Skip to content

কম্পোস্ট সার কিভাবে তৈরি করব? কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি

কম্পোস্ট সার কিভাবে তৈরি করব, কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি

প্রিয় পাঠক বন্ধু, আজকের আলোচনাটিতে আপনাকে স্বাগতম, আজকে আমরা কম্পোস্ট সার কিভাবে তৈরি করব সেই কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি শিখব।

আমরা সকলেই জানি কৃষি কাজে জৈব সার হিসেবে কম্পোস্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি সার, তাই আমরা কম্পোস্ট সার কিভাবে তৈরি করব অর্থ্যাৎ কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতিটা ভালোভাবে জানা ও শেখা থাকা জরুরি।

(১) কম্পোস্ট সার কিভাবে তৈরি করব?

কম্পোস্ট তৈরির জন্য কচুরিপানা ছাড়াও খড়কুটা, ঝরাপাতা, আগাছা, আবর্জনা, ফসলের অবশিষ্টাংশ একত্রে মিশিয়ে উৎকৃষ্ট মানের কম্পোস্ট বা জৈব সার উৎপাদন সম্ভব।

বর্ষায় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ডোবা-নালাসহ জলাঞ্চলে কচুরিপানায় ভরে ওঠে। যার ফলে তথায় জলাবদ্ধতাসহ পানি দূষিত হয় এবং মশার উপদ্রব বাড়ে। অথচ এই কচুরিপানাকেই আমরা কম্পোস্টের আসল কাঁচামাল হিসাবে গণ্য করতে পারি।

(২) কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি

সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে কম্পোষ্ট তৈরি করা যায়-

  1. স্তূপ পদ্ধতি ও
  2. গর্ত পদ্ধতি।

ক) স্তূপ পদ্ধতি

অতি বৃষ্টি ও বন্যাযুক্ত এলাকার জন্য স্তূপ বা গাদা পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরি করতে হবে। বসতবাড়ির আশেপাশে, পুকুর পাড়ে বা ডোবার ধারে কিংবা ক্ষেতের ধারে যেখানে বন্যা কিংবা বৃষ্টির পানি দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই এসব জায়গাকে স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরির স্থান হিসাবে নির্বাচন করতে হবে।

স্তূপের উপরে চালা দিতে হবে অথবা গাছের নিচে স্থান নির্বাচন করতে হবে যেন রোদ-বৃষ্টি থেকে কম্পোস্ট সার রক্ষা পায়।

i) স্তূপের আকার

  1. এ পদ্ধতিতে গাছের ছায়ায় মাটির উপর ৩ মিটার দৈর্ঘ্য, ১.২৫ মিটার প্রস্থ ও ১.২৫ মিটার উঁচু গাদা তৈরি করতে হবে।
  2. প্রথমত: কচুরিপানা অথবা অন্যান্য আবর্জনা ফেলে ১৫ সে.মি. স্তুপ তৈরি করতে হবে।
  3. স্তর সাজানোর আগে কচুরিপানা টুকরা টুকরা করে ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
  4. সাজানো কচুরিপানার স্তরের ওপর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০০ গ্রাম টিএসপি সার ছিটিয়ে দেয়ার পর স্তরের উপরিভাগে ২.৫-৫.০ সে.মি. পুরু করে কাদা ও গোবরের প্রলেপ দিতে হবে। এতে পচন ক্রিয়ার গতি যেমন বাড়বে অন্যদিকে সুপার কম্পোস্ট তৈরি হবে।
  5. এভাবে ১.২৫ মিটার উঁচু না হওয়া পর্যন্ত ১৫ সে.মি. পুরু স্তরের সাজিয়ে তার উপর ইউরিয়া ও টিএসপি সার দিতে হবে এবং তার ওপর গোবর ও কাদা মাটির প্রলেপ দিতে হবে।
  6. গাদা তৈরি শেষ হয়ে গেলে গাদার ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে ছাউনি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
See also  জৈব সার বানানোর পদ্ধতি ও জৈব সারের উপকারিতা

ii) স্তূপ পরীক্ষা

  • কম্পোস্ট স্তূপ তৈরি করার এক সপ্তাহ পর শক্ত কাঠি গাদার মাঝখানে ঢুকিয়ে নিয়ে দেখতে হবে গানা অতিরিক্ত ভিজা কিনা। যদি ভিজা হয় তবে গাদার উপরিভাগে বিভিন্ন অংশে কাঠি দিয়ে ছিদ্র করে দিতে হবে যেন বাতাস ঢুকতে পারে। ২-৩ দিন পর গর্ত বা ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। আবার গাদা অতিরিক্ত শুকিয়ে গেলে ছিল করে পানি অথবা গো-চনা ঢেলে দিতে হবে। এতে সার ভালো হবে।
  • কম্পোস্ট তাড়াতাড়ি পচে সার হওয়ার জন্য স্তুপ সাজানোর ১ মাস পর প্রথম বার এবং ২ মাস পর দ্বিতীয় বার গাদার স্তরগুলো উল্টিয়ে দিতে হবে। এ সময় কম পচা আবর্জনাগুলো গাদার মাঝখানে রাখতে হবে।
  • আবর্জনা সার ঠিকমতো পচলে ধূসর বা কালো বর্ণ ধারণ করবে এবং আঙুলে চাপ দিলে যদি গুঁড়া হয়ে যায় তবে বুঝতে হবে মাঠে সার ব্যবহার উপযোগী হয়েছে। বর্ণিত মাপগুলো যদি ঠিকমতো দেওয়া হয় তবে এ জাতীয় কম্পোস্ট গাদা ৩ মাসের মধ্যে উন্নতমানের সারে রূপান্তরিত হয়ে থাকে।

