(১) তৈকর কি?
তৈকর দেশিয় আদি ফল। বাংলাদেশের সিলেট জেলায় তৈকরের চাষ হয় এবং এ অঞ্চলে ফলটির যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায়ও এ ফলের চাষ সম্ভব।
ফল উপ-বৃত্তাকার ও বড়। কাঁচা ও পাকা ফলের রং যথাক্রমে সবুজ এবং হলুদ।
তৈকরের ঔষধী গুণাগুণ রয়েছে।
তৈকর সিলেট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এযাবত উৎপাদিত হয়ে আসছে। এটি একটি অপ্রধান টক জাতীয় ফল যা তরকারীতে এবং আচার, জ্যাম, জেলী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
(২) তৈকরের জাত
বারি তৈকর-১:
বারি তৈকর-১ জাতটি ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।
- বছরে ২ বার ফল দেয়।
- গাছ পিরামিড আকৃতির, বড় এবং গাছে সারা বছর বড় বড় সবুজ পাতা থাকে।
- প্রথমবার ফুল আসে মধ্য-শ্রাবণ থেকে মধ্য-আশ্বিন (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাসে এবং দ্বিতীয়বার ফুল আসে মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি) মাসে।
- প্রথমবার ফল সংগ্রহের উপযোগী হয় মধ্য-কার্তিক থেকে মধ্য-পৌষ (নভেম্বর-ডিসেম্বর) মাসে এবং দ্বিতীয়বার ফল সংগ্রহের উপযোগী হয় মধ্য-চৈত্র
থেকে মধ্য জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) মাসে। - ফল চ্যাপ্টা-গোলাকৃতির, আকারে বড় (৭০০-৭৫০ গ্রাম)।
- প্রতিটি ফলের দৈর্ঘ্য ১০.৩ সেমি এবং প্রস্থ ৯.২ সেমি।
- কচি ফলের রং সবুজ, পাকা ফলের রং হলুদ।
- ফলপ্রতি বীজের সংখ্যা ৪-৭টি।
- ফলের স্বাদ যথেষ্ট টক।
- গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৩০০-৩৫০টি।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ৭০-৭৫ টন।
- বৃহত্তর সিলেট জেলায় চাষের জন্য উপযোগী।
- জাতটি রপ্তানিযোগ্য।
(৩) তৈকর ফল চাষ পদ্ধতি
মাটি: বেলে দোআঁশ থেকে পলি দোআঁশ মাটি তৈকর চাষের জন্য উত্তম। সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলের নিকাশযুক্ত অম্লীয় মাটি তৈকর উৎপাদনের জন্য সর্বোত্তম।
গর্ত তৈরি: চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে ৬ ⨉ ৬ মিটার দূরত্বে ১ ⨉ ১ ⨉ ১ মিটার আকারের গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের মাটির সাথে ১৫-২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি ও ১০০ গ্রাম জিপসাম সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে তাতে পানি দিতে হবে। হেক্টরপ্রতি ২৭৮টি চারা বা গুটির প্রয়োজন হবে।
চারা রোপণ: গর্ত তৈরির কমপক্ষে ১৫ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে। চারাটি গর্তে সোজা করে লাগাতে হবে। লাগানোর পর ঝর্ণা দিয়ে পানি সেচ, খুঁটি ও বেড়া দিতে হবে।
সারের পরিমাণ: গাছের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য সময়মতো, সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বয়সভেদে গাছপ্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হল।
গাছের বয়স (বছর) | গোবর সার (কেজি) | ইউরিয়া (গ্রাম) | টিএসপি (গ্রাম) | এমওপি (গ্রাম) |
১-২ | ৫-১০ | ২০০-৩০০ | ২০০-৩০০ | ২০০-৩০০ |
৩-৪ | ১০-১৫ | ৩০০-৪৫০ | ৩০০-৪৫০ | ৩০০-৪৫০ |
৫-১০ | ২০-২৫ | ৪৫০-৬০০ | ৪৫০-৬০০ | ৪৫০-৬০০ |
১০-১৫ | ২৫-৩০ | ৬০০-৭৫০ | ৬০০-৭৫০ | ৬০০-৭৫০ |
১৫ এর অধিক | ৩০-৪০ | ১০০০ | ১০০০ | ১০০০ |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি: উল্লিখিত সার প্রতি বছর সমান তিন কিস্তিতে বর্ষার আগে ও বর্ষার পরে এবং শীতের পরে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের ডালপালা যে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তার নিচের জমি কোদাল দিয়ে হালকা করে কুপিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত গাছের গোড়ার এক মিটার এলাকায় কোন সক্রিয় শিকড় থাকে না, তাই সার প্রয়োগের সময় এই এলাকায় সার প্রয়োগ করা উচিত নয়। পাহাড়ী অঞ্চলে ডিবলিং পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করা হলে ভূমি ক্ষয় হ্রাস পাবে।
সেচ প্রয়োগ: শুকনা মৌসুমে ১৫ দিন অন্তর পানি সেচ দেয়া উত্তম। পাহাড়ী অঞ্চলে বর্ষার শেষে মালচিং করা যেতে পারে। এতে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মনে রাখতে হবে, সার প্রয়োগের পর পানি সেচ অত্যন্ত জরুরি। জমিতে ‘জো’ না থাকলে ফুল আসার পর ও ফল মটর দানার সময় গাছে অবশ্যই পানি সেচ দিতে হবে।
ফল সংগ্রহ: বছরে সাধারণত ২ বার ফল সংগ্রহ করা হয়। পরিপক্ক অবস্থায় ফলের রং হলদে হয়।
[সূত্র: বিএআরআই]