(১) কদবেল এর জাত পরিচিতি
বারি কদবেল-১:
- নিয়মিত প্রচুর ফল প্রদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত।
- গাছ মাঝারী, ছড়ানো আকৃতির ঝোপালো।
- মধ্য বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসে গাছে ফুল আসে এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ফল আহরণ করা যায়।
- ফল গোলাকৃতির, আকারে বড় এবং পাকা ফল সবুজাভ বাদামী বর্ণের।
- ফলের শাঁস গাঢ় বাদামী ও মধ্যম রসালো, আঁশের পরিমাণ কম, স্বাদ টক-মিষ্টি (টিএসএস ১৮.৬৭%)।
- ফলের ওজন ৩৪৪ গ্রাম, খাদ্যোপযোগী অংশ ৬৯.১৫%।
- গাছপ্রতি ২০০০-২৫০০টি ফল হয়।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ২০-২৫ টন।
- জাতটি দেশের সর্বত্র চাষের উপযোগী।
(২) কদবেল চাষ পদ্ধতি ও গাছের পরিচর্যাসমূহ
ক) বংশ বিস্তার
যৌন ও অযৌন দুই উপায়েই কদবেলের বংশ বিস্তার করা সম্ভব।
বাংলাদেশে সাধারণত বীজ দিয়েই কদবেলের বংশ বিস্তার করা হয়। পর-পরাগায়িত বলে বীজের গাছে মাতৃ গাছের বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ থাকে না। এজন্য উৎকৃষ্ট জাতের চারা উৎপাদন করতে চাইলে গুটি কলম অথবা কুঁড়ি সংযোজন/জোড় কলম পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হবে।
জুন-জুলাই মাসে ১ বা ২ বছরের চারা আদিজোড় হিসেবে ব্যবহার করে এর উপর তালি কলম (Patch budding) অথবা ভিনিয়ার/ফাটল কলমের মাধ্যমে সফলভাবে বংশ বিস্তার করা যায়।
খ) জমি নির্বাচন ও তৈরি
- পূর্ণ রৌদ্রযুক্ত স্থানে কদবেলের চাষ করা উচিত।
- কদবেল চাষের জন্য বর্ষার পানি জমে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
- এর শিকড় মাটির খুব বেশি গভীরে প্রবেশ করে না তাই জমিতে পানির তল খুব বেশি নিচে থাকা ক্ষতিকর।
- বাগান আকারে কদবেল আবাদের জন্য সমস্ত আগাছা, মোথা ও পুরাতন গাছের গুঁড়ি উপড়ে ফেলতে হবে।
- উত্তমরূপে চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করার পর নির্দিষ্ট স্থানে চারা রোপণের জন্য গর্ত তৈরি করতে হবে।
গ) রোপণ পদ্ধতি, রোপণের সময় ও দূরত্ব
- কদবেল গাছ বাগান আকারে করতে চাইলে বর্গাকার পদ্ধতি অনুসরণ করা ভাল। উঁচু নিচু পাহাড়ী এলাকায় কন্টুর রোপণ প্রণালী অবলম্বন করা যেতে পারে।
- বর্ষার প্রারম্ভে অর্থাৎ বৈশাখন্ডআষাঢ় (মে-জুলাই) মাস কদবেলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
- অতিরিক্ত বর্ষায় চারা রোপণ না করা ভাল। তবে বর্ষার শেষের দিকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো চলে।
- বাগান আকারে কদবেলের চাষ করতে চাইলে ৬ মিটার ⨉ ৬ মিটার দূরত্বে এক বছর বয়সী চারা/কলম রোপণ করা উচিত।
ঘ) মাদা তৈরি
চারা/কলম রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে ১ মিটার ⨉ ১ মিটার ⨉ ১ মিটার আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে।
প্রতি গর্তে ১০-১৫ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম এমওপি সার গর্তের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে সেচ দিতে হবে।
মাটিতে সার মিশানোর পূর্বে সম্ভব হলে গর্তের মধ্যে কিছু খড়কুটো ও কাঠের গুঁড়া দিয়ে পুড়িয়ে নিলে উইপোকা ও রোগ জীবাণুর আক্রমণ রোধ হবে।
ঙ) চারা/কলম রোপণ ও পরিচর্যা
- গর্তে সার প্রয়োগের ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে ঠিক খাড়াভাবে চারা রোপণ করতে হবে।
- চারা রোপণের সময় মাটি নিচের দিকে ভালভাবে চাপ দিতে হয় যাতে চারাটি শক্তভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারে। চারাটি একটি বা দুটি খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে।
- গরু ছাগলের উপদ্রব থেকে চারাকে রক্ষার জন্য বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
- চারা রোপণের পর প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থা নিতে হবে। এমতাবস্থায় মালচিং দিলে খুবই ভাল হয়।
চ) ডাল ছাঁটাইকরণ
সাধারণভাবে কদবেলের চারা/কলমের মধ্যে ছোট অবস্থায় ঝোপালো হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
রোপণের পর গোড়ার দিকে ১.০-১.৫ মিটার পর্যন্ত সমস্ত ডাল ছাঁটাই করতে হবে। এর ওপর থেকে চতুর্দিকে ছড়ানো ৪-৫টি ডাল রেখে দিতে হবে যাতে গাছটির একটি সুন্দর কাঠামো তৈরি হয়।
ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের ছোট ছোট ডালপালা ছেটে দেয়া দরকার।
ছ) গাছে সার প্রয়োগ
গাছের যথাযথ বৃদ্ধি ও কাঙ্খিত ফলনের জন্য সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে।
বিভিন্ন বয়সের গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সারের পরিমাণ নিচের ছকে দেয়া হল।
সারের নাম | গাছের বয়স ১-৪ (বছর) | গাছের বয়স ৫-১০ (বছর) | গাছের বয়স ১১-১৫ (বছর) | গাছের বয়স ১৫+ (বছর) |
গোবর (কেজি) | ১০-১৫ | ১৫-২০ | ২০-৩০ | ৩০-৪০ |
ইউরিয়া (গ্রাম) | ১৫০-৩০০ | ৪৫০-৬০০ | ৬০০-৭৫০ | ১০০০ |
টিএসপি (গ্রাম) | ১৫০-২০০ | ২০০-৩০০ | ৩০০-৪৫০ | ৫০০ |
এমওপি (গ্রাম) | ১৫০-২০০ | ২০০-৩০০ | ৩০০-৪৫০ | ৫০০ |
জিপসাম (গ্রাম) | ১০০ | ২০০ | ২৫০ | ৩০০ |
প্রয়োগ পদ্ধতি:
- উল্লিখিত সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রথম কিস্তি বর্ষার প্রারম্ভে (বৈশাখন্ডজ্যৈষ্ঠ মাসে), দ্বিতীয় কিস্তি বর্ষার শেষে (ফল আহরণের পর) এবং শেষ কিস্তি শীতের শেষে (মাঘ-ফাল্গুন মাসে) প্রয়োগ করতে হবে।
- সারগুলো একত্রে মিশিয়ে গাছের চারদিকে (গোড়া থেকে ০.৫-১.০ মিটার জায়গা ছেড়ে দিয়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত এলাকা পর্যন্ত) ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপর সার ছিটানো জায়গার মাটি কুপিয়ে সারগুলো মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
- মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রস না থাকলে সার প্রয়োগের পর অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
জ) সেচ প্রয়োগ
চারা রোপণের পর ঘন ঘন সেচ দেয়া দরকার। খরা বা শুকনো মৌসুমে পানি সেচ দিলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
ঝ) ফল সংগ্রহ
- ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে গাছে ফুল আসে এবং শীতের প্রারম্ভে অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ফল পাকতে শুরু করে।
- আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত অপরিপক্ক ফল আহরণ করে কয়েকদিন রোদে রেখে পাকানো হয়। এতে ফলের কাঙ্খিত স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যায় না এবং অনেক ফল নষ্ট হয়।
- ফল পরিপক্ক হলে এর ত্বক ধুসর মলিন বর্ণ ধারণ করে এবং ফলের বোঁটা আলগা হয়ে যায়। সামান্য ঝাকুনিতেই ফল ঝরে পড়ে।
- গাছে ঝাকি দিয়ে ফল আহরণ করা উচিৎ নয়। এতে অনেক ফল বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ফেটে নষ্ট হয়।
[সূত্র: বিএআরআই]