Skip to content

 

এ্যানথুরিয়াম ফুলের চাষ পদ্ধতি

এ্যানথুরিয়াম ফুলের চাষ পদ্ধতি

এ্যানথুরিয়াম এ্যারেসী (Araceae) পরিবারভুক্ত বহুবর্ষজীবী কান্ডহীন হারবেসিয়াস জাতীয় বাহারী পাতা ও ফুলের গাছ। এ গাছের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হল স্প্যাথ (Spathe)। স্প্যাথ আসলে পাতার পরিবর্তিত রূপ।

(১) এ্যানথুরিয়াম ফুলের জাত পরিচিতি

বারি এ্যানথুরিয়াম-১:

বারি এ্যানথুরিয়াম-১
বারি এ্যানথুরিয়াম-১

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বাঁছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বারি এ্যানথুরিয়াম-১ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।

  • গাড় লাল রঙের স্প্যাথ ও হলুদাভ রঙের স্প্যাডিক্স এ জাতটির বৈশিষ্ট্য।
  • পাতা গাঢ় সবুজ, হৃদয়াকৃতির ভেলভেটী পাতায় শিরাগুলি সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।
  • ছোট সাকার/চারা লাগালে ফুল আসতে ৯-১০ মাস সময় লাগে।
  • ফুলের সজীবতা ২০ দিন পর্যন্ত থাকে।
  • বছরে একটি ঝাড় থেকে ৫-৬টি ফুল পাওয়া যায় এবং হেক্টরপ্রতি পুষ্পদন্ডের সংখ্যা ৩ লাখের মতো।

(২) এ্যানথুরিয়াম ফুলের চাষ পদ্ধতি

ক) আবহাওয়া

এ্যানথুরিয়াম উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া উপযোগী। সাধারণত সব জাতের এ্যানথুরিয়াম ছায়াযুক্ত স্থানে ভাল জন্মায়। অর্থাৎ উজ্জ্বল সূর্যালোক থেকে আচ্ছাদনের মাধ্যমে (Shade net ব্যবহার করে) ৪০-৫০% কর্তন করে ছায়া প্রদান করলে গাছের বৃদ্ধি ভাল হয় তথা ভাল মানের ফুল পাওয়া যায়। উল্লেখ্য প্রখর সূর্যালোকে পাতা হলুদাভ হয়ে যায়।

সাধারণত যে সমস্ত এলাকায় রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ১৮-২০০ সে. এবং দিবাভাগের তাপমাত্রা ২৭-৩০০ সে. বিরাজমান থাকে সে সমস্ত এলাকা এ্যানথুরিয়াম চাষের জন্য উত্তম। নিম্ন তাপমাত্রা ফুল উৎপাদন নিরুৎসাহিত করে।

খ) বৃদ্ধি মাধ্যম

সাকার লাগানোর জন্য নারিকেলের ছোবড়া, নারিকেল ছোবড়ার গুঁড়া, কাঠের গুঁড়া, ধানের তুষ স্তরে স্তরে বিছিয়ে এ্যানথুরিয়াম চাষের উপযোগী মাধ্যম তৈরি করা হয়।

পটে জন্মানোর জন্য এককভাবে নারিকেলের ছোবড়া বা ছোবড়ার গুঁড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।

গ) বংশ বিস্তার

মাতৃগাছ থেকে সাকার পৃথক করে এ্যানথুরিয়ামের বংশবৃদ্ধি
মাতৃগাছ থেকে সাকার পৃথক করে এ্যানথুরিয়ামের বংশবৃদ্ধি

সাধারণত মাতৃগাছ থেকে সাকার পৃথক করে এ্যানথুরিয়ামের বংশবৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে এ প্রক্রিয়াটি খুবই শ্লথ গতির। তাই দ্রুত গতিতে বংশবৃদ্ধির জন্য টিস্যুকালচার প্রক্রিয়া ব্যবহার করা উত্তম।

যে সমস্ত এ্যানথুরিয়াম জাত সাধারণত সাকার উৎপাদনে দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে টপ কাটিং করলে সাকার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। উৎপাদিত স্বাস্থ্যবান এবং প্রচুর শিকড় সমৃদ্ধ গাছের গোড়া থেকে সামান্য উপরে কেটে দিলেই ২/৩ মাসের মধ্যে পাশ থেকে ২/৩ টি করে সাকার বের হবে।

ঘ) চারা লাগানোর সময় ও রোপণের ও দূরত্ব

সারা বছর সাকার বা টিস্যু কালচারের চারা লাগানো যায়।তবে জুলাই-আগস্ট মাস সর্বোত্তম।

৮০ সেমি প্রশস্ত বেডে ৪০ দ্ধ ৩০ সেমি দূরত্বে চারা রোপণ করলে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০,০০০ চারা রোপণ করা যায়।

ঙ) সার প্রয়োগ

চারা রোপণের ২-৩ মাস পর হতে তরল সার ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর প্রয়োগ করলে ভালমানের ফুল পাওয়া যায়।

এছাড়া চারা প্রতি ১০ গ্রাম করে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট ও মিউরেট অব পটাশ এর প্রতিটি ২০-২৫ দিন পর পর ফুল আসা পর্যন্ত প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

চ) পরিচর্যা

  • চারা রোপণের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফুল আসতে থাকে। প্রথম অবস্থায় ছোট ফুল কেটে দিতে হবে তা হলে পরবর্তীতে ফুল বড় হবে।
  • মাঝে মাঝে গাছের নিচের পাতা কেটে ফেলতে হবে। তা হলে ফুলের সংখ্যা বেশি হবে।
  • বাণিজ্যিক চাষাবাদে সাকার রোপণের পরে বেডের ২-২.৫ মিটার উপর দিয়ে ৪০-৫০ শতাংশ সূর্যালোক কর্তন করে এমন সেড নেট অবশ্যই স্থাপন করা দরকার।

ছ) ফুল সংগ্রহ

  • স্প্যাথের উপর দন্ডায়মান স্প্যাডিক্সের গোড়া থেকে সত্যিকার ফুল ধারণ শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে উপরে যেতে থাকে। পরিপক্কতা লাভের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চলে।
  • ফুলের পরিপক্কতা হলে উপরিভাগ সাদা রং ধারণ করে। সুতরাং স্প্যাডিক্সের প্রায় অর্ধেক অংশ সাদা রং ধারণ করলেই এ্যানথুরিয়াম ফুল এর পরিপক্কতা হয়েছে বলে মনে করা হয় এবং ফুল সংগ্রহ করার উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।
  • ধারালো চাকুর সাহায্যে এ্যানথুরিয়াম ফুল কেটে আকার ও আকৃতি অনুযায়ী এবং জাত ভেদে বাছাই করে নিতে হয়।

জ) ফুলের আয়ুষ্কাল

কক্ষ তাপমাত্রায় বেশি দিন সতেজ-সজীব থাকার ব্যাপারে এ্যানথুরিয়াম ফুল বিখ্যাত। ফুলের স্প্যাথের পুরুত্ব এবং পুষ্প দন্ডের দৃঢ়তা এ্যানথুরিয়াম ফুল বেশি দিন টিকে থাকার প্রধান কারণ।

(৩) এ্যানথুরিয়াম চাষে রোগবালাই ব্যবস্থাপনা

ক) পাতায় দাগ

যে সমস্ত রোগ দেখা যায়, তার মধ্যে পাতায় দাগ উল্লেখযোগ্য। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

লক্ষণ: আক্রান্ত গাছের পাতা ও স্প্যাডিক্সে ছোট ছোট দাগ পরিলক্ষিত হয় এবং পরে লম্বাকৃতি ধারণ করে এবং পচনের সৃষ্টি হয়।

দমন: ছত্রাকনাশক অটোস্টিন বা নোইন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-৮ দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

খ) ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট

ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট
ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট

Xanthomonas campestris pv. diffenbachia নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ্যানথুরিয়াম ব্লাইট রোগ হয়।

এ রোগের জীবাণু পাতার স্টোমাটা (Stomata) কিংবা ক্ষতের মাধ্যমে উদ্ভিদের ভিতরে প্রবেশ করে। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়।

লক্ষণ: রোগের লক্ষণ হিসেবে পাতার নিচের দিকে মার্জিনের আশে পাশে খুবই হালকা হলুদাভ রং পরিবৃত্ত অবস্থায় অসম (Irregular) পানি ভেজা (Water soaked) দাগ পরিলক্ষিত হয়। আক্রমণ তীব্রতর হলে আক্রান্ত স্থানের টিস্যু মারা যায় ও বাদামী রং ধারণ করে এবং বাদামী দাগের চারিদিকে হলুদ বর্ণের রিং এর মতো তৈরি হয়।

কান্ড আক্রান্ত হলে উক্ত স্থান কালো হয়ে যায় এবং কান্ডের মাধ্যমে পানি ও খাদ্যবস্তু (Nutrients) সরবরাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়। ফলশ্রুতিতে পাতা আগাম হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং ফ্যাকাশে রঙের ফুল উৎপাদিত হয়।

দমন: আক্রান্ত পাতা কেটে বাদ না দিলে অন্যান্য অংশও আক্রান্ত হতে পারে।

গ) পোকামাকড়

মাইট এবং মিলিবাগের আক্রমণ
মাইট এবং মিলিবাগের আক্রমণ

মাঝে মধ্যে মাইট এবং মিলিবাগের আক্রমণ দেখা যায়।

দমন: মাইট দমনের জন্য সালফোটক্স বা ওমাইট বা ভার্টিমেক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে এবং মিলিবাগের জন্য সুমিথিয়ন ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-৮ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page