Skip to content

গাছ কাটা, কাঠ সংগ্রহ, কাঠ পরিমাপ ও সংরক্ষণের পদ্ধতি

গাছ কাটা, কাঠ সংগ্রহ, কাঠ পরিমাপ ও সংরক্ষণের পদ্ধতি

বৃক্ষ আমাদের অতিমূল্যবান জাতীয় সম্পদ। অর্থনৈতিক প্রয়োজনে যেমন বৃক্ষ রোপণ করতে হয় তেমনি একই কারণে বৃক্ষ কর্তন করতে হতে পারে।

সাধারণত গাছের আবর্তনকাল শেষ হলে গাছ কর্তন করা হয়। তবে যেসব গাছ সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে লাগানো হয় সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়ে থাকে।

গাছ কাটা ও তা থেকে কাঠ সংগ্রহ করার বিষয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিগত কৌশল জানা দরকার।

গাছ কাটার পর যদি সে গাছকে খুঁটি হিসাবে ব্যবহার করা না হয় তবে তা চিরাই করতে হবে এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাপের কাঠ বের করতে হবে। এরপর কাঠের স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত করার জন্য কাঠকে ব্যবহার উপযুক্ত করা বা সিজনিং করা হয়।

বাঁশের স্থায়ীত্ব দীর্ঘায়িত করার জন্যও সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করার প্রয়োজন হয়। এমতাবস্থায় কাঠ বা বাঁশকে সিজনিং করে কর্তিত কাঠ বা বাঁশের গুণগতমান ও স্থায়ীত্বকাল বেশ কয়েকগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

এখানে আমরা বৃক্ষ কর্তনের সময় ও নিয়মাবলি, কাঠ সংরক্ষণ পদ্ধতি, তক্তা পরিমাপ পদ্ধতি, বৃক্ষকর্তন ও কাঠ সংরক্ষণের উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণা লাভ ও দক্ষতা অর্জন করব।

(১) গাছ কাটার সময় বা আবর্তনকাল

বৃক্ষের চারা রোপণ থেকে শুরু করে যে সময়ে বৃক্ষের বৃদ্ধি সর্বাধিক হয় এবং গাছ পরিপক্বতা লাভ করে ব্যবহার উপযোগী হয়, সে সুনির্দিষ্ট সময়কালকে আবর্তনকাল বা কর্তন সময় বলে। পরিপক্ক হওয়ার আগেই বৃক্ষ কর্তন করলে ভালো মানের কাঠ পাওয়া যায় না।

বন ব্যবস্থাপনায় বৃক্ষের আবর্তনকালকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা-

  1. স্বল্প আবর্তন কাল: যে সব গাছের কাঠ নরম এবং দ্রুত বর্ধনশীল জ্বালানি কাঠ, পশু খাদ্য ও মণ্ড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, সেসব উদ্ভিদের কর্তন সময় কম হয়। সাধারণত ১০-২০ বছর আবর্তনকালে এসব বৃক্ষ কর্তন করা হয়। যেমন-আকাশমনি, কদম, শিমুল, তেলিকদম, কেওড়া, বাইন, বাবলা, ঝাউ, ইপিল ইপিল ইত্যাদি।
  2. মাঝারি আবর্তনকাল: আংশিক শক্ত কাঠ প্রদায়ি প্রজাতিসমূহ খুঁটি ও কাঠের উৎপাদনের জন্য ২০-৩০ বছর আবর্তনকালে কাটা হয়। যেমন-গামার, শিশু, আম, কড়ই, খয়ের, বকুল, হরিতকী, ছাতিয়ান, চন্দন, রেন্ডি কড়ই বা রেইনট্রি ইত্যাদি।
  3. দীর্ঘ আবর্তনকাল: শক্ত জাতীয় কাঠ ও ধীর বর্ধনশীল প্রজাতিসমূহ শুধুমাত্র কাঠ উৎপাদনের জন্য ৪০-৫০ বছর আবর্তনকালে কাটা হয়। যেমন- সেগুন, গর্জন, শাল, জারুল, শীলকড়ই, মেহগনি, তেলসুর, চাপালিশ, কাঁঠাল, জাম ইত্যাদি।

(২) গাছ কাটার নিয়মাবলি

  • গাছ যতটা সম্ভব মাটির কাছাকাছি কাটতে হবে। কারণ গাছের গোড়ার অংশটা বেশি মোটা হয়। এ অংশে কাঠের মানও ভালো থাকে।
  • সাধারণত মাটির ১০ সেমি উপরে গাছ কাটলে সর্বোচ্চ পরিমাণ কাঠ পাওয়া যায়। গাছ কাটার পূর্বে ডালপালা ছেটে নিলে গাছ নিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলতে সুবিধা হয়।
  • গাছ সব সময় করাত দিয়ে কাটতে হবে। এতে কাঠের অপচয় পুরাপুরি রোধ করা সম্ভব।
  • প্রথমে যে দিকে গাছকে ফেলতে হবে সেদিকে করাত দিয়ে কাটতে হবে। পরবর্তীতে আগের মতই বিপরীত দিকে করাত দিয়ে কাটতে হবে এবং কাটা অংশে খিল বা কাঠের টুকরা ঢুকিয়ে দিতে হবে। এতে গাছ কাঙ্খিত দিকে পড়বে।
  • কাটা গাছ মাটিতে পড়ার পর খণ্ডিত করতে হবে। তবে কী কাজে কাঠ ব্যবহার করা হবে তার ভিত্তিতে পরিমাপ নির্ধারিত করতে হবে।
  • খণ্ডিত গোল অংশকে বলা হয় লগ। এ লগকে করাত কলে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার উপযোগী চেরাই কাঠে পরিণত করা হয়।
  • চেরাই কাঠের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্ব থাকে। চেরাই কাঠের প্রস্থ ১৫ সেমি এর বেশি হলে এবং পুরুত্ব ৪ সেমি হলে তাকে বলা হয় তক্তা।
  • গাছ কাটার সময় যে দিকে গাছ পড়বে প্রথমে কুড়াল দিয়ে মাটির ১০ সেমি উপরে সেই দিকে দুই-তৃতীয়াংশ কাটতে হবে। পরবর্তীতে কাটা হবে ঠিক এ কাটার বিপরীত দিকে ১০ সেমি উপরে। এভাবে গাছ কাটলে গাছকে সুনির্দিষ্ট দিকে ফেলা সম্ভব হয়। এতে পার্শ্ববর্তী গাছের ক্ষতি কম হয়। কুড়াল/করাত উভয় ব্যবহার করে গাছ কাটা বেশ সুবিধা জনক।
See also  কোথায় কি গাছ লাগাবেন? গাছের স্থান নির্বাচন

(৩) চেরাই কাঠের পরিমাপ পদ্ধতি

উদাহরণস্বরুপ ধরি, একটি চেরাই কাঠের দৈর্ঘ্য ১০০ ফিট, প্রস্থ ১৪ ইঞ্চি এবং উচ্চতা বা পুরত্ব ২ ইঞ্চি রয়েছে। এখন সবগুলোকে গুণ করে ১৪৪ দিয়ে ভাগ করলে বের হয়ে যাবে এখানে কত কিউবিক ফুট বা ঘন ফুট কাঠ রয়েছে।

একটি জিনিস সব সময় মনে রাখতে হবে, দৈর্ঘ্য হবে ফুটে এবং প্রস্থ ও উচ্চতা বা পুরত্ব হবে ইঞ্চিতে, না হলে হিসেব মিলবে না।

এখন আসুন বাস্তবে হিসেব করে দেখি,

সূত্র: (দৈর্ঘ্য  × প্রস্থ × পুরত্ব ) ÷ ১৪৪ = কিউবিক ফিট বা কেবি

বা, (দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট × প্রস্থ ১৪ ইঞ্চি × পুরত্ব ২ ইঞ্চি ) ÷ ১৪৪ কেবি

বা, (১০০ × ১৪ × ২) ÷ ১৪৪ কেবি

বা, ২৮০০ ÷ ১৪৪ = ১৯.৪৪ কেবি

অর্থাৎ ১৯.৪৪ কিউবিক ফিট বা কেবি কাঠ রয়েছে এখানে।

এভাবেই আপনি সহজেই চেরাই কাঠের হিসাব বের করতে পারবেন।

(৪) গোলকাঠের কাঠের পরিমাপ পদ্ধতি 

গোলকাঠ চেরাইকালে কিছুটা অপচয় হয়। সবটুকু কাঠই ব্যবহার উপযোগী করা যায় না।

এখানেও একটি জিনিসি মনে রাখতে হবে, দৈর্ঘ্য হবে ফুটে এবং গোলবেড় হবে ইঞ্চিতে।

উদাহরণস্বরুপ ধরি, একটি গোল কাঠের দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট এবং গোলবেড় আছে ২০ ইঞ্চি, এখন বের করতে হবে এই কাঠে কিউবিক ফিট কাঠ আছে?

সূত্র: (দৈর্ঘ্য × গোলবেড়ি × গোলবেড়ি) ÷ ২৩০৪ = কিউবিক ফিট বা কেবি

বা, (দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট × ২০ ইঞ্চি × ২০ ইঞ্চি) ÷ ২৩০৪ কেবি

বা, ( ৪০ × ২০ × ২০ ) ÷ ২৩০৪ কেবি

বা,  ১৬,০০০ ÷ ২৩০৪ = ৬.৯৪ কেবি

অর্থাৎ ৬.৯৪ কিউবিক ফিট বা কেবি কাঠ আছে।

এভাবেই আপনি সহজেই যেকোন গোল কাঠের হিসাব বের করতে পারবেন।

বি:দ্র: গাছ যদি একদিকে মোটা ও অপরদিকে চিকন হয় তাহলে মাঝামাঝি গোলবেড়ির মাপ নিতে হবে বা মোটা অংশে একটি মাপ, মাঝে একটি মাপ এবং চিকন অংশে একটি মাপ নিয়ে গড় করতে হবে।

See also  চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি/চারা রোপন ও পরিচর্যা

যেমন: মোটা অংশ ৪০ ইঞ্চি, মাঝে ২০ ইঞ্চি এবং চিকন অংশ ১৪ ইঞ্চি মোট ৭৪ ইঞ্চি। অর্থাৎ ৪০+২০+১৪ = ৭৪ ইঞ্চি। এই ৭৪ ইঞ্চিকে ৩ দিয়ে ভাগ করে গড় বেড় করলে হবে ২৪.৬৭ ইঞ্চি। 

(৫) কাঠ সিজনিং ও ট্রিটমেন্ট

জীবন্ত অবস্থায় বৃক্ষের জন্য পানি অপরিহার্য হলেও কাটার পর কর্তিত বৃক্ষে পানির পরিমাণ যত কম থাকবে কাঠ তত বেশি টিকবে।

পানির পরিমাণ যদি কাঠ ওজনের ১২% এ নামিয়ে আনা যায় তাহলে ধরে নিতে হবে কাঠের গুণগত মান সর্বোত্তম হবে। সহজে ঘুনপোকা, পোকান্ডমাকড় বা ছত্রাক আক্রমণ করতে পারবে না। বেশি দিন টিকবে।

নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে কাঠ থেকে পানি বের করে নেওয়ার পদ্ধতিকে সিজনিং বলে।

সিজনিং দুইভাবে করা যায়-

ক) এয়ার ড্রাইং

  • গাছ কেটে চেরাই করার পর বাতাসে কাঠ শুকানোকে এয়ার ড্রাইং বলা হয়।
  • তবে হালকা পাতলা চেরাই করা কাঠ প্রখর রোদে শুকালে কাঠ ফেটে বা বেঁকে যেতে পারে। তাই এগুলোকে মাটি থেকে ৩০-৪০ সেমি উঁচুতে ছায়ায় স্তরে স্তরে শুকাতে হয়।
  • এমনভাবে সাজাতে হবে যেন প্রতিটি টুকরার চারপাশে সমভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে।
  • কাঠের ফালি এলোমেলোভাবে বা বাঁকা করে সাজানো যাবে না। এতে করে কাঠ বেঁকে যেতে পারে।
  • এ পদ্ধতিতে কাঠ সিজনিং হতে কমপক্ষে এক মৌসুম লাগে এবং আর্দ্রতার পরিমাণ ২০% এর কাছাকাছি থাকে।

খ) কিলন পদ্ধতি

সাধারণত বেশি কাঠ একসাথে সিজন করার জন্য কিলন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

কিলন পদ্ধতিতে একটি বড় পাকা বায়ুনিরপেক্ষ কক্ষে কাঠের তক্তার গায়ে না লাগে এবং দুইটি তক্তার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে।

এ কাজটি করার জন্য-

  1. দুইটি তক্তার মধ্যবর্তী স্থানে ৩-৪ সেমি পুরু দুইটি কাঠের টুকরা দুইপাশে বসাতে হবে যাতে দুটি তক্তার মধ্যখান দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে।
  2. অতঃপর বায়ুনিরপেক্ষ কক্ষে প্রথমে জলীয়বাষ্প প্রবেশ করিয়ে কাঠের পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
  3. পরবর্তীতে তাপ প্রয়োগ করে সে কক্ষ থেকেও একই সাথে কাঠ থেকে পানি বের করে নেওয়া হয়।

এ পদ্ধতিতে কাঠকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সিজনিং করে পানির পরিমাণ ১২% এ নামিয়ে আনা যায়। তবে প্রজাতিভেদে সিজনিং এর সময় কম বেশি হতে পারে।

(৬) কাঠ সংরক্ষণ

  • কাঠ ট্রিটমেন্টের মূলনীতি হলো দ্রবণাকারে রাসায়নিক দ্রব্য কাঠ ও বাঁশের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া। সিসিএ (CCA) নামের রাসায়নিক দ্রব্যটি সংরক্ষণী হিসাবে আমাদের বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
  • সিসিএ সংরক্ষণটি ৩টি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে রয়েছে ক্রোমিক অক্সাইড ৪৭.৫%, কপার অক্সাইড ১৮.৫%, আর্সেনিক পেন্টা অক্সাইড ৩৪%, সিসিএ এর মিশ্রণ বাজারে পাওয়া যায়।
  • উপাদানগুলো পৃথক পৃথকভাবে কিনে ও আনুপাতিক হারে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা যায়।
  • পানিতে মিশ্রণটি ২.৫% দ্রবণ তৈরি করা হয়।
  • দ্রবণটি বিশেষ চাপ পদ্ধতিতে কাঠের মধ্যে ঢুকানো হয়।
  • প্রতি ঘনফুট কাঠে সাধারণভাবে ০.৪ পাউন্ড সংরক্ষণী প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়।
  • এ পদ্ধতিতে কাঠ সংরক্ষণের ৭ দিন পর ব্যবহারযোগ্য হবে।
  • সিসিএ সংরক্ষণী দিয়ে সংরক্ষিত কাঠ পচন প্রতিরোধ করতে পারে। উইপোকার আক্রমণও প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
See also  গাছ কাটা, কাঠের হিসাব বের করার নিয়ম এবং কাঠ সিজনিং ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

(৭) কাঠের ব্যবহার

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কাঠের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। গৃহ নির্মাণ ও আসবাবপত্র তৈরিতে কাঠ ব্যবহার করা হয়।

একাঠের ব্যবহার বিস্তৃত-

ক) গৃহ নির্মাণ সামগ্রী তৈরি: বাসগৃহের খুঁটি, আড়া, পাটাতন ও বেড়ার চাটাই তৈরিতে কাঠের ব্যবহার হয়। এছাড়া জানালা-দরজার ফ্রেমও কাঠ দিয়ে তৈরি হয়। শাল, সেগুন, সুন্দরী, কড়ই, দেবদারু প্রভৃতি উদ্ভিদের কাঠ এসব কাজে ব্যবহার হয়

খ) আসবাবপত্র তৈরি: চেয়ার, টেবিল, সোফা, খাট, আলমারি প্রভৃতি কাঠ দিয়ে তৈরি হয়। মেহগনি, সেগুন, কড়ই, কাঁঠাল, রেইনট্রি প্রভৃতি উদ্ভিদের কাঠ এসব জিনিস তৈরিতে ব্যবহার হয়। 

গ) যানবাহন তৈরি: নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, বাস, ট্রাক তৈরিতে কাঠের ব্যবহার হয়। এছাড়া গরুর গাড়ি, রিকশা, ভ্যান, রেল লাইনের স্লিপার প্রভৃতি কাঠ দিয়ে তৈরি হয়। শাল, সুন্দরী, জারুল, বাবলা, পিতরাজ, মেহগনি প্রভৃতি উদ্ভিদের কাঠ এসব যানবাহন তৈরিতে ব্যবহার হয়। 

ঘ) যন্ত্রপাতি তৈরি: লাঙ্গল, জোয়াল, আচড়া, ইলেকট্রিক সুইচ বোর্ড তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। নানারকম খেলার সামগ্রীও কাঠ দিয়ে বানানো হয়। পেন্সিল, কাগজ তৈরিতেও কাঠ ব্যবহার করা হয়। তাল, বাবলা, গাব, লটকন ও গেওয়া কাঠ দিয়ে এসব সামগ্রী তৈরি হয়। 

ঙ) জ্বালানি কাঠ: আম, মান্দার, পিতরাজ প্রভৃতি উদ্ভিদের কাঠ বা বর্জ্য অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়া দেয়াশলাই তৈরি হয় গেওয়া, শিমুল, কদম ও ছাতিম গাছের কাঠ দিয়ে। প্লাইউড তৈরিতে আম, পিতরাজ, কদম কাঠের ব্যবহার হয়। কেরোসিন কাঠ দিয়ে তৈরি হয় প্যাকেজিং বাক্স।

(৭) বৃক্ষ কর্তন সংরক্ষণের উপযোগিতা

গাছ লাগানো ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিচর্যার মাধ্যমে সেগুলো বড় করে তোলার পিছনে নানা উদ্দেশ্যে থাকে।

তবে যে উদ্দেশ্যেই গাছ লাগানো হোক না কেন সুনির্দিষ্ট আবর্তনকাল শেষে পরিপক্বতা লাভ করলে গাছ কর্তন করাই শ্রেয়। কারণ নির্দিষ্ট সময় পরে গাছের কাঠের মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় গাছের বাকল ফেটে বা রোগাক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে কাণ্ডের অভ্যন্তর ভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।

তাছাড়া গাছ কখন কাটতে হবে তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। যেমন-

  1. কাঠ দিয়ে কী করা হবে?
  2. কোন পরিমাপের কাঠ প্রয়োজন?
  3. কী মানের কাঠ প্ৰয়োজন?
  4. এখনই টাকার প্রয়োজন কিনা?
  5. গাছ আরও বড় হয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকা ডালপালায় ছেয়ে যেতে পারে কিনা?
  6. ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে বা গাছ উপড়ে পড়ে স্থাপনা বা জানমালের ক্ষতির কারণ হতে পারে কিনা?
  7. গাছ কোনো বিশেষ রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা?
  8. গাছের আবর্তন কাল শেষ হয়েছে কিনা?

যে কারণেই গাছ কাটা হোক না কেন নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে কাটতে হবে। গাছ সঠিক নিয়মে কর্তন এবং খণ্ডিত করণের মাধ্যমে অপচয় রোধ করা যায়। আর ব্যবহারের আগে বিজ্ঞান সম্মত সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী করা যায়।

বৃক্ষ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। কোনো বন এলাকায় বছরে কী পরিমাণ কাঠ বৃদ্ধি পায় সব সময় তার চেয়ে কম কাঠ আহরণ করতে হবে। এর ফলে বনজ সম্পদ সংরক্ষিত হয়।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts