বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত বিস্তীর্ণ এলাকাকে পার্বত্য অঞ্চল বলা হয়। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান এই ৩টি জেলা নিয়ে পার্বত্য অঞ্চল গঠিত। এ অঞ্চলের মোট আয়তন ১৩,১৯১ বর্গ কিলোমিটার যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় এক দশমাংশ।
অসমতল বন্ধুর ভূ-প্রকৃতি ও অন্যান্য কারণে এ অঞ্চল মাঠ ফসল উৎপাদনের জন্য তেমন উপযোগী নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে বিভিন্ন রকম উদ্যান ফসল উৎপাদনের সম্ভবনা এখানে ব্যাপক।
বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলে ‘জুম’ চাষের যে ব্যাপক প্রচলন বিদ্যমান যা ভূমির ক্ষয়, গাছপালা নিধন সর্বোপরি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ছাড়া এ পদ্ধতিতে কাঙ্খিত ফলনও পাওয়া সম্ভব নয়। তাই অধিক ফলন ভূমির ক্ষয় রোধ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আধুনিক এবং স্থায়ী খামার ব্যবস্থা গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ৩টি গবেষণা উপকেন্দ্রের মাধ্যমে এ অঞ্চলে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গবেষণার মাধ্যমে এ অঞ্চলে চাষাবাদের উপযোগী বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাত ও উৎপাদন প্রযু্িক্ত উদ্ভাবিত হয়েছে। গবেষণা উপকেন্দ্রসমূহের মাধ্যমে এসব প্রযুক্তি কৃষক পর্যায় সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
(১) ম্যাথ মডেল
‘ম্যাথ’ হলো পাহাড়ী অঞ্চলের উপযোগী চাষাবাদের একটি মডেল যার পুরো নাম Modern Agricultural Technology in the Hills (MATH)। এই মডেল অনুসরণ করে ভূমির ক্ষয়রোধ ও মাটির ঊর্বরতা বৃদ্ধি করে একই জমিতে উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে পাহাড়ী অঞ্চলের কৃষকদের ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। এ ছাড়া, এই মডেলের মাধ্যমে ‘জুম’ চাষকে সরাসরি নিরুৎসাহিত না করে পর্যায়ক্রমে ‘জুম’ চাষ বিলুপ্ত করা সম্ভব।
‘ম্যাথ’ বাস্তবায়ন পদ্ধতি:
ধাপ-১:
জমি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘জুমি’ ফসলগুলো আবাদের ব্যবস্থা করা।
ধাপ-২:
প্রথম বৃষ্টির পর পরই ‘ম্যাথ’ মডেলের অনুসরণে দ্রুত বর্ধনশীল ফসল যেমন, পেঁপে, কলা, স্বল্পমেয়াদী পেঁয়ারা, লেবু, দীর্ঘ মেয়াদী কাঁঠাল, লিচু, আম, সফেদা, জাম্বুরা, কমলা, জাম, ইত্যাদি এবং বনজ গাছ ‘জুম’ ক্ষেতে একই সময়ে রোপণ করা।
ধাপ-৩:
ধান, মারফা, কাউন, ভুট্টা ও তিল সংগ্রহের পর পাহাড়ের ঢালভেদে ‘জুম’ ক্ষেতের মধ্যে আড়াআড়িভাবেসারিতে (Strip cultivatio) আনারস, অড়হর, ইত্যাদি ফসল রোপণ/বপন করা।
ধাপ-৪:
সময়ভেদে ‘জুমি’ ফসল সংগ্রহের পর মৌসুম ভিত্তিক (কচু, ঢেঁড়স, বরবটি, টমেটো, বেগুন ও মরিচইত্যাদি) ফসলের আবাদ করা।
ধাপ-৫:
সবজি চাষের পাশাপাশি জমি পরিষ্কার করে ‘আচ্ছাদন ক্রপ’ (Cover crop) আবাদ করা।
ধাপ-৬:
‘ম্যাথ’-এর আওতায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য কৃষক সমিতি গঠন করে Central Procurement andDistribution Point (CPDP) -এর মাধ্যমে বাজারজাত করা।
ধাপ-৭:
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক তিন ভাগে বিভক্ত পাহাড়ের ১ম ও ২য় শ্রেণীর পাহাড়েরবেলায় ‘ম্যাথ’ মডেলটি প্রযোজ্য। অন্যথায়, যেখানে ‘জুম’ আছে সেখানেই উক্ত মডেল কার্যকর হবে।
‘ম্যাথ’ মডেলের উপকারিতা:
- ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
- একই জমিতে বহু ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে পাহাড়ী কৃষকদের স্থায়ী অর্থনেতিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।
- শস্য পর্যায় (Crop rotation) অবলম্বনের মাধ্যমে ভূমির ঊর্বরতা বৃদ্ধি করা ও মাটির ক্ষয় রোধ করা।
- স্থায়ীভাবে বনায়ন সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করা। Central Procurement and Distribution Point (CPDP)-এর মাধ্যমে উৎপাদতি পণ্যের সমবায় ভিত্তিক বাজারজাতকরণ।
- পর্যায়ক্রমে ‘ম্যাথ’ মডেলের বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ী অঞ্চলে ‘জুম’ চাষ বিলুপ্ত হবে।
- সর্বোপরি পাহাড়ী এলাকায় ফসলের ফলন বৃদ্ধি পাবে, মাটির ক্ষয়রোধ হবে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভভ হবে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে।
(২) বসত বাড়িতে সবজি চাষে ‘খাগড়াছড়ি মডেল’
পাহাড়ী এলাকায় বসত বাড়িতে সারা বছরব্যাপী সবজি চাষের জন্য পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, খাগড়াছড়ি কর্তৃক ‘খাগড়াছড়ি সবজি চাষ মডেল’ এর উদ্ভাবন করা হয়।
এই মডেলে ৩টি বেড পাশাপাশি তৈরি করে সারা বছর সবজি চাষ করা হয়। প্রতি বেডের প্রস্থ ৩ হাত (১.৩ মিটার) এবং দৈর্ঘ্য ১০ হাত (৫ মিটার)। তবে বেডের দৈর্ঘ্য কৃষকের জমির পরিমাণের উপর নির্ভর করে কম বেশি হতে পারে। দুই বেডের মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে ১ হাত (প্রায় ৫০ সেমি)।
সবজি বিন্যাস:
সবজি বাগানের তিন খন্ড জমিতে বা বেডে যে ৩টি সবজি বিন্যাস অনুসরণ করা হয়, এখানে সেগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো।
বেড | রবি (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি) | খরিফ-১ (মার্চ-মে) | খরিফ-২ (জুন-সেপ্টেম্বর) |
বেড ১ | রাইশাক-লালশাক | লাল শাক | বারি পানি কচু-২ |
বেড ২ | লালশাক-ডাঁটা শাক | কুমড়া শাক | পুঁই শাক |
বেড ৩ | মুলাশাক-কুমড়া শাক | পুঁই শাক | গিমা কলমী |
(৩) পাহাড়ী এলাকায় টেকসই কৃষির জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি
পাহাড়ী এলাকার কৃষকেরা মূলত বৃষ্টিনির্ভর কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এখানে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনের এলাকা শতকরা এক ভাগেরও কম। ফলে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ থাকে একেবারে অপ্রতুল। এখানকার বেশিরভাগ পাহাড় ও সমতল ভূমি সেচের পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে থাকে। ফলে অত্র অঞ্চলের কৃষকদের বৃষ্টিনির্ভর জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। পাহাড়ী ঝর্ণা, ছড়া, চেঙ্গি, মাইনী, ফেনী নদী এখানকার পানির প্রধান উৎস।
গবেষণার এক তথ্যে জানা যায়, গত একাদশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাহাড়ী এলাকায় গড়ে ১৫০০-২০০০ মিমি বৃষ্টি কমে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সঠিক সময়ে তথা খরায় পাহাড়ী কৃষকের জীবন ও জীবিকা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য এখনই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণপূর্বক বিভিন্ন লাগসই, খাপখাওয়ানোর উপায় সমৃদ্ধ প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রয়োজন। উক্ত প্রয়োজনের কথা অনুধাবন করে পাহাড়ী অঞ্চলের জন্য উপযোগী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, খাগড়াছড়ি থেকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে কৃষি, বাসা-বাড়ি এবং নদীর নাব্যতার জন্য প্রয়োজনীয় পানির চাহিদার যোগান হয়।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি:
- জলাধারের মাধ্যমে;
- বাসা-বাড়ির ছাদের উপরের অংশের মাধ্যমে।
পাহাড়ী এলাকার নিম্নাংশে দুই পাহাড়ে বাঁধ দিয়ে ছোট ছোট পানি সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়। পরে ধরে রাখা বৃষ্টির পানি শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ী সমতল ভূমিতে বিনা খরচে কৃষি জমিতে সেচের মাধ্যমে যে কোন ধরনের শস্য, ফল কিংবা অন্যান্য ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এই সংরক্ষিত পানি লো-লিফট সেচ পাম্পের মাধ্যমে পাহাড়ের চূড়ায় উত্তোলন করে সেচের মাধ্যমে পাহাড়ের সকল অংশ চাষাবাদের আওতায় আনা যায়।
আবার দেখা যায় যে, শুষ্ক মৌসুমে ভূনিম্নস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। ফলে পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। তাই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করলে জলাধারের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির অভাব পূরণ হয় এবং পানির স্তর উপরে উঠে আসে। ফলে পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।
(৪) পাহাড়ী অঞ্চলে উন্নত ঝাড়শিমের চাষ পদ্ধতি
ঝাড়শিম একটি সুস্বাদু পুষ্টিকর সবজি। বারি ঝাড়শিম একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। জাতটি ইতোমধ্যে পাহাড়ী এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
জমি ও মাটি:
পার্বত্য এলাকার ঊর্বর বেলে দোআঁশ থেকে দোআঁশ মাটিযুক্ত পাহাড়ের ভ্যালী বা উপত্যকা, পাদদেশ ও সামান্য ঢালের জমি ঝাড়শিম চাষের উপযোগী। হালকা ছায়াযুক্ত স্থানেও ঝাড়শিম চাষ করা যায়।
ভুট্টার সাথে আন্তঃফসল হিসেবেও পার্বত্য এলাকায় এর ফলন বেশ ভাল হয়। পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন ছড়া বা নালার তীরে ঝাড়শিম চাষ করা সম্ভব।
বপন পদ্ধতি:
- বপনের আগে বীজ ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম ত্বরান্বিত হয়।
- জমিতে সরাসরি ২৫ সেমি দূরত্বের সারিতে ১০ সেমি দূরে দূরে ২টি করে ঝাড়শিমের বীজ বপন করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়।
- বীজ বপনের ১০ দিন পর প্রতি পিটে একটি সবল চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।
- বারি ঝাড়শিম-১ এবং পিভিরাই-০০১ লাইনের জন্য হেক্টরপ্রতি ৫০-৬০ কেজি এবং পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় জাতের জন্য ৮০-৯০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
বীজ বপনের সময়:
পার্বত্য অঞ্চলে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে মধ্য-নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঝাড়শিমের বীজ বপন করলে ফলন ভাল হয়। তবে সেচের সুযোগ থাকলে ডিসেম্বরের শেষ সময় পর্যন্ত এর বীজ বপন করা যায়।
সারের মাত্রা:
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
ইউরিয়া | ৯০-১০০ কেজি |
টিএসপি | ১৮০-২২০ কেজি |
এমওপি | ১৪০-১৬০ কেজি |
কম্পোস্ট | ৪-৫ টন |
সার প্রয়োগ:
জমি তৈরির সময় সম্পূর্ণ কম্পোস্ট, টিএসপি, এমওপি ও অর্ধেক ইউরিয়া দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা:
ঝাড়শিম দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। আবার বেশি শুকনা অবস্থায় ফলন কমে যায়। এ জন্য পানি সেচ ও নিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফল সংগ্রহ:
বারি ঝাড়শিম-১ এবং পিভিএরাই-০০১ লাইন থেকে বীজ বপনের ৪৫-৫০ দিন পর বা ফুল ফোটার ১০-১৫ দিন পর শুঁটি সংগ্রহ করা যায়। এতে হেক্টরপ্রতি ১৪-১৫ টন শুঁটি পাওয়া যায়।
বীজ বপনের সময়:
পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় বড় বীজসম্পন্ন জাতগুলো বপনের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে খাবার উপযোগী খাইস্যা বা আধাপাকা বীজ এবং ৭০-৮০ দিন পর পাকা বীজ সংগ্রহ করা যায়।
এ জাত থেকে হেক্টরপ্রতি ২.৫-৩.০ টন খাইস্যা বীজ অথবা ১.৪-১.৫ টন শুকনা বীজ পাওয়া যায়।
(৫) পাহাড়ী অঞ্চলে বিলাতি ধনিয়ার চাষ পদ্ধতি
মাটি:
বিলাতি ধনিয়া চাষের জন্য দোআঁশ থেকে পলি-দোআঁশ মাটি বেশি উপযুক্ত। বীজ গজানোর জন্য মাটি নরম হওয়া আবশ্যক।
জমি তৈরি:
জমির মাটি ৫-৬ বার চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। বীজতলার মতো করে জমি তৈরি করতে হবে। প্রতি বীজতলার জমির চারদিকে নালার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সেচ দেওয়া ও পানি নিকাশের সুবিধা হয়। এই ধনিয়া ছায়াতেও চাষ করা যায়। জমির উপরে সেক্ষেত্রে মাচাও দেওয়া যায়।
বীজ বপন:
রবি মৌসুমে কার্তিক মাসে বা মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বরে চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। তবে বীজ ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে। হেক্টরপ্রতি ৭৫-৭৮ কেজি প্রয়োজন।
বপন পদ্ধতি:
বীজতলায় বীজ ছিটিয়ে বপন করা হয়। বপন করার আগে বীজ পানিতে ২০-২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভিজানো বীজ সংগ্রহ করে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। তারপর বীজ মৃদু সূর্যের আলোতে এক ঘণ্টা শুকাতে হয়।
মিহি বালুতে মিশিয়ে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপন করার পর সেচ দিয়ে শুকনা ধানের খড় দিয়ে জাবড়া প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে রসের অভাব হলে ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিতে হবে।
বীজের অঙ্কুরোদগমের পর জাবড়া সরিয়ে ফেলতে হবে। বীজ গজাতে ২০-২৫ দিন সময় লাগে। ছায়া প্রদানের জন্য জমির উপর ঘাস/ধানের খড়/নারিকেলের পাতা দিয়ে মাচা দিতে হবে। মাচার উপরে কুমড়া জাতীয় সবজি চাষ করে বাড়তি আয়ও করা সম্ভব।
সারের মাত্রা:
বিলাতি ধনিয়ায় নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
পচা গোবর | ১৫-২০ টন |
ইউরিয়া | ২৭৫-৩০০ কেজি |
টিএসপি | ১৩৫-১৫০ কেজি |
এমওপি | ১৭০-২০০ কেজি |
সার প্রয়োগ:
সম্পূর্ণ গোবর এবং টিএসপি বীজ বপনের পূর্বে শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া এবং এমওপি ৩-৫ বার পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে। বিলাতি ধনিয়ার চারা ২-৩ সেমি উঁচু হলে প্রথমবার ইউরিয়া এবং এমওপি পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতিবার ফসল সংগ্রহের পর ইউরিয়া এবং এমওপি পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে। পার্শ্ব প্রয়োগের সময় মাটিতে উপযুক্ত রস থাকা প্রয়োজন।
পানি সেচ ও নিকাশ:
মাটিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে। পানি অতিরিক্ত হলে তা নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা:
আগাছার উপদ্রব হলে নিড়ানী দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ৩-৪ বার আগাছা পরিষ্কার করলেই চলে। এতে গাছে উৎপাদন বাড়বে। গাছে মঞ্জুরী বের হলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
বিলাতী ধনিয়ার গোড়া পচা একটি মারাত্মক রোগ। রোগের প্রাদুর্ভাব হলে ছত্রাকনাশক রিডোমিল ০.২% হারে অথবা বোর্দো মিশ্রণ ১% হারে ১৫ দিন অন্তর প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
শিকড়সহ গাছ উঠিয়ে ফসল সংগ্রহ করা হয়। প্রতি খ- জমি থেকে ৭-৮ বার ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব। গাছ ১০-১৫ সেমি উঁচু হলে ফসল সংগ্রহ করা হয়। পাতা নরম থাকতে তা খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করতে হবে।
(৬) অ-মৌসুমে লেবুর চাষ পদ্ধতি
কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, রাইখালী, রাঙ্গামাটিতে গবেষণা চালিয়ে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়। এ প্রযুক্তি অনুসরণ করে অ-মৌসুমে লেবু উৎপাদন করে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
প্রধান মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মৌসুমে লেবু গাছে অত্যধিক ফুল-ফল হয়। এই সময় গাছ থেকে কিছু ফুল ছাঁটাই বা পাতলা করে দিলে ফলের জন্য গাছের কম শক্তি ব্যয় হয়। ফলে গাছে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ বেশি থাকে। এই সঞ্চিত শক্তি কাজে লাগিয়ে গাছ অমৌসুমে বা অক্টোবর-মার্চ মাসে বেশি পরিমাণে ফুল-ফল উৎপাদন করে। এই সময় বাজারে মূল্য বেশি থাকায় লেবু বিক্রি করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। এপ্রিল-মে মাসে পুষ্প মঞ্জুরিতে ফুলের সংখ্যার ভিত্তিতে শতকরা ৫০টি ফুল ছাঁটাই করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত লেবু সংগ্রহ করা যায়।
[সূত্র: বিএআরআই]