নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তাকারে আনারসের জাতের নাম ও আনারস চাষ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
ভূমিকা
আনারস ভিটামিন এ, বি ও সি সমৃদ্ধ একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। আনারস সাধারণত তাজা পাকা ফলই খাওয়া হয়। কচি ফলের শাঁস ও পাতার রস সেবন করলে কৃমি হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এটি বলবৃদ্ধিকারী ও কাশি কফ নিরাময়ে কাজ করে।
আনারস একটি যৌগিক ফল বা সরোসিস নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সিলেট, টাঙ্গাইলের মধুপুর, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নরসিংদী এলাকায় চাষ হয়। বাংলাদেশের জাতগুলি হল হানি কুইন, জায়ান্ট কিউ, ঘোড়াশাল ও জলঢুপি নামে চাষ করে থাকে।
জাত
বাংলাদেশে ব্যাবভাবে চাষকৃত ৩টি আনারসের জাতের নাম হলো-
১। হানি কুইন: এটি আনারসের একটি আগাম জাত। মে-জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল খুব মিষ্টি ও রসালো হয়।
২। জায়ান্ট কিউ: এটি আনারসের একটি নাবী জাত। এ ফলের ওজন অন্যান্যগুলোর তুলনায় বড় অর্থাৎ ১.৫-৩.০ কেজি হয়। ফল মিষ্টি এবং আঁশ কম।
৩। ঘোড়াশাল: ঘোড়াশাল অঞ্চলে হয় বলে এর নাম ঘোড়াশাল হিসেবে পরিচিত। এটি অন্যান্য আনারসের জাতের তুলনায় টক হয়। ফল মে-জুন মাসে আহরণের উপযোগী হয়।
বংশ বিস্তার
আনারস সাধারণত অঙ্গজ উপায়ে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। যেমন সাকার বা কান্ডের চারা, গোড়ার চারা, সি্লপ (চারা ফলের বোঁটা থেকে বের হয়), ক্রাউন (Crown) (ফলের উপরের ছোট পাতার সমন্বয়ে গঠিত), স্টাম্প বা কান্ড দ্বারা বংশ বিস্তার করা হয়। তবে সাকার বা কান্ডের চারা দ্বারা বংশ বিস্তারের চারা উত্তম।
জলবায়ু ও মাটি
- বাংলাদেশের সব জায়গায় আনারস চাষ হতে পারে। যেহেতু আনারস জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না সে জন্যই সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ের ঢালে আনারস চাষের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
- সুনিষ্কাশিত, উর্বর জমি আনারসের জন্য ভালো। তবে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি বেশ উপযোগী।
- মাটির pH ৪.৫ থেকে ৬.৫ হলে আনারস গাছ বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ভালো।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
- পাহাড়ে চাষ করলে চাষের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। তবে সমতল উচু জমিতে চাষের প্রয়োজন পড়ে।
- গাছ প্রতি সারের পরিমাণ পঁচা আবর্জনা বা গোবর সার ২০০-৩০০ গ্রাম, ইউরিয়া ১৫-২০ গ্রাম, টিএসপি ১০-১৫ গ্রাম, এমওপি ২৫-৩৫ গ্রাম, জিপসাম ১০-১৫ গ্রাম। গোবর, টিএসপি ও জিপসাম চারা রোপনের পূর্বেই মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
- ইউরিয়া সার দু’মাস পরপর ৪-৫ কিস্তিতে দিতে হবে।
চারা রোপন
- চারা যদি এক সারিতে রোপন করা যায়- তাহলে সারি থেকে ৫০ সে.মি. দূরে দূরে চারা লাগানো যায়।
- তবে দুই সারি পদ্ধতি দূরত্ব একটু বেশি লাগে। দুই সারি পদ্ধতিতে চারা রোপন করা ভালো।
- চারা ৫-৭ সে.মি. গভীরে রোপন করলে। বেশির ভাগ চারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পাওয়া যায় সেজন্য অক্টোবর-নভেম্বর চারা লাগানো উপযুক্ত সময়।
পরিচর্যা
- আনারস গাছে তেমন সেচের প্রয়োজন পড়ে না। তবে শুষ্ক মৌসুমে কিছু সেচ দেয়া প্রয়োজন।
- আগাছা আনারসের মরা ও শুকনো পাতা পরিষ্কার করতে হবে।
- সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে চারা ভাঙ্গার কাজ করতে হয়।
- আনারসের তেমন পোকামাকড় রোগ বালাই নাই। তবে Heart tro নামক পঁচা রোগ হলে ০.২% রিডোমিল প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- ছাতরা পোকা এবং পিঁপড়া দূর করার জন্য ম্যালাথিয়ণ ৫৭ ইসি ব্যবহার করা যায়।
ফল সংগ্রহ ও ফলন
- চারা লাগানোর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ফুল আসে। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে আনারস পাকে।
- ফলন পাকতে শুরু করলে সবুজের অংশ কমে গিয়ে হলুদাভাব রং ধারণ করলেই ফল সংগ্রহ শুরু করা উচিত।
- বোঁটার সামান্য অংশসহ ফল সংগ্রহ করা হয়।
- আনারসের ফলন হেক্টর প্রতি এবং জাত ভেদে ২৫-৫০ টন পর্যন্ত হতে পারে।
বছর ব্যাপী আনারস উৎপাদন প্রযুক্তি (হরমোন প্রয়োগ)
- বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণত চারা রোপনের ১৫-১৬ মাস পর আনারসের গাছে ফুল আসে ও ফুল আসার ৪-৫ মাস পর ফল পাকে।
- সাধারণতঃ জুন-জুলাই মাস আনারস পাকার সময়। এসময় আমাদের বাংলাদেশে আম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, প্রভৃতি ফলেরও ভরা মৌসুম। ফলে এ সময় আনারসের বাজার মূল্যও কম থাকে।
- বছরের অন্যান্য সময়ে এর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন না থাকায় তা দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে। হরমোন প্রয়োগ করে সারা বছর আনারস উৎপাদন করে এ সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। অর্থাৎ অমৌসুমী আনারস পাওয়ার জন্য হরমোন প্রয়োগ করে ফুল-ফল নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সারসংক্ষেপ
আনারস অনন্য স্বাদের একটি রসালো ফল। আনারসের তিনটি জাত হানি কুইন, জায়ান্ট কিউ, ঘোড়াশাল ও জলঢুপি বহুল প্রচলিত। বিভিন্ন উপায়ে অঙ্গউজ বংশ বিস্তার করা যায় তবে সাকারের মাধ্যমে বংশ বিস্তার সহজ।
[সূত্র: ওপেন স্কুল; ইন বাংলা নেট কৃষি (inbangla.net/krisi)]