(১) চালকুমড়ার জাত পরিচিতি
বারি চালকুমড়া-১:
- উচ্চ ফলনশীল এ জাতটি লতানো প্রকৃতির এবং পাতা সবুজ রঙের।
- পুরুষ ও স্ত্রী ফুল যথাক্রমে রোপণের ৪০-৪৫ দিন এবং ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফোটে।
- সবুজ রঙের ফলের আকৃতি মাঝারী লম্বাকৃতির ১৮-২০ সেমি।
- গাছপ্রতি ১০-১২টি ফল ধরে এবং প্রতিফলের ওজন ১.০-১.২ কেজি।
- চারা রোপণের ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল সংগ্রহ করা যায়।
- বারি চালকুমড়া-১ গ্রীষ্ম মৌসুমের জাত। এটি উচ্চ তাপ ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু এবং এ জাতটি বৃষ্টিপ্রবন এলাকায় চাষ করা যায়।
- বাংলাদেশের সব এলাকায় ফাল্গুন মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এ জাতটি চাষ করা যায়। ফাল্গুনের মাঝামাঝী সময়ে চারা লাগাতে হয়।
- জীবনকাল ১২০-১৪০ দিন।
- ফলন ২৫-৩০ টন/হেক্টর।
(২) চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি ধারাবাহিক বর্ণনা
ক) জলবায়ু ও মাটি
চালকুমড়ার জন্য উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু প্রয়োজন। সুনিস্কাাশিত যে কোন ধরনের মাটিতে চালকুমড়া চাষ করা যায়।
খ) উৎপাদন মৌসুম
ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় চাল কুমড়ার বীজ বোনা যেতে পারে।
গ) বীজের হার
হেক্টরপ্রতি ৭০০-৮০০ গ্রাম (৩.০-৩.৫ গ্রাম/শতাংশ)।
চালকুমড়ার অনেক জাতের বীজের কাঙ্খিত মানের অঙ্কুরোদগম না হওয়া একটি সমস্যা। বারি চালকুমড়া-১ বীজের অঙ্কুরোদগম হার সাধারণত শতকরা ৩০ ভাগের মতো হয়ে থাকে।
- পটাসিয়াম নাইট্রেট (০.৪%) দ্রবণে ২৪ ঘণ্টা ভিজেয়ে বাতাসে শুকিয়ে বীজ বপন করলে অঙ্কুরোদগম হার অনেক বেড়ে যায়।
- চালকুমড়ার বীজকে ডিপ ফ্রিজে (তাপমাত্রা ৪-৫০ সে.) ৪ (চার) দিন রেখে বাতাসে শুকিয়ে তারপর বপন করলে অঙ্কুরোদগম হার বেড়ে যায়।
- বীজ সংরক্ষণের সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে বীজের অঙ্কুরোদগম হার বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- চালকুমড়ার বীজকে ৭ মাস সংরক্ষণের পর বপন করলে বীজের অঙ্কুরোদগম হার ৮১% পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ সমস্ত বীজের সতেজতার মাত্রাও তুলনামূলকভাবে অধিক হয়ে থাকে।
ঘ) জমি তৈরি ও বপণ পদ্ধতি
- খরিফ মৌসুমে চাষ হয় বলে চালকুমড়ার জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে পানি জমার সম্ভাবনা নেই।
- বসতবাড়িতে চাষ করতে হলে সুবিধাজনক স্থানে দু-চারটি মাদায় বীজ বুনে গাছ মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোনো বৃক্ষের উপর তুলে দেয়া যেতে পারে
- বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য প্রথমে সম্পূর্ণ জামি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হয় যাতে শিকড় সহজেই ছড়াতে পারে।
- জমি বড় হলে নির্দিষ্ট দূরত্বে নালা কেটে লম্বায় কয়েক ভাগে ভাগ করে নিতে হয়।
- সারি থেকে সারির দূরত্ব ২.৫ মিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ২.০ মিটার।
- পলিব্যাগে (৮ x ১০ সে.মি.) ১৫-১৮ দিন বয়সের চারা উৎপাদন করে নেয়া যেতে পারে।
- চালকুমড়ার বীজ সরাসরি মাদায় বোনা যেতে পারে। মাদা থেকে মাদার দূরত্ব হবে ২.০ মিটার। এক্ষেত্রে প্রতি মিটার মাদায় কমপক্ষে ৪-৫ টি বীজ বপন করতে হবে।
- চারা গজানোর পর মাদায় ২ টি গাছ রেখে অতিরিক্ত গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে
- মাদায় বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতে হলে অন্তত ১০ দিন আগে মাদায় নির্ধারিত সার প্রয়োগ করে তৈরি করে নিতে হবে।
- মাদার আয়তন হবে ৪০x ৪০x৪০ সেমি।
ঙ) সারের পরিমাণ (কেজি/হেক্টর)
সার | মোট সারের পরিমাণ | জমি ও মাদা তৈরির সময় দেয় | চারা রোপণের ১৫ দিন পর | চারা রোপণের ৩৫ দিন পর | চারা রোপণের ৫৫ দিন পর | চারা রোপণের ৭৫ দিন পর |
গোবর | ১০,০০০ কেজি | সব | – | – | – | – |
ইউরিয়া | ১৭৫ কেজি | – | ৪৩.৭৫ কেজি | ৪৩.৭৫ কেজি | ৪৩.৭৫ কেজি | ৪৩.৭৫ কেজি |
টিএসপি | ১৭৫ কেজি | সব | – | – | – | – |
এমওপি | ১৫০ কেজি | ৫০ কেজি | ২৫ কেজি | ২৫ কেজি | ২৫ কেজি | ২৫ কেজি |
জিপসাম | ৯০ কেজি | সব | – | – | – | – |
জিংক সালফেট | ১২ কেজি | সব | – | – | – | – |
বোরাক্স | ১০ কেজি | সব | – | – | – | – |
চ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি
- শেষ চাষের সময় অর্ধেক গোবর, টিএসপি ও এমওপি এবং সম্পূর্ণ জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বোরাক্স সার সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিাশয়ে দিতে হবে।
- বাকি অর্ধেক গোবর ও টিএসপি সার চারা লাগানোর ৭ দিন পূর্বে গর্তে মাটির সাথে ভালোভাবে মিাশয়ে দিতে হবে।
- সম্পূর্ণ ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার ৪ কিস্তিতে চারা লাগানোর ১৫, ৩৫, ৫৫ ও ৭৫ দিন পর সমভাবে গাছের গোড়ায় ১০-১৫ সে.মি. দূরে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
ছ) অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
- সময়মতো নিড়াািন দিয়ে আগাছা সবসময় পরিস্কার করে সাথে সাথে মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
- খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। পানির অভাব হলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় না। পানির অভাব হলে প্রাথমিক অবস্থায় চারার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, পরবর্তীকালে ফুল ঝরে যায়, ফলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে ঝরে যায় ইত্যাদি।
- চালকুমড়ার কাঙ্খিত ফলন পবওয়ার জন্য গাছ মাচায় তুলে দিতে হবে। চালকুমড়া মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক (মাটি সংলগ্ন স্থানে) বিবর্ণ হয়ে বাজার মূল্য কমে যায়। অনেক সময় ফলে পঁচন ধরে এবং পরাগায়ন কমে যায়, ফলশ্রুতিতে ফলন কমে যায়।
- চালকুমড়ার বীজ উৎপাদনের সময় খেয়াল রাখতে হবে ফল পরিপক্ক হওয়া শুরু হলে সেচ দেয়া বন্ধ করে দিতে হবো।
- গাছের গোড়া থেকে ডালপালা বের হলে সেগুলো কেটে দিতে হয় এতে গোড়া পরিষ্কার থাকে, রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উৎপাত কম হয়।
- জুন-জুলাই মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আর সেচের প্রয়োজন হয় না। জমির পানি নিকাশ নিশ্চিত করার জন্য বেড ও নিকাশ নালা সর্বদা পরিস্কার করে রাখতে হবে।
জ) ফসল সংগ্রহ ও ফলন
- চারা গজানোর ৬০-৬৫ দিন পর চালকুমড়ার গাছ ফল দিতে থাকে। স্ত্রী ফুলের পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়।
- চালকুমড়া ২-৩ দিন পর পর সংগ্রহ করতে হয়। চাল কুমড়া কচি অবস্থায় যত বেশি সংগ্রহ করা যায় ততো বেশি গাছে ফল ধরে। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুই
থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। - চালকুমড়ার ফল সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কোন পর্যায় নেই। ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী পক্ক বা পরিপক্ক ফল পাড়া যায়।
- উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে সবজি হিসেবে চালকুমড়ার হেক্টরপ্রতি ফলন ২৫-৩০ টন (১০০-১২০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়। ফল পাকালে ফলন কমে যায়। পাকা ফল মোরব্বা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
(৩) চালকুমড়া চাষে রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা
ক) এনথ্রাকনোজ বা ফলপঁচা রোগ
রোগের কারন:
Colletotrichum laginarium Corda নামক ছত্রাক Colletotrichum orbaculare নামক ছত্রাক।
রোগের লক্ষণ:
- রোগের লক্ষণ গাছের উপরের সকল অংশে (বীজপত্র থেকে ফল পর্যন্ত) পরিলক্ষিত হয়।
- পাতায় প্রথমে পানি ভেজা ক্ষুদ্রাকৃতির হলুদাভাব গোলাকৃতি দাগ দেখা যায়, এ দাগ গুলো বড় হয়ে বাদামী বর্ণের হয়। কুয়াশায় পাতার পঁচন লক্ষ করা যায়। কান্ডে লম্বাটে পানি ভেজা দাবানো লেশন (বড় কালো দাগ) দৃষ্টি গোচর হয়।
- ফল পাকার কিছু দিন আগেই ফলে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রথমে ছোট কলো দাগ দেখা যায় যার মধ্যাংশ একটু উঁচু হয়। দাগ বাড়তে থাকে এবং পুরো ফলে কালো ছোপ ছোপ দাগ হয়ে ফলপচে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- রোগমুক্ত ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হবে।
- বীজের জন্য ফল পুরোপুরি না পাকিয়ে ক্ষেত থেকে তুলে নিতে হবে।
- কার্বেন্ডিজম গ্রুপের ছত্রাক নাশক যেমন অটোস্টিন বা নোইন এর ২ গ্রাম প্রতিলিটার পানিতে দ্রবীভূত করে সে দ্রবনে বীজ ৩০-৪০ মিনিট ভিজিয়ে শোধন করা। ভেজা বীজ বপনের পূর্বে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে।
- ফল সংগ্রহ শেষে ফসলের অবশিষ্টিাংশ একত্রিত করে পুড়িয়ে ধ্বংশ করে ফেলতে হবে।
- অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অটোস্টিন/ নোইন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার আক্রমণের শুরু হওয়া মাত্রই প্রয়োগ করতে হবে।
- চালকুমড়ার বীজ-ফলে অব্যশই ছত্রাকনাশক প্রপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতিলিটার পানিতে ১ মি.লি. মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করে ফলটি রোগমুক্ত রাখতে হবে।
খ) মোজাইক
রোগের কারন:
ভাইরাস।
রোগের লক্ষণ:
- চারা অবস্থায় বীজ গজানোর পর বীজপত্র হলুদ হয়ে যায় এবং পরে চারা নেতিয়ে পড়ে।
- বয়স্ক গাছের পাতায় হলুদ-সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইকের মত দাগ দেখা যায়। দাগগুলো অসম আকারের এবং দ্রুত বড় হয়।
- আক্রান্ত পাতা ছোট, বিকৃত ও নীচের দিকে কোকড়ানো, বিবর্ণ হয়ে যায়। শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। লতার পর্বমধ্য খাটো হয়ে আসে।
- ফলে গাছ খাটো হয়ে যায়। আক্রান্ত গাছে সাধারণত ফল ধরে না। কচি ফল খসখসে, ছোট ও ফুটকি দাগযুক্ত হয়। মাঝে মাঝে ফলের রং সাদাটে হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- রাগের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত গাছ দেখলেই তা তুলে ধ্বংস করতে হবে এবং ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার রাখত হবে।
- রোগাক্রান্ত গাছ থেকে কোন বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার না করা।
- ক্ষেতে বাহক পোকার উপস্থিতি দেখাদিলে একান্তরভাবে দুটো অন্তর্বাহী ছত্রাকনাশক যেমন ইমিডাক্লোরোপিড প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি.লি. অথবা ডায়াজিনন (সেভিয়ন) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ মি.লি. মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
গ) পাউডারী মিলডিউ
রোগের কারন:
Erysiphe cicharacearum DC ফাঙ্গাল।
রোগের লক্ষণ:
- রোগের লক্ষণ গাছের পাতা ও কান্ডে দেখা যায়।
- বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ পাতার উপরের পৃষ্ঠে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে লক্ষণ পাতার নীচের পৃষ্ঠে এবং কান্ডেও দেখা যায়।
- এ রোগ সর্বপ্রথম পাতার উপরে ছোট ছোট সাদা হালকা পাওডারী দাগের আকারে প্রকাশ পায়। ধীরে ধীরে এ দাগ থেকে আরও অসংখ্য অনুরূপ পাওডারী দাগের সৃৃষ্টি হয় এবং পাতার উপরের পুরো অংশ আক্রান্ত হয়ে পাওডারের মত হয়ে যায়। পরে পাতা থেকে কান্ডে আক্রমন বিস্তার লাভ করে।
- পাতার উপরের সাদা পাওডার ক্রমান্বয়ে ছাই রং ধারন করে। পাতার সবুজ রং পরিবর্তিত হয়ে ছাই রঙে পরিনত হয়। ফলশ্রুতিতে সালোকসংশ্লেষনের এরিয়া (জায়গা) কমে যাওয়ার দরুন চালকুমড়ার ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। গুরুতরভাবে আক্রান্ত গাছ শুকিয়ে মারা যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- এ রোগের প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত পাতা ও গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- প্রপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ০.৫ মি.লি.অথবা সালফার জাতীয় ছত্রাকনাষক যেমন সালফোলাক্স/ কুমুলাস ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
গ) ডাউনী মিলডিউ
রোগের কারন:
Pseudopernospora cubensis বা সিউডোপেরোনোস্পোরা কিউবেনসিস।
রোগের লক্ষণ:
- রোগের প্রথমিক লক্ষণ পাতায় দেখা যায় এবং আক্রান্ত স্থান মোজেক মটলিং এর মতো হয়।
- পাতার দাগগুলো কৌনিক আকৃতির ও হলুদ রঙের হয় এবং দাগগুলো পাতার উপরে পৃষ্ঠে শিরার কাছাকাছি সীমাবদ্ধ থাকে।
- আদ্র আবহাওয়ায় সৃষ্ট দাগের নীচের দিকে পার্পল রঙের ঝুলে থাকা (downy) কিছু বৃদ্ধি দৃষ্টি গোচর হয়।
- সম্পূর্ণ পাতাটি শুকিয়ে যায়। পরবর্তী পর্যায়ে গাছটি ঢলে পড়ে বা দুর্বল হয়ে পড়ে। পাতার উপরের পৃষ্ঠ অপেক্ষা নীচের পৃণ্ঠ বেশী আক্রান্ত হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- আক্রান্ত লতা পাতাসহ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- এ রোগ দমনে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন ডায়থেন এম-৪৫ অথবা রিডোমিল গোল্ড (মেটালক্সিল ম্যানকোজেব) প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
ঘ) ঢলে পড়া (উইল্ট) রোগ
রোগের কারন:
Fusarium oxysporum f. sp. cucurbitae, যা সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক মাটিবাহিত প্যাথোজেনগুলির মধ্যে একটি।
রোগের লক্ষণ:
- ফসলের জীবন চক্রের মাঝখানে আক্রান্ত গাছ হঠাৎ করে ঢলে পড়ে।
- কান্ডের গোড়া মাঝ বরাবর লম্বালম্বিভাবে চিরে ফেললে দেখা যায় কর্টেক্স টিস্যু পঁচে বাদামী রং ধারন করেছে। এ ঢলে পড়া রোগটি ভাসকুলার (vascular wilt) উইল্ট নামে পরিচিত।
- ভূমিস্থ অংশ পঁচে যায়। আদ্র আবহাওয়ায় কান্ডের গোড়ায় ছত্রাকের বৃদ্ধি দৃষ্টিগোচর হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- চারা রোপন করার সময় মাদাতে কিছু ছাই দিলে এ রোগের উপদ্রব কিছুটা কমে যায়।
- ফসলের জমিতে ভালো পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- কিউকারবিটেসি (Cucurbitaceae) গোত্র বহিভূত ফসলের সাথে এ ফসলের ৩-৪ বছর শস্যপর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
- মাঠে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন অটোষ্টিন বা নোইন এর ২ গ্রাম বা প্রপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ১ মি.লি. প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে সে দ্রবন বিকালে গাছের গোড়ায় ভালোভাবে স্প্রে করতেহবে।
(৪) চালকুমড়া চাষে পোকান্ডমাকড় দমন ব্যবস্থাপনা
ক) মাছি পোকা
ক্ষতির ধরন:
স্ত্রী মাছি কচি ফলে গিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো ফলের শাঁস খায়, ফল পচে যায় এবং অকালে ঝরে পড়ে।
দমন ব্যবস্থাপনা:
দুই ধাপে ফলের মাছি পোকা কার্যকর ভাবে দমন করা যায়।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ-
- মাছি পোকায় আক্রান্ত ফল দ্রুত পঁচে যায় এবং গাছ হতে মাটিতে ঝরে পড়ে। এই ফল কোন ক্রমেই জমির আশে পাশে ফেলে রাখা উচিত নয়। কারণ উক্ত ফলে লুকিয়ে থাকে পরিপূর্ণ কীড়া অল্প সময়ের মধ্যেই পুত্তলিতে ও পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়ে নতুন ভাবে আক্রমণ শুরু করতে পারে।
- আক্রান্ত ফল সমূহ সংগ্রহ করে (যেহেতু এ পোকার কীড়া সমূহ মাটির ১০-১২ সে.মি. গভীরে পুত্তলিতে পরিণত হয়) কমপক্ষে ৩০ সেমি পরিমাণ গর্ত কওে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে অথবা হাত বা পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে।
সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার-
- কিউলিওর নামক সেক্স ফেরোমন ফাঁদের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পুরুষ মাছি পোকা আকৃষ্ট করে মাছি পোকা সমুহকে মেরে ফেলা যায়।
- বাজারে কিউলিওর স্ট্রিপ পাওয়া যায়। একটি স্ট্রিপ প্লাষ্টিক পাত্রের মুখ হতে ৩-৪ সে.মি. নীচে একটি সরুতার দিয়ে স্থাপন করতে হবে। সেক্স ফেরোমনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ মাছি পোকা প্লাষ্টিক পাত্রের অভ্যন্তওে প্রবেশকরে ও সাবান পানিতে পড়ে আটকে মারাপড়ে।
- বিষটোপ ফাঁদে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাছি পোকা আকৃষ্ট হয় এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়।
- একশত গ্রাম পাকামিষ্টি কুমড়া কুচিকুচি কওে ও থেতলিয়ে তার সাথে ০.২৫ গ্রাম সেভিন ৮৫ পাউডার এবং ১০০ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে ছোট একটি মাটির পাত্রে নিয়ে তিনটি খুঁটির সাহায্যে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে বিষটোপের পাত্রটি মাটি থেকে ০.৫ মিটার উঁচুতে থাকে।
- বিষটোপ তৈরির পর ৪-৫ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করে তা ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে তৈরি বিষটোপ ব্যবহার করতে হবে।
- সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ কুমড়া জাতীয় ফসলের জমিতে ১২ মি. দুরে দূরে স্থাপনকরতে হবে।
খ) পামকিন বিটল
ক্ষতির ধরন:
পূর্ণাঙ্গ পোকা চারা গাছের পাতায় ছিদ্র করে খায়। কীড়া গাছের গোড়ায় মাটিতে বাস করে এবং গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে, বড় গাছ অনেক সময় মারা যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- চারা আক্রান্ত হলে সকালের দিকে হাতদিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে।
- ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার পরিচছন্ন রাখতে হবে।
- চারা অবস্থায় ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমণ থেকে গাছ বেঁচে যায়।
- আক্রমণের হার বেশী হলে চারা গাজানোর পর প্রতি মাদার চারদিকে মাটিতে চারা প্রতি ২-৫ গ্রাম অনুমোদিত দানাদার কীটনাশক যেমন ফুরাডান/বাসুডিন/ডায়াজিনন – ৫ অথবা ১০ জি) মিশিয়ে গোড়ায় পানি দিতে হবে।
- প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সেভিন ৮০ ডব্লিউ পি/কার্বারিল-৮৫ ডব্লিউটি মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
গ) এপিল্যাকনা বিটল
ক্ষতির ধরন:
পাতায় সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে এবং আক্রান্ত পাতাগুলো বিবর্ণের মত দেখায়, পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে এবং গাছ পাতাশূন্য হতে পারে।
প্রতিকার:
প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম কার্বারিল-৮৫/সেভিন ৮০ ডব্লিউপি অথবা ২ মিলি সুমিথিয়ন/ফলিথিয়ন-৫০ইসি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ঘ) জাব পোকা
ক্ষতির ধরন:
জাব পোকা দলবদ্ধভাবে পাতার রস চুষে খায়। ফলে বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে, পাতা বিকৃত হয়ে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং পাতা নিচের দিকে কুঁকড়িয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে।
- নিম বীজের দ্রবণ কেজি পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবান গুলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুঁড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়।
- লেডীবার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ পোকা ও কীড়া এবং সিরফিড ফ্লাই-এর কীড়া জাব পোকা খেয়ে প্রাকৃতিকভাবে দমন করে। সুতরাং উপরোক্ত বন্ধু পোকাসমূহ সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়।
- আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি. হারে অথবা পিরিমর ৫০ ডিপি প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
[সূত্র: বিএআরআই]