Skip to content

কৈ মাছ চাষ পদ্ধতি

কৈ মাছ চাষ পদ্ধতি

কৈ মাছ একটি সুম্বাদু মাছ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটি খুব জনপ্রিয়। আমাদের দেশে হাওর, খাল, বিল, ডোবায় কৈ মাছ পাওয়া যায়। এদেশে কৈ মাছের যে জাতটির চাষ হয় সেটি থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত। থাই কৈ মাছ দেশি জাতের চেয়ে অধিক বর্ধনশীল।

কৈ মাছ পানিতে অন্যান্য মাছের মতো ফুলকার সাহায্যে অক্সিজেন গ্রহণ করে। কিন্তু পানির উপরে এলে এদের চামড়ার নিচে অবস্থিত একটি বিশেষ অঙ্গ দ্বারা প্রতিকূল পরিবেশে বাতাস থেকে অক্সিজেন সগ্রহ করে বেঁচে থাকতে পারে। কৈ মাছের চাষ এখন লাভজনক।

এ মাছ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং বাজার মূল্যও বেশি। স্বপ্ন গভীরতার পুকুরে ও অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়। এ মাছ চাষ করে পারিবারিক প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

(১) কৈ মাছ চাষ পদ্ধতি

চিত্র- কৈ মাছ
চিত্র- কৈ মাছ

ক) চাষযোগ্য পুরের বৈশিষ্ট্য: পুকুরটি খোলামেলা জায়গায় হবে। পলি দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটিতে পুকুর হলে ভালো। পুকুর শক্ত ও পরিষ্কার পাড়যুক্ত এবং বন্যামুক্ত স্থানে হতে হবে। পুকুরে অন্তত ৫-৬ মাস পানি থাকতে হবে।

খ) চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি: কৈ মাছের পুকুর প্রস্তুতির জন্য নিচের পদক্ষেপসমূহ অনুসরণ করতে হবে পাড় মেরামত: পুকুরের পাড় ভাঙা থাকলে সেটা ভালোভাবে মেরামত করতে হবে। পাড়ে বড় গাছপালা থাকলে সেগুলো ছেঁটে দিতে হবে যাতে পুকুরে পর্যাপ্ত আলো পড়ে।

গ) জলজ আগাছা দমন: পুকুর হতে জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে যেন পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পড়ে। তাছাড়া আগাছামুক্ত পুকুর মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরিতে সহায়তা করে।

ঘ) রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ অপসারণ: পুকুর থেকে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করতে হবে। কারণ রাক্ষুসে মাছ কৈ মাছের পোনা খেয়ে ফেলে। অবাঞ্ছিত মাছ কৈ মাছের খাদ্য খেয়ে ফেলে। বারবার জাল টেনে বা পুকুর শুকিয়ে বা প্রতি শতক পুকুরে ২০-৩০ গ্রাম রোটেনন প্রয়োগ করে এদের দূর করা যায়।

See also  কই মাছের বৈশিষ্ট্য ও কই মাছ চাষ পদ্ধতি

ঙ) চুন প্রয়োগ: চুন প্রয়োগে পানি ও মাটির অম্লতা দূর হয়। চুন পানির ঘোলাত্ব দূর করে এবং কৈ মাছের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই প্রতি শতক পুকুরে ১-২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে।

চ) সার প্ররোগ: কৈ মাছের চাষ অনেকটা সম্পূরক খাদ্যের উপর নির্ভরশীল। চুন প্রয়োগের ৭ দিন পর শতক প্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি পানিতে ভিজিয়ে সূর্যালোকের সময় প্রয়োগ করতে হবে।

ছ) গোনা ছাড়া:

চিত্র- কৈ মাছের পোনা
চিত্র- কৈ মাছের পোনা
  • কৈ মাছ বৃষ্টির সময় কাত হয়ে কানে হেঁটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সক্ষম। সে জন্য কৈ মাছের পোনা ছাড়ার পূর্বে পুকুরের চারদিকে নাইলন নেট দিয়ে বেড়া দিতে হবে।
  • পোনা পরিবহনের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন পোনা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।
  • পুকুরে পোনা ছাড়ার পূর্বে অবশ্যই পোনাকে পুকুরের পানির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
  • প্রতি শতকে ৪০০-৫০০ পোনা মজুদ করা যাবে। এ রকম মজুদ ঘনত্বে অবশ্যই তৈরি খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

জ) খাবার প্রদান:

চিত্র- কৈ মাছের জন্য তৈরি খাদ্য
চিত্র- কৈ মাছের জন্য তৈরি খাদ্য
  • কৈ মাছকে খাবার হিসেবে ফিশমিল, সরিষার খৈল, চালের কুঁড়া, গমের ভুসি পানি দ্বারা মিশ্রিত করে বল তৈরি করে পুকুরের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্যানে প্রদান করতে হবে। আবার বাজার থেকে বাণিজ্যিক খাদ্য কিনেও সরবরাহ করা যেতে পারে।
  • প্রতিদিন মাছের দেহ ওজনের ৫% ১০% হারে খাদ্য দিতে হবে।
  • প্রতিদিন খাবার দুই ভাগ করে সকালে ও বিকালে দিতে হবে।

(২) কৈ মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা

চিত্র- রোগাক্রান্ত কৈ মাছ
চিত্র- রোগাক্রান্ত কৈ মাছ

মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা বলতে রোগের বিরুদ্ধে গৃহীত প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাকে বোঝায়। রোগ হওয়ার পূর্বে প্রতিরোধ এবং রোগ হওয়ার পর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কৈ মাছের রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসার থেকে প্রতিরোধের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

এ মাছে প্রধানত ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবীজনিত রোগ বেশি হয়। তবে মাছের মজুদ ঘনত্ব বেশি ও খাদ্যে পুষ্টির অভাব হলে মাছ অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

See also  শিং ও মাগুর মাছ চাষ পদ্ধতি

নিচে কৈ মাছের রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাসমূহ উল্লেখ করা হলো-

  1. মাসে অন্তত একবার জাল টানতে হবে।
  2. মাছের গড় ওজনের সাথে মিল রেখে পুকুরে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
  3. পানির রং গাঢ় সবুজ হলে বা পানি নষ্ট হলে পানি পরিবর্তন করতে হবে।
  4. পুকুরে লাল স্তর পড়লে প্রতি শতকে ৫০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করতে হবে।
  5. কৈ মাছের পুকুরে প্রচুর প্লাংকটন তৈরি হয় যা পুকুরের পানির পরিবেশ নষ্ট করে। প্ল্যাংকটন নিয়ন্ত্রণের জন্য শতক প্রতি ১২টি তেলাপিয়া ও ৪টি সিলভার কার্পের পোনা ছাড়া যেতে পারে।
  6. পানিতে অক্সিজেনের অভাব হলে পুকুরে বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে অক্সিজেন মেশানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
  7. রোগ প্রতিরোধের জন্য শীতের শুরুতে ১ মিটার পানির গভীরতার জন্য শতক প্রতি ০.৫-১.০ কেজি হারে চুন বা ২০০-২৫০ গ্রাম জিওলাইট প্রয়োগ করতে হবে। আবার মাসে ২ বার করে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম হারে লবণও প্রয়োগ করা যেতে পারে।

পুকুরে কৈ মাছের রোগ দেখা দিলে নিম্নবর্ণিত চিকিৎসা বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়-

  1. মাছে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ বা লেজ ও পাখনা পচা রোগ দেখা দিলে পুকুরে প্রতি শতকে ৮৮ গ্রাম হারে কপার সালফেট প্রয়োগ করতে হবে।
  2. মাছের শরীরে উকুন হলে পুকুরে ৩০ সেমি গভীরতার জন্য প্রতি শতকে ৩-৬ গ্রাম ডিপটারেক্স সপ্তাহে ১ বার হিসাবে পরপর ৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।
  3. মাছের ক্ষতরোগ হলে পুকুরে কপার সালফেট ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৩-৫ গ্রাম অক্সিটেট্রাসাইক্লিন সাত দিন ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়াও পুকুরে ৩০ সেমি পানির গভীরতার জন্য প্রতি শতকে ০.৫-১.০ কেজি খাবার লবণ ব্যবহার করা যায়।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Tags:

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts