(১) নার্সারির পরিচয়
আমাদের বাংলাদেশে ভূমির তুলনায় অধিক জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বনজ সম্পদ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। এর ফলে আমাদের পরিবেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বনায়ন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ করা দরকার। আর যেকোনো বনায়নে প্রয়োজন সবল চারা। এ আমাদের নার্সারির উপর নির্ভর করতে হয়।
ক) নার্সারি কী, কাকে বলে?
নার্সারি হলো চারা উৎপাদন কেন্দ্র যেখানে চারা উৎপাদন করে রোপণের পূর্ব পর্যন্ত পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
খ) নার্সারির কত প্রকার?
স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে নার্সারি দুই ধরনের হয়, যথা-
- স্থায়ী নার্সারি: এ ধরনের নার্সারিতে বছরের পর বছর চারা উৎপাদন করা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকে। আমাদের বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি উভয় ব্যবস্থায় স্থায়ী নার্সারি রয়েছে। এখান থেকে উন্নত মানের চারা সরবরাহ করা হয়।
- অস্থায়ী নার্সারি: সড়ক ও জনপথ বিভাগ নতুন রাস্তা নির্মাণের পর রাস্তার দুইপাশে গাছ লাগায় এ জন্য অস্থায়ী নার্সারি স্থাপন করে। যেখানে এ রকম বাগান তৈরি করা হয় বা ব্যাপক হারে বনায়ন করা হয়, সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে নার্সারি স্থাপন করা হয়। এতে চারা পরিবহনে খরচ কম হয়। সতেজ চারা সহজে পাওয়া যায়।
মাধ্যমের উপর নির্ভর করে নার্সারিকে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়-
- পলিব্যাগ নার্সারি: এ ক্ষেত্রে চারা পলিব্যাগে উৎপাদন ও পরিচর্যা করা হয়। পলিব্যাগ সহজে নিরাপদ জায়গায় নেওয়া যায়। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে চারা রক্ষা করা যায়
- বেড নার্সারি: এ ক্ষেত্রে সরাসরি মাটিতে বেড করে চারা উৎপাদন করা হয়। অনেক সময় বেডে উৎপাদিত চারা উত্তোলন করে পলিব্যাগে স্থানান্তর করা হয়।
এছাড়া রয়েছে-
গার্হস্থ্য নার্সারি, প্রজাতিভিত্তিক নার্সারি ও ব্যবহারভিত্তিক নার্সারি।
গ) কৃষিক্ষেত্রে নার্সারির প্রয়োজনীয়তা
- রোপণের জন্য সব সময় নার্সারিতে সুস্থ, সবল ও সব বয়সের চারা পাওয়া যায়।
- নার্সারিতে সহজে চারার যত্ন নেওয়া যায়। গর্জন, শাল, তেলসুর প্রভৃতি গাছের বীজ গাছ থেকে ঝরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোপণ করতেহয়। এসব উদ্ভিদের চারা তৈরির জন্য নার্সারিই উত্তম স্থান।
- কাঁঠাল, চম্পা প্রভৃতি গাছের বীজ ফল থেকে বের করার পরই রোপণ না করলে অঙ্কুরোদগমের হার কমে যায়। এসব গাছের চারা তৈরির জন্য নার্সারির প্রয়োজন।
- অল্প শ্রমে ও কম খরচে চারা তৈরির জন্য নার্সারি উপযুক্ত স্থান।
- চারা বিতরণ ও বিপণন করতে সুবিধা হয়।
(২) নার্সারি তৈরির কৌশল
নার্সারি তৈরি করতে হলে প্রথমেই যা দরকার তা হলো সুষ্ঠু পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা নির্দিষ্ট কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে করতে হয়।
স্থায়ী নার্সারি স্থাপনকালে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে-
- নার্সারি জায়গার পরিমাণ,
- বেড়া নিৰ্মাণ,
- ভূমি উন্নয়ন,
- অফিস ও বাসস্থান,
- বিদ্যুতায়ন,
- রাস্তা ও পথ,
- সেচ ব্যবস্থা,
- নর্দমা ও পার্শ্বনালা,
- নার্সারি ব্লক,
- নার্সারি বেড, এবং
- পরিদর্শন পথ ইত্যাদি।
নার্সারির জন্য নির্বাচিত জমি উর্বর ও দোআঁশ মাটিসম্পন্ন হতে হবে। অপেক্ষাকৃত উঁচু, সমতল ও আলো বাতাস সম্পূর্ণ হতে হবে। পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকবে। মালামাল ও চারা পরিবহনে উন্নত ব্যবস্থা থাকবে।
এক বর্গমিটার (১০.৭৫ বর্গফুট) নার্সারীর বীজতলায় বেডে নিম্নলিখিত সংখ্যক চারার সংস্থান হবে-
পলিব্যাগের সাইজ | প্রতি পলিব্যাগে চারার সংখ্যা |
১৫সে.মি. x ১০ সে.মি. | ৬৫টি |
১৮ সে.মি. x ১২ সে.মি. | ৪৫টি |
২৫ সে.মি. x ১৫ সে.মি. | ২৬টি |
সিট বেডে চারা হতে চারার দুরত্ব | প্রতি বর্গমিটারে (১০.৭৫ বর্গফুটে) চারার সংখ্যা |
৫ x ১০ সে.মি | ৪০০টি |
১০ x ১২ সে.মি. | ২০০টি |
১০ x ১০ সে.মি. | ১০০টি |
নার্সারি ব্লক, বেড ও পরিদর্শন পথ-
যেখানে চারা উৎপাদন করা হবে নার্সারির সে অংশকে কয়েকটি ব্লকে ভাগ করতেমহবে।
প্রত্যেক ব্লকে ১০-১২টি লম্বালমম্বি বেড রাখতে হবে। দুই বেডের মধ্যে ২৫ সে.মি. দূরত্ব রাখতে হবে।
বিভিন্ন ব্লকের মধ্যে সুবিধামতো পরিদর্শন পথ ও পার্শ্বপরিদর্শন পথ রাখতে হবে। প্রধান পরিদর্শন পথ ২-৩ মি. এবং পার্শ্বপরিদর্শন পথ ১-২ মি. প্রস্থ হবে। নার্সারিতে প্রধান পরিদর্শন পথ দিয়ে যাতে সহজে গাড়ি চলাচল করতে পারে এমনভাবে তৈরি করতে হবে। পার্শ্বপরিদর্শন পথে যাতে সহজে চারা পরিবহন ট্রলি চলাচল করতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
(৩) পলিব্যাগে বীজ বপন ও চারা তৈরি
ক) উপকরণ
- বীজ,
- দোআঁশ মাটি,
- গোবর,
- কম্পোস্ট,
- ১৫ সে.মি. x ১০ সে.মি. আকারের পলিব্যাগ, এবং
- পানি দেওয়ার ঝাঁঝর ইত্যাদি।
খ) কাজের ধাপ
- মাটি ভেঙে গুঁড়া করে নিতে হবে।
- ৪ ভাগের ৩ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবর বা কম্পোস্ট সার ভালো করে মেশাতে হবে।
- পলিব্যাগের তলাসহ দুই সারিতে ৮টি ছিদ্র কর। ৪. পলিব্যাগে ভালো করে মাটি ভর্তি করতে হবে।
- ছায়াযুক্ত সমতল জায়গায় সারিবদ্ধভাবে পলিব্যাগগুলো সাজাতে হবে।
- মাটিভর্তি পলিব্যাগের উপরে আঙুল দিয়ে দুইটি গর্ত করো। প্রতিটি গর্তে একটি করে বীজ দিতে হবে।
- গুঁড়ামাটি দিয়ে বীজ ভালো করে ঢেকে দাও। কাবার দিয়ে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
- প্রতিদিন সকাল-বিকাল ঝাঁঝর দিয়ে পরিমিত পরিমাণ পানি দিতে হবে।
- উপরেরর ধাপসমূহ সুষ্ঠভাবে সমন্ন করা হয়ে সময় মত অঙ্কুরোদগম পক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।
[সূত্র: এনসিটিবি]