Skip to content

(৮টি) গরুর রোগের নাম, গরুর কোন রোগের কি ঔষধ? গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

গরুর রোগের নাম, গরুর কোন রোগের কি ঔষধ, গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

মূলত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে গবাদি প্রাণিতে যেসব রোগ হয় তাদের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ বলে। তড়কা, বাদলা, ওলান ফোলা, গলা ফোলা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি গবাদি প্রাণি গরুর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।

এখানে আপনি- গৃহপালিত প্রাণির ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ কি কি তা জানতে পারবেন। গরুর রোগের নাম, গরুর কোন রোগের কি ঔষধ তা জানতে পারবেন। গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা একটা স্পষ্ট ধারণা পাবেন। এক কথায়, গবাদিপ্রাণির বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের লক্ষন, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

নিম্নে (৮টি) ব্যাকটেরিয়াজনিত গরুর রোগের নাম, গরুর কোন রোগের কি ঔষধ? গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

(১) গরুর বাছুরের সাদা বাহ্য বা কাফস্কাওয়ার (Calfscour) রোগ

গরুর রোগের নাম কাফস্কাওয়ার বা বাছুরের সাদা উদরাময় রোগ, সাধারণত জন্মের সাথে সাথে বাছুর এ রোগে আক্রান্ত হয়। কৃত্রিম খাদ্য, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নাভি বা খাদ্যের মাধ্যমে রোগজীবাণু সংক্রামিত হয়ে রোগের সৃষ্টি করে। গাভীর প্রথম শালদুধ বা কলস্ট্রামের অভাবে, অনিয়মিত বা অধিক রিমাণে দুধ বা আখাদ্য কু-খাদ্য খেলে এ রোগর সৃষ্টি হয়।

রোগের অন্য নাম: ক্যালিবাসিলোসিস, বাছুরের সাদা উদরাময় রোগ। 

রোগের কারণ: ব্যাকটেরিয়া।

রোগের লক্ষণ:

  1. শরীরের তাপমাত্রা প্রথমে বাড়ে, পড়ে স্বাভাবিক থেকে কমে যায়।
  2. বাছুর চাল ধোয়া পানির মত সাদা রং এর পচা দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা মল ত্যাগ করে।
  3. বাছুর ঘন ঘন মলত্যাগ করে। চোখ কোটের বসে যায় এবং পিঠ বাঁকা হয়ে যায়।
  4. নাভি ফুলে যায়, পেটে ব্যাথা হয়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।
  5. বাছুরের অরুচি হয় ও শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
  6. অনেক সময় মলে রক্ত দেখা যায় এবং মলদ্বারের চারদিকে পাতলা মল লেগে থাকে।
  7. বাছুর খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং মারা যায়।
  8. বাছুর আস্তে আস্তে দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  1. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, শুকনা, জীবাণুমুক্ত জায়গায় বাছুর রাখতে হবে।
  2. জন্মের সাথে সাথে বাছুরকে পরিমিত পারিমাণে মায়ের ‘শালদুধ’ খাওয়াতে হবে।
  3. গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
  4. উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘এন্টিবায়োটিক’ ব্যবহার করতে হবে।
  5. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও সি’ খাওয়ানো যেতে পারে।
  6. শরীরে পানিশুন্যতা দেখা দিলে ‘স্যালাইন’ খাওয়াতে হবে।

(২) গরুর বাছুরের নিউমোনিয়া (Calf Pneumonia) রোগ

গরুর রোগের নাম নিউমোনিয়া, যা সাধারণত অল্প বয়সের বাছুরের নিউমোনিয়া হতে পারে। ঠান্ডা লেগে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস বা ফাংগাস জাতীয় জীবাণুর আক্রমনে গবাদি প্রাণির নিউমোনিয়া হয়ে থাকে।

রোগের লক্ষণ:

  1. গবাদি প্রাণির শুকনা কাশি হয় এবং নাক দিয়ে সর্দি ঝরে।
  2. গবাদি প্রাণি ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয় এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।
  3. রোগের শেষ পর্যায়ে শ্বাস কষ্ট হয়ে গবাদি প্রাণি মারা যায়।
  4. হৃৎপিন্ডের স্পন্দন ও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
  5. বুকের মধ্যে গড় গড় শব্দ হয়।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  1. গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ‘এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন’ বাছুরের শিরায় বা মাংসপেশিতে দিতে হবে।
  2. গবাদি প্রাণির ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  3. বাছুরের জন্য খড় দিয়ে বিছানা করে দিতে হবে যাতে ঠান্ডা না লাগে।

(৩) গরুর বাদলা রোগ (Black quarter disease)

গরুর রোগের নাম ব্ল্যাক কোয়ার্টার বা বাদলা রোগ, গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া সাধারণত ৬ মাস থেকে দুই বছর বয়সে এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। শরীরের ক্ষতের মাধ্যমে এবং মলের মাধ্যমে রোগজীবাণু সংক্রামিত হয়ে রোগের সৃষ্টি করে। ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষকলার মাধ্যমেও রোগজীবাণু সংক্রামিত হতে পারে।

See also  গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি

প্রচলিত নাম: বাদলা পীড়া, জহরবাত, সুজওরা, কৃষজংগ রোগ ইত্যাদি। 

রোগের লক্ষণ:

  1. শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (১০৫০-১০৭০ ফারেনহাইট)
  2. পেট ফাঁপা দেখা যায় এবং গবাদি প্রাণি হঠাৎ খোঁড়াতে থাকে।
  3. পাছা এবং অন্যান্য জায়গায় মাংসপেশী ফুলে যায়
  4. ফোলা অংশের ভিতর পচন ধরে এবং চাপ দিলে পচ পচ শব্দ হয়।
  5. ফোলা জায়গায় চামড়া খসখসে কালচে এবং হাতে গরম অনুভূত হয়।
  6. আস্তে আস্তে ফোলা স্থান লালচে হয়ে যায়।
  7. আক্রান্ত জায়গা কাটলে বাতাস ও দুর্গন্ধযুক্ত গাঢ় লাল বা কালচে রঙের ফেনা বের হয়।
  8. গবাদি প্রাণির খাওয়া ও জাবর কাটা বন্ধ থাকে।

চিকিৎসা:

  1. ডিপোসিলিন’ অথবা, ‘প্রণাসিলিন’ অথবা, ‘ডিউপ্লোসিলিন এল’ যে কোনো একটি পেনসিলিন ইনজেকশন সম্পূর্ণ মাত্রায় অর্ধেক আক্রান্ত গবাদি প্রাণির চামড়ার নিচে ও বাকি অর্ধেক মাংসপেশীতে দিনে ২ বার করে ৫-৭ দিন ইনজেকশন দিতে হবে।
  2. পেনিসিলিনের পরিবর্তে  ‘টেরামাইসিন ১০ মি.লি.’ শিরা বা মাংসপেশীতে ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।
  3. প্রয়োজনে আক্রান্ত ক্ষতস্থান অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে ‘টিনচার আয়োডিন গজ’ প্রয়োগ করতে হবে। অথবা, প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গবাদি প্রাণির জন্য ৫ মি.লি. হিসাবে ‘অক্সিসেনটিন ১০০’ মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে। অথবা, ‘এন্টিহিস্টামিনিক’ গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ:

  1. অসুস্থ গবাদি প্রাণিকে সুস্থ গবাদি প্রাণি থেকে আলাদা করতে হবে।
  2. মৃত গবাদি প্রাণির গোয়াল ঘর গরম ‘১০% NaOH’ বা ‘লবণ’ দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
  3. গর্ত করে‘ ডলোচুন’ ছিটিয়ে মৃত গবাদি প্রাণিকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
  4. সুস্থ গবাদি প্রাণিকে ছয় মাস অন্তর প্রতিষেধক ‘বাদলা টিকা’ দিতে হবে।

(৪) গরুর তড়কা রোগ (Anthrax disease)

গরুর রোগের নাম এ্যানথ্রাক্স বা তড়কা, এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি গবাদি প্রাণি এ রোগে আক্রান্ত হয়। রোগাক্রান্ত গবাদি প্রাণির সংস্পর্শে জীবাণু সংক্রামিত হয়। বর্ষাকালে বা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

প্রচলিত নাম: গলি, ধড়কা, তীরাজ্বর, উবামড়কী ইত্যাদি। 

রোগের কারণ: ব্যাকটেরিয়া।

রোগের লক্ষণ:

  1. গবাদি প্রাণি হঠাৎ লাফ দিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে, খিঁচুনি দেয় এবং মারা যায়।
  2. শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (১০৪০- ১০৬০ ফারেনহাইট)
  3. শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায় এবং শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত ও গভীর হয়।
  4. অনেক সময় লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই গবাদি প্রাণি মারা যায়।
  5. মারা যাওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধে না।
  6. মৃত্যুর সাথে সাথে পেট ফুলে যায় এবং মৃতদেহে দ্রুত পচন ধরে।
  7. মৃত্যুর পর নাক, মুখ, কান ও মলদ্বার দিয়ে আলকাতরার মত রক্তযুক্ত ফেনা বের হয়।

চিকিৎসা:

  1. মাংসপেশী বা শিরায় ‘অক্সিসেনটিন ১০০’ ইনজেকশন ২-৪ দিন পর্যন্ত দিতে হবে।
  2. নিচের যে কোন একটি ‘পেনিসিলিন ইনজেকশন’ দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা যায়।
পেনিসিলিন ইনজেকশনপ্রয়োগ মাত্রা
ডিপোসিলিন/প্রনাসিলিনপ্রতিদিন ১০ মি. লি. দিনে ১-২ বার করে ৩-৫ দিন মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে।
ডিইপ্লোসিলিন এপ্রতিদিন ১০ মি. লি. করে ১ বার মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে।

অথবা,

পেনিসিলিন + সেপ্টেমাইসিনপ্রয়োগ মাত্রা
ডিপোমাইসিন প্রতিদিন ১০ মি.লি. করে ৩-৫ দিন মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে।
ডাইওডেক্সামিনপ্রতিদিন ১০ মি.লি. করে ৩-৫ দিন মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে।

অথবা, 

এন্টিহিস্টামিনিক গ্রুপ’ এর ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।

প্রতিরোধ:

  1. আক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে সুস্থ গবাদি প্রাণি থেকে আলাদা রাখতে হবে।
  2. গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শমত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
  3. সুস্থ অবস্থায় গবাদি প্রাণিকে নিয়মিত টিকা (‘তড়কা টিকা’) প্রদান করতে হবে। এ টিকা ৪ বছর অন্তর গরু মহিষের ক্ষেত্রে ১ মিলি এবং ছাগলের ক্ষেত্রে ০.৫০ মিলি হারে চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে।
  4. মৃত গবাদি প্রাণিকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা ২ মিটার গভীর গর্তে ‘ডলোচুন’ ছিটিয়ে পুঁতে দিতে হবে।
  5. মৃত গবাদি প্রাণির গোয়ালঘর ‘১০% NaOH’ বা ‘লবণ’ দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
See also  ছাগল ও গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি? ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা, গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা

(৫) গরুর গলাফুলা রোগ (Haemorrhagic septicemaia)

গরুর রোগের নাম হেমোরেরহাজিক সেপ্টিসেমিয়া বা গলাফুলা, যা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। ছাগল ভেড়াতেও এ রোগ হতে পারে। রুগ্ন গবাদি প্রাণির লালা, সর্দি, মলমূত্র, দূষিত খাদ্য ও পানি খাওয়ার ফলে এবং অন্যান্য ব্যবহার্য দ্রব্যের মাধ্যমে রোগজীবানু সুস্থ গবাদি প্রাণিতে সংক্রামিত হতে পারে।

প্রচলিত নাম: ব্যাংগা, ঘটু, গরঘটু, গলবেরা ইত্যাদি। রোগের কারণ: ব্যাকটেরিয়া।

রোগের লক্ষণ:

  1. আক্রান্ত গবাদি প্রাণির ঘাড়, মাথা ও গলা ফুলে যায়। ফোলা ক্রমশ গলা থেকে বুক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
  2. ফোলা অংশ শক্ত ও ব্যথাপূর্ণ থাকে। হাত দিয়ে গরম অনুভব হয় এবং টিপ দিলে বসে যায়।
  3. শরীরের তাপমাত্রা অত্যাধিক (১০৫-১০৭ ফারেনহাইট) বেড়ে যায়।
  4. ফোলা স্থানে সূচ দিয়ে ছিদ্র করলে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হয়।
  5. মুখ দিয়ে লালা ও নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরে।
  6. শ্বাসকষ্ট হয় এবং শ্বাস ত্যাগের সময় ঘড় গড় শব্দ করে।
  7. গবাদি প্রাণি জিহ্বা বের করে নিঃশ্বাস নিতে চেষ্টা করে।
  8. গলার নিচে চোয়াল, বুক, পেট ও কানের অংশে পানি জমে ও ফুলে যায়।
  9. গবাদি প্রাণি কিছু খেতে পারে না এবং জাবরকাটা বন্ধ করে দেয়।
  10. গবাদি প্রাণির দুধ দেয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং গবাদি প্রাণি মারা যায়।
  11. পেটে ব্যথা হয় এবং উদরাময় দেখা দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  1. রোগাক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে গবাদি প্রাণি সুস্থ থেকে আলাদা রাখতে হবে।
  2. সুস্থ গবাদি প্রাণিকে নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা (‘গলা ফুলা টিকা’) দিতে হবে।
  3. গবাদি প্রাণির বাসস্থানে ‘জীবাণুনাশক ঔষধ’ ছিটাতে হবে।
  4. আক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা করতে হবে।
  5. উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘এন্টিবায়োটিক’ ব্যবহার করতে হবে।

