(১) পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন পদ্ধতি
ক) আবহাওয়া
- যদিও বিভিন্ন আবহাওয়ায় পেঁয়াজ বীজের চাষ হতে দেখা যায় তবে যে সমস্ত স্থানে খুব বেশি ঠান্ডা বা গরম পড়ে না এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয় না সে সব স্থানে পেঁয়াজ এবং বীজ খুব ভাল হয়। যেখানে বছরে ৭৫ থেকে ১০০ সেমি বৃষ্টিপাত হয় সে সব স্থানে পেঁয়াজ ভাল হয়।
- দিনের আলো, তাপমাত্রা, মাটির রস পেঁয়াজের বীজ গঠন ও ফলনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। প্রচুর দিনের আলো, অনধিক উত্তাপ ও মাটিতে প্রয়োজনীয় রস থাকলে পেঁয়াজ ও বীজের ফলন খুব ভাল হয়।
- ছোট অবস্থায় যখন পেঁয়াজের পাতা বাড়তে থাকে তখন ১৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা ও ৯-১০ ঘণ্টা দিনের আলো থাকলে পেঁয়াজ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পরে ১০-১২ ঘণ্টা দিনের আলো ও ২১ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা এবং গড় আর্দ্রতা ৭০% থাকলে পেঁয়াজের কন্দ ভালভাবে বাড়ে।
- বীজ উৎপাদনের জন্য পুষ্পায়নের সময় মোটামুটি ঠান্ডা তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় ৪.৫ থেকে ১৪ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় প্রতিটি কন্দে অধিক সংখ্যক ফুল ও পুষ্ট বীজ গঠিত হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। এই ঠান্ডা তাপমাত্রা উৎপাদন মৌসুমে বিশেষ করে জানুয়ারী-ডিসেম্বর মাসে বিদ্যমান থাকে।
- পুষ্পায়ন পর্যায়ে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল দিনের আলোয় পরাগায়নের জন্য অধিক সংখ্যক পরগায়নকারী পোকা সক্রিয় থাকে। বীজ সংগ্রহ, কিউরিং ও থ্রেসিং এর সময় উষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়াও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
খ) মাটি
- সব রকম মাটিতেই পেঁয়াজ বীজের চাষ হতে দেখা যায়। তবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত গভীর, ঝুরঝুরে হালকা দোআঁশ বা পলি যুক্ত মাটি পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল।
- হালকা বেলে-দোআঁশ মাটিতে এঁটেল মাটির চেয়ে অনেক আগে পেঁয়াজের পরিপক্কতা আসে। হালকা মাটিতে উপযুক্ত পরিমাণে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে চাষ করলে পেঁয়াজ বেশ বড় ও ভারী হয় এবং সেগুলো অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। পরবর্তীতে উক্ত কন্দ থেকে উন্নত পুষ্ট, সজীব ও নিরোগ বীজ পাওয়া যায়।
- এঁটেল মাটি শক্ত হয়ে যায় বলে পেঁয়াজের কন্দ ভালভাবে বাড়তে পারে না ফলে পুস্পদন্দ ও সঠিক ভাবে বাড়তে পারে না। ফলে ফলন কম হয়।
- অধিক অম্ল বা ক্ষার মাটিতে পেঁয়াজ আস্তে আস্তে বাড়ে, ছোট হয় এবং ফসলের পরিপক্কতা দেরিতে হয়।
- মাটির পি এইচ ৫.৮-৬.৮ থাকলে পেঁয়াজের কন্দ ও বীজের ফলন ভাল হয়।
- যে সব জমিতে পানি জমে সে সমস্ত জমিতে পেঁয়াজ বীজ মোটেও ভাল হয় না।
গ) বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে
বীজের ফলন যতগুলো বিষয়ের উপর নির্ভরশীল তার মধ্যে বীজ উৎপাদন পদ্ধতি অন্যতম।
দুটি মৌলিক পদ্ধতির মাধ্যমে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করা যায়-
- বীজ থেকে বীজ;
- কন্দ থেকে বীজ।
উন্নত ও অধিক ফলনের জন্য কন্দ থেকে বীজ উৎপাদন পদ্ধতি সবচেয়ে উপযোগী হওয়ায় আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত কন্দ থেকে বীজ উৎপাদন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
(২) কন্দ থেকে পিঁয়াজের বীজ উৎপাদন পদ্ধতি
ক) মাতৃকন্দ সংগ্রহ
- সাধারণত উৎপাদিত পেঁয়াজ ফসল থেকে মাতৃকন্দ সংগ্রহ করা হয়।
- বীজ উৎপাদনের জন্য ৪-৬ সেমি ব্যসের কন্দ উপযুক্ত।
- বীজের বিশুদ্ধতার জন্য কন্দ উৎপাদন মৌসুমে সতর্কতার সহিত অস্বাভাবিক পত্রগুচ্ছ, রোগাক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ ক্ষেত থেকে তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
- পরিপক্ক পেঁয়াজ কন্দ, চিকন গলা এবং রোগ মুক্ত পেঁয়াজের মাতৃকন্দ সংগ্রহ করতে হবে।
খ) মাতৃ কন্দ সংরক্ষণ
- পেঁয়াজ কন্দ উত্তোলনের পর এর পাতা ও শিকড় কেটে ৭-১০ দিন বায়ু চলাচল সুবিধা যুক্ত শীতল ও ছায়াময় স্থানে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর যথারীতি মাতৃকন্দের জন্য বাছাই ও শ্রেণিবিন্যাস করে ঠান্ডা ও বায়ুময় গুদামে সংরক্ষণ করতে হবে।
- মাতৃকন্দ রোপণের পূর্ব পর্যন্ত আলো বাতাসময় শীতল স্থানে মাচা তৈরি করে মাচায় ছড়িয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মাঝে মাঝে পচা বা শুকনা পেঁয়াজ বেছে সরিয়ে ফেলতে হবে।
- পেঁয়াজের মাতৃকন্দ সংরক্ষণের জন্য হিমায়নযন্ত্রে ৪.৫ সে থেকে ১৪ সে. তাপমাত্রা উপযোগী তবে ১১ সে তাপমাত্রা ও ৬৫% আপেক্ষিক আর্দ্রতা সর্বাপেক্ষা উপযোগী।
গ) রোপণ মৌসুম
পেঁয়াজের রোপণ সময়ের উপর বীজ উৎপাদনের অনেক প্রভাব রয়েছে।
বেশি আগাম অর্থাৎ অক্টোবরের মাঝামাঝি পেঁয়াজ রোপণ করলে পুষ্পদন্ডের প্রতি কদমে ফুলের সংখ্যা অনেক কম হয়। আবার ডিসেম্বর মাসে রোপণ করলে গাছের বৃদ্ধি কম হয়। কন্দে কম সংখ্যক ফুল আসে এবং পার্পল ব্লচ রোগ ও থ্রিপস পোকার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বিলম্বে রোপণ করলে বীজ ফসল কাল বৈশাখী ঝড় ও শীলা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বর মাসের প্রথম হতে মাঝামাঝি পেঁয়াজের মাতৃকন্দ রোপণের উপযুক্ত সময়। এ সময়ে পেঁয়াজ কন্দ রোপণ করলে উক্ত বীজ ফসল খুব ভাল ফলন দেয়।
ঘ) মাতৃকন্দ নির্বাচন
- শীতকালীন অথবা গ্রীষ্মকালীন ফসল থেকে বীজ ফসলের জন্য উপযুক্ত পরিপক্ক ও রোগমুক্ত পেঁয়াজের মাতৃকন্দ নির্বাচন করা প্রয়োজন।
- পেঁয়াজের আকার ছোট হলে গাছ দুর্বল হয়। ফুলদন্ড চিকন ও হালকা হয় এবং সহজেই বাতাসে ভেঙ্গে পড়ে। তাছাড়া উক্ত ফুল দন্ডের কদমে ফুল কম ধরে ও ছোট হয় এবং বীজের ফলনও খুব কম হয়।
- বারি পেঁয়াজ-১ জাতের ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের কন্দ এবং তার ব্যাস যদি ৪.০ সেমি হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি বীজ উৎপন্ন হয়। তবে ৩০-৩৫ গ্রাম অপেক্ষা বারি পেঁয়াজ ২, ৩ ও ৪ জাতের ৪০-৪৫ গ্রাম ওজনের কন্দ থেকে সর্বাধিক পরিমাণ বীজ উৎপাদন হয়।
- অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ৪০ গ্রাম ওজনের কন্দ এবং তার ব্যাস যদি ৩-৪ সেমি হয় সেক্ষেত্রে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
আমাদের বাংলাদেশে উৎপাদিত কন্দসমূহের ব্যাসের ভিত্তিতে তিন ভাগে ভাগ করা হয় যথা-
- বড় আকারের কন্দ যার ডায়ামিটার ৩.৮ সেমি,
- মধ্যম আকারের কন্দ যার ব্যাস ২.৫ সেমি এবং
- ছোট আকারের কন্দ যার ব্যাস ১.৮ সেমি।
এদের মধ্যে মধ্যম আকারের মাতৃকন্দ অর্থাৎ ২.৫ থেকে ৩.৭ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট কন্দ থেকে লাভজনকভাবে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়।
ঙ) জমি তৈরি
- বীজ উৎপাদনের জন্য জমি ভালভাবে প্রস্তুতকরা দরকার যাতে মাটি নরম ও ঝুরঝুরে হয়।
- পেঁয়াজের শিকড় মাটিতে ৫-৭ সেমি এর মধ্যে বেশি থাকে বলে জমি খুব গভীর করে চাষের প্রয়োজন হয় না। সাধারণত ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা বেছে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে।
- পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জমিতে ১০ মি ⨉ ১.৫ মি আকারের বেড করা প্রয়োজন।
- তিন বেড পরপর গভীর পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা রাখতে হবে।
- ভেজা মাটিতে পেঁয়াজ রোপণ করলে পচন রোগ হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে আবার জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস না থাকলে গাছ সন্তোষজনকভাবে বাড়তে পারে না।
চ) মাতৃকন্দ শোধন
কার্বেনডাজিম গ্রুপের (আটোস্টিন/গোল্ডাজিন) বা প্রোভেক্স ২০০ জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে মাতৃকন্দ শোধন করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম অটোস্টিন বা ২.৫ গ্রাম প্রভেক্স-২০০ দ্বারা কন্দ ১০-১৫ মিনিট পানিতে চুবিয়ে রেখে শোধন করতে হবে।
ছ) মাতৃকন্দ রোপণ
- বড় আকারের জমিকে ছোট ছোট ব্লকে ভাগ করে প্রত্যেক ব্লকের চারিদিকে পানি প্রবাহের জন্য নালা থাকা আবশ্যক।
- সারি করে মাতৃ কন্দ রোপণ করা উত্তম। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি এবং কন্দ থেকে কন্দের দূরত্ব ১৫ সেমি হওয়া প্রয়োজন। সারি থেকে সারির দূরত্ব খুব কাছাকাছি হলে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব কিন্তু ছএাক রোগের আক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- নিদিষ্ট দূরত্বে ছোট লাঙ্গল অথবা রডের টাইন দ্বারা ৫-৬ সেমি গভীর নালা টেনে উক্ত নালায় পেঁয়াজের মাতৃকন্দ রোপণ করে পার্শ্ববর্তী মাটি দ্বারা মাতৃ কন্দ ঢেকে দেওয়া আবশ্যক। অল্প গভীরে রোপণ করা কন্দ থেকে পেঁয়াজের ফুলদন্ড বড় হলে বৃষ্টি বা সেচের পানিতে মাটি সরে গিয়ে গাছ পড়ে যায়।
জ) মাতৃকন্দ বীজের পরিমাণ
বীজ উৎপাদনের জন্য আমাদের বাংলাদেশে লাগানোর দূরত্ব ও মাতৃকন্দের আকারের উপর ভিত্তি করে এক হেক্টর জমিতে ৩,০০০-৫,০০০ কেজি মাতৃকন্দের প্রয়োজন হয়।
ঝ) বীজ উৎপাদন মাঠের স্বতন্ত্রীকরণ
পেঁয়াজ সাধারণত পর পরাগায়িত উদ্ভিদ, সেজন্য প্রতিবেশি পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে পরাগায়িত পোকা ও বাতাসের মাধ্যমে পরাগায়িত হয়ে এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লোপ পেতে পারে। দুটি ভিন্ন জাতের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জন্য স্বাতন্ত্রীকরণ দূরত্ব ১,০০০ মি. হওয়া বাঞ্ছনীয়। বীজের বিশুদ্ধতার জন্য এটি অপরিহার্য।
ঞ) অনাকাঙ্খিত পেঁয়াজ গাছ উত্তোলন
পেঁয়াজের ফুল ফোটার পূর্বেই রোগাক্রান্ত চিকন বা সরু পুষ্পদন্ডসহ অপুষ্ট পেঁয়াজ গাছ ক্ষেত থেকে তুলে তা ধ্বংস করতে হবে। উন্নত মানের বীজ উৎপাদনের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। গাছের বৃদ্ধির দুই পর্যায়ে (দৈহিক বৃদ্ধির পর্যায় ও ফুল ফোটার সময়) এই কাজটি করতে হবে।
ট) রোপণ পূর্ব ঠান্ডা শোধন
রোপণের পূর্বে ১২-২০০ সে. তাপমাত্রায় মাতৃকন্দসমূহ ৩০ দিন যাবত যদি ঠান্ডা শোধন করা হয় তাহলে ঠান্ডা আবেশ তাড়াতাড়ি পুষ্পায়নে প্ররোচিত করার মাধ্যমে ফুল ফোটাকে ত্বরান্বিত করে ফল ধারণ এবং অধিক ফলন নিশ্চিত করে। তবে শোধন করা পেঁয়াজ ১২-১৫ দিন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে তারপর রোপণ করতে হবে।
ঠ) সার ও সেচ প্রয়োগ
পেঁয়াজের বীজ ফসলের সময়কাল দীর্ঘ, ১৫০-১৬৫ দিন। সে জন্য বীজ উৎপাদনে সারের প্রয়োজন অনেক বেশি।
হেক্টরপ্রতি সারের পরিমাণ:
সার | মোট পরিমাণ | শেষ চাষের সময় প্রয়োগ | পরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে পার্শ্ব প্রয়োগ: ১ম কিস্তি | পরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে পার্শ্ব প্রয়োগ: ২য় কিস্তি | পরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে পার্শ্ব প্রয়োগ: ৩য় কিস্তি |
গোবর | ১০ টন | সব | – | – | – |
টিএসপি | ১০ টন | সব | – | – | – |
এমওপি | ১৫০ কেজি | ৫০ কেজি | ৩৪ কেজি | ৩৩ কেজি | ৩৩ কেজি |
ইউরিয়া | ২৫০ কেজি | ৭০ কেজি | ৬০ কেজি | ৬০ কেজি | ৬০ কেজি |
জিপসাম | ১১০ কেজি | সব | – | – | – |
জিংক সালফেট | ১০ কেজি | সব | – | – | – |
বরিক এসিড | ১০ কেজি | সব | – | – | – |
প্রয়োগ পদ্ধতি:
- জমিতে শেষ চাষের পূর্বে সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক ও বোরন সার ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
- এরপর ইউরিয়া ও এমওপি সার যথাক্রমে শেষ চাষে, প্রথম কিস্তি গাছের বয়স ২৫-৩০ দিন, ২য় কিস্তি গাছের বয়স ৫০-৫৫ দিন এবং ৩য় কিস্তির গাছের বয়স ৭০-৭৫ দিন হলে উপরের ছকে উল্লেখিত পরিমাণ মতো প্রয়োগ করতে হবে।
ড) মাধ্যমিক পরিচর্যা
- গাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য পেঁয়াজ বীজ ফসলে পানি সেচ অত্যাবশ্যক। পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টিপাত খুব কম হয়। তাই জমির অবস্থা দেখে পানি সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
- তাছাড়া প্রত্যেক কিস্তিতে পানি সেচের পরদিন সার দেয়া দরকার।
- সেচের পর মাটির ‘জো’ দেখে নিড়ানী দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে।
- পেঁয়াজের বীজ ফসল আগাছামুক্ত রাখা এবং পেঁয়াজের পুষ্পদন্ড যাতে বাতাসে ভেঙ্গে না পড়ে, সেজন্য ঠেকনার ব্যবস্থা করতে হবে।
- রোগ বালাই ও পোকা মাকড় দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
ঢ) পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের বর্ডার ফসলের প্রভাব
- পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে পলিনেটরদের মুভমেন্ট/ভিজিট এর উপর নির্ভর করে। কারণ পেঁয়াজ পরপরাগায়িত ফসল। পেঁয়াজের পলিনেশন প্রটেনড্রাই প্রকৃতির, তাই পেয়াঁজে পরপরাগায়ণ হয়। এই পরপরাগায়ণ ১০০ ভাগ বিভিন্ন পোকা যেমন- মাছি, হাউজফ্লাই, বোফ্লাই, সিরফিড ফ্লাই ইত্যাদি দ্বারা হয়ে থাকে।
- পেঁয়াজের ফুল সাদা হওয়ায় ফুল ফোটার সময় অনেকক্ষেত্রে পলিনেটিং পোকার ভিজিট কম হয়। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজের সাথে মৌরী, ধনিয়া, শালুক ইত্যাদি চাষ করে পলিনেটিং পোকাকে পেঁয়াজের পরাগায়ণে আকৃষ্ট করা যেতে পারে।
- গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১০ সারি পেঁয়াজের পর ২ সারি মৌরী, শলুক, ধনিয়া চাষ করলে পেঁয়াজের পরাগায়নে সহায়ক পোকার ভিজিট বৃদ্ধির কারণে পেঁয়াজের বীজ সেট ভাল হয় এবং বীজের ফলন বৃদ্ধি পায়। শালুক ও মৌরী পেঁয়াজ রোপণের দিনেই বপন করতে হবে। ধনিয়া, পেয়াজ রোপণের ২০-২২ দিন পর বপন করতে হবে।
ণ) বীজ সংগ্রহ, শুকানো ও সংরক্ষণ
- বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে বীজ সংগ্রহ করলে বীজের গুণগত মান ভাল হয়।
- পেঁয়াজের বীজ পরিণত হলে ফুলের মুখ ফেটে যায় এবং কালো বীজ দেখা যায়।
- শতকরা ২০-২৫ ভাগ কদমের (umbel) মুখ ফেটে কালো বীজ দেখা গেলে উহা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। একই সময়ে পেঁয়াজের সব পুষ্পদন্ডের বীজ পরিপক্ক হয় না বিধায় ২-৩ বার বীজ তোলা হয়।
- কদমের নিচ থেকে কদমের পুষ্পদন্ডের ৫-৭ সেন্টিমিটার অংশসহ পরিপক্ক কদমগুলো তুলে নিতে হয়। এগুলো কয়েকদিন রোদে ভালভাবে শুকানোর পর ঘষে খোসা থেকে বীজ আলাদা করে পরিষ্কার করা হয়।
- জাত ভেদে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৬০০-১২০০ কেজি পর্যন্ত বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়।
- সংগৃহীত বীজ আরো ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা ৬-৭% এ কমিয়ে ও ঠান্ডা করে বায়ুনিরোধক পলিথিন ব্যাগে ভরে সিল করে টিন অথবা প্লাস্টিকের পাত্রে ভরে শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
[সূত্র: বিএআরআই]