যে মুক্তাদি ইমামের সাথে সালাতের প্রথম রাকআত থেকে পায় নি, তাকে মাসবুক (পিছে পড়া) বলে।
জামাতে নামাজ আদায়ের আগ্রহে মুসল্লিরা আগেই মসজিদে উপস্থিত হন। তবে কখনো কোনো কারণে নামাজে হাজির হতে দেরি হয়ে যায়। তখন রাকাত ছুটে যায়। জামাতে রাকাত ছুটে গেলে করণীয় ও মাসবুকের নামাজের নিয়ম সমূহ জানা থাকা প্রয়োজন।
জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নামাজের শুরুতে অংশগ্রহণ করতে না পারলে, রুকু, সেজদা বা তাশাহহুদ (প্রথম/শেষ বৈঠক)-এ এসে হাজির হয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে দেখা যায় অনেক মুসল্লিকে। অথচ জামাতে রাকাত ছুটে গেলে করণীয় বা মাসবুকের নামাজের নিয়ম সমূহ জানলে বিব্রতকর এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচা খুব সহজ।
আজকে আমরা জানব জামাতে রাকাত ছুটে গেলে করণীয় ও মাসবুকের নামাজের নিয়ম-বিধান সম্পর্কে।
(১) জামাতে রাকাত ছুটে গেলে করণীয় কী? মাসবুকের নামাজের নিয়মের বর্ণনা
জামাতে রাকাত ছুটে গেলে করণীয় বা মাসবুকের নামাজের নিয়ম হলো-
- রুকুসহ ইমামের সাথে যে কয় রাকআত পাওয়া যায় তা আদায় হয়ে যায়। রুকুর পর ইমামের পেছনে ইক্তেদা বা নামাযে দাঁড়ালে ঐ রাকআত মাসবুককে আদায় করতে হবে।
- মাসবুক ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায় করতে গিয়ে ইমামকে যে অবস্থায় পাবে, সে অবস্থাতেই নিয়ত করে নামাযে অংশগ্রণ করবে।
- ইমামের সাথে সে নামায পড়তে থাকবে এবং যথারীতি রুকু সিজদাহ করে তাশাহহুদ পাঠের জন্য শেষ বৈঠকে বসে যাবে এবং ‘আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু’ পযর্ন্ত পড়ে অপেক্ষা করবে।
- ইমাম সালাম ফিরালে মাসবুক ব্যক্তি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং ছুটে যাওয়া রাকআতগুলো যথারীতি আদায় করবে।
- প্রথমে কিরাআতওয়ালা রাকআত অর্থাৎ সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মিলানো রাকআত এবং পরে কিরাআতবিহীন শুধু সূরা ফাতিহাওয়ালা রাকআত পড়বে।
- তারপর শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করবে।
মুক্তাদির সালাত এক, দুই, তিন, চার রাকআত ছুটে গেলে, তা আদায়ে কিছুটা তারতম্য রয়েছে-
পূর্বই বলা হয়েছে, যে ইমামের সাথে রুকু পেলো, সে উক্ত রাকাত পেয়ে গেল। রুকুসহ ইমামের সাথে যে কয় রাকআত পাওয়া যায় তা আদায় হয়ে যায়, বাকি রাকাতগুলেঅ আদায় করতে হয়।
- এক রাকাত নামাজ ছুটলে- মুক্তাদি ইমামের পেছনে ইক্তেদা করার পর যদি এক রাকআত ছুটে যায়, তবে ইমামের সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে যাবে এবং ছুটে যাওয়া এক রাকআত সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মিলিয়ে আদায় করে নেবে।
- দুই রাকআত ছুটে গেলে- ইমামের সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদি দাঁড়িয়ে যাবে এবং ছুটে যাওয়া দুই রাকআত যথানিয়মে আদায় করবে, যেভাবে ফজরের দুই রাকআত ফরয সালাত একাকী আদায় করা হয়।
- তিন রাকআত ছুটে গেলে- ইমামের সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদি দাঁড়িয়ে যাবে। এক রাকআত সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মিলিয়ে আদায় করে প্রথম বৈঠক করবে। এ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর আবার দাঁড়িয়ে যাবে এবং বাকি দুই রাকআতের প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মিলিয়ে আদায় করবে এবং পরের রাকআতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে। এরপর শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবে।
- চার রাকআত ছুটে গেলে- অর্থাৎ মুক্তাদি ইমামকে শেষ বৈঠকে পেলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদি দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর সে একাকী চার রাকআত নামায পড়লে যেভাবে পড়ত, ঠিক সেভাবে চার রাকআত নামায আদায় করবে।
- একদম শেষ বৈঠকে পেলে: চার, তিন, দুই রাকআত বিশিষ্ট নামাযে মুক্তাদি ইমামকে শেষ বৈঠকে পেলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদি দাঁড়িয়ে যাবে। যথানিয়মে ছুটে যাওয়া রাকআতগুলো এমনভাবে আদায় করে নেবে, যেভাবে একজন মুসল্লি একাকী চার, তিন, দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায় করে থাকে।
দুই ধরণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে, তা হলো-
এক. কেবল মাত্র জামাত শুরু হয়ে ইমাম কেরাত পড়া শুরু করেছেন এ সময় জামাতে অংশ নিতে ইচ্ছুক আগত মুসল্লি:
নিয়ত করে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে জামাতে শরিক হবেন। ফজর, মাগরিব ও এশার নামাজের ক্ষেত্রে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবেন। জোহর ও আসরের নামাজের ক্ষেত্রে কেবল ‘সানা’ (সুবহানাকাল্লাহুম্মা…) পড়বেন এবং ইমামের অনুসরণ করবেন।
দুই. ইমাম রুকুতে থাকাকালীন আগত মুসল্লি:
সোজা দাঁড়িয়ে নিয়ত করে আল্লাহু আকবর বলে নামাজে অংশ নিবেন এবং আরেকটি তাকবির (আল্লাহু আকবর) বলে দ্রুত রুকুতে চলে যাবেন।
রুকুতে যেতে যেতে ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে গেলে দেরিতে আসা মুসল্লি ইমামের সঙ্গে সিজদা করবেন ঠিক, তবে তাকে ওই রাকাতটি আবার আদায় করতে হবে, কারণ ইমামের সাথে রুকু না পেলে সে উক্ত রাকাতও পেল না। যে ইমামের সাথে রুকু পাবে তর উক্ত রাকাআত আদায় হয়েছে বলে গণ্য হবে।
এ ক্ষেত্রে ইমাম রুকু শেষ করে সিজদায় গেলে, পরে এসে কেউ কেউ একাকি রুকু আদায় করে ইমামের সঙ্গে সিজদায় সম্পৃক্ত হয়ে মনে করেন রাকাত পেয়ে গেছেন। পরে ওই রাকাত আদায় করেন না। এতে ওই ব্যক্তির নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। কারণ ইমামের সঙ্গে রুকু না পেলে রাকাত পাওয়া হয় না।
(২) রমজানে বিতরের জামাতে রাকাত ছুটে গেলে করণীয় কী?
- কোনো ব্যক্তি যদি বিতর নামাজের দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকাতে শরিক হয় তা হলে ইমামের সঙ্গেই দোয়া কুনুত পড়ে নেবে। এর পর ছুটে যাওয়া নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে আদায় করবে। অর্থাৎ অন্য নামাজে মাসবুক হলে যেভাবে আদায় করতে হয় সেভাবেই আদায় করবে।
- আর যদি তৃতীয় রাকাতের রুকুতে শরিক হয় তা হলে ওই রাকাতের দোয়া কুনুত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। তাই এ ক্ষেত্রেও পরবর্তী সময় আর দোয়া কুনুত পড়বে না।
- আর যদি শেষ রাকাতের রুকু না পায় তা হলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত পড়বে এবং তৃতীয় রাকাতে দোয়া কুনুত পড়বে।
(দেখুন: ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১; শরহুল মুনইয়া ৪২১)
শেষ কথা-
সুস্থ ও স্বাভাবিক মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। নামাজের ক্ষেত্রে জামাতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অনেক বেশি, এটা অনেক বড় সওয়াবের কাজও বটে।
কিন্তু অনেকেই অপরিহার্য এই আমল জামতের নামাজে ভুল করে থাকেন। জামাতে রাকাত ছুটে গেলে করণীয় ও মাসবুকের নামাজের নিয়ম অনেকেরই জানা নেই। ফলে বিশেষ করে জামাতের নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় মসজিদে আসা সাধারণ মুসল্লিদের অনেকের নামাজে অনেক অসঙ্গতি।
তাই আশা করি, আজকের এই আলোচনাটি দ্বারা অনেক মুসলিম ভাই-বোন উপকৃত হবেন, ইংশাআল্লাহ।
আজকের আলোচনাটি এখানেই শেষ হচ্ছে, আল্লাহ হাফেজ।
[সূত্র: এনসিটিবি]