গৃহপালিত প্রাণি থেকে দুধ, মাংস, ছাড়াও নানা প্রকার উপজাত দ্রব্য যেমন- শিং, খুর, চামড়া, পশম, চর্বি, দাঁত, রক্ত, হাঁড়, নাড়ি-ভুঁড়ি ইত্যাদি পাওয়া যায়। এসব উপজাত দ্রব্য থেকে নানাবিধ প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়। গৃহপালিত প্রাণি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারলে আমাদের বেকার সমস্যার সমাধান ও আমিষের অভাব পূরণ করা সম্ভব হবে এবং দেশের দারিদ্র্য দূর করে গৃহপালিত প্রাণি থেকে অধিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হলে গোবর থেকে জৈব সার এবং বায়োগ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে নিজস্ব জ্বালানী চাহিদা মেটানো যায়, পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা যাবে এবং গবাদিপ্রাণি পালনকারীগন অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হবে।
এ পাঠ শেষে আপনি- গবাদি প্রাণির গরুর খাদ্যাভ্যাস ও গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারবেন। গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা, গরুকে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পরিমাণ, গরুকে খাবার দেওয়ার নিয়ম ও গরুকে খাবার খাওয়ানোর পরিমাণ সম্পর্কে জানতে পারবেন। গরুর জন্য সুষম খাদ্যের সংজ্ঞা, গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। গরুর খাদ্য উপাদান সমূহের কাজ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
(১) গরুর খাদ্যাভ্যাস ও গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা
ক) খড়
- খড় হল আঁশযুক্ত খাদ্য। একটি দেশী গরুকে দৈনিক ৩-৪ কেজি শুকনা খড় খাওয়াতে হবে।
- খড় ছোট ছোট করে কেটে বড় চাড়ির মধ্যে পানি বা ভাতের মাড়ে ভিজিয়ে তাতে প্রয়োজনীয় দানাদার খাদ্য ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ঝোলাগুড় মিশিয়ে খাওয়ালে খড়ের পুষ্টিমান বৃদ্ধি পায়।
- তাছাড়া ইউরিয়ার সাথে খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ করে খাওয়ানো যায়।
খ) সবুজ কাঁচা ঘাস
- গবাদি প্রাণির প্রধান খাদ্য সবুজ কাঁচা ঘাস। সবুজ কাঁচা ঘাস আঁশযুক্ত খাদ্য।
- দেশীয় একটি গরুকে দৈনিক ১০-১২ কেজি এবং উন্নত জাতের একটি বড় গরুকে দৈনিক ১২-১৫ কেজি সবুজ কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হয়।
- গাভী পালন করে তার থেকে বেশি দুধ পেতে হলে তাকে অবশ্যই প্রচুর কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে।
- উন্নত জাতের কাঁচা ঘাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নেপিয়ার, পারা, ভূট্টা, সরগাম, জার্মান, গিনি, সিগনাল, ওটস ইত্যাদি। এদের ফলন পুষ্টিমান বেশি থাকে।
- কাঁচা ঘাসের অভাব হলে গবাদি প্রাণিকে গাছের সবুজ পাতা, বিভিন্ন রকমের লতাপাতা, তরকারির খোসা ও ফলমূলের উচ্ছিষ্ট অংশ খাওয়ানো যায়।
- বিভিন্ন জাতের ডুমুর, ডেউয়া, মান্দার, ইপিল-ইপিল গাছের পাতা গবাদি প্রাণিকে খাওয়ানো যায়।
- এ ছাড়া এ সকল সবুজ কাঁচা ঘাস সমূহ দ্বারা সাইলেজ, হে প্রভৃতি তৈরি করেও গবাদিপ্রাণিকে খাওয়ানো যায়।
- সাধারণত অমৌসুমে অর্থ্যাৎ যখন কাঁচা ঘাসের অভাব দেখা দেয় তখন সাইলেজ বা হে খাওয়ানো হয়।
গ) গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা
শুষ্ক অবস্থায় যেসব খাদ্যে শতকরা ১৮ ভাগের কম আঁশ এবং শতকরা ৬০ ভাগের চেয়ে বেশি সামগ্রিক পরিপাচ্য পুষ্টি থাকে সেসব খাদ্যসমূহকে দানাদার খাদ্য বলে। খড় ও কাঁচা ঘাসের পাশাপাশি পুষ্টিকর দানাদার জাতীয় খাদ্য গবাদি প্রাণির বিশেষ করে দুগ্ধ প্রদানকারী গাভীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। ১০০ কেজি দানাদার খাদ্য তৈরির উপকরণ ও পরিমাণের একটি তালিকা নিচে দেয়া হল।
১০০ কেজি দানাদার খাদ্য তৈরির তালিকা-
উপকরণ | পরিমাণ (কেজি) |
১। গমের ভূষি | ৫০ কেজি |
২। চাউলের গুঁড়া | ২০ কেজি |
৩। খেসারি ভাঙ্গা | ১৮ কেজি |
৪। তিল বা বাদাম খৈল | ১০ কেজি |
৫। খনিজ মিশ্রণ | ১ কেজি |
৬। লবণ | ১ কেজি |
মোট = | ১০০ কেজি |
ঘ) গরুকে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পরিমাণ
গবাদি প্রাণিকে দানাদার খাদ্য মিশ্রণ নিম্নলিখিত হারে খাওয়াতে হয়-
গবাদি প্রাণি | দৈনিক দানাদার খাদ্যের পরিমাণ |
১। বাছুর | ০.৫০-১.০ কেজি |
২। দেশি দুগ্ধবতী গাভী | ১.৫-৩.০ কেজি |
৩। উন্নত দুগ্ধবতী গাভী | ৩.০-৬.০ কেজি |
৪। দুগ্ধহীনা গাভী | ১.৫-২.০ কেজি |
৫। ষাঁড় | ৩.০-৪.০ কেজি |
*এছাড়াও প্রতি ১.৫ কেজি অতিরিক্ত দুধ উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত ০.৫ কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।
ঘ) পানি
পানি জীবদেহের জন্য অত্যাবশ্যক, কেননা জীবদেহের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগই পানি। খাদ্য পরিপাকসহ জীবদেহের সমস্ত জৈবিক কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য পানি অত্যাবশ্যক উপাদান। এজন্য গবাদি প্রাণিকে দৈনিক প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হবে।
ঙ) গরুকে খাবার দেওয়ার নিয়ম
নিচে গবাদি প্রাণিকে খাওয়ানোর একটি থাম্ব রুল দেয়া হল।
বিভিন্ন ধরনের গবাদি প্রাণিকে রেশন তৈরির জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলো অনুুসরণ করা যেতে পারে-
i) দুধালো গাভীকে খাবার খাওয়ানোর পরিমাণ
- শুষ্ক আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ২ ভাগ খড় বা সমমানের হে দিতে হবে।
- রসালো আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ৬ ভাগ রসালো খাদ্য বা সবুজ ঘাস দিতে হবে।
- দানাদার খাদ্য: শরীর রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রথম ৩ লিটার দুধের জন্য ৩ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে। দুধে যদি চর্বি ৪% বা তার কম হয়, তবে অতিরিক্ত প্রতি ৩ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে। আর যদি চর্বি ৪% এর বেশি হয় তবে প্রতি ২.৫ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
ii) শুষ্ক গাভীকে খাবার খাওয়ানোর পরিমাণ
- শুষ্ক আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ২ ভাগ খড় বা সমমানের হে দিতে হবে।
- রসালো আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ৬ ভাগ রসালো খাদ্য বা সবুজ ঘাস দিতে হবে।
- দানাদার খাদ্য: দৈহিক ওজনের শতকরা ১ ভাগ দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
iii) প্রজননক্ষম ষাঁড় গরুকে খাবার খাওয়ানোর পরিমাণ
- শুষ্ক আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ২ ভাগ খড় বা সমমানের হে দিতে হবে।
- রসালো আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ৬ ভাগ রসালো খাদ্য বা সবুজ ঘাস দিতে হবে।
- দানাদার খাদ্য: দৈহিক ওজনের শতকরা ০.৫ ভাগ দানাদার খাদ্য দিতে হবে
iv) কর্মক্ষম বলদকে গরুকে খাবার দেওয়ার পরিমাণ
- শুষ্ক আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ২ ভাগ খড় বা সমমানের হে দিতে হবে।
- রসালো আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ৬ ভাগ রসালো খাদ্য বা সবুজ ঘাস দিতে হবে।
- দানাদার খাদ্য: দৈহিক ওজনের শতকরা ০.৫ ভাগ দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
v) বকনা গরুকে খাবার খাওয়ানোর পরিমাণ
- শুষ্ক আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ২ ভাগ খড় বা সমমানের হে দিতে হবে।
- রসালো আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ৬ ভাগ রসালো খাদ্য বা সবুজ ঘাস দিতে হবে।
- দানাদার খাদ্য: দৈহিক ওজনের শতকরা ০.৫ ভাগ দানাদার খাদ্য দিতে হবে
vi) গর্ভবতী গাভীকে খাবার খাওয়ানোর পরিমাণ
- শুষ্ক আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ২ ভাগ খড় বা সমমানের হে দিতে হবে।
- রসালো আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ৬ ভাগ রসালো খাদ্য বা সবুজ ঘাস দিতে হবে।
- দানাদার খাদ্য: দৈহিক ওজনের শতকরা ০.৫ ভাগ দানাদার খাদ্য দিতে হবে
vii) বাছুর গরুকে খাবার খাওয়ানোর পরিমাণ
- শুষ্ক আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ২ ভাগ খড় বা সমমানের হে দিতে হবে।
- রসালো আঁশজাতীয় খাদ্য (রাফেজ): দৈহিক ওজনের শতকরা ৬ ভাগ রসালো খাদ্য বা সবুজ ঘাস দিতে হবে।
- দানাদার খাদ্য: প্রতিটির জন্য প্রতিদিন ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
বিঃদ্রঃ দানাদার খাদ্যের ১% লবণ ও ১ % জীবাণুমুক্ত হাড়ের গুঁড়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।
(২) গরুর জন্য সুষম খাদ্যের সংজ্ঞা, গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য
ক) সুষম খাদ্যের সংজ্ঞা
যেসব খাদ্যে পশুর সকল অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান উপযুক্ত পরিমাণে ও অনুপাতে থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে।
গৃহপালিত প্রাণির দেহ গঠন, কর্মক্ষমতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। সুষম খাদ্যে আমিষ শর্করা, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ উপস্থিত থাকে। সুষম খাদ্য না দিলে গবাদি প্রাণি অপুষ্টিতে ভোগে, এতে গবাদি প্রাণি দুর্বল হয়ে যায় , কাজ করার ক্ষমতা লোপ পায়, দুধ উৎপাদন কমে যায় এবং রোগাক্রান্ত হয়।
খ) সুষম খাদ্যের গুরত্ব
গবাদি প্রাণিকে সুষম খাদ্য খাওয়ালে-
- গবাদি প্রাণি সুস্থ ও সবল হয়।
- গবাদি প্রাণির স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
- গবাদি প্রাণির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- গবাদি প্রাণির মাংস ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।
- গবাদি প্রাণির বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে।
- খামারের সার্বিক লাভ হয়।
- গবাদি প্রাণির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- গবাদি প্রাণি হতে প্রাপ্ত দ্রব্যের (মাংস, দুধ, ও অন্যান্য উপজাত) গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
- গবাদিপ্রাণির রোগব্যাধি কম হয়।
- কম সময়ে বড় আকারের সুস্থ ও সবল গরু পাওয়া যায়।
গ) সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য
- সুষম খাদ্য সুস্বাদু হবে।
- সব ধরনের খাদ্য উপাদান সুষম অনুপাতে থাকবে।
- সুষম খাদ্য তৈরির উপকরণ ও নিয়মাবলি
- সবুজ কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্য সুষম খাদ্যের অন্তর্ভূক্ত। গবাদিপ্রাণির সুষম খাদ্য উপকরণ এবং সুষম খাদ্য তৈরির নিয়মাবলি নিচে উল্লেখ করা হল।
(৩) গরুর খাদ্য উপাদান সমূহের কাজ
গবাদি প্রাণির বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য যেসব উপাদান দরকার সেসব উপাদানকে গবাদি প্রাণির খাদ্য উপাদান বলে। গৃহপালিত প্রাণির খাদ্য উপাদান ছয়টি। যথা- শর্করা, আমিষ, চর্বি বা স্নেহ পদার্থ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও পানি।
ক) শর্করা
যেসব খাদ্য উপাদান প্রাণী দেহে শক্তির যোগান দেয় তাকে শ্বেতসার বা শর্করা বলে। অতিরিক্ত শ্বেতসার শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়।
শর্করা এর কাজ:
- দেহে শক্তি উৎপাদন ও সরবারাহ করা।
- স্নেহ পদার্থ দহনে সহায়তা করা।
- খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করা।
- কোষ্টঠকাঠিন্য দূর করা।
- পরিপাকে সহায়তা করা।
শর্করা এর উৎস: ধান, গম, ভূট্টা, গমের ভূষি, আলু, ডাল, ঝোল গুড়, উন্নতমানের খড়, চালের কুঁড়া ইত্যাদি।
খ) আমিষ
যে খাদ্য উপকরণ শরীরে মাংস বৃদ্ধির কাজ করে তাকে আমিষ বলে। এটি বিভিন্ন ধরনের এমাইনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত।
আমিষের কাজ:
- নতুন কোষ তৈরি এবাং পুরাতন ও ভেঙ্গে যাওয়া কোষ পূনর্গঠনে সাহায্য করা।
- শক্তি সরবরাহ করা।
- দেহকে সুস্থ সবল কর্মক্ষম রাখা।
- এমাইনো এসিডের চাহিদা পূরণ করা।
- মাংসপেশি গঠনে সহায়তা করা।
- শরীরের ক্ষয়পুরণ ও বৃদ্ধি সাধন করা।
- রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করা।
- শিং, পশম, ক্ষুর ইত্যাদি গঠন ও বৃদ্ধি করা।
আমিষের উৎস: শুটকি মাছের গুড়া, রক্ত, ডালজাতীয় শস্যদানা, গম, খৈল, ডালের ভূষি ইত্যাদি।
গ) স্নেহ পদার্থ বা চর্বি
চর্বি ফ্যাটি এসিডের সমন্বয়ে গঠিত এমন এক উপাদান যা শ্বেতসার এবং আমিষের চেয়ে ২.২৫ গুন বেশি শক্তি সরবরাহ করে থাকে।
স্নেহ পদার্থের কাজ:
- দেহে তাপ ও কর্মশক্তি উৎপাদন ও সরবরাহ করা।
- চামড়ার মসৃণতা রক্ষা ও চর্মরোগ প্রতিরোধ করা।
- শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা।
- মাংসের স্বাদ ও উপযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
- পশমের নিচে মোমের মত আবরণ তৈরি করা।
- দেহে সঞ্চিত খাদ্যের উৎস হিসেবে কাজ করা।
স্নেহ পদার্থের উৎস: খৈল, ডাল, সয়াবিন, বাদাম, নারিকেল, সূর্যমুখি, মাছের তেল, দুধ ইত্যাদি।
ঘ) খনিজ পদার্থ
অজৈব পদার্থসমূহ খনিজ উপাদান।
খনিজ পদার্থের কাজ:
- নতুন কলা উৎপাদনে সহায়তা করা।
- দেহের অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের ভারসাম্য রক্ষা করা।
- হাড় ও দাঁতের গঠন ঠিক রাখা।
- রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা।
- মাংসপেশীর টান, উত্তেজনা ও স্নায়ুত্ব স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখা।
- শর্করা বিপাক ও স্নেহ পদার্থ দহনে সহায়তা করা।
- প্রোটিন তৈরি ও কোষ বিভাজনে সহায়তা করা।
- হজমে সহায়তা করা।
খনিজ পদার্থের উৎস: কাঁচা সবুজ ঘাস, লবণ, আয়োডিনযুক্ত শুটকি মাছের গুড়া, হাড়ের গুড়া, চুনাপাথর ইত্যাদি।
ঙ) খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন
ভিটামিন শরীরে খুবই অল্প পরিমাণে দরকার হয় এবং এর অভাবে শরীরে অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দেয়।
ভিটামিনের কাজ:
- রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করা এবং শরীর সুস্থ রাখা।
- দেহের বিপাকীয় কাজে সহায়তা করা।
- শক্তির সঞ্চালনে সহায়তা করা।
- গবাদি প্রাণির হাড় ও দাঁতের গঠন স্বাভাবিক রাখা।
- ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের পরিশোষণ ও সংরক্ষণে সহায়তা করে।
ভিটামিনের উৎস: কৃত্রিমভাবে তৈরি ভিটামিন, ফলমূল, শাক-সবজি, কাঁচা ঘাস ইত্যাদি।
চ) পানি
পানি খাদ্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
পানির কাজ:
- খাদ্যেকে দ্রবীভূত ও শোষণ করতে সহায়তা করা।
- দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা এবং খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করা।
- খাদ্যের বাহক হিসেবে কাজ করা।
- অভিস্রবণীয় চাপ বজায় রাখতে সহায়তা করা।
- শ্বসনে সহায়তা করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা।
- বিভিন্ন প্রকার এনজাইম পরিবহনে সহায়তা করা।
- গবাদি প্রাণির ভারবহনকারী কলাকে স্থিতিস্থাপক ও দৃঢ়তা প্রদান করা।
- দেহাভ্যন্তরের বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণে সহায়তা করা।
পানির উৎস: খাদ্য মধ্যস্থিত পানি, টিউবওয়েলের পানি, নদী-নালা, পুকুর ও খালবিলের পানি, কাঁচা ঘাস ইত্যাদি।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা গরুর খাদ্যাভ্যাস ও গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা, গরুর জন্য সুষম খাদ্যের সংজ্ঞা, গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য এবং গরুর খাদ্য উপাদান সমূহের কাজ সম্পর্কে জানলাম।
গবাদি প্রাণির শারীরিক বৃদ্ধি ও কোষকলার বিকাশ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, দেহ সংরক্ষন ও কোষকলার ক্ষয়পূরন, দুধ ও মাংস উৎপাদন, মাংসপেশি গঠনে ও পরিপাকে সহায়তা করতে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কাজের জন্য উপযুক্ত খাদ্যের প্রয়োজন। শর্করা প্রাণীদেহে শক্তির যোগান দেয়। আমিষ শরীরে মাংস বৃদ্ধির কাজ করে। শর্করা যে শক্তি দেয় আমিষও সে পরিমান শক্তি দেয় কিন্তু স্নেহ পদার্থ, শর্করা ও আমিষের চেয়ে ২.২৫ গুন বেশি শক্তি দেয়। গৃহপালিত প্রাণির দেহ গঠন, কর্মক্ষমতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]