Skip to content

 

ইজমা কাকে বলে? ইজমা অর্থ কি? ইজমা কি? ইজমা বলতে কি বুঝায়? ইজমা কত প্রকার ও কি কি? ইজমার প্রবর্তক কে? এর গুরুত্ব, পদ্ধতি এবং হুকুম

ইজমা কাকে বলে, ইজমা অর্থ কি, ইজমা কি, ইজমা বলতে কি বুঝায়, ইজমা কত প্রকার ও কি কি, ইজমার

(১) ইজমা কাকে বলে? ইজমা অর্থ কি? ইজমা কি? ইজমা কত প্রকার ও কি কি? ইজমা বলতে কি বুঝায়

ইজমা কাকে বলে, ইজমা অর্থ কি, ইজমা কি, ইজমা কত প্রকার এবং কি কি, ইজমা বলতে কি বুঝায়

ইজমা কাকে বলে: ইসলামি শরীআতের ভাষায়- কোন কাজ অথবা কথার ওপর এক যুগের উম্মাতে মুহাম্মদীর ন্যায়বান মুজতাহিদগণের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তকে ইজমা বলে।

ইজমা অর্থ কি: ইজমা (الاجماع) শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ- ঐকমত্য হওয়া, শক্তিশালী করা, দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া, একমত হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং কোন বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করার নামই হলো ইজমা।

ইজমা কি: ইজমা শরীআতের তৃতীয় উৎস। গুরুত্বের বিচারে কুরআন ও হাদিসের পরেই ইজমার স্থান। কোন বিশেষ যুগে আইন সংক্রান্ত কোন বিশেষ সমস্যার সমাধান কুরআন ও হাদিসকে অবলম্বন করে মুসলিম পন্ডিতগণ যে সম্মিলিত অভিমত পোষণ করেছেন ইসলামি শরীআতে সেটা ইজমা।

ইজমা বলতে কি বুঝায়: ব্যবহারিক অর্থে কোন বিষয় বা কথায় ঐকমত্য পোষণ করাকে ইজমা বলে৷ ইসলামী শরীয়াতের কোন হুকুমের ব্যাপারে একই যুগের সকল মুজতাহিদদের একমত হওয়াকে ইজমা বলে। ইজমা মহানবি (স.) এর পরবর্তী যেকোন যুগে হতে পারে৷ সাহাবিগণ থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি যুগের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে৷ ইজমা কুরআন সুন্নাহ সমর্থিত হওয়া আবশ্যক৷ কুরআন সুন্নাহর মূলনীতি বিরোধী কিংবা কোন অন্যায় ও পাপ কাজে ইজমা হয় না৷ ইজমা আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ মর্যাদা ও নিয়ামত৷

(২) ইজমা কত প্রকার ও কি কি?

ইজমা কত প্রকার ও কি কি: ইজমা ২ প্রকার। যথা-

  1. অকাট্ট ইজমা।
  2. প্রবল ধারণা মূলক ইজমা।

অকাট্ট ইজমা: যে ইজমা উম্মতের পক্ষ হতে অবধারিতভাবে সংঘঠিত হওয়া জানা যায়, তাকে ‘القطعي’ বা অকাট্ট ইজমা বলে। যেমন- পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বলাত ফরজ হওয়ার উপর ইজমা, ব্যভিচার হারাম হওয়ার উপর ইজমা প্রভৃতি। এ ধরণের ইজমা সাব্যস্ত হওয়া এবং প্রমাণ্যতাকে কেউ অস্বীকার করে না। এ ইজমা বিরোধী ব্যক্তি অজ্ঞ না হলে কাফের গণ্য হবে।

প্রবল ধারণা মূলক ইজমা: যে ইজমা অনুসন্ধান ও গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, তাকে ‘الظني’ বা প্রবল ধারণা মূলক ইজমা বলে। এ ধরনের ইজমা সাব্যস্ত হওয়া সম্ভবের ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে অধিকতর অগ্রগণ্য মত হলো শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) এর অভিমত।

‘العقيدة الواسطية’ নামক গ্রন্থে তিনি বলেছেন,

‘‘বিধিবদ্ধ ইজমা সেটাই যার উপর সালাফে সালেহীন ছিলেন। কারণ তাঁদের পরে প্রচুর পরিমাণে মতানৈক্য বৃদ্ধি পায় এবং উম্মাহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।’’

(শারহুল আক্বীদা ওয়াসীতিয়্যাহ ২/৩২৮)

