এই পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি বলতে কি বুঝায়, ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতির সুবিধা, ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতির বর্ণনা, ধানের সাথে চিংড়ি চাষ পদ্ধতির অসুবিধা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
(১) ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি বলতে কি বুঝায়?
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ বলতে একটি ব্যবস্থাপনাকে বোঝায় যেখানে একই সময়ে একই জায়গায় ধান ও চিংড়ির চাষ করা হয়।
এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে একটি বিশেষ গভীরতায় পানি থাকে যা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত হয়।
ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ধান হলো মূখ্য ফসল আর চিংড়ি হলো গৌণ ফসল। ধান ক্ষেতের জৈব সার, রাসায়নিক সার, মাটি ও পানি মিলে প্রাকৃতিকভাবে যে পরিবেশ তৈরি হয় তা গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত পরিবেশ।
(২) ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতির সুবিধা
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষের সুবিধাগুলো নিম্নে দেওয়া হলো-
- একই জমিতে একই সাথে ধান ও চিংড়ি পাওয়া যায়।
- চিংড়ি ধানের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফেলে এবং ধানের কোনো ক্ষতি হয় না।
- কম পুজিতে ধানের সাথে চিংড়ি চাষ করা যায়।
- চিংড়ির অব্যবহৃত খাদ্য ধানের সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- চিংড়ির জন্য কম সাম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করতে হয়।
- চিংড়ির চলাফেলার কারণে ধানের দ্রুত বৃদ্ধি হয়।
- ধান ক্ষেতে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়।
- ধানের ফলনও বেশি হয় এবং মুনাফা অধিক হয়।
- ধানের জমিতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে চিংড়ির বিষ্ঠা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
- ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ফলে দুধরনের কাজের জন্য কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়।
(৩) ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতির বর্ণনা
বাংলাদেশের অধিকাংশ জমিতেই ধানের চাষ হয়। আর এসব জমির প্রায় অর্ধেক জমিতে মৌসুমী ভিত্তিতে সফলভাবে গলদা চিংড়ি চাষ সম্ভব।
সাধারণত ধান ক্ষেতে দুভাবে চিংড়ি চাষ করা হয়। যথা-
- ধানের সাথে চিংড়ি চাষ (যুগপৎ পদ্ধতি)।
- ধানের পরে চিংড়ি চাষ (পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি)।
নিম্নের ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে।
সাধারণত আমন ও বোরো মৌসুমে ধান ক্ষেতে পানি থাকে। তখন উক্ত মৌসুমে সহজেই ধানের সাথে চিংড়ি চাষ করা যায়। বছরে দু’বার এধরনের চাষ সম্ভব হয়। এদেশের হাওর ও নিচু এলাকায় ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষের সুযোগ রয়েছে।
ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করার ধাপগুলো নিম্নরূপ-
- জমি নির্বাচন: সব ধরনের জমিতে এ ধরনের চাষ সম্ভব নয়। যেসব জমিতে বছরে ৪-৬ মাস পানি থাকে সেসব জমিতে চাষ করা যায়। যে জমিতে বন্যায় পানি উঠেনা, দোআঁশ মাটি, প্রয়োজনীয় পানি সেচ দেয়ার ব্যবস্থা আছে। জমির পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি এবং কৃষকের গৃহের নিকটবর্তী সেখানে চিংড়ি চাষ কতে হবে।
- জমি প্রস্তুতকরণ: সঠিক সময়ে যথানিয়মে জমিতে চাষ ও মই দিয়ে ধান চাষের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। এতে জমি উপযুক্ত হবে। ধানের সাথে চিংড়ি চাষের সময় জমিতে সবসময় কমপক্ষে ৫-৬ ইঞ্চি পানি থাকা প্রয়োজন।
- জমিতে আইল বা বাঁধ নির্মাণ: ধান ক্ষেতের চারপাশে উঁচু করে আইল বা বাঁধ তৈরি করতে হবে যেন বন্যার সময় বাইরে থেকে পানি না ঢুকে।
- ধানের জাত নির্বাচন: বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের জাতের ধানের সাথেই চিংড়ি চাষ করা যায়। তবে উচ্চ ফলনশীল খাটো বা মাঝারি লম্বা এবং হেলে না পড়ে এমন জাতের ধানের সাথে চিংড়ি চাষ সহজ হয়।
- গর্ত খনন: জমির যে অংশ একটু ঢালু বা নিচু সে অংশে মোট জমির ৩-৪ ভাগ বা প্রতি বিঘাতে ১ শতাংশ মাটিতে ২-৩ ফুট গভীর গর্ত করতে হয়।
- পোনা মজুদ: সাধারণত ধান রোপনের ১০- ১৫ দিন পর জমিতে ৬ ইঞ্চি পানি থাকা অবস্থায় শতাংশে ১২ -১৫টি গলদা চিংড়ির পোনা ছাড়তে হয়।
- পোনা ছাড়ার সময়: সাধারণত সকালে পোনা ছাড়া হয়। পোনা ছাড়ার সময় ক্ষেতের পানির তাপমাত্রা পাত্রের পানির তাপমাত্রার সাথে মিশায়ে নিতে হয়।
- অন্যান্য ব্যবস্থাপনা: চিংড়িকে দ্রুত বৃদ্ধির করার জন্য নিয়মিত গোবর, ক্ষুদিপানা এবং চিংড়ির দেহের ওজনের ২-৩ ভাগ পরিমান চালের কুঁড়া দিতে হয়। জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না, তবে অত্যাবশ্যক হলে চিংড়ি গর্তে আটকিয়ে শুধু জমিতে ব্যবহার করতে হবে।
- চিংড়ি আহরণ: ধান কাটার পর পানি কমে গেলে চিংড়ি নর্দমা ও গর্তে চলে যাবে। তখন চিংড়ি আহরণ করতে হবে। ধান কাটার পর সেচ দিয়ে চিংড়ি রাখার সুবিধা থাকলে চিংড়ি রেখে দিয়ে চিংড়িকে বড় হবার সুযোগ দিতে হবে।
- চিংড়ি উৎপাদন বা ফলন: সাধারণত ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ করলে ৩-৪ মাসেই প্রতি হেক্টরে ১০০ -১৫০ কেজি চিংড়ি এবং ১.২-২.০ টন ধান উৎপাদিত হয়।
(৪) ধানের সাথে চিংড়ি চাষ পদ্ধতির অসুবিধা
- কোনো কোনো সময় অনেকদিন বৃষ্টি না হলে পানি শুকিয়ে গেলে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
- কখনো কখনো পানির গভীরতা চিংড়ি চাষের জন্য অনুকূল হয় না।
- বন্যা হলে আইল ভেঙ্গে চিংড়ি ভেসে যেতে পারে।
- ধানের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক চিংড়ির ক্ষতি করতে পারে।
প্রিয় খামারী বন্ধুগণ, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ধানের গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা অর্জন করলাম।
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ বলতে এমনি একটি ব্যবস্থাপনাকে বোঝায় যেখানে একই সময়ে একই জায়গায় ধান ও চিংড়ির চাষ করা হয়। এক্ষেত্রে একটি নির্ধিষ্ট সময় ধরে একটি বিশেষ গভীরতায় পানি থাকে যা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত হয়। ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ধান হলো মূখ্য ফসল আর চিংড়ি হলো গৌণ ফসল।
সাধারণত ধান ক্ষেতে দুভাবে চিংড়ি চাষ করা হয়। যেমন: ধানের সাথে চিংড়ি চাষ (যুগপৎ পদ্ধতি) এবং ধানের পরে চিংড়ি চাষ (পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি)। এখানে আমরা ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]