Skip to content

 

গরু-ছাগলের সম্পূরক খাদ্য তৈরির ফর্মুলা ও প্রয়োগ পদ্ধতি

গরু ছাগলের সম্পূরক খাদ্য তৈরির ফর্মুলা ও প্রয়োগ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়:

গরু-ছাগলের উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এদেরকে প্রচলিত খাবারের সাথে বিশেষ খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এতে গরু-ছাগলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে এবং পরিপুষ্টি লাভ করে। গরু-ছাগলের মাংস, দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাই গরু-ছাগল পালনে সম্পূরক খাদ্যের অধিক গুরুত্ব রয়েছে।

নিম্নে গরু-ছাগলের সম্পূরক খাদ্য তৈরি ফর্মুলা ও প্রয়োগ পদ্ধতি সুন্দর ও সহজ ভাবে বর্ণনা করা হলো-

(১) ইউরিয়া মোলাসেস খড় তৈরি

ইউরিয়ার সাহায্যে খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ
ইউরিয়ার সাহায্যে খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ

ক) ইউরিয়া মোলাসেস খড় তৈরির উপকরণ

  1. খড়: ২০ কেজি
  2. ইউরিয়া: ১ কেজি
  3. পানি: ২০ লিটার
  4. একটি মাঝারি আকারের পাত্র, বস্তা ও মোটা পলিথিন

খ) ইউরিয়া মোলাসেস খড় তৈরির পদ্ধতি

  1. প্রথমে একটি বালতিতে ১ কেজি ইউরিয়া ২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে
  2. ডোলের চারদিকে গোবর ও কাদা মিশিয়ে লেপে শুকিয়ে নিতে হবে।
  3. এবার ডোলের মধ্যে অল্প অল্প খড় দিয়ে ইউরিয়া মেশানো পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
  4. সমস্ত খড় সম্পূর্ণ পানি দ্বারা মিশিয়ে ডোলের মুখ বস্তা ও মোটা পলিথিন দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
  5. দশ দিন পর খড় বের করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
See also  গরু-ছাগলের খাদ্য, আঁশ জাতীয়, দানাজাতীয়, সাইলেজ ও হে তৈরির পদ্ধতি, সুবিধা এবং বৈশিষ্ট্য

গ) ইউরিয়া মোলাসেস খড় প্রয়োগ পদ্ধতি

  • একটি গরুকে দৈনিক ২-৩ কেজি ইউরিয়া মেশানো খড় খাওয়াতে হবে।
  • খড়ের সাথে দৈনিক ৩০০ গ্রাম ঝোলাগুড় মিশিয়ে দিতে হবে।

(২) ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরি

দানাদার খাদ্যের সাহায্যে ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরিকরণ
দানাদার খাদ্যের সাহায্যে ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরিকরণ

ক) ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরির উপকরণ

  1. গমের ভুসি: ৩ কেজি
  2. ঝোলাগুড়: ৬ কেজি
  3. ইউরিয়া: ৯০ গ্রাম
  4. লবণ: ৩৫ গ্রাম
  5. খাবার চুন: ৫০০ গ্রাম
  6. ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স: ৫০ গ্রাম এবং
  7. কাঠের ছাঁচ (১ কেজি ব্লক তৈরির জন্য)

খ) ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরির পদ্ধতি

  1. প্রথমে একটি লোহার কড়াইতে সামান্য ভিটামিন মিনারেল মিশ্রণ ঝোলাগুড়সহ জ্বাল দিয়ে সামান্য ঘন করতে হবে।
  2. কড়াই চুলা থেকে নামিয়ে এর মধ্যে ইউরিয়া, চুন, লবণ, গমের ভুসি যোগ করে ভালোভাবে মেশাতে হবে।
  3. এরপর ছাঁচের মধ্যে কিছু ভুসি ছিটিয়ে মিশ্রিত দ্রব্যগুলো ভরে ব্লক তৈরি করতে হবে।
  4. ব্লকগুলো শুকনো আলো বাতাসযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।

গ) ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক প্রয়োগ পদ্ধতি

  • একটি গরুকে দৈনিক ৩০০ গ্রাম ব্লক জিহ্বা দিয়ে চেটে খেতে দিতে হবে।
  • প্রথমে ব্লক জিহ্বা দিয়ে চেটে খেতে না চাইলে ব্লকের উপর কিছু ভুসি ও লবণ ছিটিয়ে দিতে হবে।

(৩) গরু-ছাগলকে অ্যালজি বা শেওলা খাওয়ানোর পদ্ধতি

গরু-ছাগলকে অ্যালজি বা শেওলা খাওয়ানো
গরু-ছাগলকে অ্যালজি বা শেওলা খাওয়ানো

অ্যালজি বা শেওলা এক ধরনের উদ্ভিদ যা আকারে এককোষী থেকে বহুকোষী হতে পারে।

তবে এখানে দুটি বিশেষ প্রজাতির এক কোষী অ্যালজির কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। এদের মধ্যে প্রধান হলো ক্লোরেলা।

এরা সূর্যালোক, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জৈব নাইট্রোজেন আহরণ করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বেঁচে থাকে।

এরা বাংলাদেশের মতো উষ্ণ জলবায়ুতে দ্রুত বর্ধনশীল।

ক) পশুর খাদ্য হিসেবে অ্যালজির পুষ্টিমান

অ্যালজি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পুষ্টিকর খাদ্য যা বিভিন্ন ধরনের আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন- খৈল, শুঁটকি মাছের গুঁড়া ইত্যাদির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার হতে পারে।

  • শুষ্ক অ্যালজিতে শতকরা ৫০-৭০ ভাগ আমিষ, ২০-২২ ভাগ চর্বি এবং ৮-২৬ ভাগ শর্করা থাকে।
  • এছাড়াও অ্যালজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের বি ভিটামিন থাকে। অ্যালজি পানি ব্যবহার করে কম খরচে গরুর মাংস এবং দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
See also  গরু-ছাগলের খাদ্য, আঁশ জাতীয়, দানাজাতীয়, সাইলেজ ও হে তৈরির পদ্ধতি, সুবিধা এবং বৈশিষ্ট্য

খ) অ্যালজি চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ

অ্যালজির বীজ, কৃত্রিম অগভীর পুকুর বা জলাধার, পরিষ্কার স্বচ্ছ পানি, মাসকলাই বা অন্যান্য ডালের ভুসি ও ইউরিয়া।

গ) অ্যালজির চাষ পদ্ধতি

  1. প্রথমে সমতল ও ছায়াযুক্ত জায়গায় একটি কৃত্রিম জলাধার তৈরি করতে হবে।
  2. জলাধারটি লম্বায় ৩ মিটার, চওড়ায় ১.২ মিটার এবং গভীরতায় ০.১৫ মিটার হতে পারে। তবে জলাধারটির আয়তন প্রয়োজন অনুসারে ছোট বা বড় হতে পারে।
  3. এবার ৩.৩৫ মিটার, ১.৫২ মিটার চওড়া একটি স্বচ্ছ পলিথিন বিছিয়ে কৃত্রিম জলাধারটির তলা ও পাড় ঢেকে দিতে হবে। এর পাড় ইট বা মাটির তৈরি হতে পারে।
  4. তাছাড়া মাটির বা সিমেন্টের চাড়িতে অ্যালজি চাষ করা যায়।
  5. এরপর ১০০ গ্রাম মাসকলাই বা অন্য ডালের ভুসিকে ১ লিটার পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানিটুকু সংগ্রহ করতে হবে। (এভাবে একই ভুসিকে অন্তত তিনবার ব্যবহার করে পরবর্তীতে গরুকে খাওয়ানো যায়।)
  6. এবার কৃত্রিম পুকুরে ২০০ লিটার পরিমাণ কলের পরিষ্কার পানি, ১৫-২০ লিটার পরিমাণ অ্যালজির বীজ এবং মাসকলাই ভুসি ভেজানো পানি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। 
  7. এরপর ২-৩ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া নিয়ে উক্ত পুকুরের পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
  8. এরপর প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকালে কমপক্ষে তিনবার উক্ত অ্যালজির পানিকে নেড়ে দিতে হবে। পানির পরিমাণ কমে গেলে নতুন করে পরিমাণ মতো পরিষ্কার পানি যোগ করতে হবে।
  9. প্রতি ৩/৪ দিন পর পর পুকুরে ১-২ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া ছিটালে ফলন ভালো হয়।
  10. এভাবে উৎপাদনের ১২-১৫ দিনের মধ্যে অ্যালজির পানি গরুকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়। এসময় অ্যালজির পানির রং গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। অ্যালজির পানিকে পুকুর থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি গরুকে খাওয়ানো যায়।
  11. প্রতি ১০ বর্গমিটার পুকুর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লিটার অ্যালজির পানি উৎপাদন করা সম্ভব।
  12. একটি পুকুরের অ্যালজির পানি খাওয়ানোর পর উক্ত পুকুরে আগের নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মতো পানি, সার এবং মাসকলাই ভুসি ভেজানো পানি দিয়ে নতুন করে অ্যালজি চাষ শুরু করা যায়, এ সময় নতুন করে অ্যালজি বীজ দিতে হয় না।
  13. যখন অ্যালজি পুকুরে পানির রং স্বাভাবিক গাঢ় সবুজ রং থেকে বাদামি রং হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে যে উক্ত কালচারটি কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে নতুন করে কালচার শুরু করতে হবে।
See also  গরু-ছাগলের খাদ্য, আঁশ জাতীয়, দানাজাতীয়, সাইলেজ ও হে তৈরির পদ্ধতি, সুবিধা এবং বৈশিষ্ট্য

ঘ) গরু ছাগলকে অ্যালজি খাওয়ানো পদ্ধতি

  • সব বয়সের গরুকে অর্থাৎ বাছুর, বাড়ন্ত গরু, দুধের বা গর্ভবতী গাভী, হালের বলদ সবাইকে সাধারণ পানির পরিবর্তে অ্যালজির পানি খাওয়ানো যায়।
  • এ ক্ষেত্রে গরুকে আলাদা করে পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই।
  • অ্যালজি পানি দানাদার খাদ্য অথবা খড়ের সাথে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়।
  • অ্যালজির পানিকে গরম করে খাওয়ানো উচিত নয়, এতে অ্যালজির খাদ্যমান নষ্ট হতে পারে।
  • খামারের ৫টি গরুর জন্য ৫টি কৃত্রিম পুকুরে অ্যালজি চাষ করতে হয় যাতে একটির অ্যালজির পানি শেষ হলে পরবর্তীটি খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়।

(৪) বাজারে তৈরি সম্পূরক খাদ্য

বাজারে তৈরি সম্পূরক খাদ্য
বাজারে তৈরি সম্পূরক খাদ্য

পশুপাখির উৎপাদন চলমান রাখার জন্য এদেরকে বাজারে তৈরি বিভিন্ন সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

  • আমিষ সম্পূরক খাদ্য, যেমন- প্রোটিন কনসেনট্রেট।
  • খনিজ সম্পূরক – ভিটামিন ও খনিজ প্রিমিক্স।
  • খাদ্যপ্রাণ সম্পূরক – ভিটামিন ও খনিজ প্রিমিক্স।

(৫) বাছুরের সম্পূরক খাদ্য ফর্মুলা তালিকা

ক) বাছুরের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে মিল্ক রিপ্লেসার

বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি এক ধরনের তরল পশুখাদ্য যাতে দুধের উপাদান থাকে এবং বাছুরের জন্য দুধের পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়। এতে ২০% আমিষ ও ১০% এর অধিক চর্বি থাকে। এর উপাদানসমূহকে গরম স্কিম মিল্কে বা পানিতে মিশ্রিত করা হয়।

মিল্ক রিপ্লেসার প্রয়োগ পদ্ধতি:

বাছুরের বয়স অনুসারে দৈনিক ০.৫ থেকে ৩ লিটার পর্যন্ত খাওয়ানো যায়।

মিল্ক রিপ্লেসার তৈরির একটি নমুনা নিম্নে দেওয়া হলো:

উপকরণরেশন এক (%)রেশন দুই (%)
স্কিম মিল্ক৬৫
স্কিম মিল্ক পাউডার
পানি৬০
উদ্ভিজ্জ তেল২০২০
ছানার দুধ১০
ভিটামিন ও খনিজ প্রিমিক্স০৫০৫
মোট১০০১০০

খ) বাছুরের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে কাফ স্টার্টার

বাছুরের খাবার উপযোগী বিশেষ দানাদার খাদ্য মিশ্রণ যাতে ২০% এর অধিক পরিপাচ্য আমিষ ও ১০% এর কম আঁশযুক্ত খাদ্য থাকে।

কাফ স্টার্টার প্রয়োগ পদ্ধতি:

বাছুরের বয়স অনুসারে দৈনিক ০.৫ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত খাওয়ানো যায়।

কাফ স্টার্টারের একটি নমুনা নিম্নে দেওয়া হলো:

উপকরণপরিমাণ (%)
তুলাবীজ৩৮
ভুট্টা৩০
যব১০
ছানার গুঁড়া১০
গমের ভুসি১০
হাড়ের গুঁড়া
খাদ্য লবণ
মোট১০০

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page