আমাদের মেন রাখতে হবে, রহিত নয় এমন সুস্পষ্ট ছহীহ দলীলের বিপক্ষে এ উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করা সম্ভব নয়। কেননা, এ উম্মতের কেবল হক্বের উপরই ঐক্যমত পোষন করতে পারে। কাজেই যখন কোন ইজমাকে দলীলের বিরোধী মনে হবে, সেক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাবে যে, হয়ত দলীলটি ছহীহ নয়, অথবা তা দ্ব্যর্থহীন বা সুস্পষ্ট নয় অথবা সেটি মানসুখ বা রহিত অথবা মাস’আলাটিতে মতানৈক্য রয়েছে, যা আমরা জানিনা।

(২) ইজমা শরীআতের উৎস হওয়ার প্রমাণ

ইজমা শরীআতের উৎস হওয়ার পেছনে কুরআন ও হাদিসের যে দলিল রয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলো।

ইজমা হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশার পর শারঈ কোন হুকুমের বিষয়ে এ উম্মতের মুজতাহিদগণের ঐক্যমত পোষণ করা।

See also  ইজমা ও কিয়াসের পার্থক্য কি? ইজমা ও কিয়াস বলতে কি বুঝায়? ইজমা ও কিয়াস কি? ইজমা কিয়াস কাকে বলে?

এখানে-

ঐক্যমত’ এ শব্দ দ্বারা ‘মতানৈক্যের অস্তিত্ব বের হয়ে গেছে। যদিও মতানৈক্য একজন বিদ্বানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই কোন বিষয়ে মতানৈক্য বিদ্যমান থাকলে সে বিষয়ে ইজমা সংঘঠিত হবে না।

মুজতাহিদগণ’ এ শব্দ দ্বারা সাধারণ মানুষ ও মুকাল্লিদগণ বের হয়ে গেছে। কাজেই এদের একমত হওয়া বা ভিন্ন মত পোষণ করা ধর্তব্য হবে না।

এ উম্মতের’ এ অংশ দ্বারা অন্য জাতির ঐক্যমত বের হয়ে গেছে। সুতরাং ভিন্ন জাতির ঐক্যমত শরীয়তে ধর্তব্য হবে না।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশার পর’ এ অংশ দ্বারা তার জীবদ্দশায় তার (ছাহাবীদের) ঐক্যমত বের হয়ে গেছে। সেগুলো স্বয়ং সম্পন্ন ভাবে দলীল হওয়ার কারণে তা ইজমা হিসাবে অভিহিত হবে না। কেননা, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কাজ ও অনুমোদনের সুন্নাহ দ্বারাই দলীল অর্জিত হয়। এজন্য ছাহাবীরা যখন বলেন, আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এরূপ করতাম অথবা তারা এরূপ করতো। এগুলো বিধানগতভাবে মারফু হাদীছ; ‘ইজমার বিবরণ’ নয়।

শারঈ কোন হুকুমের বিষয়ে’ এ অংশ দ্বারা জ্ঞানগত কিংবা প্রকৃতিগত বিষয়ে ঐক্যমত বের হয়ে গেছে। এখানে এসবের কোন অনুপ্রবেশ নেই। কেননা, ‘ইজমা’ শরীয়তের একটি দলীল এখানে আলোচ্য বিষয় এটিই।

বেশ কিছু দলীলের ভিত্তিতে ইজমা প্রামাণ্য বিষয় বলে গণ্য। তন্মেধ্যে অন্যতম দলীল হলো-

মহান আল্লাহ বলেছেন,

‘‘এমনিভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা মানবমন্ডলীর জন্যে সাক্ষ্যদাতা হও।’’

(সূরা আল-বাক্বারা আয়াত নং ১৪৩)

‘মানুষের জন্য সাক্ষী হতে পারো’ এটি মানুষের কর্মের বিধানের সাক্ষ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে সাক্ষীর কথা গ্রহণযোগ্য।

আয়াতে উম্মাতের ন্যায়পরায়ণতাকে মধ্যপন্থী উল্লেখ করেছে, যা কিনা ইজমার একটি পরোক্ষ দলিল।

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

‘‘অত:পর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হও, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করো।’’

(সূরা আন-নিসা, আয়াত নং ৫৯)

আয়াতটি প্রমাণ করে যেসব ব্যাপারে তাঁরা ঐক্যমত পোষণ করেন, তা হক্ব বা সত্য।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী,

‘‘আমার উম্মত গোমরাহীর উপর/ভুল বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করবে না।’’

(ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৫০; তিরমিযী, হাদিস নং ২১৬৭; আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) হাদীছটিকে হাসান বলেছেন)

আমরা বলতে পারি যে, কোন বিষয়ে এ উম্মতের ঐক্যমত পোষণ করা হয়তো হক হবে, না হয় বাতিল হবে। যদি হক হয় তাহলে সেটি দলীল যোগ্য। আর যদি বাতিল হয়, তাহলে এটি কিভাবে হতে পারে যে, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মর্যাদাবান এ উম্মত আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি বাতিল বিষয়ের উপর ঐক্যমত পোষণ করবেন, যে বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহ সন্তুষ্ট নন? এটা তো বড়ই অসম্ভব বিষয়!

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

“তোমরাই উত্তম উম্মাত, মানব জাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে অসৎকাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহতে ইমান আনবে।”

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১১০)

হাদিসে এসেছে, ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

“রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমার গোটা উম্মাতকে; অপর বর্ণনাতে তিনি বলেছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদীকে কখনও পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত করবেন না। আল্লাহ তা’আলার হাত (রহমত ও সাহায্য) জামা’আতের উপর রয়েছে।”

(মিশকাত, হাদিস নং ১৭৩; সনদ সহীহ)

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় আলেমগণ বলেন, এখানে জামাআত বলতে কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারীদের বুঝানো হয়েছে, এবং সে কারণে কোরআন আর সুন্নাহ ব্যতীত আর কোন কিছুতেই সমগ্র মুসলিম উম্মাহ একমত হবে না।

See also  ইজমা ও কিয়াসের পার্থক্য কি? ইজমা ও কিয়াস বলতে কি বুঝায়? ইজমা ও কিয়াস কি? ইজমা কিয়াস কাকে বলে?

উপরিউক্ত কুরআন ও হাদিসের বাণী প্রমাণ করে উম্মাতের ইজমা শরীআতের উৎস।

ইজমা যে শরীআতের উৎস তা প্রমাণিত হয় সাহাবীগণের ইজমা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। মহানবী (স)-এর ইন্তিকালের পর মদীনা রাষ্ট্রের ভিত্তি সম্প্রসারিত হলে বিভিন্ন সমাজ ও সভ্যতার সাথে ইসলামের পরিচয় হয়। ফলে সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। তখন সাহাবীগণ বাধ্য হয়ে ইজমার আশ্রয় গ্রহণ করেন। আর সাহাবীদের কর্মের উপরে কোন মুসলমান সন্দেহ পোষণ করতে পারে না। সুতরাং ইজমা শরীআতের উৎস।

(৩) ইজমার প্রবর্তক কে? ইজমা উৎপত্তির সময়কাল

ইজমা শরীআতের তৃতীয় উৎস। এটা তৃতীয় উৎস হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর যুগ থেকেই স্বীকৃতি লাভ করে। রাসূলুল্লাহ (স)-এর যুগেও কোন সমস্যার সমাধান কুরআনের মধ্যে না পাওয়া গেলে রাসূলুল্লাহ (স) বিশিষ্ট সাহাবাগণের সাথে পরামর্শ করে তার সমাধান দিতেন। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে।”

(সূরা শুরা, আয়াত নং ৩৮)

যেমন- রাসূলুল্লাহ (স) উহুদ যুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাহাবীগণের সংখ্যাধিক্যের ইচ্ছায় গুরুত্ব প্রদান করলে রসূলুল্লাহ (স) উহুদে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

খোলাফায়ে রাশেদার যুগে ইজমা:

খোলাফায়ে রাশেদার আমলে ইসলামি রাষ্ট্রের পরিসীমা বিস্তৃতি লাভ করলে নানা জাতি-গোষ্ঠীর সাথে ইসলামের পরিচয় ঘটে। ফলে নানা সমস্যারও উদ্ভব হয়। তখন উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের জন্য ইসলামি চিন্তাবিদগণ ঐকমত্য পোষণ করে ঐ সমস্যার সমাধান করেন। হযরত উমর (রা) নানা বিষয়ে ইজমার মাধ্যমে সমাধান দিয়েছেন। 

খোলাফায়ে রাশেদার অন্যান্য খলিফাগণও ইজমার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান দিতেন। সাহাবীদের জীবনে বহু ইজমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তাঁরাও যে সকল বিষয়ে কুরআন ও হাদিস দ্বারা সমাধান দিতে পারেননি, সেসব বিষয়ে ইজমা প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেমন- হযরত উমর (রা)-এর আমলে রমাযান মাসের বিশ রাকআত তারাবীর নামায জামাতের সাথে আদায় জনিত সমস্যার সমাধানটি উল্লেখ করা যেতে পারে।

তাবিঈগণও কোন সমস্যার সমাধানে সরাসরি কুরআন ও হাদিসের সাহায্য পেতে ব্যর্থ হলে কুরআন ও হাদিসের সাহায্য নিয়ে ইজমা করতেন।

বর্তমান যুগে ইজমা:

বর্তমান যুগেও ইজমা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ ব্যাপারে সকল আলিম একমত পোষণ করেছেন।

যেমন- পবিত্র নগরী জেরুসালেমকে ইয়াহুদিদের হাত থেকে উদ্ধার করতে মুসলমানগণ ইজমার মাধ্যমে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। 

(৪) ইজমার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে পরোক্ষভাবে ইজমার প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। 

মহান আল্লাহ বলেন,

“সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও যারা নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করেছে ও নিজেদেও মধ্যে দ্বিমত সৃষ্টি করেছে, তোমরা তাদের মত হয়ো না।”

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১০৫)

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

“তুমি যদি নিজে না জান, তবে যে জানে তাকে জিজ্ঞেস কর।”

(সূরা আল নাহল, আয়াত নং ৪৩)

মহানবী (স) বলেন,

“আমার উম্মত ভুল বিষয়ে একমত হবে না।”

(আবূ দাউদ, হাদিস নং ৪২৫৩)

সকল মায্হাবে ইজমাকে আইনের উৎস গন্য করা হয়েছে। সুতরাং কুরআন-হাদিসে নেই এমন কোন বিষয়ে উম্মাহর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হলে তা মেনে চলা প্রত্যেকের কর্তব্য।

মানব সমাজ গতিশীল। মুসলিম রাষ্ট্রের বিস্তৃতির সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে মুসলিম সমাজ এমন কতকগুলো নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয় যার সমাধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়নি। অথচ কুরআনে আল্লাহ মানুষের জন্য সব কিছু বর্ণনা করেছেন। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আমি কুরআনে কিছু বাদ রাখিনি।”

(সূরা আনআম, আয়াত নং ৩৮)

মানব জ্ঞান সসীম। তাদের সীমিত জ্ঞান-গবেষণায় কুরআন থেকে যাবতীয় সমস্যার সমাধান আহরণ করতে সক্ষম হয় না। সুতরাং সাবাহীদের যুগ হতেই কুরআন-হাদিস থেকে না পাওয়া বিষয় ইজমার মাধ্যমে সমাধান করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ থেকে ইজমার উৎপত্তি।

See also  ইজমা ও কিয়াসের পার্থক্য কি? ইজমা ও কিয়াস বলতে কি বুঝায়? ইজমা ও কিয়াস কি? ইজমা কিয়াস কাকে বলে?

(৫) ইজমার পদ্ধতি

ইজমা তিনটি উপায়ে বা পদ্ধতিতে সংঘঠিত হয়। যথা-

  1. মৌখিক উক্তি দ্বারা অর্থাৎ যখন মুজতাহিদগণ কোন বিশেষ বিষয় সম্পর্কে প্রকাশ্য মতামত প্রকাশ করেন।
  2. কর্ম দ্বারা অর্থাৎ কার্যক্ষেত্রে যখন সকলে একই পন্থা অবলম্বন করে কাজ করে। এতেও ইজমা সংঘঠিত হয় এবং
  3. মৌন সম্মতি অর্থাৎ মুজতাহিদগণ যখন এক বা একাধিক ব্যক্তির প্রকাশিত মতের সঙ্গে মতৈক্য প্রকাশ করেন তখন ইজমা সংঘঠিত হয়।

ইজমা সংঘটিত হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো-

▣ বিশুদ্ধ পন্থায় ইজমা সাব্যস্ত হওয়া। এটি হতে পারে এভাবে যে, ইজমার বিষয়টি আলেমদের মাঝে সুপ্রসিদ্ধ থাকবে অথবা গভির জ্ঞানের অধিকারী কোন নির্ভরযোগ্য বিদ্বান ইজমার বিষয়টি বর্ণনা করবেন।

▣ তার পূর্বে স্থায়ী কোন মতভেদ থাকবে না। যদি তার পূর্বে এরূপ মতভেদ থাকে, তাহলে সে বিষয়ে ইজমা সংঘটিত হবে না। কেননা, বিদ্বানদের মৃত্যুর কারণে তাঁদের অভিমত গুলো বাতিল হয়ে যায় না। সুতরাং ইজমা পূর্বের মতভেদকে উঠিয়ে দেয় না। তবে এটি নতুন করে মতভেদ সৃষ্টি করতে বাধা দেয়। উৎস শক্তিশালী হওয়ার কারণে এ মতটিই অগ্রগণ্য অভিমত।

▣ এ ব্যাপারে এটিও বলা হয় যে, ইজমার ক্ষেত্রে এটি শর্ত নয়। (ইজমা সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে পূর্বের মতভেদ না থাকা শর্ত নয়) কাজেই একাধিক অভিমত সমূহের মাঝে দ্বিতীয় যুগে এসে যে কোন একটি মতের উপর ইজমা সংঘটিত হতে পারে। ফলে ইজমা পরবর্তীদের উপর দলীল হিসেবে গণ্য হবে।

▣ অধিকাংশ বিদ্বানদের মতানুসারে ইজমা সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইজমাকারীদের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটা শর্ত নয়। কাজেই কোন যুগের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র তাদের ঐক্যমত পোষণের মাধ্যমে ইজমা সংঘটিত হবে। পরবর্তিতে তাদের জন্য অথবা অন্যদের জন্য তার বিরুদ্ধাচারণ করা জায়েয নেই। কেননা, যেসব দীলল সমূহ ইজমার হুজ্জিয়্যাত বা প্রামাণ্যতার উপর প্রমাণ করে, তাতে যুগের পরিসমাপ্তির শর্তের উল্লেখ নেই। উপরন্তু এটি এ কারণে যে, ইজমা তাদের একমত হওয়ার সময়ই সংঘটিত হয়ে যায়। কাজেই পরবর্তীতে কোন জিনিস তাকে উঠিয়ে দিবে? যখন কোন মুজতাহিদ কোন কথা বলেন অথবা কোন কর্ম করেন এবং তা অন্যান্য মুজতাহিদগনের মাঝে প্রসিদ্ধ লাভ করে। তাঁরা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা প্রত্যাখ্যান বা প্রতিবাদ করেন না। এ ব্যাপারে বলা হয় যে, এটি ইজমা হিসাবে গণ্য হবে। আবার এটাও বলা হয় যে, এটি ‘হুজ্জত বা প্রামাণ্য’ হিসাবে গণ্য হবে; ইজমা হিসাবে নয়। এটাও বলা হয় যে, এটি প্রত্যাখ্যান করার আগেই তাদের জীবন কালের পরিসমাপ্তি ঘটলে তা ইজমা হিসেবে গণ্য হবে। কেননা, প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাদের যুগের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান না করে অব্যাহত ভাবে চুপ থাকা বিষয়টিতে তাদের সহমত পোষণ করার উপর প্রমাণ বহন করে। সুতরাং এ মতটি সত্যের অধিকতর নিকটবর্তী অভিমত।

(৬) ইজমার হুকুম

ইসলামি শরীআত সংক্রান্ত বিষয়ে ইজমা দ্বারা অকাট্য দলিল সাব্যস্ত হয়। তাই কোন ক্রমেই ইজমার বিরোধিতা করা যায় না। ইজমার দ্বারা প্রবর্তিত বিধি-বিধান বিনা দ্বিধায় পালন করা কর্তব্য।

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ইজমা কাকে বলে? ইজমা অর্থ কি? ইজমা কি? ইজমা বলতে কি বুঝায়? ইজমা কত প্রকার ও কি কি? ইজমার প্রবর্তক কে? এর গুরুত্ব, পদ্ধতি এবং হুকুম প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

ফিক্হ্ শাস্ত্রের চারটি মূল উৎসের মধ্যে ইজমা অন্যতম। চার মাযহাবের ইমামগণ ইজমাকে শরীআতের উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইজমা ব্যতীত শরীআতই অপূর্ণ থেকে যায়। সুতরাং ইজমার গুরুত্ব অত্যধিক। যেহেতু এটি কুরআন ও সুন্নাহর ওপরে গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ফসল তাই ইজমা মেনে চলা ও বিশ্বাস করা অপরিহার্য।

পৃথিবীর সব কিছুই পরিবর্তনশীল। চলমান পৃথিবীর সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে যুগ জিজ্ঞাসার সঠিক ও যথার্থ সমাধান পেশকরণে ইজমার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page