জামরুল বেশ রসালো এবং হালকা মিষ্টি স্বাদযুক্ত ফল। গ্রীষ্মকালে এর কদর বেশি।
এটি একটি ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল। জামরুল বহুমূত্র রোগীর তৃষ্ণা নিবারণে উপকারী।
(১) জামরুল ফলের জাত পরিচিতি
ক) বারি জামরুল-১
‘বারি জামরুল-১’ জাতটি প্রতি বছর ফলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। এ জাতটি বাংলাদেশে চাষের জন্য ১৯৯৭ সালে অনুমোদিত হয়।
- এ জাতের পাকা ফল দেখতে আকর্ষণীয় মেরুন বর্ণের এবং খেতে সুস্বাদু।
- এ জাতের জামরুল আঁশবিহীন ও মধ্যম রসালো।
- ফুল আসার সময় মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-চৈত্র (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) এবং ফল আহরণের সময় মধ্য-চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) মাস।
- গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ১১০০-১৪০০টি।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ২০ টন।
- ফল চুঙ্গাকৃতির হয়।
- ফলের ওজন ৩৪-৪৫ গ্রাম।
- ফলের শাঁস সবুজাভ সাদা।
- প্রায় আঁশহীন, মধ্যম মিষ্টি (টিএসএস ৬.৫%), শাঁস ফলের ৯৭%।
- ফলের ত্বক মসৃণ।
- বীজ খুব ছোট ও হালকা।
- জামরুলের এ জাতটি সারা দেশে চাষের জন্য উপযোগী।
খ) বারি জামরুল-২
অধিকাংশ জামরুল বছরে একবার ফল প্রদান করে থাকে। কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম জামরুলের একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে জাতটি বছরে তিনবার ফল প্রদান করে থাকে যা ‘বারি জামরুল-২’ নামে জাতীয় বীজবোর্ড কর্তৃক নিবন্ধন প্রাপ্ত হয়েছে।
- ‘বারি জামরুল-২’ নিয়মিত প্রচুর ফল উৎপাদনকারী উন্নত জাত।
- গাছ মাঝারী, অত্যধিক ঝোপালো এবং বছরে ৩ বার ফল দেয়।
- মধ্য-ফাল্গুন, মধ্য-বৈশাখ এবং আষাঢ় মাসের প্রথম ভাগে ‘বারি জামরুল-২’ হতে ফল আহরণ করা যায়।
- ফল চুঙ্গাকৃতির, পাকা ফল আকর্ষণীয় মেরুন বর্ণের এবং খেতে সুস্বাদু, রসাল ও মিষ্টি (টিএসএস ৭%)।
- ফলের গড় ওজন ৪০ গ্রাম, ভক্ষণযোগ্য অংশ ৯৮%।
- গাছপ্রতি ২,০০০-২,৫০০টি ফল হয়।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ২০-২৫ টন।
- জাতটি দেশের সর্বত্র চাষের উপযোগী।
গ) বারি জামরুল-৩
- নিয়মিত ফলদানকারী, উচ্চফলনশীল জাত।
- পরিপক্ক ফলের রং আকর্ষণীয় লালচে খয়েরী।
- ফল ঘণ্টাকৃতি, ফলের শাঁস আটশাটে, সাদা, কচকচে, খেতে খুবই মিষ্টি, টিএসএস ১২%।
- ফল সংগ্রহের সময় এপ্রিল-মে।
- প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৫৯ গ্রাম, ফলন ৬.৬ টন/হেক্টর।
(২) জামরুল ফল চাষের পদ্ধতি
চারা তৈরি: সাধারণত শাখা কলম ও গুটি কলমের মাধ্যমে জামরুলের বংশ বিস্তার করা হয়।
চারা রোপণ: মধ্য-জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য-আষাঢ় (জুন) মাসে ১ ⨉ ১ ⨉ ১ মিটার গর্ত করে তা ৩ সপ্তাহ উন্মুক্ত রাখতে হবে। তার পর ১০-১৫ কেজি পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ২৫০ গ্রাম এমওপির মিশ্রণ প্রতি গর্তে প্রয়োগ করতে হবে এবং কমপক্ষে এক সপ্তাহ পর চারা লাগাতে হবে। সাধারণত বাড়ির আঙ্গিনায় ২/১টি জামরুলের চারা লাগানো হয়। চারা ৫-৬ মিটার দূরে লাগাতে হবে।
সারের পরিমাণ: বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি গাছের জন্য সারের পরিমাণ নিম্নরূপ হবে।
গাছের বয়স | জৈব সার (কেজি) | ইউরিয়া (গ্রাম) | টিএসপি (গ্রাম) | এমওপি (গ্রাম) |
১-৩ | ১৫-২০ | ২০০-২৫০ | ২০০-২৫০ | ২০০-২৫০ |
৪-৭ | ৪৫-৬০ | ৬০০-৭৫০ | ৬০০-৭৫০ | ৬০০-৭৫০ |
৭-১০ | ৭০-৮০ | ৮০০-১০০০ | ৮০০-১০০০ | ৮০০-১০০০ |
সার প্রয়োগ: সবটুকু সার দুই ভাগ করে মধ্য-বৈশাখ থেকে মধ্য-আষাঢ় (মে-জুন) ও মধ্য-ভাদ্র থেকে মধ্য-কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে ২ বার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের চতুর্দিকে বৃত্তাকার নালা করে নালায় সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর নালা মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে।
পরিচর্যা: বছরে ২ বার গাছের গোড়ার মাটি হালকাভাবে কুপিয়ে দিতে হবে। কলমের গাছের নিচের দিকের কিছু শাখা-প্রশাখা কেটে দিতে হবে। খরা মৌসুমে গাছে ২-৩ বার সেচ দেওয়া ভাল।
[সূত্র: বিএআরআই]