Skip to content

টমেটো চাষ পদ্ধতি

টমেটো চাষ পদ্ধতি

টমেটো ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি শীতকালীন সবজি। এতে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। জাতের প্রকারভেদে টমেটোতে সাধারণত ৩০৫ আইইউ ভক্ষণযোগ্য বিটা ক্যারোটিন রয়েছে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়। সবজির মধ্যে বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বরবটি, মুলা, লাউ, পটল, কচু, কুমড়া, ঢেঁড়স, লালশাক, ডাঁটা, পুঁইশাক, পালংশাক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

রবি বা শীত মৌসুম অধিকাংশ সবজি চাষের অনুকূল হওয়ায় মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০% সবজি এ মৌসুমে হয়।

বাংলাদেশে হেক্টরপ্রতি সবজির ফলন উন্নয়নশীল দেশসমূহের চেয়ে কম। উন্নত জাতের অভাব, রোগ ও পোকার আক্রমণ, প্রতিকূল আবহাওয়া যেমন অতিবৃষ্টি, খরা ও বন্যা, উন্নত বীজের অভাব ইত্যাদি সবজি চাষের প্রধান অন্তরায়।

টমেটো ফসল
টমেটো ফসল

বর্তমানে উৎপাদিত সবজি দেশের মোট চাহিদার মাত্র ২৫% সরবরাহ করতে পারে। বিদেশে সবজি রপ্তানির সুযোগ থাকায় সবজির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য বিএআরআই সবজির কিছু লবণাক্ত সহিষ্ণু জাত ও চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে যা দূর্যোগ সংঘটিত হলে দূর্যোগ উত্তর ক্ষতি পূরণ সম্ভব হবে।

(১) উচ্চ ফলনশীল টমেটোর জাতের নাম ও পরিচিতি

ক) বারি টমেটো-২ (রতন)

‘বারি টমেটো-২’ জাতটি বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়।

বারি টমেটো-২ এর ফসল
বারি টমেটো-২ এর ফসল
  • গাছের উচ্চতা ৭৫-৮০ সেমি।
  • ফল গোলাকার। ফলের ওজন ৮৫-৯০ গ্রাম। প্রতিটি গাছে ৩০-৩৫টি ফল ধরে। গাছপ্রতি ফলন ২.০-২.৫ কেজি।
  • চারা লাগানোর ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ১ম বার এবং প্রায় ২০ দিন পর্যন্ত ২-৩ বার ফল সংগ্রহ করা যায়।
  • এ জাতের ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে।
  • জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন হেক্টরপ্রতি ৮০-৮৫ টন হয়।
  • ‘বারি টমেটো-২’ জাত বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ করা যায়।

খ) বারি টমেটো-১১ (ঝুমকা)

AVRDC হতে প্রাপ্ত জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘বারি টমেটো-১১’ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।

বারি টমেটো-১১ এর ফসল
বারি টমেটো-১১ এর ফসল
  • গাছ লম্বাকৃতির ও কম ঝোপালো। ফলের আকার ছোট।
  • ফলের ওজন ৮-১০ গ্রাম। প্রতি গুচ্ছে ১৫-২০টি ফল আঙ্গুরের মত থোকায় থোকায় ধরে। গাছপ্রতি ১৮০-২০০টি ফল ধরে এবং গাছপ্রতি ফলন প্রায় ১ কেজি।
  • চারা লাগানোর ৭০-৭৫ দিন পর ফল পাকতে শুরু করে এবং মাসাধিককাল ফল সংগ্রহ করা চলে।
  • বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এই জাতটি চাষ করা যায়।
  • চৈত্র-কার্তিক মাসে এ জাতের চারা রোপণ করা হয়।
  • জীবনকাল ১০০-১১০ দিন।
  • ফলন শীত মৌসুমে ৩৫-৪৫ টন/হেক্টর এবং গ্রীষ্মম মৌসুমে ২৫-২২ টন/হেক্টর।
  • সারা বছর চাষাবাদযোগ্য।
  • ফল অধিক মিষ্টি।
  • সাধারণ তাপমাত্রায় দুই সপ্তাহ ফল সংরক্ষণ করা যায়।
See also  অল্টারনেট ফারো সেচ পদ্ধতিতে টমেটো ও আলু চাষ

গ) বারি টমেটো-১৪

বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় আবহাওয়ায় উৎপাদন উপযোগী জাত ২০০৭ সালে অনুমোদিত হয়। আগাম এবং শীত পরবর্তী সময়ের জন্য অনুমোদিত।

বারি টমেটো-১৪ এর ফসল
বারি টমেটো-১৪ এর ফসল
  • আকর্ষণীয় লাল মাংসল এবং বড় গোলাকার ফল (৯০-৯৫ গ্রাম)।
  • দীর্ঘ সময় সংগ্রহের উপযোগী (৪৫-৬০ দিন)।
  • অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধী।
  • ফলন ৯০-৯৫ টন/হেক্টর।

ঘ) বারি টমেটো-১৫

২০০৯ সালে সারা দেশে চাষপোযোগী জাতটি অনুমোদন পায়।

বারি টমেটো-১৫ এর ফসল
বারি টমেটো-১৫ এর ফসল
  • উচ্চ ফলনশীল শীতকালীন জাত। ফল অনেকটা ডিম্বাকৃতির হয়। ফলে বীজের সংখ্যা অনেক কম।
  • প্রতিটি গাছে গড়ে ৪০-৪৫টি ফল ধরে। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৬৫-৭০ গ্রাম।
  • চারা লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে এবং প্রায় ২৫-৩০ দিন ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়।
  • ফলের ত্বক পুরু এবং দৃঢ় প্রকৃতির বিধায় অধিককাল সংরক্ষণ করা যায়।
  • জাতটি হলুদ পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ সহনশীল।
  • জীবনকাল ১০০-১১০ দিন।
  • ফলন ৮০-৮৫ টন/হেক্টর।

ঙ) বারি টমেটো-১৬

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষপোযোগী এ জাতটি ২০১৫ সালে অনুমোদন পায়।

বারি টমেটো-১৬ এর ফসল
বারি টমেটো-১৬ এর ফসল
  • উচ্চফলনশীল শীতকালীন জাত। ফল গাঢ় লাল, অনেকটা অর্ধ গোলাকৃতির, তবে ফলে বীজের সংখ্যা অনেক কম।
  • প্রতিটি গাছে গড়ে ৫১-৫৩ টি ফল ধরে। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৭৫-৮০ গ্রাম।
  • চারা লাগানোর ৬০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে এবং প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়।
  • ফলের ত্বক পুরু এবং দৃঢ় প্রকৃতির বিধায় অধিককাল সংরক্ষণ করা যায়।
  • এ জাতটি হলুদ পাতা মোড়ানো ভাইরাস রোগ সহনশীল।
  • ফলন ৮৫-৯০টন/হেক্টর।

চ) বারি টমেটো-১৭

উচ্চ ফলনশীল ভাইরাস প্রতিরোধী জাত। এটি গত ২০১৫ সালে মুক্তায়িত হয়।

বারি টমেটো-১৭ এর ফসল
বারি টমেটো-১৭ এর ফসল
  • ৪৫-৪৭ দিনে প্রথম ফুল আসে, ফল বড় আকারের লম্বাটে, লাল রঙের, টিএসএস ৪.৪৫%, যুক্ত আট প্রকোষ্ট (locule) বিশিষ্ট ঘন ও দৃড় মাংসল ফল যার ১০০% ভক্ষণযোগ্য।
  • ফলের গড় ওজন ১৮০-১৯০ গ্রাম। প্রতি গাছে ২৩-২৬ টি ফল ধরে।
  • চারা লাগানোর ৬০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে এবং প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়।
  • ফলের ত্বক পুরু এবং দৃঢ় প্রকৃতির বিধায় অধিককাল সংগ্রহ করা যায়।
  • এ জাতটি ব্যাক্টেরিয়াল উইল্ট এবং হলুদ পাতা মোড়ানো ভাইরাস রোগ সহনশীল।

ছ) বারি টমেটো-১৮

উচ্চ ফলনশীল এবং ভাইরাসরোগ ও পোকামাকড় সহনশীল। এ জাতটি ২০১৫ সালে অবমুক্ত করা হয়।

বারি টমেটো-১৮ এর ফসল
বারি টমেটো-১৮ এর ফসল
  • প্রতিটি গাছে গড়ে ফলের সংখ্যা ৩৭টি।
  • এতে লাইকোপেন lycopene এর পরিমাণ বেশি।
  • বীজ বপনের ৮৫-৯০ দিন পর ফসল তোলা যায়।
  • গড় ফলন ৭০-৮০ টন/হেক্টর।

জ) বারি টমেটো-১৯

বারি টমেটো-১৯ এর ফসল
বারি টমেটো-১৯ এর ফসল
  • উচ্চ ফলনশীল এ জাত বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত ১ম প্রক্রিয়াজাত গুণ সম্পন্ন। এ জাতটি ২০১৫ সালে মুক্তায়িত হয়।
  • ৪৪-৪৫ দিনে প্রথম ফুল আসে, ফল মাঝারি আকারের লম্বাটে, লাল রঙের, যুক্ত তিন প্রকোষ্ট (locule) বিশিষ্ট মাংসল ফল যার ১০০% ভক্ষণযোগ্য।
  • ফলের গড় ওজন ৬০-৬১ গ্রাম। প্রতি গাছে ৫৮-৬২টি ফল ধরে।
  • গড় ফলন প্রায় ৬৫-৬৭ টন/হেক্টর।
  • প্রক্রিয়াজাতকরণ টমেটো জাত হিসেবে এটি অত্যন্ত ভালো।
See also  টমেটো চাষ পদ্ধতি

ঝ) বারি টমাটো-২০

বারি টমেটো-২০
বারি টমেটো-২০
  • বারি টমেটো-২০ চেরি চমেটোর একটি জাত। জাতটি বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। এতে ভিটামিন এ আছে ২২৭ মাইক্রোগ্রাম/১০০ গ্রামে।
  • ফল দ্বি-প্রকোষ্ট বিশিষ্ট মাংশাল গাঢ় হলুদ বর্ণের। ফলের গড় ওজন ১৬-১৭ গ্রাম।টিএসএস ৬.২৪%। প্রতি গাছে ২০০-২২০ টি ফল ধরে।
  • দীর্ঘ সময় প্রায় ৪৫-৫০ দিন পর্যন্ত ফল আহরন করা যায়। প্রতি গাছ থেকে ৫-৬ কেজি টমেটো পাওয়া যায়।
  • হেক্টর প্রতি ফলন ৮০-৮৫ টন। এ জাতটি স্কুল গার্ডেনিং এর জন্য বিশেষ উপযোগী।

ঞ) বারি টমাটো-২১

বারি টমাটো ২১ জাতটি চাষাবাদের জন্য ২০১৮ সালে অবমুক্ত করা হয়। জাতটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে। এ জাতের জার্মপ্লাজম World Vegetable Center, তাইওয়ান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

বারি টমেটো-২১
বারি টমেটো-২১
  • টমাটোর এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং শীতকালে চাষ উপযোগী। গাছে আকর্ষণীয় লাল বারি টমেটো-২১ রং এর মাঝারী আকারের Oblong ফল ধরে।
  • প্রতি গাছে ৪২-৪৬ টি ফল ধরে। প্রতিটি ফলের ওজন ৯০-৯৩ গ্রাম।
  • সাধারণত বীজ বপনের ৯০-৯৫ দিন পর থেকে টমাটো পাকতে শুরু করে এবং ফল তোলা যায়। এ জাতের টমাটো প্রায় ১ মাস ধরে সংগ্রহ করা যায়। জীবনকাল ১২০-১৫০ দিন।
  • জাতটি ভাইরাস জনিত রোগ এবং ব্যাকটেরিয়া ও ফিউজেরিয়াম জনিত ঢলে পড়া রোগের প্রতি সহনশীল।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৮৪-৮৫ টন হয়।

