ক্যাকটাস হল জেরোফাইটিক উদ্ভিদের একটি প্রজাতি, যা রসালো ধরনের ক্যাকটি পরিবারের অন্তর্গত যারা শুষ্ক পরিবেশে যেখানে বৃষ্টি ঘন ঘন হয় না সেখানে বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি সঞ্চয় করতে সক্ষম। এই সাধারণ কারণে, এই উদ্ভিদটি এমন জায়গায় বিকশিত হতে পারে যেখানে অন্য কোনও উদ্ভিদের এটি করার সুযোগ থাকবে না। এই গাছগুলির বেশিরভাগই কাঁটাযুক্ত হয় যাতে তারা নিজেদের রক্ষা করে।
ফুলের জন্য ও বাগানে কৃত্রিম পাহাড়ের শোভা বৃদ্ধিও জন্য এবং ঘরের বারান্দা, ছাদ, সিড়ি,ও বাগানের রাস্তার দুপাশ শোভিত করার জন্য ক্যাকটাসের চাষ করা হয়।
(১) ক্যাকটাসের জাত পরিচিতি
আমাদের বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন অসংখ্য জাতের ক্যকটাস আছে। যেমন- Rat tails Cactus; Astrophytum; Cereus; Cephalo Cereus; Clestro Cactus ; Dolichothele; Echino; Epiphullum; Fero Cactus; Gymno Calycium; Melo Cactus; Noto Cactus; Opuntia; Lobivia; Mammillaria;Rfbuta; Heliocereus; Pereskia; Rhipsalis ইত্যাদি।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ক্যাকটাসের জতের নাম ও পরিচয় নিচে দেয়া হলো।
ক) ফনিমনসা
এদের কান্ড পুরু, চ্যাপটা ও ডিম্বাকৃতি। একটির প্রান্ত হতে আরেকটি বের হয়। তীক্ষè কাঁটাযুক্ত কান্ডের গায়ে তারকাকারে সজ্জিত। অধিকাংশ ফনিমনসার বড় হলুদ বা লালচে বর্ণের ফুল হয়। ফনিমনসার অনেকগুলো জাত রয়েছে, যেমন-ডিলেনাই, ইলেটিওর, কেচিনেলিফেরা, ননাকান্থা বা মনকাটা নাইগ্রিকান্স প্রভৃতি।
খ) নিপল ক্যাকটাস
পশুর বাটের মতো ঠোঁট, বামনাকার, কান্ডের শীর্ষে গুচ্ছ গুচ্ছ চুলের মতো পাতা ও পাতার ফাঁকে ফুল হয়। ফুলগুলো হালকা হলুদ। এর সুদৃশ্য ফুলের ভিতরের দিক উজ্জ্বল হলুদ, বাইরের দিক লালচে। এর জাতগুলো যেমন কোয়াড্রস্পাইনা, এমপুশিলা, এম আটটা ইত্যাদি।
গ) মেলোক্যাকটাস
এ শ্রেণী দেখতে তরমুজ/ফুটির মতো। এদের মাথার শীর্ষ দেশ পশমী চুলের ন্যায় কাঁটায় আবৃত। এর জাতগুলোর মধ্যে পিরামিডাম, ডিপ্রেসাস, পলিক্যান্থাস, ম্যাক্সো ক্যান্থাস, গ্রেংগেলি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ঘ) সোরিয়াস
এই শ্রেণীর ক্যাকটাস শক্ত, দীর্ঘ, কান্ডযুক্ত ও কাঁটাওয়ালা। এগুলো ইট, পাটকেলের গুঁড়ো, পচা গোবর ও মাটির মিশ্রণে লাগানো হয়। এই ফুল সন্ধ্যার পর ফুটতে শুরু করে এবং মধ্য রাত্রি পর্যন্ত তা চলে। প্রায় ৬ ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত সাদা কেন্দ্র হলুদাভাব বেগুনী, বহির্দেশ সুগন্ধযুক্ত।
ঙ) হেকসাগোনাস
ছয় শিরা বিশিষ্ট। এতে বড় বড় ফুল ফোটে।
চ) ট্রাংকেনাম
এই জাত শীতকালে বৃহৎ দর্শনীয় ফুল দেয়। ফুলের রং গোলাপী। দিনের বেলায় ফুল ফোটে। গাছ দুর্বল স্বভাবের। তবে গাছের যেকোন অংশ মাটিতে পুঁতলে শিকড় বের হয় এবং পরে বড় ফুল ফোটে।
ছ) রিপম্যালিস
এর অদ্ভুত ধরনের কান্ড। ছোট ছোট জোড়া লাগানো বলে মনে হয়। আবার অনেকগুলো তামাকের পাইপ জোড়া দেয়া মনে হতে পারে। ফুল ছোট হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। এটা পরগাছা উদ্ভিদ হিসেবে জন্মে।
জ) পেরেসকিয়া
এর সিংগল জাতে গোলাপের মত ফুল ফোটে। পেরেসকিয়া সারা বছর ফুল দেয়। এরকম অসংখ্য জাতের ক্যাকটাস রয়েছে।
(২) ক্যাপটাস গাছের চাষ বা টবে ক্যাকটাস চাষ পদ্ধতি
ক) মাটি ও জলবায়ু
এদের উপযোগী জলবায়ু হচ্ছে উষ্ণ,শুস্ক এবং বেলে মাটি। মাটিতে যেন পানি জমে না থাকে এবং প্রয়োজনমতো পানি সরবরাহ করা যাবে, এদুটি বিষয় নিশ্চিত করলে ক্যাকটাসের চাষ করা অনেক সহজ হবে।
খ) ক্যাকটাসের বংশবিস্তার
জোড় কলম:
- সমমানের দুটি গাছের মধ্যে একাজ করা যায়। এরজন্যে সুক্ষ্ণ হাতের ছোয়া লাগবে। চ্যাপ্টা জোড় কলম বাঁধা সবচেয়ে উত্তম।
- স্টক ক্যাকটাসের আগার দিকটা শোধন করা ধারালো ছুরি দিয়ে কাটতে হবে তেরছাভাবে।
- এবার উন্নত জাতের ক্যাকটাসের আগার দিক থেকে সমান মাপে কেটে আনা অংশটুকু এমনভাবে বসাতে হবে যেন,দুটি অংশের মধ্যে কোন ফাঁক না থাকে।
- এবার একটু পরিষ্কার তুলো বা নরম কাপড় দিয়ে দুটি অংশ একত্রে বেঁধে দিতে হবে। কিছুদিনের মধ্যে জোড়া লেগে যাবে।
কাটিং পদ্ধতিতে বংশবিস্তার:
কিছু কিছু জাতের ক্যাকটাসের কাণ্ড ও শাখা টুকরা করে মাটিতে পুঁতে রাখালে নতুন চারা গজায়। আবার কাণ্ড ও শাখার জোড়া জায়গাটিতে ভিজে মস জড়িয়ে রাখলে সেখান হতে শিকড় জন্মায়।
বীজ:
- বীজ দ্বারাও ক্যাকটাসের বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে।
- টবে বা চারা বাক্সে গাছ লাগানোর একমাস আগে মাটির মিশ্রণ (দোঁআশ মাটি একভাগ, বালি এক ভাগ,গুড়ো কাঠ কয়লা এক ভাগ,জৈব সার এক ভাগ,ডিমের খোসা ১০/১২ টি,হাড়ের গুড়ো এক মুঠো) তৈরি করে নিতে হবে।
- ক্যাকটাস চাষে কোন রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। উপরে বীজ ছড়িয়ে তার উপর বালু দিয়ে হাল্কাভাবে ঢেকে দিতে হবে।
- মিশ্রণ বেশী ভেজা বা শুকনা হবে না।
- বীজ থেকে চারা গজাতে অনেক সময় লেগে যায়।
গ) ক্যাকটাস চাষ মাটি তৈরি
দোআশ মাটি একভাগ, বালি এক ভাগ, গুড়ো কাঠ কয়লা এক ভাগ, জৈব সার এক ভাগ, ডিমের খোসা ১০/১২ টি, হাড়ের গুড়ো এক মুঠো। গাছ লাগানোর একমাস আগে এ মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে।
ঘ) টবে ক্যাকটাসের চারা/গাছ রোপন করা
- উপড়ে দেয়া নিয়ম গুলো অনুসরন করে প্রথমে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। টবের ব্যাস অনুযায়ী পরিমাণমত কাপড় কেটে নিতে হবে, টবের এক তৃতীয়াংশ জায়গা উক্ত জামা/কাপড় দ্বারা ভরাট করতে হবে। বাকি অংশে উল্লেখিত মাটির মিশ্রণ দিতে হবে।
- অথবা, টবের বা কাঠের বাক্স ভর্তি করার আগে টবের নিচের ফুটোয় পাতলা কাগজ দিয়ে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পরিমাণ ইটের গুঁড়ো বা কয়লার গুড়ো দিয়ে এরপর আপনার তৈরি করা মাটি দিতে হবে।
- এরপর ক্যাকটাসের চারা রোপন করতে হবে। চারা পাত্রের কিনারাই লাগালে বেশী ভালো হয় পাত্রের মাঝখানে লাগানোর চাইতে।
- ক্যাকটাস চাষে কোন রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। টবের উপর হতে ৩ সেমি. জায়গা খালি রেখে মিশ্রনের মাটি দিয়ে ভরাট করে তার উপর হালকাভাবে পরিস্কার বালি ছিটিয়ে দিতে হবে।
(৩) ক্যাকটাস চাষে গাছের পরিচর্যা
- ঠিক যতটুকু দরকার ততটুকু পরিচর্যা করতে হবে। পানি কম হলে গাছের বৃদ্ধি কমে যাবে আবার বেশী হলে গাছ মারা যাবে।
- শীতকালে মাসে একবার পানি দিতে হবে। বর্ষায় ১০-১৫ দিন পরপর ক্যাকটাসে পানি দিন। গরমে সপ্তাহে ১ দিন।
- পানি দেওয়ার সময় মাটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। উপরের ১-২ ইঞ্চি শোকালেই ফের পানি দেবেন। এতে শিকড় পচে যাওয়া বা গাছ পচে যাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না।
- একইসাথে ক্যাকটাসটিকে খোলামেলা আলো ও বাতাসযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। হালকা রোদ যুক্ত স্থানে রাখতে হবে, যাতে আলো পায়। প্রখর রোদে রাখা যাবে না। একটানা রোদ সেও নিতে পারবে না৷ তাদের শুধুমাত্র আলোর দরকার হয়৷
- ক্যাকটাসের জন্য রোদের আলো অপরিহার্য। ক্যাকটাস গাছ এমন গাছ রাখুন যেখানে সকালের নরম রোদ আসে। সারাদিন রোদ না পেলেও চলবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে বৃষ্টির ছাট গাছে না পড়ে। এতে শিকড় পচে যেতে পারে।
- ক্যাকটাসের পট বারবার পরিবর্তন করার দরকার পড়ে না। ২ বছরে একবার করলেই হবে। বসন্তে কাঁটা গাছের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়। তাই প্রতি বছর শীত শেষ হলে মাটির সঙ্গে কম্পোস্ট মেশালে গাছ বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
(৪) ক্যাকটাস চাষে রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা
- ক্যাকটাসে সাধারণত রোগ-পোকা মাকড়ের আক্রমণ হয়না বল্লেই চলে, তবে যদি গাছের বৃদ্ধিকম ও সতেজতার অভাব ঘটে তবে লক্ষ্য করতে হবে যে রোগ বা পোকার আক্রমণ হয়েছে কিনা।
- ক্ষুদে মাকড়সার আক্রমণ হলে তামাক ভেজানো পানি মিণ হলে তামাক ভেজানো পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। মিলিবাগের আক্রমণ হলে ১ লিটার পানিতে ১ মিলি ডাইমেক্রণ মিশিয়ে গাছে ছিটিয়ে দিতে হবে।
- গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা ভাল। গ্রীস্ম ও বর্ষায় ১ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ব্লাইটক্স ও ১ লিটার ডাইমেক্রণ মিশিয়ে গাছে ১০ দিন পর পর ব্যবহার করলে সহজে রোগ ও পোকার আক্রমণ হতে পারেনা।
- টবের মাটি তৈরীর সময় প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ব্লাইটক্স মিশিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিলে রোগের আশংকা থাকেনা। টবের মাটি ও আশ-পাশ পরিস্কার রাখা দরকার।
[সূত্র: ইন্টারনেট]