Skip to content

 

জুমার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, আমল, আদব, ফজিলত, ইতিহাস, গুরুত্ব, রাকাত সংখ্যা ও শর্তসমূহ

জুমার নামাজের নিয়ত, নিয়ম, আমল, আদব, ফজিলত, ইতিহাস, গুরুত্ব, রাকাত সংখ্যা ও শর্তসমূহ

উম্মতে মুহাম্মাদির সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। আর এই দিনের শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো জুমার সালাত। তাই আমাদের এই জুমার নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিক জানা থাকা দরকারি বিষয়।

তাই এই পোষ্টটির মাধ্যমে জুমার নামাজের নিয়ম, জুমার নামাজের নিয়ত, জুমার নামাজের আমল, জুমার নামাজের আদব, জুমার নামাজের ফজিলত, জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যাসহ আরও বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিতভাবে আপানদের সামনে তুলেধরার চেষ্টা করব, ইংশাআল্লাহ।

(১) জুমার নামাজ কাকে বলে?

জুমা শব্দের শাব্দিক অর্থ একত্রিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া, সমবেত হওয়া ইত্যাদি।

শুক্রবারে সকল মুসলমান একত্রিত হয়ে যুহরের সালাতের পরিবর্তে জামাআত সহকারে যে দুই রাবাক ফরজ সালাত আদায় করে তাকে জুমার সালাত বলে।

জামাত ও খুতবা ছাড়া জুমার নামাজ হয়না। জুমার নামাজের খুতবা শোনা ওয়াজিব বা অবশ্যক।

জুমার জমায়েত মুসলিমদের একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র। সাপ্তাহিক এই প্রশিক্ষণে মুসলিমের বিস্মৃত কথা স্মরণ হয়, চলার পথে অন্ধকারে আলোর দিশা পায়, সুন্দর চরিত্র ও ব্যবহার গড়তে সহায়তা পায়, ঈমান নবায়ন হয়, হৃদয় নরম হয়, মৃত্যু ও পরকালের স্মরণ হয়, তওবা করতে অনুপ্রাণিত হয়, ভালো কাজ করতে এবং খারাপ কাজ বর্জন করতে উৎসাহ্‌ পায়, ইত্যাদি।

খুতবার আসল উদ্দেশ্য হল জনসাধারণকে শরীয়তের শিক্ষা ও উপদেশ দান করা।

জুমার নামাজের আগ খুতবার দেওয়া মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায় মুসলিমদেরকে সপ্তাহান্তে একবার উপদেশ ও পথ নির্দেশনা দান করার মত মহান উদ্দেশ্য সাধিত হয়।

জুমার নামজ নামাজ ফরজরূপে আদায় করা হয়, সময় একই হলেও যোহরের সাথে জুমার নামাজের নিয়মগত কিছু পার্থক্য রয়েছে।

(২) জুমার নামাজের নিয়ম

জুমার নামাজের নিয়ম হলো-

  1. জুমার দিনে যদি কেউ আগে ভাগে মসজিদে আসে তাহলে প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাআত তাহিয়্যাতুল দুখুলুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ নফল নামাজ আদায় করে।
  2. তারপর চার রাকাআত কাবলাল জুমা সুন্নাত নামাজ আদায় করবে অথবা, খুতবা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দু রাকাত দু রাকাত করে সাধ্যমত যত পারা যায় নফল নামাজ পড়বে।
  3. ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য আসলে সব নামাজ বন্ধ।
  4. এর পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সময় উপযোগী খুতবা (ভাষণ) প্রদান করেন। মুসল্লিদের জন্য এই খুতবা শোনা ওয়াজিব। এই সময় কথা বলা নিষেধ। তবে ইমাম খুতবা দেয়া অবস্থায় কেউ যদি মসজিদে আসে তাহলে (সংক্ষিপ্তভাবে) কেবল দু রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বে, তারপর মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনবে।
  5. খুতবা শেষে ইমামের পিছনে দুই রাকাআত জুমার ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়।
  6. জুমার ফরজ নামাজ শেষে মসজিদে পড়লে চার রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ অথবা, বাড়িতে গিয়ে পড়লে দুই রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়।
  7. কোনো কারণে জুমার নামাজে শরিক হতে না পারলে তখন যোহরের নামাজ আদায় করতে হয়।

(৩) জুমার নামাজের নিয়ত

আপনি কোন ওয়াক্তের, কত রাকাত (২/৩/৪), কি সালাত (ফরজ, সুন্নত নাকি নফল সালাত) পড়ছেন, অন্তরে শুধুমাত্র এই ধারণা বা ইচ্ছাটুকু থাকলেই আপনার নিয়ত করা হয়ে যাবে।

তাই জুমার নামাজের নিয়ত করার সঠিক পদ্ধতি হল-

  1. প্রথমে সালাত শুরু করার পূর্বে কোন সালাত, কয় রাকআত, তা ফরজ, সুন্নত না কি নফল এ বিষয়গুলো অন্তরে তা অন্তরে স্থির করা।
  2. অত:পর মহান আল্লাহর সীমাহীন সম্মান-মর্যাদার কথা স্মরণ করে অন্তরে ভয়ভীতি, বিনয়-নম্রতা ও একাগ্রতা সহকারে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সালাত শুরু করা।

প্রথমত,

সালাতে দাঁড়িয়ে মুখে উচ্চারণ করে প্রচলিত গদ বাধা নিয়ত পাঠ করা বিদআত। চাই আরবিতে “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি…” পাঠ করা হোক বা বাংলায় তার অনুবাদ পাঠ করা হোক। 

কেননা সালাত শুরু করার পূর্বে “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি…” পাঠ করার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় কোনো নির্দেশনা নেই। সাহাবিগণও কখনো এমন আমল করেন নি। এমন কি চার মাজহাবের সম্মানিত ইমামগণ তথা ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল প্রমুখ মনিষীগণ কেউই তা পড়ার কথা বলেন নি।

সমাজে প্রচলিত, “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি…” এই প্রচলিত গদবাধা নিয়ত কুরআন ও হাদীসে কোথাও নাই। এটি কে বা কারা বানিয়ে আমাদের পাকভারত উপমহাদেশে চালু করে দিয়েছে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্য জনক।
সুতরাং এটি দ্বীনে মধ্যে নতুন সংযোজন। আর দ্বীনের মধ্যে নব সংযোজিত প্রতিটি বষয় বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণতি জাহান্নাম।

দ্বিতীয়ত,

মনে রাখতে হবে, নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হয় না। কেননা, আমল সমূহ নিয়তের (ইচ্ছার) উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করবে।

নিয়ত হচ্ছে, কোন কিছু করার ইচ্ছা করা এবং সংকল্প করা। উহার স্থান হচ্ছে অন্তর, মুখের উচ্চারণ বা জবানের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। মুখে নিয়ত পাঠ করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ কারো হতেই কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

সালাত শুরু করার পূর্বে কোন সালাত, কয় রাকআত, তা ফরজ, সুন্নত না কি নফল এ বিষয়গুলো অন্তরে জাগ্রত থাকলে তাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট। মুখে গদবাধাঁ কিছু মুখস্থ উচ্চারণ রাসূলের (সা.) আমলের বিপরীত।

(৪) জুমার দিনের আমল

জুমার দিনের আমল সমূহ হলো-

  1. সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।
  2. জুমা দিবসে বেশি বেশি করে দরুদ পড়া।
  3. নখ কাটা।
  4. মিসওয়াক করা।
  5. জুমার দিনে ইবাদাতের নিয়তে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা।
  6. মসজিদে যাওয়ার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা।
  7. ‍চুলে তেল ব্যবহার করা।
  8. উত্তম পোশাক পরে জুমা আদায় করা। 
  9. আগে-ভাগে মসজিদে উপস্থিত হওয়া।
  10. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
  11. খুতবা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত, দু রাকাত দু রাকাত করে সাধ্যমত যত পরা যায়, নফল নামাজ পড়া
  12.  ইমাম যখন খুতবা দেয় তখন চুপ থাকা, মনোযোগসহ খুতবা শোনা।

(৫) জুমার দিনের আদব

জুমার দিনের আদব সমূহ হলো-

ক) খুতবা শোনা ওয়াজিব (অবশ্যক)। আর এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা, সালাম ও সালামের উত্তর, হাঁচির হামদের জবাব, এমনকি আপত্তিকর কাজে বাধা দেওয়াও নিষিদ্ধ

খ) খুতবা চলা অবস্থায় কেউ মসজিদ এলে মসজিদে প্রবেশ করার আগে রাস্তায় খুতবা শুনতে পেলে রাস্তাতেও কারো সঙ্গে গল্প-গুজব করাও বৈধ নয়

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন,

“জুমার দিন ইমামের খুতবা দানকালে কথা বললে, তুমি অনর্থ কর্ম করলে এবং (জুমা) বাতিল করলে।”

(ইবনে খুযাইমাহ্‌, হাাদিসের মান সহিহ্, ৭১৬ নং তারগিব)

উক্ত হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,

নবী (ﷺ) বলেন, “জুমার দিন ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় যদি তুমি তোমার (কথা বলছে এমন) সঙ্গীকে ‘চুপ কর’ বল তাহলে তুমিও অসার কর্ম করবে।”

(সহিহ্ বুখারী ৯৩৪ ও সহিহ্ মুসলিম ৮৫১)

মহানবী (ﷺ) বলেন,

“জুমার দিন ৩ শ্রেণীর মানুষ (মসজিদে) উপস্থিত হয়। প্রথম শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত হয়ে বাজে কথা বলে; তার সেটাই হল প্রাপ্য। দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত হয়ে দুআ করে; আর সে এমন লোক, যে আল্লাহর কাছে দুআ করে, আল্লাহ তার দুআ কবুল করেন অথবা না করেন। আর তৃতীয় শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত হয়ে চুপ ও নির্বাক থাকে, কোন মুসলিমের কাঁধ ডিঙিয়ে (কাতার চিরে) আগে যায় না এবং কাউকে কোন প্রকার কষ্ট দেয় না। এই শ্রেণীর মানুষের জন্য তার ঐ কাজের ফলে তার ঐ জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত ৩ দিনে (অর্থাৎ, ১০ দিনে) কৃত গুনাহর কাফফারা হবে। কেননা আল্লাহ আয্‌যা অজাল্ল্‌ বলেন, (من جاء بالحسنة فله عشر أمثالها) (অর্থাৎ, যে ব্যক্তি একটি সওয়াবের কাজ করবে, সে তার ১০ গুণ সওয়াব লাভ করবে।)”

(সুনানে আবূদাঊদ ১১১৩ নং)

গ) ইমাম মিম্বরের উপর বসে থাকা শুধু অবস্থায়, অর্থাৎ খুতবা বন্ধ থাকা অবস্থায় কথা বলা সমস্যা নয়

ষা’লাবাহ্‌ বিন আবী মালেক কুরাযী বলেন,

“হযরত উমার ও উসমানের যুগে ইমাম (খুতবা দেওয়ার জন্য) বের হলে আমরা সালাত ত্যাগ করতাম এবং ইমাম খুতবা শুরু করলে আমরা কথা বলা ত্যাগ করতাম।”

(ইবনে আবী শাইবা, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩৪০পৃ:)

ঘ) খুতবা শুনতে শুনতে ঘুম এলে (কথা না বলে) ইঙ্গিতে পাশের সাথীর সাথে জায়গা বদল করা উত্তম, খুতবা চলাকালে তন্দ্রা (ঢুল) এলে জায়গা পরিবর্তন করে বসা বিধেয়, এতে তন্দ্রা দূরীভূত হয়ে যায়

যেহেতু মহানবী (ﷺ) বলেন,

“যখন তোমাদের কেউ জুমার দিন ঢুলতে শুরু করে, তখন তার উচিৎ তার সঙ্গীর জায়গায় গিয়ে বসা এবং তার সঙ্গীর উচিৎ তার ঐ জায়গায় বসা।”

(জামে বায়হাকী ৮১২নং)

মহানবী (ﷺ) বলেন,

“তোমাদের কেউমসজিদে বসে ঢুললে সে যেন তার বসার জায়গা পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় বসে।”

(সুনানে আবূদাঊদ ১১১৯ নং ও সুনানে জামে তিরমিযী ৮০৯নং)

ঙ) বিশেষ করে জুমার নামাজ বা ঈদের নামাজে অত্যন্ত ভিঁড়ের ফলে যদি সিজদাহ করার জায়গা না পাওয়া যায়, তারপরেও জামাআতে নামাজ পড়তে হবে

ইবনে উমার (রাঃ) বলেন,

“নবী (ﷺ) আমাদের কাছে সিজদার সূরা পড়তেন। অতঃপর সিজদায় জায়গায় তিনি সিজদাহ করতেন এবং আমরাও সিজদাহ করতাম। এমনকি ভিঁড়ের ফলে আমাদের কেউ সিজদাহ করার মত জায়গা না পেলে অপরের (পিঠের) উপরে সিজদাহ করতাম।”

(সহিহ্ বুখারী ১০৭৬ নং)

চ) খুতবা চলা অবস্থায় হাতে কোন কিছু নিয়ে ফালতু খেলা করা বৈধ নয়। যেমন মিসওয়াক করা, তাসবীহ-মালা (?) নিয়ে খেলা করা, মসজিদের মেঝে, কাঁকর বা কুটো স্পর্শ করে খেলা করা ইত্যাদি

See also  জুমার নামাজ কত রাকাত? বা জুম্মার নামাজ কয় রাকাত? (jumma namaz rakat ‍sonkha)

মহানবী (ﷺ) বলেন,

“যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করে জুমার উদ্দেশ্যে (মসজিদে) উপস্থিত হয়। অতঃপর মনোযোগ সহকারে (খুতবাহ্‌) শ্রবণ করে ও নীরব থাকে সেই ব্যক্তির ঐ জুমা থেকে দ্বিতীয় জুমার মধ্যবর্তীকালে সংঘটিত এবং অতিরিক্ত তিন দিনের পাপ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (খুতবা চলাকালে) কাঁকর স্পর্শ করে সে অসার (ভুল) কাজ করে।”

(সহিহ্ মুসলিম ৮৫৭ নং ও সুনানে আবূদাঊদ ১০৫০ নং)

(৬) জুমার/জুম্মার দিনের ফজিলত

জুমার/জুম্মার দিনের ফজিলতসমূহ নিম্নরূপ-

জুম্মার দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়।

ক) জুমার দিনের ফজিলত অনেক বেশি। ‘সূরা জুমা’ নামে পবিত্র কুরআনে একটি পূর্ণ সূরা রয়েছে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন সালাতের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। এরপর সালাত শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও।”

(সূরা জুমা, আয়াত ৯-১০ নং)

খ) আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে।

কুতায়বা (রহঃ) …. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

“সূর্য উদিত হয় এমন সকল দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনেই আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান হয়। এই দিনেই তাঁকে তা থেকে বের করা হয়। আর এই জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।”

(সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৮ নং)

গ) জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করায় অনেক ফজিলত রয়েছে

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত বিশেষ নুর (আলো) দ্বারা আলোকিত করে দেবেন।”

(বায়হাকি)

(৭) জুম্মা/জুমার নামাজের ফজিলত

জুম্মা বা জুমার নামাজের ফজিলতসমূহ নিম্নরূপ-

ক) জুমার নামাজে জন্য যারা আগে আগে মসজিদে আসে তাদের জন্য বিশেষ পুরুষ্কারের গোষণা রয়েছে

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে ব্যাক্তি জুমার দিন জানবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাত-এর জন্য প্রথমে আগমন করে সে যেন, একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন, একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হন তখন ফিরিশতাগণ জিকর শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন।”

(সহীহ বুখারী)

খ) জুমার নামাজে রয়েছে গুনাহ মাফের সুযোগ

আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে জুমার দিন গোসল করে, এরপর তার পোশাক পরিধান করে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে, এরপর ধীরস্থিরভাবে জুমার দিকে যায়, কাউকে ডিঙ্গিয়ে (সামনে) যাওয়া থেকে বিরত থাকে, কাউকে কষ্ট দেয় না, তাওফীক মতো রুকু (সালাত আদায়) করে, এরপর ইমাম সালাত সমাপ্ত করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার দুই জুমার মাঝে যা (গুনাহ) হয়েছে  তা মাফ করে দেওয়া হয়।”

(মুসনাদে আহমদ)

গ) জুমার নামাজের মাঝে একটা সময় রয়েছে যখন দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে

আবু দারদা ইবনে আবু মুসা আশআরি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

“আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি জুমার দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে বলেছেন, ইমামের মিম্বরে বসার সময় থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত সময়টিই সেই বিশেষ মুহূর্ত।”

(আবু দাউদ)

(৮) জুমার নামাজের ইতিহাস

প্রথম হিজরিতে মুসলমানদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ করা হয়।

রাসূল (সা.) এর হিজরতকালে মক্কায় থাকা অবস্থায়, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে, জুমার নামাজ ফরজ করা হয়েছিল। তবে সর্ব প্রথম জুমার নামাজ মদিনায় আদায় করা হয়।

রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে মক্কা ছেড়ে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের নামাজের সময় হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।

তবে, হিজরতের পরে ও জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে, নবুওয়তের দ্বাদশ বর্ষে মদিনায় নাকীউল খাজিমাতে হজরত আসআদ বিন যুরারাহ (রা.) এর ইমামতিতে সম্মিলিতভাবে শুক্রবারে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের দলিল আছে হাদিসে। তবে সেটা ছিল নফল নামাজ।

এ প্রসঙ্গে মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকে সহীহ সনদে মুহাম্মদ ইবনে সিরীন থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে,

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মদিনায় আগমনের পর এবং জুমার সালাত ফরজ হওয়ার আগে, একবার মদিনার আনসারগণ একত্র হয়ে আলোচনা করলেন যে, ইহুদিদের সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি দিন আছে, যে দিনে তারা সবাই একত্র হয়। নাসারাদেরও সপ্তাহে একদিন সবার একত্র হওয়ার জন্য নির্ধারিত আছে। তাই আমাদের জন্য সপ্তাহে একটা দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যে দিনে আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব ও সালাত আদায় করব। এরপর তারা বললেন শনিবার ইহুদিদের আর রোববার নাসাদের জন্য নির্ধারিত। অবশেষে ‘ইয়াওমুল আরুবা’ (শুক্রবার)-কে তারা সবাই গ্রহণ করলেন এবং তারাই এদিনকে ‘জুমার দিন’ (একত্রিত হওয়া) নামকরণ করলেন।”

(সীরাতুল মুস্তাফা; দারসে তিরমিজি)

(৯) জুমার নামাজ কত রাকাত/জুম্মার নামাজ কয় রাকাত?

জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত, যা জামাতের সাথে আদায় করা ফরজ অর্থ্যাৎ, বাধ্যতামূলক।

এছাড়া অতিরিক্ত হিসেবে-

  1. মসজিদে প্রবশ করে বসার আগেই প্রথমে দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ পড়া।
  2. এরপর চার রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নত নামাজ আদায় করা, যা খুতবা শুরু হবার আগেই আদায় করে নিতে হবে, খুতবা শুরু হয়ে গেলে এ নামাজ আর পড়া যাবে না।
    অথবা, খুতবা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দু রাকাত দু রাকাত করে সাধ্যমত যত পারা যায় নফল নামাজ পড়া।
  3. এবং তারাপর ইমামের পিছনে জামাতর সাথে জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার পরে, তারপর মসজিদে পড়লে চার রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ অথবা, বাড়িতে গিয়ে পড়লে দুই রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: মসজিদে প্রবেশ করেই যদি, চার রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নত নামাজ পড়াতে চাইলে, তাহলে মসজিদে প্রবেশ করে শুরুতে দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সুন্নত নামাজ পড়ার দরকার নেই।

কারণ, যে নামাজের আগে সুন্নতে মুয়াক্কাদা আছে, ওই নামাজের আগে মসজিদে প্রবেশ করে সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়লে দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজ আর পড়তে হয় না। কারণ তখন সুন্নতে মুয়াক্কাদা-ই তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজের স্থলাভিষিক্ত ও যথেষ্ট হয়। (দেখুন→ মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৫/৬৭, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৫/৬৭, ইবনে উসাইমীন ৫৩/৬৯)

ক) মসজিদে প্রবশ করে বসার আগেই প্রথমে দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের দলিল

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) …. আবূ কাতাদা সালামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়।”

(সহিহ্ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩১ নং)

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, তখন বসার আগে দু-রাক’আত সালাত আদায় করবে।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৫২৭ নং)

মসজিদে ঢুকলে না বসে আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করা আবশ্যক। এ সালাতকে বলা হয় তাহিয়্যাতুল মসজিদ’। এটাকে ‘দুখুলুল মসজিদও বলা হয়। অন্যান্য সাধারন দুই রাকাত সুন্নাত সালাত যেভাবে পড়া হয় এ সালাতও এভাবেই পড়তে হয়।

তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায়ের বিষয়ে ড. সালিহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন,

“মসজিদে প্রবেশের সময় দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করতে হয় মসজিদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য। বস্তুত এর মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের পর আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্যের ঘোষণা ও সূচনা করেন। ”

(সিলসিলাতুল আদাব, পৃষ্ঠা ১৬)

কেউ কেউ বলেছেন, দু’রাক’আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় মুস্তাহাব এবং দু’রাক’আত আদায় করার পূর্বে বসা মাকরূহ। তবে অধিকাংশ ফকীহর মতে, এ সালাত হলো সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। অনেক আলেম এটিকে ওয়াজিবের কাছাকাছি মনে করেন।

সুতরাং এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি একটি সুন্নাহ। এটি পড়তে হয়, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: মসজিদে প্রবেশ করেই না বসে, যদি অন্য কোন সুন্নত নামাজ পড়াতে চাইলে, তাহলে মসজিদে প্রবেশ করে শুরুতে দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সুন্নত নামাজ পড়ার দরকার নেই।

কারণ, যে নামাজের আগে সুন্নতে মুয়াক্কাদা আছে, ওই নামাজের আগে মসজিদে প্রবেশ করেই না বসে, প্রখমে সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়লে, দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজ আর পড়তে হয় না। তখন সুন্নতে মুয়াক্কাদা-ই তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজের স্থলাভিষিক্ত ও যথেষ্ট হয়। (দেখুন→ মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৫/৬৭, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৫/৬৭, ইবনে উসাইমীন ৫৩/৬৯)

খ) জুমার মূল খুতবা শুরুর পূর্বে চার রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নত নামাজের দলিল

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) বর্ণনা করেন,

“রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য হেলে যাওয়ার পর চার রাকাত সালাত পড়তেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কিসের সালাত, যা আপনি নিয়মিত পড়েন? তিনি বললেন, এটি এমন একটি সময়, যখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। আর আমি পছন্দ করি, যেন এ সময় আমার কোনো নেক আমল উপরে ওঠে। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এর প্রতি রাকাতে কি সূরা মিলাতে হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, এই সালাত কি এক সালামে না দুই সালামে? তিনি উত্তর দিলেন, এক সালামে।”

(তিরমিযী ১/৭৭ ও আবু দাউদ ১/১৮০)

ইমাম তিরমিযী রাহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এই হাদীসে উক্ত চার রাকাত নামাজ নিয়মিত পড়ার কথা আছে। জুমার দিনসহ সপ্তাহের সকল দিন এই হাদীসের আওতাভুক্ত।

See also  জুমার নামাজ কত রাকাত? বা জুম্মার নামাজ কয় রাকাত? (jumma namaz rakat ‍sonkha)

তাবেঈ আবু আব্দুর রহমান আস-সুলামী বলেন,

“সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকআত এবং পরে চার রাকআত সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর আলী রা. আমাদেরকে জুমার পর প্রথমে দুই রাকআত এরপর চার রাকআত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।”

(মুসান্নাফু আব্দুর রাজ্জাক ৫৫২৫ নং/খন্ড-৩ এর পৃষ্ঠা-২৪৭; তবারানী কাবীর ৯৪৩৬ নং; লাউস সুনান ১৭৬২ নং)

এই হাদীসটির বিষয়ে শায়খ আলবানী রহ. বলেছেন: ﻭﻫﺬﺍ ﺳﻨﺪ ﺻﺤﻴﺢ ﻻ ﻋﻠﺔ ﻓﻴﻪ অর্থ্যাৎ, যার অর্থ হলো এটা সহীহ সনদ, তাতে কোন সমস্যা নেই। (দেখুন→ সিলসিলাতুয যয়ীফাহ, ১০১৬ নং হাদীসের আলোচনা)

এছাড়াও হাজার আসকালানী বলেন: رجاله ثقات” অর্থাৎ উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীগণ হলেন বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য। (দেখুন→ আদ দিরায়াহ: ১/১১৩)

ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) বলেন,

“সাহাবায়ে কেরাম জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন।”

(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৫৪০৫, ৫৪২২ নং)

পরিশেষে বলা যায়, জুমার পূর্বের সুন্নাত নামাজের রাকাত সংখ্য সরাসরি রাসূল (সা.) এর নিকট থেকে নির্দিষ্ট নয়। তবে, সাহাবীদের আমল থেকে জুমার পূর্বে চার রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নত নামাজের দলিল পাওয়া যায়, তাই এটি আমল করা বৈধ।

গ) জুমার মূল খুতবা শুরুর পূর্বে দু রাকাত দু রাকাত করে সাধ্যমত যত পারা যায় তত নফল নামাজ পড়ার দলিল

ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন,

“সাহাবিদের থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা জুমার দিন যখন মসজিদে যেতেন তখন মসজিদে প্রবেশের পর যথাসাধ্য সালাত পড়তেন। কেউ পড়তেন দশ রাকাত, কেউ পড়তেন বারো রাকাত, কেউ পড়তেন আট রাকাত আর কেউ পড়তেন তার চেয়ে কম।”

(মাজমুউুল ফাতাওয়া ২৪/১৮৯)

আবদান ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর (মসজিদে) যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমান (তাওফিক মতো) পরিমান সালাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ”

(সহিহ্ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৬৪ নং)

উমাইয়া ইবনু বিসতাম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“জুমার দিনে যে ব্যাক্তি গোসল করে অতঃপর জুমার জন্য যায় এবং সমর্থ অনুযায়ী সালাত আদায় করে, এরপর ইমাম খূতবা সমাপ্ত করা পর্যন্ত নীরবে থাকে, এরপর ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করে। তবে তার এ জুমা হতে পরবতীঁ জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৬০ নং)

পরিশেষে বলা যায়, রাসূল (সা.) জুমার পূর্বে সাধ্য মত নামজ আদায় করতে উৎসাহিত করেছেন। উল্লেখিত হাদীসে রাকআত সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয় নি। তাই আলেমগণ বলেছেন দুই রাকআত থেকে শুরু করে যত ইচ্ছা পড়বে, যত বেশী পড়বে সওয়াব ততো বেশী হবে।

ঘ) ইমাম খুতবা দেয়া অবস্থায় কেউ যদি মসজিদে আসে তাহলে কেবল দু রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বে, তারপর মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনবে

ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় যিনি মসজিদে আসবেন তার সংক্ষেপে দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করার সহিহ হাদিস, এক:

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

“এক জুমার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দেওয়ার সময় এক ব্যাক্তি প্রবেশ করল। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ কি? সে বলল, না, তিনি বললেনঃ উঠ, দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করে নাও।”

(সহিহ্ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৮৪ নং)

ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় কাউকে আসতে দেখলে তাকে দু’ রাকা’আত সালাত আদায়ের আদেশ দেওয়ার সহিহ হাদিস, দুই:

আবূ নু’মান (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

“(কোন এক) জুমার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এমনি সময় এক ব্যাক্তি আগমণ করল। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও।”

(সহিহ বুখারি ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৮৩ নং)

ইমামের খুতবাকালে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করার সহিহ হাদিস, তিন:

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“সূলায়ক গাতফানী (রাঃ) জুমার দিনে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। সুলায়ক (রাঃ) বসে পড়লেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সূলায়ক! তুমি দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ জুমার দিন মসজিদে এলে, ইমাম তখন খুৎবারত থাকলে সংক্ষিপ্ত আকারে দু’ রাকআত সালাত আদায় করে নেবে।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৯৭ নং)

ইমামের খুতবাকালে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করার সহিহ হাদিস, চার:

কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“সুলায়ক গাতফানী (রাঃ) শুক্রবার দিনে (মসজিদে) এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপরে বসা ছিলেন। সুলায়ক (রাঃ) সালাত আদায় না করে বসে পড়লেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি দু’রাক’আত সালাত আদায় করেছ? তিনি বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি দাঁড়াও দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৯৬ নং)

ইমামের খুতবাকালে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করার সহিহ হাদিস, পাঁচ:

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, জুমার দিনে তোমাদের কেউ যখন (মসজিদ) আসে আর তখন যদি ইমাম (হুজরা থেকে) বের হয়ে থাকেন, তবে সে দু’ রাকআত সালাত আদায় করে নেবে।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৯৫ নং)

তাই উক্ত হাদীস সমূহের উপর আমলার্থে জুমাআর খুত্‌বা চলাকালীনও দু রাকআত দুখুলুল মসজিদ/তাহিয়াতুল মসজিদ সালাত আদায় করতে হবে।

ঙ) জামাতে জুমার ফরজ নামাজ শেষে মসজিদে পড়লে চার রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ অথবা, বাড়িতে গিয়ে পড়লে দুই রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ এর দলিল

ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“তোমাদের কেউ জুমার সালাত আদায় করলে তারপর চার রাকআত সালাত আদায় করবে।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯০৯ নং)

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়রা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“তোমরা জুমার পর সালাত আদায় করলে চার রাকআত আদায় করবে। আমর এর বর্ণনায় এ কথা অতিরিক্ত রয়েছে যে, ইবনু ইদ্রীস বলেন, সুহায়ল বলেছেন যে, যদি তোমার তাড়াহুড়ো থাকে তবে মসজিদে দু’রাকআত ও বাড়ীতে গিয়ে দু’রাকআত পড়ে নাও।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯১০ নং)

যুহায়র ইবনু হারব, আমরুন নাকিদ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“তোমাদের মধ্যে যে কেউ জুমার পর সালাত আদায় করতে চায় সে যেন চার রাকআত আদায় করে। তবে জারীর (রাঃ)-এর হাদীসে “তোমাদের মধ্যে” কথাটি নাই।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯১১ নং)

ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া, মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণিত যে,

“তিনি জুমার সালাত শেষে চলে যেতেন এবং ঘরে গিয়ে দু’ রাকআত পড়ে নিতেন। এরপর তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এরূপ করতেন।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯১২ নং)

ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নফল সালাতের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

“জুমার পর তিনি কোন সালাত আদায় করতেন না। তবে বাড়ীতে ফিরে দুই রাকআত আদায় করতেন। ইয়াহয়া (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি সালাত আদায় করতেন অথবা এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।”

(সহিহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯১৩ নং)

হজরত ইবনে উমর (রা.) সম্পর্কে আতা (রহ.) বলেছেন,

“তিনি যখন মক্কা মুকাররমায় অবস্থান করতেন এবং জুমার সালাত পড়তেন, তিনি জুমার সালাতের পর জায়নামাজ থেকে একটু অগ্রসর হয়ে (সরে গিয়ে) দুই রাকাত পড়তেন, এরপর আরেকটু অগ্রসর হয়ে (সরে গিয়ে) চার রাকাত পড়তেন। আর যখন মদিনা মুনাওয়ারায় জুমা আদায় করতেন তখন ঘরে ফিরে গিয়ে দুই রাকাত পড়তেন। মসজিদে পড়তেন না। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এমনই করতেন। ”

(আবু দাউদ শরিফ, ১১৩০ নং)

(১০) জুমার নামাজের গুরুত্ব

জুমার নামাজের গুরুত্বসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো-

ক) নামাজ মুসলিম জাতির প্রতি ফরজ বা বাধ্যতামূলক একটি ইবাদত

জুমার সালাত আদায় করা ফরজ। কেউ যদি এই সালাতকে অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির বলে পরিগণিত হবে। বিনা ওযরে কেউ যদি পর তিন জুমআহ বাদ দেয় তাহলে সে আল্লাহর কাছে মুনাফিক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এই সালাতের অনেক ফযিলত রয়েছে।

See also  জুমার নামাজ কত রাকাত? বা জুম্মার নামাজ কয় রাকাত? (jumma namaz rakat ‍sonkha)

হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়,

“রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সব মুসলমানের ওপর জুমার সালাত জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরজ)।”

(আবু দাউদ; মুসতাদরেকে হাকেম; আস্-সুনানুল কাবীর)

খ) আল্লাহ নিজে জুমার নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন

মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, তবে এতেই তোমাদের পক্ষে কল্যাণ, যদি তোমরা উপলব্ধি করো। যখন সালাত সমাপ্ত হয়, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর করুণার (জীবিকা) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো; সম্ভবত [এতেই] তোমাদের মুক্তি রয়েছে।”

(সুরা জুমা, আয়াত: ৯)

গ) আমাদের প্রিয় রাসূল মুহাম্মদ (সা.) জুমার নামাজ আদায়ের প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করেছেন

মহানবি (সা.) বলেন,

“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে পর পর তিন জুমার সালাত পরিত্যাগ করে, তার অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয় এবং তার অন্তরকে মুনাফিকের অন্তরে পরিণত করে দেওয়া হয়।”

(তিরমিযি)

ঘ) জুমা ত্যাগ সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী রয়েছে

হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,

“তাঁরা উভয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বরের সিঁড়িতে বলতে শুনেছেন, যারা জুমা পরিত্যাগ করে, তাদেরকে এ কাজ হাত অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। অতঃপর তারা অবশ্যই গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।”

(সহিহ্ মুসলিম)

ঙ) জুমার দিনের অনেক তাৎপর্য রয়েছে

মহানবি (সা.) বলেন,

“সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিনই সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনেই আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছিল। এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দুনিয়ায় পাঠানো হয় এবং এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।”

(সহীহ বুখারি)

চ) জুমার দিনের কিছু সময় রয়েছে যখন দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,

“জুমার দিনে এমন একটা সময়ে রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর ক‍াছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আছরের শেষ সময়ে তা তালাস করো।”

(নাসাঈ)

ছ) জুমার নামাজের গুরুত্ব রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে বারবার স্মরণ করে দিয়েছেন এবং এই দিনকে ঈদের দিনের সাথে তুলনা করেছেন

রাসুল (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন,

“মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। ”

(ইবনে মাজাহ)

রাসুল (সা.) আরও বলেছেন,

“মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন।”

(ইবনে মাজাহ)

(১১) জুমার নামাজ পড়ার পদ্ধতি

দুই রাকাত জুমার নামাজ পড়া ফরজ। এছাড়া ফরজ নামাজের দুই রাকাআত তাহিয়্যাতুল অযুদুই রাকাআত দুখুলুল মসজিদ (নফল নামাজ) আদায় করে, তারপর চার রাকাআত কাবলাল জুমা (সুন্নাত নামাজ) আদায় করতে হয়। অর্থ্যাৎ, জুমার নামাজ মোট দশ রাকাত পড়তে হয়। জুমার ফরজ নামাজের আগের পরের এসব নামাজ জুমার নামাজের অংশ নয়।

মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাআত তাহিয়্যাতুল অযুদুই রাকাআত দুখুলুল মসজিদ নফল নামাজ আদায় করে, তারপর চার রাকাআত কাবলাল জুমা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করতে হয়।

  • জুমার নামাজের জন্য জামাত শর্ত। জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। তা একাকি আদায় করা যায় না। জুমার নামাজের আজান হলে সব কাজ-কর্ম বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ এসেছে কোরআনে।
  • যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া (যেমন খুবই অসুস্থ ব্যক্তি) জুমার নামাজ ত্যাগ করার সুযোগ নেই। তবে, উক্ত অসুস্থ ব্যক্তি মসজিদে উপস্থি হয়ে জুমা আদায় সম্ভব না হলে, তবে তার ক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করতে হবে।

(১২) মেয়েদের জুম্মার নামাজের নিয়ম/মহিলাদের জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম

জুমার নামাজের খুতবার সময়, মেয়েদের জন্য জোহরের সালাত আদায় করা জায়েজ, এত কোন সমস্যা নেই।

নারীদের জন্য জুমার সালাতের শেষ হওয়ার অপেক্ষা করার কোনো দরকার নেই, যেহেতু জুমার সালাত তাঁদের ওপর ওয়াজিব নয়। সুতরাং তাঁরা জুমার সালাতের জন্য অপেক্ষা করবেন না, বরং যখনই আজান হবে, অর্থাৎ ওয়াক্ত হয়ে যাবে, তখনই জোহরের সালাত আদায় করে নেবেন, যদি তাঁরা জুমায় অংশগ্রহণ না করেন।

আর নারীদের জামাতের সাথে জুমাতে নামাজে অংশগ্রহণ করার বিষয়েও আল্লাহর নবীর (সা.) নির্দেশনা রয়েছে এবং অংশগ্রহণ করতেও তিনি বাধা দেননি বা নিষেধ করেননি।

নারীরা চাইলে জামাতের সাথে জুমার নামাজ আদায় করতে পারেন অথবা, জুমা না পড়লে চাইলে জোহরের নামাজ আদায় করে নিতে পারে। দুটাই নারীদের জন্য জায়েজ।

যদি জুমাতে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তাঁদের পক্ষ থেকে জোহরের সালাত আদায় করা হয়ে যাবে, তাঁদের আর ভিন্নভাবে জোহর আদায় করতে হবে না।

কিন্তু যদি তাঁরা জুমার সালাতে অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে জোহরের সালাত আদায় করতে পারেন।

এর জন্য শর্ত নয় যে ইমাম সাহেব মসজিদে সালাত আদায় শেষ করবে অথবা খুতবা অথবা সালাত দুটোই শেষ করবে, তার পরে নারীরা ঘরে সালাত আদায় করবেন। বিষয়টি হলো যখনই ওয়াক্ত হয়ে যাবে, তখনই জোহরের সালাত আদায় করতে পারবেন নারীরা। এটি তাঁদের জন্য জায়েজ রয়েছে।

(১৩) সফরে জুমার নামাজের নিয়ম

সফর/ভ্রমণকারী/মুসাফির অবস্থায় জুমার আবশ্যকতা থাকে না এবং সেক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করলে তা গ্রহণীয় হয়। তবে চাইলে জুমা আদায় করতে পারে।

(১৪) জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যা কত?

ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জুমার দিন ২ রাকাত নামাজ পড়া ফরজ।

তবে অতিরিক্ত নামাজ হিসেবে, ফরজের আগে ৪ রাকাত সুন্নত ও ফরজের পরে ৪ রাকাত সুন্নাতও রয়েছে। ফলে অধিকাংশ মুসল্লি সব মিলিয়ে মোট ১০ রাকাত জুমার নামাজ আদায় করে থাকে।

অনেকে আবার জুমার খুতবার আগে ২ রাকাত, ২ রাকাত করে সাধ্যমত নফল নামাজ পড়ে থাকে। জুমার ফরজ নামাজের পরে মসজিদে পড়লে ৪ রাকাত ও ঘরে গিয়ে পড়লে ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে থাকে।

উভয় ভাবে নামাজ আদায় অনুমতি ও বৈধতা রয়েছে।

(১৫) জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের পার্থক্য

জুমার নামাজ জোহরের সময় পড়লেও জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের নিয়মগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। তাহলো-

  • জুমার নামাজ ২ রাকাত ফরজ আর জোহরের নামাজ ৪ রাকাত ফরজ রয়েছে।
  • জুমার ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত কাবলাল জুমা ও পরে ৪ রাকাত বাদাল জুমা সুন্নাত নামাজ আদায় করতে হয়। অপরদিকে, জোহরের ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত ও পরে ২ রাকাত সুন্নত নামাজ পরতে হয়।
  • জুমার নামাজের আগে ইমামের খুতবা শুনতে হয়। খুতবা শোনা আবশ্যক। জোহর নামাজের জন্য কোনো খুতবা শুনতে হয় না।

এ ছাড়াও জুমার দিন অনেক নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তাওবা-ইসতেগফার ও দরূদ পড়ার বিশেষ ফজিলত নির্ধারিত আছে। যা অন্যান্য দিন জোহরের সময় নেই। তবে এসব নফল নামাজ জুমার অংশ হিসেবে পড়া হয় না এবং তা আবশ্যকীয়ও নয় বরং ব্যক্তি তা স্বেচ্ছায় এসব আমল-ইবাদত করতে পারে এবং না করলে তার দোষ হয় না।

(১৬) জুমার নামাজের শর্ত

কোন স্থানে জুমার নামাজ বিশুদ্ধ হবার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যথা-

  • শহর বা উপশহর হতে হবে। জনমানবহীন স্থানে জুমার নামাজ শুদ্ধ হবে না।
  • জামাআত হতে হবে।
  • যোহরের সময় হতে হবে।
  • সকলের জন্য অনুমতি থাকতে হবে।
  • খুতবা দিতে হবে।

শহর ছাড়া জুমআ ও ঈদের নামাজ নেই। গ্রামে জুমার নামাজ নেই। জুমআ হবে শহরে।

এক্ষেত্রে, গ্রাম বলতে এমন এলাকাকে বুঝায়, যেখানে রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিনিধি, মানুষের নিত্তপ্রয়োজনীয় আসবাব সহজলভ্য নয়। এমন সুবিধাবঞ্চিত এলাকাকে মূলত গ্রাম বলা হয়।

সুতরাং প্রচলিত গ্রাম যেখানে রাষ্ট্র প্রতিনিধিসহ আবশ্যকীয় সুবিধা বিদ্যমান, সেটাকে গ্রাম বলা যাবে না। বরং তা উপশহরের স্থলাভিষিক্ত হবে। সেই হিসেবে জনবহুল এলাকা থেকে দূরের মরু বিয়াবানেও জুমার নামাজ পড়া যাবে না। যেমন সেনাবাহিনীর কোন ক্যাম্প যা গহীন পাহাড়ে স্থাপন করা হল। কিংবা মরু অঞ্চলের কোন বিয়াবনে ট্রেনিং এর জন্য সেনা ক্যাম্প করা হল। এসব স্থানে জুমআ পড়া যাবে না। যোহরের নামাজ আদায় করবে। কারণ, তা শহর বা উপশহর নয়।

জুমার জন্য জামাআত এবং এক প্রকার সভ্যতা শহর থাকা শর্ত। আর নবী মুহাম্মাদ এবং খুলাফায়ে রাশেদীন এবং আইয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন শহরেই জুমআ আদায় করতেন। আর গ্রামের অধিবাসীদের না পড়ার কারণে কোন দোষারোপ করতেন না। শুধু তাই নয়; তাদের যুগে গ্রামে জুমার নামাজ আদায় করা হতো না।

শেষ কথা,

পবিত্র জুমা দিবসে মুসলমান ধনী-দরিদ্র, উচু-নীচু, ছোট-বড় সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে জুমার নামাজ আদায় করে। কেন না মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র জুমার নামাজ আমাদের ওপর অপরিহার্য করেছেন।

জুমার নামাজ মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদাত। আর জুমার দিনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। জুমার নামাজ এবং এ দিনের আমল বর্জন থেকে বিরত থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ দিনের নামাজ ও আমল যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জুমার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনা করে প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই দিনটিকে কাজে লাগানো। এই দিনে নিজের জন্য এবং সমগ্র মানবতার জন্য কল্যাণ-সৌভাগ্য ও উন্নতির দোয়া করা।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন আগে আগে মসজিদে গিয়ে ২ রাকাত জুমার ফরজ নামাজ ইমামের সঙ্গে আদায় করা। জুমার ফজিলত ও বরকত গ্রহণের আগ্রহী হওয়া 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, আমল, আদব অনুযায়ী জুমার ২ রাকাত ফরজ নামাজ যথাযথভাবে ও অতিরিক্ত সুন্নত ও নফল নামাজসমূহ সাধ্যমত আদায় করার মাধ্যমে জুমার নামাজের ফজিলত পরিপূর্ণভাবে অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Queries discussed: জুমার নামাজের নিয়ম, জুমার নামাজের নিয়ত, জুমার দিনের আমল, জুমার দিনের আদব, জুমার দিনের ফজিলত, জুম্মার দিনের ফজিলত, জুম্মা নামাজের ফজিলত, জুমার নামাজের ফজিলত, জুমার নামাজের ইতিহাস, জুমার নামাজ কত রাকাত, জুম্মার নামাজ কয় রাকাত, জুমার নামাজের গুরুত্ব, জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম, মেয়েদের জুম্মার নামাজের নিয়ম, মহিলাদের জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম, সফরে জুমার নামাজের নিয়ম, জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যা কত, জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের পার্থক্য, জুমার নামাজের শর্তসমূহ।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page