Skip to content

 

ইনকিউবেটরে ডিম ফুটানোর পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ডিম ফোটানো পদ্ধতির বর্ণনা

ইনকিউবেটরে ডিম ফুটানোর পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ডিম ফোটানো পদ্ধতির বর্ণনা

প্রাণিসম্পদের মধ্যে হাঁস-মুরগি অন্যতম। সুতরাং এই আলোচনাটিতে হাঁস-মুরগির বংশবৃদ্ধিতে ডিম ফুটানোর জন্য উর্বর ডিম বাছাই করা, ইনকিউবেটরে ডিম ফুটানোর পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ডিম ফোটানো পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। ডিম ফোটানোর জন্য প্রথমত উর্বর ডিম দরকার।

(১) ডিম ফুটানোর জন্য উর্বর ডিম বাছাই করা

ডিম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্যের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-

  • মসৃণ, মোটা ও শক্ত খোসার ডিম;
  • স্বাভাবিক রঙের ডিম;
  • মাঝারি আকারের ডিম;
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ডিম;
  • ৫০-৬০ গ্রাম ওজনের ডিম;
  • ডিমের বয়স গ্রীষ্মকালে ৩-৪ দিন এবং শীতকালে ৭-১০ দিন।

(২) ইনকিউবেটরে ডিম ফুটানোর পদ্ধতি

ডিম ফোটানোর দুই ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। যেমন প্রাকৃতিক পদ্ধতি ও কৃত্রিম পদ্ধতি।

প্রাকৃতিক ও ইনকিউবেটর যন্ত্র যারা ডিম ফোটাতে একই সময়ের প্রয়োজন হয়। এই ইনকিউবেট পদ্ধতির সুবিধা হলো একসাথে অনেক সংখ্যক ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিতে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর সময় রোগ নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিতে মুরগিগুলো ডিমে তা না দেওয়ার কারণে ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাই বাণিজ্যিকভাবে এই পদ্ধতি খামারিদের নিকট খুব জনপ্রিয়।

ইনকিউবেটর ভাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র। এতে শত থেকে লক্ষাধিক ডিম ফোটানো যায়।

চিত্র- একটি ইনকিউবেটর যন্ত্র

ইনকিউবেটর যন্ত্র দ্বারা বাচ্চা ফোটানোর সময় নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করতে হবে-

১। তাপমাত্রা: ইনকিউবেটরের তাপমাত্রা ৯৯.৫-১০০.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উল্লেখ্য উপযুক্ত তাপমাত্রা না গেলে সুণের কোষ বিভাজন হবে না এবং ভুণের মৃত্যু হবে।

২। আর্দ্রতা: ইনকিউবেটরের মধ্যে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা ৬৫-৭০% এর মধ্যে রাখা হয়। ইনকিউবেটরে আর্দ্রতা কম থাকলে ডিম থেকে পানি বাষ্পায়িত হয়ে ভ্রুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

See also  ইনকিউবেটরে ডিম ফুটানোর পদ্ধতি, ডিম অনুর্বর হয় কেন? ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর বিভিন্ন পদ্ধতি ও সুস্থ ডিম নির্বাচন

৩। বায়ুপ্রবাহ: ভূণের অক্সিজেন গ্রহণ এবং ডিম থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বের হওয়ার জন্য বায়ুপ্রবাহ গুৰুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাই ইনকিউবেটরে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে অক্সিজেনের প্রবেশ এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড দূরীকরণের ব্যবস্থা থাকে। বায়ুপ্রবাহ না থাকলে ভুণের মৃত্যু হয়।

৪। সেটিং ট্রেতে ডিম বসানো: সেটিং ট্রেতে ৫৫-৬০ গ্রাম ওজনের ডিমগুলো বসানো হয়। ডিমগুলো মোটা অংশ উপরের দিকে এবং সরু অংশ নিচের দিকে বসানো হয়। ইনকিউবেশন চলাকালীন সময়ে ডিমগুলো ৪৫ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থানে থাকে।

৫। ডিম ঘুরানো: ডিমের সর্বদিকে সমানভাবে ভাগ, পাতা ও বাহু এবং পাওয়ার জন্য ডিমগুলোকে দৈনিক ৩ বার
ঘুরানো হয়ে থাকে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সম্পাদিত হয়ে থাকে।

৬। হ্যাচিং ট্রেতে ডিম স্থানান্তর: মুরগির ডিমের ক্ষেত্রে ১৮ দিন পর ডিমগুলোকে সেটিং ট্রে থেকে হ্যাচিং ট্রেতে স্থানাতর করা হয়। হাঁসের ডিমের ক্ষেত্রে ২০তম দিবসে সেটিং এ থেকে হ্যাচিং ট্রেতে স্থানান্তর করা হয়। উল্লেখ্য সেটিং ট্রেতে বাচ্চা ফোটানোর কোনো সুযোগ নেই। হ্যাচিং ট্রেতে তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমিয়ে দিতে হবে।

৭। ডিম ক্যান্ডলিং করা: আলো দ্বারা ডিমের ভিতরের অংশ পর্যবেক্ষণ করাকে ক্যান্ডলিং বলে। ডিম বসানোর সাত দিন পর অনুর্বর ডিম ও মৃত ভ্রুণসহ ডিম পৃথক করার জন্য সকল ডিমকে ক্যান্ডপিং করা হয়। আবার ১৮তম দিবসেও ক্যান্ডলিং করে একই রকমভাবে মৃত ভ্রুণসহ ডিম পৃথক করা হয়। ভ্রুণসহ মৃত ডিম, পঁচা ডিম ভিন্ন পৃথক না করলে ইনকিউবেটরের মধ্যে সুস্থ ডিম জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়।

৮। ফিউমিগেশন: এটি রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে জীবাণু ধ্বংস করার একটি পদ্ধতি। এই ক্ষেত্রে ক্ষেত্রা ১০০ ঘনফুট জায়গার জন্য ৭০ সিসি ফরমালিন ও ৩৫ গ্রাম পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ব্যবহার করা হয়। এই মিশ্রণটি মাটির পাত্রে রেখে ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক মিশ্রণটি অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া উৎপাদনের মাধ্যমে রোগজীবাণু ধ্বংস করে। তাই ব্যবহারের সময় দরজা জানালা বন্ধ করে সকলকেই দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করা উচিত।

See also  ইনকিউবেটরে ডিম ফুটানোর পদ্ধতি, ডিম অনুর্বর হয় কেন? ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর বিভিন্ন পদ্ধতি ও সুস্থ ডিম নির্বাচন

(৩) প্রাকৃতিক উপায়ে ডিম ফোটানো পদ্ধতি

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে হাঁস মুরগি দ্বারা ডিম ফোটানো হয়। গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিই ব্যবহৃত হয়। এতে অর্থের বিনিয়োগ লাগে না। অন্যদিকে তুষ পদ্ধতি বা ইনকিউবেটর পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে ডিম ফোটানোর মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়।

চিত্র- ডিম ফোটানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি

মুরগির নিজের দেহের তাপ দিয়ে নিষিক্ত ডিম ফোটানোকে প্রাকৃতিক পদ্ধতি বলে।

  1. দেশি মুরগি কিছুদিন ডিম পাড়ার পর কুচে হয় এবং ডিমে তা দিতে আগ্রহী হয়। এরূপ মুরগিকে ১০-১২টি ডিম দিয়ে বসানো হয়।
  2. প্রথমত মুরগির জন্য ঝুড়িতে খড়কুটা দিয়ে একটি বাসা বানাতে হবে। বাসাটি ঘরের নির্জন কোণে রাখতে হবে।
  3. মুরগির বাসা ৩৫ সেমি ব্যাস এবং ১০ সেমি গভীর হবে।
  4. ডিমে বসানোর পূর্বে মুরগিকে ভালোভাবে খাওয়াতে হবে। মুরগির সামনে দানাদার খাবার ও পানি রাখতে হবে।
  5. ৮-১০ দিন পর ডিমগুলো সূর্যের আলোয় পরীক্ষা করতে হবে। ডিমের ভিতরে ভ্রুণ থাকলে কালো দাগের মতো দেখাবে।
  6. ২১তম দিবসে ডিম থেকে বাচ্চা বেরিয়ে আসবে।
  7. বাচ্চারা প্রায় দুইমাস মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকে। এরপর বাচ্চারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে।

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ডিম ফুটানোর জন্য উর্বর ডিম বাছাই করা, ইনকিউবেটরে ডিম ফুটানোর পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ডিম ফোটানো পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারলাম। আলোচনাটি আপনার ইপকারে আসলে বা অন্য কোন মতামত থাকলে অবশ্য কমেন্ট বক্স কমেন্ট করা জানাবেন। পেল্টইর পালন সম্পর্কে অন্যন্য সকলক বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের এই ওয়েবসাইটিতে নিয়েমিত ভিজিট করুন। সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page