Skip to content

ওহী কাকে বলে? ওহী কত প্রকার? ওহী নাযিলের পদ্ধতি

ওহী কাকে বলে, ওহী কত প্রকার, ওহী নাযিলের পদ্ধতি

হযরত আদম (আ) থেকে আরম্ভ করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (স) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলই ওহীর মাধ্যমে হিদায়াত লাভ করে মানব জাতিকে সত্য পথের সন্ধান দিয়েছেন। মহানবী (স) ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না।

কুরআনে বলা হয়েছে,

“আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। এতো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।”

(সূরা নাজম ৫৩:৩)

মূলত ওহী থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান অধিক নির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য।

এখানে আমরা- অহি শব্দের অর্থ কি/ওহি অর্থ কি? ওহী কাকে বলে? ওহীর সংজ্ঞা জানব। ওহী কত প্রকার? ওহীর শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে জানব। ওহী নাযিলের অবস্থা বিশ্লেষণ করব। সংক্ষিপ্তাকারে মহানবীর (স) প্রতি ওহী নাযিলের পদ্ধতিসমূহের বিবরণ জানব।

(১) অহি শব্দের অর্থ কি/ওহি অর্থ কি? ওহী কাকে বলে?

অহি শব্দের অর্থ কি/ওহি অর্থ কি: ওহী’র শাব্দিক অর্থ ইঙ্গিত করা, লেখা, সংবাদ দেওয়া, ইলহাম হওয়া ইত্যাদি।

ওহী কাকে বলে: শরীআতের পরিভাষায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীগণকে কথার মাধ্যমে বা ফেরেশতা পাঠিয়ে কিংবা স্বপ্নযোগে অথবা ইলহামের সাহায্যে কোন বিষয় জানিয়ে দেওয়াকে ওহী বলা হয়।

(২) ওহী কত প্রকার? 

ওহী কত প্রকার: ওহী প্রধানত দু’প্রকার-

  1. ওহীয়ে মাত্লু (পঠিতব্য ওহী): যে ওহীর ভাব, শব্দ ও ভাষা, অর্থ, বিন্যাস সবকিছুই মহান আল্লাহ প্রত্যক্ষ ওহীর মাধ্যমে নাযিল করেছেন এবং যা সংরক্ষণ ব্যবস্থাও করেছেন। এ প্রকারের ওহীকে ওহীয়ে মাত্লু (পঠিতব্য ওহী) ও ‘ওহীয়ে জলী’ (প্রত্যক্ষ ওহী) বলা হয়। এটাই পবিত্র কুরআন মাজীদ।
  2. ওহীয়ে গাইরে মাতলু (অপঠিতব্য ওহী): যে ওহীর ভাব আল্লাহর পক্ষ থেকে; কিন্তু এর ভাষা ও শব্দ স্বয়ং রাসূল (স)-এর তাকে ওহীয়ে গাইরে মাত্লু (অপঠিতব্য ওহী) ও ওহীয়ে খফী (প্রচ্ছন্ন ওহী) বলা হয়। এ প্রকারের ওহী হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (স)-এর হাদীস। এ উভয় ওহী একই উৎস থেকে উৎসারিত।

(৩) ওহী নাযিলের অবস্থা

নবীদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনভাবে ওহী এসেছে। যথা-

  1. ওহীয়ে ক্বালবী: কারো মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহ তা‘আলা সরাসরি নবীর হৃদয়ে কোন কথা বা বিষয় ওহী হিসেবে পাঠাতেন। এ প্রকার ওহীকে ওহীয়ে ক্বালবী বলা হয়। নবীদের স্বপ্ন এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
  2. ওহীয় কালামে ইলাহী: ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়াই স্বয়ং আল্লাহ নবীর কাছে যে ওহী প্রেরণ করেন, তাকে ওহীয়ে কালামে-ইলাহী’ বলা হয়। এ পদ্ধতিতে আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা হয় ও তাঁর সান্নিধ্য লাভ হয়। যেমন মি’রাজের সময় রাসূলুল্লাহ (স)-এর সাথে আল্লাহর বাক্যালাপ এবং হযরত মূসা (আ)-এর সাথে কথোপকথন হয়েছিল।
  3. ওহীয়ে মালাকী: আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পবিত্র বাণী কোন ফেরেশতার মাধ্যমে নবীর নিকট পৌঁছিয়ে দেন। পবিত্র কুরআন মাজীদ এ পদ্ধতিতে নাযিল হয়েছিল।

(৪) ওহী নাযিলের পদ্ধতি

পবিত্র কুরআন-হাদিসের বর্ণনা থেকে মহানবী (স)-এর প্রতি যে সমস্ত ওহী নাযিলের পদ্ধতিসমূহ জানা যায় তা হলো-

১। সত্য স্বপ্ন ২। অন্তর্লোকে ফুঁকে দেওয়া ৩। ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যম ৪। ফেরেশতার মানবাকৃতিতে আগমন ৫। ফেরেশতা নিজের আকৃতিতে আগমন ৬। পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি ৭। তন্দ্রাবস্থায় সরাসরি ওহী ৮। অন্তরাল ছাড়া ওহী ৯। ইসরাফীল (আ)-এর মাধ্যমে ওহী।

নিম্নে উক্ত ওহী নাযিলের পদ্ধতিসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো-

ক) সত্য স্বপ্ন

হযরত আয়িশা (রা) বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়- নুবুওয়াত লাভের প্রাথমিক পর্যায়ে মহানবী (স)-এর উপর ওহী নাযিলের শুভ সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। 

এ ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে,

“আল্লাহ তাঁর রাসূল (স)-এর স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন।”

(সূরা ফাত্হ ৪৮:২৭)

হযরত ইবরাহীম (আ) পুত্র ইসমাঈল (আ)-কে কুরবানী করার জন্য স্বপ্নে আদিষ্ট হন। সুতরাং নবীদের স্বপ্ন ওহীর অন্তর্ভুক্ত।

খ) অন্তর্লোকে ফুঁকে দেওয়া

এ পদ্ধতিতে জিবরাঈল (আ) মহানবী (স)-কে দেখা না দিয়ে তাঁর হৃদয়পটে কোন কথা ফুঁকে দিতেন কিংবা আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নবীর অন্তর্লোকে কোন কথা উদ্রেক করতেন।

গ) ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যম

ওহী নাযিলের পূর্ব মুহূর্তে মহানবী (স)-এর কানে ঘণ্টাধ্বনির মত আওয়াজ অবিরাম বাজতে থাকতো। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই ফেরেশতাও কথা বলতে থাকতেন। এ পদ্ধতিকে সালসালাতুল জারাস বলা হয়েছে।

এটা ছিল কঠিনতম পদ্ধতি। প্রচন্ড শীতেও এ সময় মহানবীর (স) শরীর থেকে তীব্র বেগে ঘাম ঝরে পড়তো।

ঘ) ফেরেশতার মানবাকৃতিতে আগমন

কখনো ফেরেশতা মানবাকৃতি ধারণ করে মহানবী (স)-এর নিকট এসে ওহী পৌঁছে দিতেন। এ পদ্ধতি ছিল সহজতর। হাদিসে জিবরাঈল নামে অভিহিত হাদীসখানা এ পদ্ধতির ওহীর উদাহরণ।

ঙ) ফেরেশতা নিজের আকৃতিতে আগমন

হযরত জিবরাঈল (আ)-কে মহান আল্লাহ যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক সেই আকৃতিতে রাসূল (স)-এর নিকট ওহী নিয়ে আসতেন। মহানবী (স) ৩ বার হযরত জিবরাঈল (আ)-কে স্বরূপে দেখেছিলেন।

চ) পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি

মহান আল্লাহ মহানবী (স)-এর সাথে কোন মাধ্যম ছাড়াই পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথা বলতেন। মি’রাজের সময় আল্লাহর সাথে এভাবেই কথা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এ পদ্ধতিতে ফরয হয়।

ছ) তন্দ্রাবস্থায় সরাসরি ওহী

মহানবী (স) তন্দ্রাবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি ওহী পেতেন। এ পদ্ধতিতে মহানবী (স) সাতবার ওহী পেয়েছেন বলে হাদিস থেকে জানা যায়।

জ) অন্তরাল ছাড়া ওহী

এ পদ্ধতিতে আল্লাহ তা‘আলা কোন অন্তরাল ছাড়াই সরাসরি রাসূল (স)-এর সাথে কথা বলেছেন।

ঝ) ইসরাফীল (আ)-এর মাধ্যমে ওহী

কোন কোন সময় মহানবী (স)-এর কাছে হযরত ইসরাফীল (আ)-এর মাধ্যমেও ওহী নাযিল হতো।

আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নবী-রাসূলগণের কাছে যে ওহী নাযিল হয় তাকেই ওহী বলা হয়। ওহী নাযিলের মাধ্যম, অবস্থা ও পদ্ধতির বিভিন্নতার কারণে ওহীকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। ওহীর জ্ঞানই নির্ভুল জ্ঞান- ইসলামের অকাট্য দলীল। আল-কুরআন আল্লাহ তা‘আলার প্রত্যক্ষ ওহী। হাদিস রাসূল (স) -এর বাণী- এটা পরোক্ষ ওহী।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts