যে সকল ফসলের কান্ড বা শিকড় কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জমা হওয়ার দরুন স্ফীত হয়ে রূপান্তরিত হয় সেগুলোকে কন্দাল ফসল বলে।
বাংলাদেশে আলু, মিষ্টি আলু, কচু, গাছ আলু বা মেটে আলু, কাসাবা, শটি, ওলকচু ইত্যাদি কন্দাল ফসল হিসেবে আবাদ হয়।
অধিক শর্করা থাকার কারণে অনেক দেশেই এসব ফসল প্রধান খাদ্য এবং প্রধান সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কন্দাল ফসল অন্যান্য প্রধান খাদ্য শস্য থেকে বেশি শক্তি ও আমিষ তৈরি করে।
উদাহরণস্বরূপ কিছু কন্দাল ফসলে পরিচিতি দেওয়া হলো-
আলু:
- স্থানীয়ভাবে আলু হিসেবে পরিচিত গোলআলু বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি এবং পরিপূরক খাদ্যফসল যা উৎপাদনের দিক থেকে ধান ও গমের পর দ্বিতীয় অবস্থানে এবং চাষাধীন জমির পরিমাণের দিক থেকে ধান ও গমের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
- প্রধানত দুধরনের আলু বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়: দেশি জাত (লালশীল, লালপাকরী, হাগরাই, ইন্দুক্কানি) ও বিদেশি উচ্চফলনশীল জাত।
- দেশি জাতগুলির কন্দের আকার ছোট এবং ফলন অত্যন্ত কম। অবশ্য, তাদের বাজার মূল্য অপেক্ষাকৃত বেশি।
- ১৯৬০ সালের পর বাংলাদেশে উচ্চফলনশীল আলুর জাতসমূহের প্রবর্তন শুরু হয়। মোট আলুর উৎপাদন এলাকার প্রায় বেশিরভাগই ভাগে এসবের চাষ হয়। এসব জাতের কন্দ অপেক্ষাকৃত বড় আকারের এবং অধিকতর ফলন দেয়।
- আদর্শ পরিবেশে উচ্চফলনশীল জাতসমূহ সহজেই ২০-৩০ মে টন/হেক্টর ফলন দিয়ে থাকে।
- বাংলাদেশে আলুর অবমুক্ত জাতসমূহ হচ্ছে মর্নি, ওরিগো, পেট্রোনিস, মুল্টা, ডায়ামন্ট, কার্ডিনাল, মোনডায়াল, কুফরি, সুন্দরী, হীরা, আলিসা, চমক, ধীরা, গ্রানোলা, ক্লিওপেট্রা, বাইনেল্লা, বারি টিপিএস-১ ও বারি টিপিএস-২ ইত্যাদি।
মিষ্টিআলু:
- দ্বিবীজপত্রী, তৃণজাতীয় ও বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ যা সাধারণত বর্ষজীবী হিসেবে চাষ করা হয়; স্থানীয়ভাবে এটি মিঠা আলু ও সাকরকন্দ আলু হিসেবেও পরিচিত।
- চাষের জন্য লতা কেটে লাগানো হয়। উষ্ণ আবহাওয়ায় মিষ্টিআলু অধিক ফলন দেয়।
- বাংলাদেশে মিষ্টিআলু একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক খাদ্য। কচি কান্ড ও পাতা শাক ও গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়।
- এর গড় ফলন প্রায় ১০ মে টন/হেক্টর।
- বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য মিষ্টিআলুর জাতসমূহের মধ্যে রয়েছে কমলাসুন্দরী (৪০-৪৫ মে টন/হেক্টর), তৃপ্তি (৪০-৫০ মে টন/হেক্টর), দৌলতপুরী (৩০-৩৫ মে টন/হেক্টর), বারি মিষ্টিআলু-৪ (৩০-৩৫ মে টন/হেক্টর) ও বারি মিষ্টিআলু-৫ (৩৫-৪০ মে টন/হেক্টর)।
কচুজাতীয় কন্দ:
- সাধারণভাবে কচু নামে পরিচিত, এটি একবীজপত্রী, তৃণজাতীয় উদ্ভিদ; আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মায়।
- এর স্ফীতমূল সংরক্ষণ অঙ্গ হিসেবে কাজ করে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাওয়া হয়।
- কিছু কচু ভূমিজ আর অন্যরা লতাজাতীয়, এ দলে পরাশ্রয়ী অনেক উদ্ভিদও রয়েছে।
- এদের কতক চাষ করা হয় এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়, কিছু সুদৃশ্য উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে লাগানো হয় এবং কতকের ভেষজ মূল্য রয়েছে।
ক্যাসাভা:
- ক্যাসাভা পশু ও পোল্ট্রি খাদ্য হিসেবেও ব্যবহূত হয়।
- গাছ ১ থেকে ৪ মিটার উঁচু হয়; গড় ফলন প্রায় ১২ মে টন/হেক্টর।
- আবাদ ময়মনসিংহের পাহাড়ি ও চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকায় সীমাবদ্ধ যেখানে উপজাতীয়রা এটিকে পরিপূরক প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
এছাড়াও:
- স্থানীয়ভাবে পরিচিত আরও কিছু কন্দাল ফসল যেমন- গাছআলু, মাছআলু, পেস্তাআলু, সাদাআলু, মোমআলু, গইছাআলু, বরইআলু এবং বেলআলু; এসব কমবেশি সমগ্র দেশে পাওয়া যায় কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা হয় না।
- খাবারযোগ্য গাছআলুর বংশবিস্তার সাধারণত হয়ে থাকে ক্ষুদ্রকন্দ (বীজ গাছআলু), কন্দের কলম, বা বুলবিলের মাধ্যমে।
[সূত্র: বিএআরআই]