বর্তমানে বাংলাদেশে অপ্রধান ফসল হিসেবে চীনার চাষ করা হয়ে থাকে। অনুর্বর মাটিতে ও চরাঞ্চলে এ ফসলটি বেশি চাষ হয়ে থাকে।
খরা বা বন্যার পর কৃষি উৎপাদন পুনর্বাসন কার্যক্রমে চীনা যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে। চীনা দ্বারা খিচুড়ি, পায়েশ, মোয়া, নাড়ু ও পিঠা তৈরি করা যায়।
(১) চীনার ফসলের উন্নত জাত ও বৈশিষ্ট্য
তুষার:
চীনার তুষার জাতটি ১৯৭২ সালে সুষাইট মিলেট নামে ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে আনা হয় এবং পরবর্তীকালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৮৯ সালে তুষার নামে অনুমোদন লাভ করে।
- এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল, আগাম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন।
- তুষার গাছের উচ্চতা মাঝারি, ৫-৬ টি কুশি বিশিষ্ট শীষ আকারে বেশ লম্বা ও শীষে বীজ গুচ্ছাকারে থাকে।
- বীজের রং হালকা ঘিয়ে।
- হাজার দানার ওজন ৪.৫০-৪.৭৫ গ্রাম।
- গাছ শক্ত, সহজে হেলে পড়ে না।
- স্থানীয় জাতের চেয়ে তুষারের ফলন শতকরা ৩৫-৪০% বেশি।
- তুষার স্থানীয় জাতের চেয়ে ৯-১০ দিন আগে পাকে, ফলন প্রতি হেক্টরে ২.৫-৩.০ টন।
(২) চীনা ফসলের চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
মাটি:
পানি জমে না এমন বেলে দোআঁশ মাটি চীনা চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
বপনের সময়:
মধ্য-কার্তিক থেকে পৌষ মাস (নভেম্বর থেকে মধ্য-জানুয়ারি)।
বীজের হার:
চীনা বীজ ছিটিয়ে এবং সারিতে উভয় পদ্ধতিতেই বোনা যায়। ছিটিয়ে বুনলে হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ১৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সারিতে বীজ বুনলে ২ সারির মাঝে দূরত্ব হবে ২০-৩০ সেমি। সারিতে চারা গজানোর পর ৬-৮ সেমি দূরত্বে একটি করে চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।
সারের পরিমাণ:
সাধারণত অনুর্বর জমিতে চীনার চাষ করা হলেও সার প্রয়োগ করে ফলন বাড়ানো যায়।
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
ইউরিয়া | ১৩০-১৭০ কেজি |
টিএসপি | ১০০-১২৫ কেজি |
এমওপি | ৮০-৯০ কেজি |
জিপসাম | ৪৫-৫৫ কেজি |
জিংক সালফেট | ৩-৪ কেজি |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
সেচ বিহীন চাষে সম্পূর্ণ সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু সেচের ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
পানি সেচ:
মাটিতে রসের অভাব হলে ১-২টি হালকা সেচ দেওয়া যেতে পারে।
সংগ্রহ:
শীষ খড়ের রং ধারণ করলে তখন বুঝতে হবে ফসল কাটার সময় হয়েছে।
রোগবালাই:
চীনার এ জাতটিতে সাধারণত রোগবালাই দেখা যায় না। তাই দমন ব্যবস্থাও প্রযোজ্য নয়।
পোকামাকড়:
চীনায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। পোকার আক্রমণ দেখা দিলে আক্রমণের ব্যাপকতা বুঝে কার্বোফুরান ৫ জি (তারপোকার ক্ষেত্রে) জাতীয় দানাদার কীটনাশক (যেমন ফুরাডান, ব্রিফার ইত্যাদি) হেক্টর প্রতি ১৮ কেজি হারে বীজ বপনের সময় প্রয়োগ করতে হবে এবং কাটুই পোকার জন্য প্রতি লিটার পানির সাথে ৫ মিলি ক্লোরোপাইরিফস ২০ ইসি জাতীয় কীটনাশক (ডারসবান/পাইরিফস/অন্য নামের) মিশিয়ে চারাগাছগুলোর গোড়ায় মাটি ভিজিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে দিয়ে এ পোকার আক্রমণ কমানো যায়।
[সূত্র: বিএআরআই]