খ) গর্ত পদ্ধতি

পানি দাঁড়ায় না কিংবা কম বৃষ্টিপাত এলাকা কিংবা শুকনো মৌসুমে গর্ভ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। গাছের ছায়ার নিচে বাড়ির পেছন দিকে অথবা গোশালার পাশেই কম্পোস্ট গর্ত তৈরি করা সব দিক থেকে সুবিধা জনক।

i) গর্তের আকার

  1. ১.২৫ মিটার প্রস্থ ১ মিটার গভীর ও ২.৫ মিটার দৈর্ঘ্যের গর্ত তৈরি করতে হবে।
  2. গর্তের তলায় বালি অথবা কাঁকর দিয়ে দুরমুজ করে দিতে হবে যেন জলীয় পদার্থ শোষণ করে নিতে পারে। প্রয়োজনে ধানের খড় বিছিয়ে দেয়া যায়। এছাড়া গোবর কাপার সাথে মিশিয়ে গর্ভের তলা এবং চারিপাশে লেপে দিতে হবে।
  3. গর্তের ওপর দিকে ভূমি তলা থেকে খানিকটা উঁচু করে আইল তৈরি করে দিতে হবে যাতে কোনো রকম পানি গড়িয়ে গর্তে পড়তে না পারে।
  4. এবার গাদা পদ্ধতির মতো করে গর্তে কচুরিপানা স্তরে স্তরে সাজিয়ে কম্পোষ্ট তৈরি করা যায়। অথবা গোয়াল ঘরে গোবর, গো-চনা, পাতা, আখের ছোবড়া, কলাপাতা যাবতীয় উচ্ছিষ্ট অংশ গর্তে ফেলতে হবে। সম্ভব হলে গো-চনার সাথে কাঠের গুড়া মিশিয়ে দিতে পারলে ভালো হয়।
  5. এমনিভাবে এক একটি স্তরের ওপর মাটির প্রলেপ দিতে হবে। মাটির প্রলেপ দেয়ার আগে স্তর যেন ভালোভাবে ঠেসে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গর্ত ভরাট না হওয়া পর্যন্ত এমনিভাবেই স্তর তৈরি করতে হবে।
  6. প্রতিটি স্তর তৈরির পর মাটির প্রলেপ দেওয়ার আগে পরিমাণ মতো ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হবে। এরূপ ১টি গর্তে তিন টন আবর্জনার জন্য ১-২ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োজন।
  7. গর্ত ভরাট হওয়ার পর গোবর ও মাটি মিশিয়ে উপরিভাগে প্রলেপ দিতে হবে।
See also  এ্যাজোলা কি? জৈব সার এ্যাজোলা চাষ পদ্ধতি এবং এ্যাজোলা ব্যবহারের উপকারিতা ও উৎপাদনের সিমাবদ্ধতা

ii) গর্ত পরীক্ষা

  • সার যাতে শুকিয়ে না যায় তা পরীক্ষার জন্য গর্তের মাঝখানে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রের ভিতরে দেখতে হবে যদি শুকনো মনে হয় তবে ছিদ্র দিয়ে পানি অথবা গো-চনা ঢেলে দিতে হবে।
  • জৈব পদার্থে পানির পরিমাণ ৬০-৭০ ভাগ থাকা বাঞ্চনীয়। এ ভাবে তিন মাস রাখার পর এই সার ব্যবহার উপযোগী হবে।

উপরে আলোচনা থেকে আমরা কম্পোস্ট সার কিভাবে তৈরি করব? বিষয়টা জানলাম ও শিখলাম। আশা করি এখন আমরা উল্লিখিত ২টি পদ্ধতির যেকোন কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা মান সম্মত কম্পোস্ট সার তৈরি করতে পারব। আজকের আলোচনা এখানেই সমাপ্ত হলো, দেখা হবে পরবর্তী কোন কৃষি বিষয়ক আলোনায়। ততদিন ভালো থাকুন সুস্থ, কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথবয পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটটির সাথেই থাকুন। কমেন্ট আপনার যেকোন প্রশ্ন/কথা/মতমত জানাতে পারেন, আমরা খুশি হব। সালাম।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts