আদা একটি প্রয়োজনীয় মসলা ফসল যা খাবারকে সুস্বাদু করে। বাড়ির পাশে পতিত জমি, পাহাড়ে আদা চাষের পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন ফসলের সাথে আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করা যায়। আদার বিভিন্ন ঔষধিগুণ রয়েছে যেমন: পেটের পীড়া, আমাশয়, সদির্ কাশি নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
এ পাঠ শেষে আপনি- আদার জাত ও বংশবিস্তার সম্পর্কে জানতে পারবেন। আদা চাষের উপযুক্ত সময়, আদার জলবায়ুগত চাহিদা ও মাটি বিষয়ে অবগত হতে পারবেন। আদা চাষের পদ্ধতি শিখতে পারবেন।
নিম্নে সহজ ও সংক্ষেপে আদা চাষের পদ্ধতি তুআদা চাষের পদ্ধতি ধরা হলো-
(১) আদার জাত
বাংলাদেশে আদার তেমন জাত নেই। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি আদা-১ নামে একটি উফসী জাত রয়েছে। কৃষকরা সাধারণত স্থানীয় জাত চাষ করে থাকে।
(২) আদা চাষের উপযুক্ত জলবায়ু ও মাটি
- আদার বৃদ্ধির জন্য উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়া উপযোগী। আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানেও আদার চাষ ভালো হয়।
- আদার জন্য সুনিষ্কাশিত বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। তবে এটেল দোআঁশ মাটিতেও চাষ করা যায়।
(৩) আদা চাষে জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
- আদার জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে জমি গভীরভাবে ৫-৬ টি চাষ দিতে হবে।
- আগাছা বা আবর্জনা পরিষ্কার করে মাটি ঝুর ঝুরে করে সমতল করে নিতে হবে।
- আদার জন্য গোবর সার ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০-৪০০ কেজি, টি এসপি ১৫০-১৮০ কেজি, এমপি ১৬০-১৮০ কেজি হেক্টর প্রতি প্রয়োগ করতে হবে।
- জমি তৈরি সময় গোবর সার, টিএসপি, অর্ধেক এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক এমপি সার দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৪০-৫০ দিন পর এবং ২য় কিস্তি ৯০-১০০ দিন পর এবং বাকিটুকু ১২০-১৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
(৪) আদা চাষের উপযুক্ত সময় ও আদা রোপন পদ্ধতি
- আদা চাষের উপযুক্ত সময় হলো মার্চ থেকে মে মাস। উক্ত সময়ে আদার ১-২ কূঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ রোপন করতে হবে।
- সাধারণত ১৫-২০ গ্রাম ওজনের কন্দ প্রতি গতের্ ১টি করে ৪০-৫০ সে.মি. সারি থেকে সারি, গাছ থেকে গাছে ২৫ সে.মি. দূরত্বে ৫ সে.মি. গভীরে রোপন করতে হবে।
- বীজ রোপনের পর ঝুর ঝুরে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
- আদা রোপনের পর গাছ ও শিকড় বৃদ্ধি প্রাপ্ত হলে মাতৃ আদা তুলে নিলে গাছের কোন ক্ষতি হয় না বরং আর্থিক লাভবান হওয়া যায়। এই পদ্ধতিকে পিলাই তোলা বলে।
(৫) আদা গাছের আন্তঃপরিচর্যা
- আদার জমি আগাছামুক্ত থাকা প্রয়োজন।
- আগাছা পরিষ্কার করার সময় মাটি ঝুর ঝুর করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে এবং সারে উপরি প্রয়োগও একসাথে করতে হবে।
- আদার জমিতে ১৫ দিন পরপর সেচ দেওয়া ভালো। তবে অতিরিক্ত পানি যাতে না দাড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- আদার সাথে অন্যান্য ফসল অথবা ফলজ বৃক্ষ যেমন নারিকেল, সুপারি, কাঠাল বাগানে আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করা যায়।
(৬) আদা চাষে রোগ ও পোকা মাকড় দমন
- কন্দ পচন বা রাইজোম রট রোগ আদার মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। ব্যাভিস্টিন বীজ কন্দ দিয়ে শোধন করে ও শুকিয়ে জমিতে লাগাতে হবে। একই জমিতে বার বার আদার চাষ না করা ভালো।
- বর্ষার শুরুতে পাতা ঝলসানো রোগ দেখা যায়। প্রথমে পাতায় ডিম্বাকৃতি ফ্যাকাসে দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে দাগগুলি একত্রিত হয়ে বিস্তার লাভ করে এবং পাতা শুকিয়ে যায়। ডাইথেন এম-৪৫ ২.৫ গ্রাম এক লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
- আদার পোকা মাকড়ের মধ্যে কান্ড ছিদ্রকারী পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ক্ষতি করে থাকে। এক্ষেত্রে সঠিক কীটনাশক প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
(৭) চাষকৃত আদা সংগ্রহ
- আদা লাগানোর ৭-১০ মাস পর পাতা ও গাছ হলুদ হয়ে শুকিয়ে গেলে ফসল তোলার উপযোগী হয়। সাধারতঃ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে আদা তোলা হয়।
- আদা তুলে শিকড় ও মাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে তারপর শীতল ও আলো পূর্ণ এলাকায় আদা সংরক্ষণ করতে হবে।
- আদার ফলন হেক্টর প্রতি ১৫-৩০ টন হতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা আদা চাষের উপযুক্ত সময় এবং আদা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারলাম।
আদার পুষ্টিগুন হিসেবে ১০০ গ্রাম আদায় রয়েছেঃ এনার্জি-৮০ ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট-১৭ গ্রাম, ফ্যাট-০.৭৫ গ্রাম, পটাশিয়াম-৪১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস-৩৪ মিলিগ্রাম, আমিষ-২·৩%, শ্বেতসার ১২·৩%, আঁশ ২·৪%, খনিজ পদার্থ ১·২% এবং পানি ৮০·৮%।
আদা মসলা হিসেবে খাওয়া ছাড়া ও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়। সর্দিকাশি, আর্থারাইটিস, মাইগ্রেন, ডায়েরিয়া, গ্যাস, কনস্টিপেশন, হার্টের সমস্যা, ডায়বেটিস, হাই-কোলেস্টেরলের মতো বিবিধ রোগ প্রতিরোধে আদার জুড়ি নেই।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]