(১) ঝিঙ্গার জাত পরিচিতি
ক) বারি ঝিঙ্গা-১
- আকর্ষণীয় সবুজ রঙের মাঝারী লম্বা ফল।
- ফলের ভক্ষণযোগ্য অংশ বেশ নরম হয়ে থাকে।
- প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১২৫ গ্রাম।
- জাতটি ভাইরাসজনিত রোগ সহনশীল।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ১৬-২০ টন।
- খরিফ-১ ও খরিফ-২ মৌসুমে এ জাতটি বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ উপযোগী।
- ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
- ১৭-২০ দিনের চারা মাঠে লাগানো হয়।
- জীবনকাল ১২০-১৪০ দিন।
খ) বারি ঝিঙ্গা-২
- উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ ও পোকামাকড় সহনশীল।
- আকর্ষণীয় সবুজ রঙের ফলের দৈর্ঘ্য ২৬-২৭ সেমি লম্বা।
- প্রতিটি গাছে গড়ে ৪৫ টি ফল ধরে।
- বীজবপনের ৫৫-৬০ দিন পর ফল তোলা যায়।
- গড় ফলন ২০-৩০ টন/হেক্টর।
(২) ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি বর্ণনা
ক) জলবায়ু ও মাটি
- দীর্ঘ সময়ব্যাপী উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং প্রচুর সূর্যালোক থাকে এমন এলাকা ঝিঙ্গা চাষের জন্য উত্তম।
- সুনিষ্কাশিত উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ মাটি ঝিঙ্গার সফল চাষের জন্য উত্তম।
খ) বীজ বপনের সময়
ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
গ) বীজ হার
হেক্টর প্রতি ৩-৪ কেজি বা শতাংশ প্রতি ১২-১৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
ঘ) জমি নির্বাচন এবং তৈরি
- ঝিঙ্গা চাষে সেচ ও নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
- গাছের শিকড় বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত উত্তমরূপে তৈরি করতে হয়। এ জন্য জমিকে প্রথমে ভাল ভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন বড় ঢিলা এবং আগাছা না থাকে।
ঙ) বেড তৈরি
- বেডের উচ্চতা ১৫-২০ সেমি, প্রস্থ ১.২ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামত নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে।
- এরূপ পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি ব্যাসের সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে এবং ফসল পরিচর্যার সুবিধার্থে প্রতি দুবেড পর পর ৩০ সেমি প্রশস্ত নালা থাকবে।
চ) মাদা তৈরি ও চারা রোপণ
- মাদার ব্যাস ৫০ সেমি, গভীরতা ৫০ সেমি এবং তলদেশ ৫০ সেমি হবে।
- ৬০ সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা সংলগ্ন উভয় বেডের কিনারা হইতে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে।
- প্রতি বেডে এক সারিতে ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা লাগাতে হবে।
- চারাগুলো রোপণের আগের দিন বিকালে পানি দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। পরের দিন বিকালে চারা রোপণ করতে হবে।
- মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে।
- পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর বেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে।
- চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।
জ) সেচ দেওয়া
ঝিঙ্গা গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় বলে তখন সবসময় পানি সেচের প্রয়োজন নাও হতে পারে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ সময় থেকে মে মাস পর্যন্ত খুব শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। তখন অনেক সময় কোন বৃষ্টিই থাকে না। উক্ত সময়ে ৫-৬ দিন অন্তর নিয়মিত পানি সেচের প্রয়োজন হয়।
ঝ) সারের মাত্রা ও প্রয়োগ প্রদ্ধতি
(প্রতি শতকে ১২ টি মাদা ধরে হিসাব করা হয়েছে)
মাদায় চারা রোপণের পূর্বে সার দেয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। অতঃপর মাটিতে “জো” এলে ৭-১০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
সারের নাম | মোট পরিমাণ (হেক্টরপ্রতি) | মোট পরিমাণ (শতাংশ প্রতি) | জমি তৈরির সময় (শতাংশ প্রতি) | মাদাপ্রতি: চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে | মাদাপ্রতি: চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর | মাদাপ্রতি: চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর | মাদাপ্রতি: চারা রোপণের ৫০-৫৫ দিন পর | মাদাপ্রতি: চারা রোপণের ৭০-৭৫ দিন পর |
পচা গোবর | ১০ টন | ৪০ কেজি | ১০ কেজি | ২৫ কেজি | – | – | – | – |
টিএসপি | ১৭৫ কেজি | ৭০০ গ্রাম | ৩৫০ গ্রাম | ৩০ গ্রাম | – | – | – | – |
ইউরিয়া | ১৭৫ কেজি | ৭০০ গ্রাম | – | – | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম |
এমপি | ১৫০ কেজি | ৬০০ গ্রাম | ২০০ গ্রাম | ২০ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | – | – | – |
জিপসাম | ১০০ কেজি | ৪০০ গ্রাম | ৪০০ গ্রাম | – | – | – | – | – |
জিংক সালফেট/দস্তা | ১২.৫ কেজি | ৫০ গ্রাম | ৫০ গ্রাম | – | – | – | – | – |
বোরাক্স/বোরিক এসিড | ১০ কেজি | ৪০ গ্রাম | ৪০ গ্রাম | – | – | – | – | – |
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট | ৬০ কেজি | ২৪০ গ্রাম | – | ২০ গ্রাম | – | – | – | – |
ঞ) বাউনি দেওয়া
ঝিঙ্গার কাঙ্খিত ফলন পেতে হলে অবশ্যই মাচায় চাষ করতে হবে। ঝিঙ্গা মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে বাজারমূল্য কমে যায়, ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হওয়ায় ফলন হ্রাস পায়।
ট) মালচিং
সেচের পর জমিতে চটা বাঁধে। চটা বাঁধলে গাছের শিকড়া লে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কাজেই প্রত্যেক সেচের পর হালকা মালচ্ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
ঠ) আগাছা দমন
চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময়ই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। এছাড়াও গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। ফলে কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যায় না।
ড) সার উপরি প্রয়োগ
চারা রোপণের পর গাছ প্রতি সারের উপরি প্রয়োগের যে মাত্রা উলেখ করা আছে তা প্রয়োগ করতে হবে।
ঢ) বিশেষ পরিচর্যা
সময়মতো গাছের গোড়ায় শোষক শাখা অপসারণ করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে।
ণ) ফল ধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ণ
ঝিঙ্গার পরাগায়ণ প্রধানত মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক পরাগায়ণের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য হেক্টর প্রতি তিনটি মৌমাছির কলোনী স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়াও কৃত্রিম পরাগায়ণ করে ঝিঙ্গার ফলন শতকরা ২০-২৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।
ত) ফসল তোলা (ভক্ষণযোগ্য পরিপক্কতা সনাক্তকরণ)
ভাল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে ২-৩ মাসব্যাপী ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের ভক্ষণযোগ্য পরিপক্কতা নিম্নরূপে যাচাই করা হয়-
- ঝিঙ্গার ফল পরাগায়ণের ৮-১০ দিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয়।
- ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে।
[সূত্র: বিএআরআই]