(২) টমেটো চাষ পদ্ধতির বিস্তারিত বর্ণনা

ক) জলবায়ু ও মাটি

  • টমেটো বাংলাদেশে শীতকালীন ফসল। উচ্চ তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা টমেটো গাছে রোগ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। আবার উচ্চ তাপমাত্রা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ফুল ঝরে পড়ে।
  • রাতের তাপমাত্রা ২৩০ সে. এর নিচে থাকলে তা গাছে ফুল ও ফল ধারণের জন্য বেশি উপযোগী। গড় তাপমাত্রা ২০-২৫০ সে. টমেটোর ভাল ফলনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
  • আলো-বাতাস যুক্ত ঊর্বর দোঁআশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে দোঁআশ থেকে এঁটেল দোঁআশ সব মাটিতেই টমেটো ভাল জন্মে।
  • মাটির পিএইচ (pH) ৬ – ৭ হলে ভাল হয়। মাটির অম্লতা বেশি অর্থাৎ ঢ়ঐ কম (৬ এর নীচে) হলে জমিতে চুন প্রয়োগ করা উচিত।

খ) জমি তৈরি

  • টমেটোর ভাল ফলন অনেকাংশেই জমি তৈরির উপর নির্ভর করে। তাই ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  • মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ১ মিটার চওড়া ও ১৫-২০ সেমি উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া নালা করতে হবে যাতে পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধা হয়।

গ) চারা রোপণ

  • চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন অথবা ৪-৬ পাতা বিশিষ্ট হলে জমিতে রোপণ করতে হবে।
    এক মিটার চওড়া বেডে দুই সারি করে চারা লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং সারির উপরে চারা থেকে চারা ৪০ সেমি দূরত্বে লাগাতে হবে।
  • বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ জন্য চারা তোলার আগে বীজতলার মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
  • বিকেলের পড়ন্ত রোদে চারা রোপণ করাই উত্তম এবং লাগানোর পর গোড়ায় হালকা সেচ প্রদান করতে হবে।
See also  গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ড্রিপ ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে সার এবং পানি ব্যবস্থাপনা

ঘ) সার প্রয়োগ (কেজি/শতাংশ)

সারের নামসার দেয়ার সময়কম ঊর্বর জমিমধ্যম ঊর্বর জমিবেশি ঊর্বর জমি
ইউরিয়া:
বেছাল
১ম উপরি প্রয়োগচারা লাগানোর ১০ দিন পর০.৩৬০.২৪০.১২
২য় উপরি প্রয়োগচারা লাগানোর ২৫ দিন পর০.৩৬০.২৪০.১২
৩য় উপরি প্রয়োগচারা লাগানোর ৪০ দিন পর০.৩৬০.২৪০.১২
টিএসপি:
বেছালজমি তৈরির সময়০.৯১০.৬১০.৩০
এমপি:
বেছালশেষ চাষের সময়০.১৭০.১১০.০৬
১ম উপরি প্রয়োগচারা লাগানোর ২৫ দিন পর০.১৭০.১১০.০৬
২য় উপরি প্রয়োগচারা লাগানোর ৪০ দিন পর০.১৭০.১১০.০৬
বোরিক এসিড:জমি তৈরির সময়০.০৩০.০২
জিপসাম:জমি তৈরির সময়০.৫৪০.৩৬০.১৮
জিংক সালফেট:জমি তৈরির সময়০.০৩০.০২
গোবর:
বেছালজমি তৈরির সময়৬০৪০২০

ঙ) সেচ ও নিষ্কাশন

  • চারা রোপণের ৩-৪ দিন পর পর্যন্ত হালকা সেচ ও পরবর্তীতে প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে টমেটো চাষের জন্য ঘন ঘন সেচের প্রয়োজন হয়।
  • বর্ষা মৌসুমে তেমন একটা সেচের প্রয়োজন হয় না। টমেটো গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সেচ অথবা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য নালা পরিমিত চওড়া (৩০-৪০ সেমি) এবং এক দিকে মৃদু ঢালু হওয়া বাঞ্চণীয়।

চ) মালচিং

প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরিভাগের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।

ছ) আগাছা দমন

টমেটোর জমিকে প্রয়োজনীয় নিড়ানী দিয়ে আগছামুক্ত রাখতে হবে।

জ) সার উপরি প্রয়োগ

সময়মতো বর্ণিত মাত্রায় প্রয়োজনীয় সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

ঝ) বিশেষ পরিচর্যা

১ম ফুলের গোছার ঠিক নিচের কুশিটি ছাড়া সব পার্শ্ব কুশি ছাঁটাই করতে হবে। গাছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকনা দিতে হবে।

ঞ) ফসল তোলা (পরিপক্কতা সনাক্তকরণ)

ফলের ঠিক নিচে ফুল ঝরে যাওয়ার পর যে দাগ থাকে ঐ স্থান থেকে লালচে ভাব শুরু হলেই ফল সংগ্রহ করতে হবে বাজার জাতকরণের জন্য। এতে ফল অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

(৩) গ্রীষ্ম ও বর্ষায় টমেটো চাষ পদ্ধতি

গ্রীষ্মকালে টমেটোর ফুটন্ত ফুলে হরমন প্রয়োগ
গ্রীষ্মকালে টমেটোর ফুটন্ত ফুলে হরমন প্রয়োগ
  • গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে টমেটো চাষ করার জন্য বারি টমেটো-৪ ও বারি টমেটো-৫ হরমোন সহযোগে। অপরদিকে, বারি হাইব্রিড টমেটো-৩, বারি হাইব্রিড টমেটো-৪, বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ এবং বারি হাইব্রিড টমেটো-১০ জাতসমূহ হরমোন প্রয়োগ ছাড়া চাষের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে।
  • পলিথিনের ছাউনিতে এসব জাতের আবাদ করতে হয়। ২৩০ সেমি চওড়া (মাঝে ৩০ সেমি নালা সহ) ২টি বেডে লম্বালম্বিভাবে একটি করে ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাউনির দুপাশে উচ্চতা ১৩৫ সেমি ও মাঝখানের উচ্চতা ১৮০ সেমি হয়ে থাকে।
  • চারা লাগানোর পূর্বেই জমিতে নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে ছাউনি দিতে হয়। ছাউনির জন্য বাঁশ, স্বচছ পলিথিন, নাইলনের দড়ি ও পাটের সুতলি প্রয়োজন। পলিথিন যাতে বাতাসে উড়ে না যায় সেজন্য ছাউনির উপর দিয়ে উভয় পার্শ্ব থেকে আড়াআড়ি ভাবে দড়ি পেঁচানো হয়ে থাকে।
  • পাশাপাশি দুই ছাউনির মাঝে ৫০ সেমি চওড়া নালা রাখতে হবে যাতে ছাউনি থেকে নির্গত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনসহ বিভিন্ন পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়।
  • জমি থেকে বেডের উচ্চতা ২০-২৫ সেমি হতে হবে। প্রতিটি ছাউনিতে ২টি বেডে ৪টি সারি থাকবে। ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা প্রতি বেডে ২ সারি করে রোপণ করতে হবে।
  • গ্রীষ্মকালীন টমেটো গাছে প্রচুর ফুল ধরলেও উচ্চ তাপমাত্রা পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায়। কাজেই আশানুরূপ ফলন পেতে হলে ‘টমাটোটোন’ নামক কৃত্রিম হরমোন ২০ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছোট সি নযন্ত্রের সাহায্যে সপ্তাহে দুই বার শুধুমাত্র সদ্য ফোটা ফুলে স্প্রে করতে হয়। তবে নুতন উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতসমূহে হরমোন প্রয়োগ ছাড়াই লাভজনক ফলন পাওয়া যায়।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts