কুরআন মানবজাতির মহামুক্তির সনদ। এটি মানুষকে আলোর দিকে পরিচালনা করে। শান্তি ও কল্যাণের পথ দেখায়। সুতরাং আমরা আল-কুরআন পড়ব। এর অর্থ জানব এবং তদনুযায়ী আমল করব। আল-কুরআনের জ্ঞান শিক্ষা করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করব।

See also  আল-কুরআনের পরিচয়

কুরআন মজিদ তিলাওয়াতে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত। এর দ্বারা বান্দা বিরাট সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়। শুধু তিলাওয়াতকারীই নয় বরং তিলাওয়াতকারীর মাতাপিতাও এতে সম্মানিত হন। হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তদনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতামাতাকে মুকুট পরানো হবে। এ মুকুটের ঔজ্জ্বল্য সূর্যের আলোর চেয়েও বেশি হবে।

অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই উত্তম যে কুরআন শেখে এবং অপরকেও শিক্ষা দেয়।”

(বুখারি)

তিনি আরও বলেছেন,

“তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর। কেননা কিয়ামতের দিন তা নিজ পাঠকারীদের জন্য সুপারিশ করবে।”

(মুসলিম)

অতএব বোঝা গেল কুরআন তিলাওয়াত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। আমরা বেশি বেশি নিয়মিত কুরআন পড়ব এবং অন্যকেও কুরআন পড়তে উৎসাহিত করব।

(১০) কুরআন পাঠে তাজবিদের গুরুত্ব

সহিহ শুদ্ধভাবে কুরআন পাঠের রীতিকে তাজবিদ বলে। আল-কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত লাভের জন্য সহিহ- শুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে হবে। আর এ জন্য তাজবিদের জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাজবিদ অনুসারে কুরআন তিলাওয়াত করা ওয়াজিব। তাজবিদ অনুসারে কুরআন না পড়লে পাঠকারী গুনাহগার হবে এবং তার নামায শুদ্ধ হবে না।

তাজবিদ অনুযায়ী কুরআন পড়া সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আপনি ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে কুরআন তিলাওয়াত করুন।”

(সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত ৪ )

একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“ইলমে কুরআনে পারদর্শী ব্যক্তি ঐসব ফেরেশতার দলভুক্ত, যারা নেককার ও আল্লাহর হুকুমে লেখার কাজে ব্যস্ত। আর যে ব্যক্তি কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও বারবার চেষ্টা করে কুরআন তিলাওয়াত করে, সে দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে।”

(বুখারি ও মুসলিম)

সুতরাং আমরা নিয়মিত তাজবিদসহ কুরআন তিলাওয়াত করব। যদি কুরআন তিলাওয়াত করতে কষ্ট হয় তবুও পড়তে চেষ্টা করব। কোনো অবস্থাতেই কুরআন তিলাওয়াত ত্যাগ করব না। আর তাজবিদ শিক্ষা করব। এতে আমরা বিরাট সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হতে পারব।

নাযিরা তিলাওয়াত হলো দেখে দেখে কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করা। নাযিরা তিলাওয়াতের ফজিলত অনেক। কুরআন মজিদ তিলাওয়াতের ফজিলতের বর্ণনা আমরা জেনেছি। অতএব আমরা নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করব এবং এর পূর্ণ ফজিলত লাভ করতে চেষ্টা করব।

(১১) কুরআন তিলাওয়াতের আদব

কুরআন মজিদ আল্লাহ তায়ালার বাণী। আল্লাহ তায়ালা যেমন মহান তেমনি তাঁর পবিত্র কালামও মহান। আল্লাহর কালামের মর্যাদা অন্য সব কালামের চেয়ে এত বেশি, যেমন আল্লাহ তায়ালার মর্যাদা সমস্ত সৃষ্টিজগতের চেয়ে বেশি। অতএব, সর্বোচ্চ সম্মান ও আদবের সাথে পবিত্র কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াত করতে হবে।

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের কতিপয় আদব নিচে উল্লেখ করা হলো-

  1. পূর্ণরূপে ওযু করে পাক-পবিত্র স্থানে বসা।
  2. কিবলামুখী হয়ে নামাযের অবস্থার মতো বসা।
  3. তিলাওয়াতের আগে কয়েক বার দুরূদ শরিফ পড়া।
  4. আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলে তিলাওয়াত শুরু করা।
  5. হিফয বা মুখস্থ করার নিয়ত না থাকলে ধীরে স্থিরে তাজবিদের সাথে তিলাওয়াত করা।
  6. সক্ষম হলে অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করা।
  7. অর্থ বুঝে না আসলে কুরআন মজিদের প্রতি ভালোভাবে মনোযোগ দেওয়া।
  8. সুন্দর সুরে তিলাওয়াত করা।
  9. তিলাওয়াতের সময় কোনোরূপ কথাবার্তা, হাসি-ঠাট্টা না করা।
  10. আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য তিলাওয়াত করা।
  11. তিলাওয়াত শেষে খুব সম্মান ও তাযিমের সাথে কুরআন মজিদকে পবিত্র উঁচুস্থানে রেখে দেওয়া।

আমরা আদবের সাথে নিয়মিত কুরআন পড়ব। পবিত্র কুরআনের প্রতি যেন কোনোরূপ বেয়াদবী না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখব।

(১২) আল-কুরআন ও নৈতিক শিক্ষা

আল-কুরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। এটি জ্ঞান বিজ্ঞানের মূল উৎস। নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও এ কিতাব বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

কুরআন মজিদ হলো নৈতিকতার আধার। নীতি- নৈতিকতার সকল দিকই এ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে নানাভাবে নৈতিকতার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এ পাঠে আমরা নৈতিক শিক্ষা প্রদানে আল-কুরআনের নানা দিকের কথা জানব।

See also  কুরআন ও হাদিসের মধ্যে পার্থক্য

আল-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী। এতে আল্লাহ তায়ালার পরিচয়ও বর্ণনা রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার নানা গুণের পরিচয় পাই। যেমন- তিনি করুণাময়, অসীম দয়ালু, ক্ষমাশীল, ন্যায়পরায়ণ। মহান আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়া আমাদের কর্তব্য।

আল-কুরআন থেকে আমরা এসব গুণের পরিচয় লাভ করব। এরপর আমরা এগুলোর চর্চা করব। ফলে নীতি-নৈতিকতার দ্বারা আমরা আমাদের চরিত্র সুন্দর করতে পারব।

দুনিয়াতে আগমনকারী নবি-রাসুলগণের বর্ণনা রয়েছে আল-কুরআনে। এতে তাঁদের পরিচয়, তাঁদের স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদির বিবরণ দেওয়া হয়েছে। নবি-রাসুলগণের সফলতা, কৃতিত্বের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ। নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি তাঁদের চরিত্রের ভূষণ ছিল। তাঁরা ছিলেন মানবজাতির জন্য আদর্শ। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করেছে তারাই সফলতা লাভ করেছে। আর আল-কুরআনের শিক্ষার দ্বারাই আমরা তাঁদের অনুসরণ করতে পারি।

আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ) ছিলেন নবি-রাসুলগণের সর্দার। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। সকল গুণের পরিপূর্ণ সমন্বয় তাঁর চরিত্রে ঘটেছিল।

আল-কুরআনে বলা হয়েছে,

“নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর চরিত্রে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে।”

(সূরা আল-আহযাব : ২১)

মহানবি (সাঃ)-এর চরিত্র ও নৈতিকতার কথা কুরআন মজিদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

একবার উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,

“আল-কুরআনই তো তাঁর (রাসুলের) চরিত্র।”

(আল-হাদিস)

অর্থাৎ আল-কুরআনের সমস্ত শিক্ষা ও নৈতিকতাই তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল। এসব শিক্ষা অনুশীলন করে আমরাও প্রিয়নবি (সাঃ) এর উত্তম চরিত্র ও নৈতিকতার অনুকরণ করতে পারি।

কুরআন মজিদে পূর্ববর্তী বহু জাতি ও মানুষের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যারা তাদের পাপ ও অনৈতিক কাজের জন্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যেমন- আদ জাতি, ছামুদ জাতি, ফিরআউন, নমরুদ, কারুন ইত্যাদি। এসব জাতি ও ব্যক্তিদের বর্ণনা আমাদের অনৈতিকতা থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেয়। অতএব, তারা যেসব অনৈতিক কাজ করত তা থেকে আমরা বিরত থাকব। আর সর্বাবস্থায় নৈতিকতার অনুশীলন করব।

নৈতিক জীবনযাপনের জন্য অনেক নির্দেশনা আল-কুরআনে দেওয়া হয়েছে। এগুলো আমাদের নৈতিক জীবনযাপনে উৎসাহিত করে।

নিচে কয়েকটি নীতিমূলক কুরআনের আয়াত উল্লেখ করা হলো-

“সে-ই সফলকাম হবে যে নিজেকে পবিত্র করবে। আর যে নিজেকে কলুষিত করবে সেই ব্যর্থ হবে।”

(সূরা আশ্-শামস, আয়াত ৯-১০)

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৫৩)

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচারের নির্দেশ প্রদান করেন।”

(সূরা আন-নাহল, আয়াত ৯০)

“আর ক্ষমা করে দেওয়াই তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৩৭)

“আর তোমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে, নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে (কিয়ামতে) জিজ্ঞাসা করা হবে।”

(সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩৪)

এভাবে আল-কুরআনের বহু আয়াতে নৈতিক গুণাবলি অনুশীলনের জন্য আদেশ ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনৈতিক ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার শিক্ষাও দেওয়া হয়েছে।

আমরা অনৈতিকতা থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধমূলক কয়েকটি আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

“তোমরা খাও ও পান কর। তবে অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ তায়ালা) অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।”

(সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত ৩১)

“অহংকারবশত তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।”

(সূরা লুকমান, আয়াত ১৮)

“আর তোমরা একে অপরের পেছনে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর।”

(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১২)

এছাড়া আরও অনেক আয়াতের দ্বারা মানবজাতিকে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব শিক্ষা জানব এবং নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করব। ফলে আমাদের চরিত্র সুন্দর হবে। আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করব।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts