আঁশফল আমাদের বাংলাদেশে একটি বিদেশি ফল। আঁশফল লিচু পরিবারভুক্ত একটি ফল। স্বাদে, গন্ধে, পুষ্টিতে লিচুর সমতুল্য হওয়া সত্ত্বেও ফলটি এ দেশে তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আঁশফল বেশ জনপ্রিয়। আমাদের বাংলাদেশে উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন জাত না থাকায় ফলটি সর্বমহলে তেমন পরিচিত হয়ে ওঠেনি।
আঁশফল লিচুর মতো দেখতে , কিন্তু লিচু নয়।
ফল আকারে ছোট এবং খেতে সুস্বাদু। দেশের সর্বত্রই এর চাষ সম্ভব।
থোকায় থোকায় লিচুর মতোই গাছে ঝুলে থাকে আর দেখতেও অনেকটা লিচুর মতো। খোসা ছাড়িয়ে রসালো পুরু আঁশ মুখে পুরলে মনে হবে যেন লিচুই খাচ্ছি। আবার গাছটা দেখতেও লিচু গাছের মতো। শুধু নামটায় একটু পার্থক্য এই যা। নাম এর অাঁশফল। ফলের চেহারায় একটু শক্ত কাঠ কাঠ ভাব আছে বলে অনেকে চিনে কাঠলিচু নামে। আবার অনেকেই একে লংগান বলেই জানেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dimocarpus longan এবং ইংরেজীতে longan ও dragon eye নামে পরিচিত।
আঁশফলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
(১) আঁশফলের জাত পরিচিতি
ক) বারি আঁশফল-১
অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৯৭ সালে ‘বারি আঁশফল-১’ জাতটি আমাদের বাংলাদেশে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়।
- এটি একটি বহু বর্ষজীবী বৃক্ষ।
- উচ্চ ফলনশীল নিয়মিত ফলদানকারী জাত।
- গাছ মাঝারী খাড়া প্রকৃতির ও মধ্যম ঝোপালো।
- ফাল্গুন-চৈত্র মাসে গাছে ফুল আসে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল আহরণ উপযোগী হয়।
- ফল ছোট (গড় ওজন ৩.৫ গ্রাম), গোলাকার, বাদামী রঙের, শাঁস সাদা, কচকচে এবং স্বাদ খুব মিষ্টি (টিএসএস ২০-২৫%)।
- খাদ্যোপযোগী অংশ ৫৫-৬০%।
- বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ যোগ্য।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ৩-৪ টন।
- ফুল আসে মধ্য-ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মার্চ) মাসে এবং মধ্য-শ্রাবণ থেকে মধ্য-ভাদ্র (আগস্ট) মাসে ফল পাকে।
- জাতটি দেশের সর্বত্রই ভাল জন্মে।
খ) বারি আঁশফল-২
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগ ‘বারি আঁশফল-২’ নামে আঁশফলের একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। নিয়মিত ফলধারী জাতটি বিদেশ থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন করে ২০০৯ সালে মুক্তায়ন করা হয়।
- ফল গোলাকৃতির, বেশ বড় (৯ গ্রাম), শাঁস সাদা, আংশিক কচকচে, রসালো, খুব মিষ্টি (টিএসএস ২৫%)।
- বীজ ছোট, খোসা পাতলা, ভক্ষণযোগ্য অংশ ৭৩%।
- দেশের মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে চাষোপযোগী জাতটি ফলের আহরণ মৌসুম দীর্ঘায়িত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
(২) আঁশফল চাষ পদ্ধতি
জমি নির্বাচন: আঁশফল চাষের জন্য দোআঁশ মাটি উত্তম।
চারা উৎপাদন: গ্রাফটিং ও গুটি কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা যায়।
গর্ত তৈরি: চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে ৫ ⨉ ৫ মিটার দূরত্বে ১ ⨉ ১ ⨉ ১ মিটার আকারের গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের মাটির সাথে ১৫-২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে তাতে পানি দিতে হবে।
চারা রোপণ: বাগানে রোপণের দূরত্ব ৫ ⨉ ৫ মিটার রাখতে হবে। এ হিসেবে হেক্টরপ্রতি চারা লাগবে ৪০০টি।
সারের পরিমাণ: গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চ ফলন পেতে হলে আঁশফলে নিয়মিত সার প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে। নিম্নের ছকে গাছের বয়স ভিত্তিক সারের পরিমাণ দেয়া হলো।
গাছের বয়স | জৈব সার (কেজি) | ইউরিয়া (গ্রাম) | টিএসপি (গ্রাম) | এমওপি (গ্রাম) | জিপসাম (গ্রাম) |
১-২ বছর | ৫-১০ | ১৫০-২৫০ | ১৫০ | ১৫০ | ৫০ |
৩-৪ বছর | ১০-১৫ | ৩০০-৪৫০ | ৩০০-৪৫০ | ৩০০-৪৫০ | ১০০ |
৫-৬ বছর | ১৫-২০ | ৫০০-৬০০ | ৪৫০-৬০০ | ৪৫০-৬০০ | ২০০ |
৭-১০ বছর | ২০-২৫ | ৭৫০-১০০০ | ৬০০-৭৫০ | ৬০০-৭৫০ | ৩০০ |
১১ বছর বা তদুর্ধ্ব | ২৫-৩০ | ১০০-১২০০ | ৭৫০-৯০০ | ৭৫০-৯০০ | ৪০০ |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি: উল্লিখিত সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। ১ম বার ফাল্গুন-চৈত্র মাসে মুকুল আসার পর ২য় বার জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে বীজের রং ধারণ পর্যায়ে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল সংগ্রহের পর ৩য় বার সার প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ প্রয়োগ: খরার সময় পানি সেচের প্রয়োজন হয়। অতিবৃষ্টির সময় পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
[সূত্র: বিএআরআই]