Skip to content

 

কাঠ গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হয়? (কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের ট্রেনিং, প্রুনিং ও ক্ষতস্থান ড্রেসিং)

কাঠ গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হয়, (কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের ট্রেনিং, প্রুনিং ও ক্ষতস্থান

কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষ হলো সেই সকল গাছ যাদের গঠনগত কাঠামো কোষসমষ্টি অর্থাৎ কলায় কাষ্ঠল অংশ থাকে বা উৎপন্ন হয় এবং সেই কাষ্ঠল অংশ পরিনত হয়য়ে সাধারণত শক্ত কাণ্ডের রূপ নেয়। এই শক্ত কাষ্ঠল কাণ্ডকে চলিত ভাষায় গাছের গুঁড়িও বলা হয়।

এককথায়, যে সকল গাছ থেকে কাঠ পাওয়া যায় তাকেই কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষ বলে।

বৃক্ষে রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা হলো চারার বেড়ে উঠা পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা, রোগবালাই দমন করা এবং গাছের প্রুনিং, ট্রেনিং ও ব্যবস্থাপনা করা। কাঠ গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হয় তা জানা থাকা ও এ সমস্ত পরিচর্যার মধ্যে ট্রেনিং ও প্রুনিং কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ পাঠ শেষে আপনি- কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হয়? প্রুনিং ট্রেনিং ও ক্ষতস্থান ড্রেসিং কী? প্রুনিং ও ট্রেনিং পদ্ধতির পার্থক্য ইত্যাদি বিষয় জানতে পারবেন।

তো চলুন জেনে নিই কাঠ গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হয়-

(১) কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের প্রুনিং

কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের সুষম বৃদ্ধি, সোজা সবল কান্ড ও ভালো মানের কাঠ পাওয়ার জন্য মাঝে মধ্যে প্রুনিং করার প্রয়োজন হয়। প্রুনিং এর মাধ্যমে বৃক্ষের শাখা প্রশাখা, পাতা, মূল ইত্যাদি পরিমাণমত ছাঁটাই করা উচিত।

ক) প্রুনিং এর উদ্দেশ্য

  1. বৃক্ষের কান্ড সোজা রাখা ও কাঠের গুনগতমান বৃদ্ধি করা।
  2. পাশাপাশি উৎপাদিত অন্য বৃক্ষের বাহু ব্যাহত না করা।
  3. অঙ্গজ বৃদ্ধি ও ফল ধারণের মধ্যে সাম্যতা আনয়ন করা।
  4. বৃক্ষের রোগবালাই আক্রান্ত শাখা-প্রশাখা দূর করা।
  5. একটি নিদিষ্ট পরিমান জায়গায় অধিক গাছ একত্রে জন্মানোর সুযোগ সৃষ্টি করা।
  6. বিভিন্ন প্রজাতির গাছ একত্রে উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হ্রাস করা।
See also  কৃষি ও বৃক্ষ মেলা: কৃষি মেলা কি? কৃষি মেলা কাকে বলে? বৃক্ষ মেলা কি/বৃক্ষ মেলা কাকে বলে? এসব মেলার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব

খ) প্রুনিং এর প্রকারভেদ বা পদ্ধতি

বৃক্ষের প্রুনিং বা ছাঁটাইকরণ বিভিন্নভাবে করা হয়। যথা-

i) কান্ড ছাঁটাই (Stem prunning)

কাষ্ঠল গাছের প্রধান কান্ড থেকে যখন অসংখ্য শাখা প্রশাখা বাহির হয় তখন প্রধান কান্ডের কাঠের গুনগতমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত শাখা প্রশাখা ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন হয়। আবার পুরাতন গাছে নতুন শাখা গজানোর প্রয়োজনে ছাঁটাই করা হয়ে থাকে।

ii) পাতা ছাঁটাই (Leaf prunning)

অঙ্গজ বৃদ্ধি শেষে গাছে যখন ফুল, ফল ধরার সময় হয় তখন গাছে পাতার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে পুষ্পায়ন ব্যাহত হয়ে ফল কম ধরে। সেই সবক্ষেত্রে অতিরিক্ত পাতা ছাঁটাই করলে ফল ধরায় সহায়তা করে। চারাগাছের ক্ষেত্রে রোপণ পূর্ববর্তী সময়ে প্রস্বেদনের হার কমানোর জন্য পাতা ছাঁটাই করা হয়।

iii) মূল ছাঁটাই (Root prunning)

কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের সাথে কৃষি ফসলের চাষাবাদ একত্রে করলে কৃষি ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাষ্ঠল গাছের মূল ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে মাটির উপরিস্তরে আসা মূল বৃক্ষের গোড়ার একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে মাটি সরিয়ে কোদাল বা খন্তা দিয়ে কাটতে হবে। এর পর পরই ঝুরা মাটি দিয়ে বৃক্ষের গোড়া ঢেকে দিতে হবে।

iv) ফুল ও ফল ছাঁটাই (Flower and fruit prunning)

গাছে অতিরিক্ত ফুল ধরলে ফল ধরার পরিমাণ কমে যায়। এই জন্য ফলদ বৃক্ষের ফুল ছাঁটাই করে পাতলা করে দেয়া হয়। এতে ফলের গুনগত মান উন্নত হয়। একই শাখায় অতিরিক্ত ফল ধরলে ফলের আকৃতিও ছোট হয়ে যায়। যেমন- আম, কাঁঠাল, ইত্যাদি।

(২) কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের ট্রেনিং

কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের কাঠামো সুন্দর, সবল ও দৃষ্টিনন্দন করার উদ্দেশ্য শাখা প্রশাখার সংখ্যা ও অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করাকে ট্রেনিং বলা হয়। ট্রেনিং এর মূল উদ্দেশ্যে হলো বৃক্ষের আকার আকৃতি ও অঙ্গ বৃদ্ধি কাঙ্খিত অবস্থায় রাখা।

See also  বৃক্ষ ও বন সংরক্ষণ

গাছের ট্রেনিং পদ্ধতির জন্য প্রথম বছর প্রধাণ কান্ডের নীচ থেকে উপরের শাখা প্রশাখা কান্ডের তিন ভাগের একভাগ উঁচু পর্যন্ত গোড়া থেকে কাটতে হয়। পরের বছর নির্দিষ্ট আকৃতিতে শাখা প্রশাখা অপসারণ করলে গাছ উপরের দিকে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে এবং লম্বাটে দেখাবে। যেমন- বাবলা, ইপিল-ইপিল প্রভৃতি উপরের দিকে শাখাম্বিত চারা গাছের জন্য শুরুতে ট্রেনিং এর প্রয়োজন হয় না। পরের দিকে নিদিষ্ট আকৃতিতে শাখা প্রশাখা ছাঁটাই করা হয়।

লিকলিকে চারা গাছ সবল করার জন্য শুরুতে প্রধান কান্ড কেটে দিতে হয়। যেমন- দেবদারু, সেগুন, শিশু ইত্যাদি। পরবর্তীতে গাছ লম্বায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হয়ে পাশে শাখা প্রশাখা গজায়।তখন নির্দিষ্ট আকৃতিতে শাখা প্রশাখা ট্রেনিং করলে গাছ সুন্দর লম্বাটে আকার ধারণ করে।

ক) ট্রেনিং এর উদ্দেশ্য

  1. ট্রেনিং গাছকে সুঠাম ও শক্ত কাঠামো দানে সহায়তা করে।
  2. কাষ্ঠল গাছের প্রধান কান্ড সোজা হওয়ায় সুন্দর লগ পাওয়া যায়।
  3. বনায়নের জন্য লাগানো গাছের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
  4. ট্রেনিংকৃত গাছ সবল ও মজবুত হয় বলে ঝড়ে সহজে ভাঙ্গে না।
  5. ট্রেনিং করলে গাছে ব্যবহার উপযোগী কাঠের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

খ) ট্রেনিং এর প্রকারভেদ/পদ্ধতি

i) উচ্চ কেন্দ্র পদ্ধতি (Central leader trainning)

এই পদ্ধতিতে গাছে প্রধান কান্ডটিকে ছাঁটাই না করে শুধু শাখা প্রশাখা অপসারণ করা হয়। এতে গাছ দীর্ঘ কান্ড বিশিষ্ট হয়। যেমন- সেগুন, গর্জন, মেহগনি ইত্যাদি।

ii) মুক্ত কেন্দ্র ট্রেনিং (Open central trainning)

এ পদ্ধতিতে গাছের প্রধান কান্ডটিকে বৃদ্ধির সুযোগ দিয়ে পরে অগ্রভাগ ছেঁটে দেওয়া হয়। এতে গাছ মাঝারি উচ্চতার হয় এবং চারপাশে কিছুটা ছড়ায়। ফলে ফল পাড়া ও অন্যান্য পরিচর্যা সহজ হয়।

iii) নাতি উচ্চ কেন্দ্র ট্রেনিং (Modified leader trainning)

এ পদ্ধতিতে প্রধান কান্ডটিকে প্রাথমিকভাবে ভালভাবে বাড়তে দেওয়া হয়। যখন পাশের কয়েকটি শাখা প্রশাখা ভালভাবে বেড়ে উঠে তখন প্রধান কান্ডটির অগ্রভাগ ছেঁটে দেওয়া হয়। এতে গাছ চারপাশে বেশ ছড়িয়ে যায় এবং খাটো থাকে।আম, জাম, আপেল গাছে এ পদ্ধতিতে ট্রেনিং করা হয়।

See also  বসতবাড়িতে বৃক্ষরোপণের নিয়ম ও পদ্ধতি

গ) প্রুনিং ও ট্রেনিং এর মধ্যে পার্থক্য

প্রুনিংট্রেনিং
১। প্রুনিং ক্ষেত্রে বৃক্ষের শাখা প্রশাখা, ফুল, ফল, মুকুল, পাতা প্রভৃতি অপসারণ করা হয়।১। ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে শুধু শাখা প্রশাখা ও পাতা ছাঁটাই করা হয়।
২। গাছের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হয়।২। বৃক্ষকে সুন্দর গড়ন ও আকার আকৃতি দানের জন্য করা হয়।
৩। কাঠ ও ক্ষেত্রবিশেষ ফলের গুনগত মান বৃদ্ধির জন্য করা হয়।৩। গাছকে সুন্দর গঠন প্রদানের উদ্দেশ্যে করা হয়।
৪। সব ধরণের ট্রেনিং পদ্ধতিকে প্রুনিং বলে অভিহিত করা যায়।৪। সব ধরণের প্রুনিংকে ট্রেনিং বলা যায় না।
৫। বয়স্ক গাছে ফল ধারণের পর করা হয়। ৫। তরুন গাছে ফল ধারণের পূর্বে করা হয়।

(৩) কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের ক্ষতস্থান ড্রেসিং

ট্রেনিং ও প্রুনিং কার্যক্রম পরবর্তী বৃক্ষের ক্ষতস্থানসমূহকে ছত্রাকজনিত ও অন্যান্য রোগজীবানুর আক্রমন থেকে রক্ষার পদ্ধতিকে ক্ষতস্থান ড্রেসিং বলে।

ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া, পোকামাকড় গাছের কান্ড বা ডালে সৃষ্ট ক্ষতের মধ্যে প্রবেশ করে নানান ধরণের উপসর্গ সৃষ্টি করে। এ সব রোগের কারণে গাছের আক্রান্ত স্থানে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতের সৃষ্টি হয় যা আস্তে আস্তে ক্যান্সারে পরিণত হয়। এ ছাড়াও ঝড় ঝাপটার মাধ্যমে বৃক্ষের কান্ড ও শাখা-প্রশাখা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ক্ষত তৈরী হয়। এ ক্ষত দীর্ঘ সময় উন্মুক্ত থাকলে সেখানে পচন ধরে কান্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কোন পদার্থ যেমন আলকাতরা, বোর্দা মিক্সচার বা অন্য কোন রঙের প্রলেপ দিতে হয়। গ্রীসের মানুষেরা অনেক সময় এঁটেল মাটি ও গোবরের মিশ্রন দ্বারা প্রলেপ দিয়ে থাকে।

ক) ড্রেসিং পদ্ধতি

এ কাজের জন্য-

  1. প্রথমে বৃক্ষের ক্ষতস্থান ধারালো দা বা ছুরি দ্বারা চেঁছে পরিষ্কার করতে হবে।
  2. এরপর পরিষ্কারকৃত ক্ষতস্থানে আলকাতরা, বোর্দোমিক্সচার বা উপযুক্ত ছত্রাকনাশক পেষ্টের মতো করে লেপে দিয়ে পলিথিন দ্বারা বেঁধে দিতে হবে।
  3. এভাবে কয়েকদিন রেখে দিলে ক্ষতস্থান শুকিয়ে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু সৃষ্টি হয়ে ক্ষতস্থান ভরাট হয়ে যাবে।

খ) ক্ষতস্থান ড্রেসিং এর উপকারিতা

  • ড্রেসিং পচন সৃষ্টিকারী জীবানুর অনুপ্রবেশকে বাঁধা প্রদান করে
  • ড্রেসিং ক্ষতস্থানের আদ্রতা সংরক্ষণ ও ক্ষয় প্রতিরোধ করে
  • সময়মতো ড্রেসিং করলে ক্ষতস্থান গভীর হয় না ফলে কাঠ ভালো থাকে
  • কান্ড ও শাখা-প্রশাখার বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে বলে গাছ সহজে মারা যায় না

কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের বেড়ে উঠা ও গুনগতমানের কাঠ উৎপাদন রোপণ পরবর্তী পরিচর্যার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কাঠ গাছ বা কাষ্ঠল বৃক্ষের পরিচর্যার মধ্যে ট্রেনিং এবং প্রুনিং। বনজ বৃক্ষের বাড়ন্ত অবস্থায় সুষম সার প্রয়োগে মাধ্যমে পরিচর্যা করা দরকার।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page