(৬) গরুর ওলান ফোলা বা ওলান প্রদাহ রোগ (Mastitis)

গরুর রোগের নাম, ম্যাসটিটিস, অধিক দুধ উৎপাদকারী গাভী ও ছাগীতে এ রোগ বেশি হয়। অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতস্যাঁতে বাসস্থান, ময়লা হাতে দুধ দোহন, বাঁটে বা ওলানে আঘাত, ওলানে দুধ জমাট বেঁধে থাকা প্রভৃতি কারণে বিভিন্ন রোগজীবাণু সংক্রামিত হয়ে এ রোগ সৃষ্টি হয়।

প্রচলিত নাম: ওলান পাকা, ঠুনকো, ওলান ফুলা ইত্যাদি।

রোগের কারণ: বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, রিকেটশিয়া, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি জীবাণু। 

রোগের লক্ষণ:

  1. ওলান লাল হয়ে ফুলে যায় এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করলে গরম অনভূত হয়।
  2. বাট ও ওলান শক্ত ও গরম হয় এবং ওলানে ব্যথা হয়। ব্যথার জন্য গাভী ওলানে হাত দিতে দেয় না।
  3. দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
  4. দুধ ছানার মত ছাকা ছাকা হয়। দুধ দোহনের পর দুধে তলানি জমে।
  5. দুধের সাথে রক্তও বের হতে পারে।
  6. ওলান ও বাঁট নষ্ট হয়ে গাভীর দুধ বন্ধ হয়ে যায় এবং গাভী দুধ উৎপাদনে অকেজো হয়ে যায়।

চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ:

  1. গবাদি প্রাণিকে শুকনা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখতে হবে।
  2. ওলান সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  3. দোহনের পূর্বে দোহনকারীর হাত ধুয়ে নিতে হবে।
  4. গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শমত চিকিৎসা নিতে হবে।
  5. ওলান গরম হলে বা ঠান্ডা হলে ঈষৎ গরম সেক দিতে হবে।
  6. দেহের তাপমাত্রা বেশি বেড়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে গাভীর শরীর ধুয়ে দিতে হবে।
  7. শক্ত ওলানে দুই তিনবার কর্পূর তেল মালিশ করতে হবে। 
  8. ওলানে জমে থাকা দুধ বের করে দিতে হবে। ঘন ঘন গাভীর দুধ দোহন করতে হবে।
  9. দুধ বের না হলে ২মিলি অক্সিটোসিন সিনথ মাংসপেশীতে প্রয়োগ করতে হবে।
  10. বাঁটের মুখ বন্ধ হলে টিট স্ক্রু অথবা টিটস্পুন দিয়ে বাঁটের মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
  11. আক্রান্ত বাঁটের দুধ ফেলে দিয়ে ‘সুপারমাস্টিকোট’ অথবা, ‘নিউমাস্ট’ অথবা, ‘মাস্টিনেট’ যে কোনো একটি এন্টিবায়োটিক ঔষধ প্রতিদিন প্রতিটি আক্রান্ত বাঁটে ১টি করে ৩ দিন সরাসরি বাঁটের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।
  12. গাভীর দেহে জ্বর থাকলে ‘ডিপোমাইসিন ২০% ইনজেকশন’ অথবা, ‘বাইওডেক্সমিন ইনজেকশন’ অথবা, ‘এম্পিসিলিন ২০% ইনজেকশন’ অথবা, ‘জেন্টাসিন ৫%’ অথবা, ‘অক্সিটেট্রাসাইক্লিন’ কোনো একটি এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রতিদিন ১০ মিলি করে আক্রান্ত গবাদি প্রাণির মাংসপেশীতে ৩-৫ দিন ইনজেকশন দিতে হবে।
See also  গরু, মহিষ ও ছাগলের বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত? গরু, মহিষ ও ছাগলের ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

(৭) গরুর বাছুরের নাভি রোগ বা ন্যাভাল-ইল (Naval ill/joint ill)

গরুর রোগের নাম ন্যাভাল-ইল জন্মের পরপরই বাছুরের এ রোগ হয়। জন্মের সময় নাভির মাধ্যমে রোগজীবাণু সংক্রামিত হয়। তাছাড়া বাছুরের নাভি অপরিষ্কার ছুরি দিয়ে কাটার ফলে রোগজীবাণু সংক্রামিত হয়ে রোগের সৃষ্টি হয়। 

রোগের অন্যান্য নাম: নাভী ফোলা, নাভী পাকা, ন্যাভাল ইল, জয়েন্ট ইল, ইত্যাদি। 

রোগের কারণ: ব্যাকটেরিয়া।

রোগের লক্ষণ:

  1. জ্বর হয়। বাছুরের নাভি ফুলে যায়, হাত দিলে গরম ও শক্ত অনুভব হয়।
  2. নাভিতে ঘা ও পুঁজ হয়। নাভিতে চাপ দিলে রক্ত মেশানো তরল পদার্থ বের হয়।
  3. বাছুর মুখ দিয়ে নাভি চাটে ও ঘন ঘন প্রস্রাব করে।
  4. আক্রান্ত বাছুরের পায়ের গিরা সমূহ ফুলে যায় এবং খুড়িয়ে হাঁটে।
  5. আক্রান্ত বাছুর নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
  6. বাছুর দুগ্ধপান থেকে বিরত থাকে।

প্রতিকার:

  1. বাছুরের বাসস্থান পরিষ্কার ও শুকনা রাখতে হবে। গাভীকে বাছুরের নাভি চাটা থেকে বিরত রাখতে হবে।
  2. গাভীর প্রস্রাবের স্থান পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।
  3. জন্মের পর জীবাণুমুক্ত ছুরি দিয়ে নাভি কেটে আয়োডিন দিয়ে মুছে জীবাণুনাশক পাউডার লাগাতে হয়।
  4. নাভি পেকে গেলে একটু কেটে সম্পূর্ণ পুঁজ বের করতে হবে এবং ক্ষতস্থান জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে ধুয়ে ‘সালফানিলামাইড পাউডার’ অথবা ‘এন্টিসেপটিক ক্রিম’ লাগাতে হবে। অথবা, গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ‘এন্টিবায়োটিক’ অথবা ‘সালফোনামাইড’ জাতীয় ঔষধ ইনজেকশনের মাধ্যমে দিতে হবে।

(৮) গরুর সালমোনেলোসিস রোগ (Salmonellosis)

গরুর রোগের নাম সালমোনেলোসিস, বাছুরের এ রোগ হয়। একে প্যারাটাইফয়েডও বলা হয়। খাদ্য বা মলের সাহায্যে রোগজীবাণু সংক্রামিত হয়ে এ রোগ সৃষ্টি করে। বয়স্ক গবাদি প্রাণি, ইঁদুর এবং মাছি রোগজীবাণু বহন করে বাছুরকে সংক্রামিত করতে পারে।

রোগের কারণ: ব্যাকটেরিয়া।

রোগের লক্ষণ:

  1. শরীরের তাপমাত্রা, নাভির গতি এবং শ্বাস প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়।
  2. গবাদি প্রাণি দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা করে। পায়খানা তরল, হলুদ রং এর এবং রক্ত মিশ্রিত হয়।
  3. নাক, মুখ দিয়ে তরল শ্লেষ্মা এবং মুখ হতে ফেনা ঝরে।
  4. শরীরের বিভিন্ন স্থানের গিরা ফুলে যায়। পানির স্বল্পতা দেখা দেয়।
  5. নিউমোনিয়ার সাথে কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হয়।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  1. স্বাস্থ্যসম্মত লালন পালন ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
  2. নবজাত বাছুরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
  3. আক্রামণকারী ব্যাকটেরিয়া দমনের জন্য প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২০ মিলিগ্রাম ‘ক্লোরামফেনিকল’ ৬-১২ ঘন্টা পর পর ৩ দিন ইনজেকশন আকারে দিতে হবে।
  4. অন্ত্র প্রদাহের জন্য প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২০ মিলিগ্রাম ‘নাইট্রোফিউরাজন’ ৫ দিন খাওয়াতে হবে।
  5. ডায়রিয়া বন্ধের জন্য ‘অ্যাসট্রিনজেন্ট’ ঔষধ খাওয়াতে হবে। পানির স্বল্পতা রোধে ‘স্যালাইন’ দেয়া যেতে পারে।
  6. শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকলে ‘৫% সোডিয়াম বাইকার্বনেট’ শিরায় ইনজেকশন আকারে দিতে হবে। অথবা গবাদি প্রাণি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট (৮টি) গরুর রোগের নাম, গরুর কোন রোগের কি ঔষধ অর্থ্যাৎ গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারলাম।

ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ দমনের জন্য সুস্থ্য অবস্থায় ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শমতো সময়মত প্রতিষেধক টিকা প্রযোগ করতে হবে।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts