Skip to content

পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে সেচ ও মাল্চ প্রযুক্তির ব্যবহার

পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন পদ্ধতি

দোআঁশ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা দোআঁশ বা পলিযুক্ত মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম। পেঁয়াজ চাষের জন্য সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত ঊর্বর মাটি হওয়া বা নীয়।

পেঁয়াজের ভালো ফলন পেতে হলে উত্তম বীজ অত্যাবশ্যকীয়। ভালো বীজ এবং সঠিক পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পেঁয়াজের ফলন শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

পাতা, খড়কুটা ও বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে যখন গাছপালার গোড়া, সবজি ক্ষেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেয়া হয় তখন তাকে মাল্চ বলে। আর এই মাল্চ প্রয়োগের পদ্ধতিকে মালচিং বলে

ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী।

যেমন:

  • এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফসল ক্ষেতের পানি সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রুত উড়ে যায় না।
  • মালচ বৃষ্টির জলের গতি হ্রাসের মাধ্যমে মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং মাটির জল শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,
  • গরম ও ঠান্ডায় মাটির তাপমাত্রায় নিয়ন্ত্রনে ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে,
  • প্রায় বাস্পীভবন ৪০ শতাংশ ইভারেশন হ্রাসের মাধ্যমে মাটিতে প্রচুর পরিমাণে পানি ধরে রাখে,
  • উচ্চ তাপমাত্রায় মাটি ফেটে যাওয়া এবং মাটির উপরিভাগে কঠিন স্তর সৃষ্টিতে বাধাদান করে মাটির ভঙ্গুরতা রক্ষার মাধ্যমে কর্ষণে সহায়তা করে,
  • মাটিতে হিউমাস ও জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে,
  • মাটিতে আলো পৌছাঁনোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে আগাছা বীজের অঙ্কুরোদগমে বাঁধার সৃষ্টি করে এবং অসমতল মালচ শামুক জাতীয় প্রাণিদের চলার পথে বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের তাড়াতে সহায়তা করে।
  • সবচেয়ে বড় কথা মাল্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পানি লাগে অনেক কম। সেচের খরচ বাঁচে, লাভ হয় বেশি।
  • মালচিংয়ের ফলে পোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিমাটোড বা ফসলে কৃমির আক্রমণ রোধ করে। প্রতিফলক মালচ পতঙ্গদের প্রতিহত করে।
  • শীতকালে মাল্চ ব্যবহার করলে মাটিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব হয় এবং গরমকালে মাটি ঠান্ডা থাকে, এমনকি বেশ কিছু পোকামাকড়ের আক্রমণও রোধ করা যায়।
  • এই পদ্ধতি ব্যবহারে শিকড়ের কাছের স্থানে সার প্রয়োগ করার জন্য চাষে সার প্রয়োগের পরিমাণ ও সংখ্যাও অনেক কমে যায়। ফলে খরচে রাশ টানা সম্ভব হয়।
See also  সেচ কি? সেচ পদ্ধতি কয়টি? আধুনিক সেচ পদ্ধতি ও সেচ ব্যবস্থাপনা

ঘাটতি সেচ এবং মাল্চ ব্যবহারের মাধ্যমে পানির পরিমিত ব্যবহার করে যে সকল এলাকায় পানির ঘাটতি আছে, সেসব এলাকায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেঁয়াজের বীজের ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

ঘাটতি সেচ প্রযুক্তিতে কম পানি প্রয়োগ করা হলেও মালচ্ ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা সম্ভব। ফলে পেঁয়াজের বীজের ফলন বৃদ্ধি এবং গুণগত মান বজায় থাকে।

নিম্নে সেচ ও মাল্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-

বপনের সময় এবং পদ্ধতি:

  • সাধারণত নভেম্বর মাসে বীজ উৎপাদনের জন্য পেঁয়াজের কন্দ বপনের উপযুক্ত সময়।
  • বেডের সাইজ ১.৫ মিটার প্রস্থ এবং ৩ মিটার লম্বা হওয়া বা নীয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত।
  • প্রতি হেক্টরে প্রায় ১০ টন পেঁয়াজের কন্দ বপন করা প্রয়োজন।

সারের মাত্রা ও ব্যবহার:

রবি মৌসুমে বীজ উৎপাদনের জন্য পেঁয়াজ চাষে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নামপরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া৩২০-৩৩০ কেজি
টি এস পি৫০০ কেজি
এমওপি৩৬০ কেজি
জিপসাম১১০ কেজি
জিঙ্ক সালফেট১০ কেজি
বরিক এসিড১০ কেজি
গোবর৮-১০ টন

শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ পরিমাণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক, রোরাক্স, এমওপি এবং ইউরিয়া সারের অর্ধেক জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া কন্দ রোপণের ২৫ এবং ৫০ দিন পর সমান ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ প্রয়োগ:

  1. উদ্ভিদের বিভিন্ন বৃদ্ধি পর্যায়ে ৪ বার সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
  2. প্রতিবার সেচ প্রয়োগের পূর্বে মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
  3. মাল্চ ব্যবহার করার ফলে এ পদ্ধতিতে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতার শতকরা ১০০ ভাগ এর পরিবর্তে ৮০ ভাগ পানি প্রয়োগ করেও ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
  4. এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের পুরো মৌসুমে ২৩০-২৪০ মিমি পানির প্রয়োজন হয়।
See also  লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল চাষে সেচ পদ্ধতি

মাল্চ প্রযুক্তি:

মাল্চ করার জন্য যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো জৈব ও অজৈব পদার্থ। উপাদানগুলো হলো-ধান বা গমের খড়, কচুরিপানা, গাছের পাতা, শুকনা ঘাস, কম্পোস্ট, ভালোভাবে পচানো রান্নাঘরের আবর্জনা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বিশেষভাবে তৈরি এক ধরনের পলিথিন এ কাজের জন্য জনপ্রিয়।

ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফসল ক্ষেতের জলের সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রুত উড়ে যায় না। ফলে জমিতে রসের ঘাটতি হয় না এবং সেচ লাগে অনেক কম। মাল্চ ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ২৫ ভাগ আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।

সেচ ও মালচ্ প্রয়োগে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন
সেচ ও মালচ্ প্রয়োগে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন

গাছের গোড়া, সবজির বেড এবং ফলবাগানে গাছের গোড়া হতে এক থেকে দু’ইঞ্চি (২.৫০-৫.০ সে.মি) দূরে বিভিন্ন ধরনের মালচ ব্যবহার করা যেতে পারে। মালচিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদার্থ অবশ্যই ৫ সেন্টিমিটার (২ইঞ্চি) এর বেশি পুরু করে দেয়া ঠিক নয়।

উল্লেখ্য যে, মাল্চ পদার্থের পুরুত্ব বেশি হলে তা গাছপালার অপ্রয়োজনীয় মূল গজাতে সহায়তা করবে। এমনকি সঠিক মাল্চ প্রয়োগে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণও রোধ করা যায়।

প্লাস্টিক শিট দিয়ে মাটি ঢেকে রাখার ফলে মাটির ঢাকা অংশের উষ্ণতা রাতে এবং শীতকালে পরিবেশের থেকে বেশি হয়। ফলে বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গম দ্রুত সম্পন্ন হয়।

কচুরিপানা, জৈবসার, খড় ইত্যাদির অপেক্ষা প্লাস্টিক মালচিং ব্যয়সাপেক্ষ। গ্রীষ্মকালে কালো বা মোটা প্লস্টিক ব্যাবহার করলে উষ্ণতা বেড়ে যায়। ফলে চারা পোড়া বা শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

সুবিধাসমূহ:

  • এ পদ্ধতিতে হেক্টরে ১,৫০০-১,৬০০ কেজি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন সম্ভব।
    মালচ্ ব্যবহারে করার ফলে শতকরা ২০ ভাগ কম পানি প্রয়োগ করেও সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া সম্ভব।
  • মাল্চ ব্যবহারের ফলে আগাছার উপদ্রব কম হয়। রোপণের তিন এবং ছয় সপ্তাহ পর সার প্রয়োগের পূর্বে দুই বার আগাছা পরিষ্কার করতে হয়।
  • এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে আয়-ব্যয়ের অনুপাত ৫.১৭:১ এবং প্রতি হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে ১০,০০,০০০-১১,০০,০০০০ টাকা নীট মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
  • মালচ্ ব্যবহারের মাধ্যমে ৫-১৭% ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
  • এ পদ্ধতিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করতে ১,৪০০ লিটার পানি প্রয়োজন হয় (পানির উৎপাদনশীলতা ০.৭১ কেজি/মিটার)
  • খরা প্রবণ এলাকায় এই প্রযুক্তি আরও অধিকতর কার্যকরী।
  • পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্তোলন কম করতে হয়।
See also  মৃত্তিকা পানি কাকে বলে? মৃত্তিকা পানির গুরুত্ব ও মৃত্তিকা পানির শ্রেনিবিভাগ

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts