Skip to content

 

পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি (গ্রীষ্ম ও শীতকালীন)

পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি (গ্রীষ্ম ও শীতকালীন)

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের বেশ ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানি করে এ ঘাটতি পূরণ করা হয়। বারি উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেঁয়াজের ফলন বাড়ানো সম্ভব।

পেঁয়াজ একদিকে একটি মসলা এবং অপরদিকে একটি সবজিও বটে। বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাষ সাধারণত রবি মৌসুমে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে সম্প্রতি খরিফ মৌসুমে আবাদ উপযোগী পেঁয়াজের ৩টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। আশা করা যায়, এসব জাতের ব্যাপক চাষাবাদের মাধ্যমে পেঁয়াজের ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হবে।

পেঁয়াজের পাতা ও ডাঁটা ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ক্যালসিয়াম’ সমৃদ্ধ।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ লক্ষ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষা করা হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ১৭ লক্ষ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে দেশের পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। কৃষক পর্যায়ে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১০.০৫ টন।

(বিবিএস, ২০১৭)

(১) পেঁয়াজের জাতের নাম পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য

ক) বারি পেঁয়াজ-১ (রবি)

বাছাইকরণের মাধ্যমে বারি পেঁয়াজ-১ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। ১৯৯৬ সালে জাতটি চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে।

বারি পেঁয়াজ-১
বারি পেঁয়াজ-১
  • জাতটির কন্দের আকার চ্যাপ্টা ও গোলাকার।
  • গাছ উচ্চতায় ৫০-৫৫ সেমি।
  • জাতটির কন্দ অধিক ঝাঁঝযুক্ত এবং প্রতি গাছে ১০-১২টি পাতা হয়।
  • প্রতি কন্দের ওজন প্রায় ৩০-৪০ গ্রাম।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১২-১৬ টন।
  • হেক্টরপ্রতি বীজের ফলন ৬০০-৬৫০ কেজি।
  • ‘বারি পেঁয়াজ-১’ জাতের পেঁয়াজের সংরক্ষণ ক্ষমতা বেশি।
  • জাতটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম।
  • ‘বারি পেঁয়াজ-১’ পার্পল ব্লচ ও স্টেমফাইলাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন।

খ) বারি পেঁয়াজ-২ (খরিফ)

বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাছাইকরণ পদ্ধতিতে ‘বারি পেঁয়াজ-২’ নামে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। এই জাতটি ২০০০ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

বারি পেঁয়াজ-২
বারি পেঁয়াজ-২
  • জাতটি বিশেষভাবে খরিফ মৌসুমে অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে চাষোপযোগী স্বল্প সময়ের ফসল।
  • এটি দেখতে গোলাকার আকৃতির এবং রং লালচে বর্ণের।
  • গাছের উচ্চতা ৩৫-৪৫ সেমি এবং প্রতিটি কন্দের গড় ওজন ৩৫-৫৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
  • আগাম চাষের জন্য মধ্য-ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ তলায় বীজ বপন করা যায় এবং এপ্রিল মাসে ৪০-৪৫ দিন বয়সের চারা মাঠে রোপণ করা যায়।
  • নাবী চাষের জন্য জুন-জুলাই মাসে বীজ তলায় বীজ বপন করা হয়।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১৮-২২ টন।

গ) বারি পেঁয়াজ-৩ (খরিফ)

বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাছাইকরণ পদ্ধতিতে ‘বারি পেঁয়াজ-৩’ জাত উদ্ভাবন করা হয়। এই জাতটি ২০০০ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

See also  পিঁয়াজ চাষের সমস্যা: পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার
বারি পেঁয়াজ-৩
বারি পেঁয়াজ-৩
  • এই জাতটি বিশেষভাবে খরিফ মৌসুমে চাষ উপযোগী ও স্বল্প সময়ের ফসল।
  • এটি দেখতে গোলাকার আকৃতির এবং রং লালচে বর্ণের।
  • গাছের গড় উচ্চতা ৩৫-৫০ সেমি এবং প্রতিটি কন্দের গড় ওজন ৪৫-৬৫ গ্রাম।
  • নাবিতে বীজ বপনের জন্য মধ্য-জুন থেকে মধ্য-জুলাই মাস উপযুক্ত সময় এবং মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বর মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
  • আগাম চাষে বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে মধ্য-ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ এবং এপ্রিল মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

ঘ) বারি পেঁয়াজ-৪

‘বারি পেঁয়াজ-৪’ জাতটি ২০০৮ সালে মুক্তায়িত হয়।

বারি পেঁয়াজ-৪
বারি পেঁয়াজ-৪
  • একটি উচ্চ ফলনশীল শীতকালীন পেঁয়াজ।
  • আকৃতি গোলাকার, রং ধূসর লালচে বর্ণের এবং ঝাঁঝযুক্ত।
  • গাছের গড় উচ্চতা ৫০-৬০ সেমি এবং প্রতিটি গাছে ১০-১২টি পাতা হয়।
  • প্রতিটি বাল্বের গড় ওজন ৬০-৭০ গ্রাম।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১৭-২২ টন।

ঙ) বারি পেঁয়াজ-৫

বারি পেঁয়াজ-৫
বারি পেঁয়াজ-৫
  • ‘বারি পেঁয়াজ-৫’ গ্রীষ্মকালে চাষের উপযোগী স্বল্প-সময়ের ফসল।
  • এটি সারা বছরব্যাপী আবাদ করা যেতে পারে।
  • আকৃতি চ্যাপ্টা গোলাকার এবং রং লালচে বর্ণের।
  • গাছের গড় উচ্চতা ৪৫-৫৫ সেমি এবং প্রতিটি বাল্বের গড় ওজন ৫৫-৭০ গ্রাম হয়ে থাকে।
  • বীজ বপন থেকে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত প্রায় ৯৫-১১০ দিন সময় লাগে।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১৮-২০ টন।

চ) বারি পেঁয়াজ-৬

বারি পেঁয়াজ-৬
বারি পেঁয়াজ-৬
  • উচ্চফলনশীল শীতকালিন জাত, কন্দ মধ্যমাকৃতির এবং ধূসর লালচে বর্ণের।
  • স্বাদ ঝাঁঝযুক্ত, গাছের কন্দের গড় আকার ৫-১০ সেমি ৩-৫ সেমি।
  • গাছের গড় উচ্চতা ৩০-৬০ সেমি।
  • প্রতি গাছে পাতার সংখ্যা ৬-১০টি।
  • প্রতিটি কন্দের গড় ওজন প্রায় ৩০-৫০ গ্রাম।
  • ফলন হেক্টরপ্রতি ১৬-২০ টন।
  • রোপণকাল: অক্টোবর-ডিসেম্বর এবং সংগ্রহকাল: মার্চ-এপ্রিল।
  • বাংলাদেশের সকল সুনিষ্কাশিত এলাকায় চাষ করা যায়।

(২) শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি

ক) জমি তৈরি

  • রোপণের ৩-৪ সপ্তাহ পূর্বে হালকা গভীর (১৫-২০ সেন্টিমিটার) করে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিতে হবে।
  • পেঁয়াজের শিকড় মাটিতে ৫-৭ সেন্টিমিটারের মধ্যে বেশি নিচে যায় না বলে জমি গভীর করে চাষের প্রয়োজন হয় না।
  • আগাছা বেছে, মাটির ঢেলা ভেঙ্গে ঝুরঝুরে ও সমান করে জমি তৈরি করে পেঁয়াজ লাগাতে হবে।

খ) সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে চাষ করলে পেঁয়াজ বেশ বড় ও ভারী হয় এবং অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। মাটির অবস্থাভেদে সারের মাত্রা নির্ভর করে। সাধারণত মধ্যম ঊর্বর জমির জন্য হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি নিচে দেয়া হলো।

সারের পরিমাণ:

সারমোট পরিমাণশেষ চাষের সময় প্রয়োগপরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে পার্শ্ব প্রয়োগ: ১ম কিস্তিপরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে পার্শ্ব প্রয়োগ: ২য় কিস্তি
গোবর/কম্পোস্ট৫ টনসব
ইউরিয়া২৪০ কেজি৮০ কেজি৮০ কেজি৮০ কেজি
টিএসপি২৬০ কেজিসব
এমওপি১৫০ কেজি৭৫ কেজি৩৭.৫ কেজি৩৭.৫ কেজি

প্রয়োগ পদ্ধতি:

  1. শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি, ১/৩ ভাগ ইউরিয়া ও ১/২ ভাগ এমওপি সার জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়।
  2. বাকি ২/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং ১/২ ভাগ এমওপি সমান ভাগে যথাক্রমে চারা রোপণের ২৫ এবং ৫০ দিন পর দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  3. শল্ককন্দ বা সরাসরি বীজ বপনের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
See also  পিঁয়াজ চাষের সমস্যা: পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার

গ) বপন সময়

অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বীজ যথাক্রমে সরাসরি ক্ষেতে অথবা বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। বারি পেঁয়াজ-৫ শীতকালে চাষ করা যাবে।

ঘ) বপন/রোপণ পদ্ধতি

পেঁয়াজের ক্ষেতে-

  1. সরাসরি বীজ বপন,
  2. ছোট শল্ককন্দ সরাসরি জমিতে রোপণ এবং
  3. বীজতলায় চারা তৈরি করে।

এই তিন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ বপন/রোপণ করা হয়।

উল্লিখিত প্রথম ও দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বীজ হার বেশি ও ফলন মাঝারী পর্যায়ে হয় বলে তেমন লাভ জনক হয় না। বীজ হতে চারা তৈরি করে রোপণ করলেই ফলন বেশি হয়।

বীজ শোধন করে নিলে বীজবাহিত রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

ঙ) বীজতলার পরিচর্যা

  1. বীজ বপনের পরপরই বীজতলার চারিদিকে সেভিন ৮৫ ছিটিয়ে দিতে হবে যাতে পিঁপড়া বীজ নিয়ে যেতে না পারে। এছাড়া ছাই ও কেরোসিন ছিটিয়ে পিঁপড়া দমন করা যায়।
  2. প্রয়োজন অনুসারে ১-২ দিন অন্তর হালকা সেচ দিতে হবে।
  3. চারা ছোট অবস্থায় বীজতলায় আগাছা জন্মে। আগাছাসমূহ পরিষ্কার করে দিতে হবে।
  4. বীজ বপনের ১০-১২ দিনের মধ্যে ডায়থেন এম-৪৫ ২ গ্রাম/লিটার হারে এবং চারা গজানোর ২০-২৫ দিনের মধ্যে রোভরাল ২ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

চ) চারা রোপণ

  • উৎপন্ন চারা জমিতে রোপণ করলে কন্দ বড় হয় এবং ফলন বেশি হয়। পেঁয়াজের জন্য প্রস্তুতকৃত জমিতে মাঝে মাঝে নালা রেখে ছোট ছোট ব্লকে ভাগ করা হয়।
  • ব্লকে ৪০-৪৫ দিন বয়সের স্স্থু চারা, সারি ১০ সেন্টিমিটার দূরত্বে, চারা ৫ সেন্টিমিটার দূরে ও ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীর গর্তে ১টি করে রোপণ করতে হবে।
  • কন্দ গঠন শুরু হওয়া চারা রোপণ করা যাবে না। চারা রোপণের পর সেচ দিতে হবে।

ছ) কন্দ লাগানোর পদ্ধতি

  1. সমতল জমিতে টানা লাঙ্গল দিয়ে ১৫-২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে অগভীর নালা/সারি করে হাত দিয়ে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে পেঁয়াজের ছোট ছোট কন্দ লাগানো হয়।
  2. কন্দ লাগানোর পরই জমিতে সেচ দেওয়া আবশ্যক। এতে ৫-৭ দিন পর চারা বের হয়ে আসে।
  3. ২-৩ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট পূর্ববর্তী বছরের সুস্থ ও পরিপক্ক কন্দ বীজ হিসেবে নিতে হবে।
  4. পেঁয়াজ পাতা ও পেঁয়াজ কলি উৎপাদনের জন্য মাঝারী ও বড় আকারের কন্দ লাগানো যেতে পারে এবং এতে তাড়াতাড়ি (লাগানোর ৩৫-৮০ দিন পর) পেঁয়াজ পাতা ও কলি উৎপন্ন হয়।

জ) ফসলের আন্তঃপরিচর্যা

পেঁয়াজ রোপণ এবং সেচের পর জমিতে প্রচুর আগাছা জন্মাতে পারে। আগাছা জমির রস ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে পেঁয়াজের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। এই জন্য ২-৩ বার বা ততোধিক নিড়ানী দিয়ে জমি আলগা ও আগাছামুক্ত করা দরকার। এতে কন্দ ভালোভাবে গঠিত হয় ও ফলন বাড়ে।

পেঁয়াজের সমগ্র জীবনচক্রে হেক্টরপ্রতি ৩০০ মিলিলিটার পানির প্রয়োজন হয়। এজন্য ৮ থেকে ১০ বার সেচ দিতে হবে। চারা মাটিতে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে আর্দ্রতার অবস্থার উপর ভিত্তি করে সেচ দিতে হবে।

কন্দ গঠিত হয়ে গেলে সেচ কম লাগে। পেঁয়াজ পরিপক্ক হলে ফসল উঠানোর এক মাস পূর্বে সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, না করলে পেঁয়াজের গুণাগুণ ও সংরক্ষণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

ঝ) ফসল সংগ্রহ

পেঁয়াজ পরিপক্ক হলে, গাছের সবুজ পাতা ক্রমশ হলদে হয়ে যায় এবং ৫০% পাতা গলার অংশে নরম হয়ে নুয়ে পড়ে। রোপণের ৯০ থেকে ১২০ দিন পর শীতকালীন পেঁয়াজ তোলার উপযুক্ত হয়।

See also  পিঁয়াজ চাষের সমস্যা: পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার

ঞ) ফলন

সঠিক সময়ে বীজ বোনা ও চারা রোপণ, বীজ হিসাবে কন্দ অথবা আদর্শ চারা নির্বাচন, সঠিক জাত, সেচ ও সার প্রয়োগ এবং মাটির প্রকৃতি ইত্যাদির উপর পেঁয়াজের ফলন নির্ভর করে।

  • সেচ ও সার প্রয়োগে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ১৮-২০ টন ফলন পাওয়া যায়।
  • সরাসরি বীজ বপন করে চাষ করার চেয়ে পেঁয়াজের চারা রোপণ করলে ২০-২৫% ফলন বেশি হয়।

ট) সংরক্ষণ

  • ছায়াযুক্ত স্থানে ৮-১০ সেন্টিমিটার উঁচু করে ৮-১০ দিন রাখলে পেঁয়াজ শুকিয়ে যায়।
  • বাছাই এবং গ্রেডিং করার পর তাক, ঘরের সিলিং অথবা উঁচু ঘরে আলো ও বাতাস চলাচলের সুবিধা যুক্ত শুকনা মেঝেতে বা তৈরিকৃত বাশেঁর মাচায় পেঁয়াজ ছড়িয়ে সংরক্ষণ করা যায়।
  • সংরক্ষণাগারের পেঁয়াজ মাঝে মাঝে উল্টে পাল্টে পরীক্ষা করে পচা ও অঙ্কুরিত পেঁয়াজ বেছে ফেলতে হবে।

(৩) খরিফ/গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি পেঁয়াজ-৫ গ্রীষ্ম/খরিফ মৌসুমে আবাদের জন্য মুক্তায়িত করেছে। এর উৎপাদন প্রযুক্তি নিম্নে দেয়া হল।

ক) মাটি

উঁচু, সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে দোআঁশ বা পলিযুক্ত মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম।

খ) বীজ বপন ও চারা রোপণ

সাধারণত চারা তৈরি করেই ‘বারি পেঁয়াজ-৫’ চাষ করা হয়। বীজ বপনের সময় অত্যাধিক রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলিথিন/চাটাই ব্যবহার করা যেতে পারে এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রখর রোদ ও বৃষ্টির সময় বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে, অন্য সময় বীজতলা উন্মুক্ত রাখতে হবে। প্রথম দিকে খরার কারণে জমিতে রসের অভাব থাকে বলে বীজ তলায় ঘন ঘন সেচ দিয়ে গজানোর পূর্ব পর্যন্ত (৫-৬ দিন) ঢেকে রাখতে হয়।

গ) আগাম চাষ

মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বপন করা যায়। তবে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা উৎপাদন করা উত্তম। অতঃপর ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।

ঘ) নাবি চাষ

নাবি চাষের ক্ষেতে জুলাই থেকে আগস্ট মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। পরবর্তীতে ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয।

ঙ) সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

সফলভাবে খরিফ পেঁয়াজ চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি প্রয়োজনীয় জৈব ও অজৈব সারের পরিমাণ নিম্নের সারণিতে উপস্থাপন করা হলো।

সারের পরিমাণ:

সারমোট পরিমাণশেষ চাষের সময় প্রয়োগ
গোবর৫ টনসব
ইউরিয়া১৫০ কেজিসব
এমওপি১৭৫ কেজিসব
টিএসপি২০০ কেজিসব
জিপসাম১০০ কেজিসব
জিংক সালফেট১২ কেজিসব

প্রয়োগ পদ্ধতি:

  1. শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট ও আগাম চাষের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে।
  2. নাবি চাষের জন্য ১/৩ ভাগ ইউরিয়া অন্যান্য সারের সাথে শেষ সেচ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ২/৩ ভাগ ইউরিয়া যথাক্রমে ২০-২৫ দিন ও ৫০-৫৫ দিন পর পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে।
  3. মাটিতে প্রয়োজনীয় রস না থাকলে সারের পার্শ্ব প্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে।

চ) পরিচর্যা

পেঁয়াজের চারা রোপণের পর একটি প্লাবন সেচ অবশ্যই দিতে হবে। মাটিতে চটা বাঁধলে কন্দের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। অতএব মাটির ‘জো’ আসার সাথে সাথে চটা ভেঙ্গে দিতে হয় ও আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। নিড়ানীর সাথে সাথে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে গাছের গোড়া ঢেকে দিতে হবে।

ছ) ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ

  • পেঁয়াজের গাছ পরিপক্ক হলে এর গলার দিকের টিস্যু নরম হয়ে যায়। ‘বারি পেঁয়াজ-৫’ এর চারা থেকে কন্দের পরিপক্কতা হওয়া পর্যন্ত আগাম চাষের ক্ষেত্রে মাত্র ৬০-৭০ দিন এবং নাবি চাষের ক্ষেত্রে ৯৫-১১০ দিন দরকার হয়।
  • পাতা ও শিকড় কেটে শীতল ও ছায়াময় স্থানে ৮-১০ দিন রেখে কিউরিং করতে হবে।
  • বর্ষাকালীন ফসল বিধায় উত্তোলনকৃত পেঁয়াজ ২-৩ দিন এমনভাবে রেখে শুকাতে হবে যাতে কন্দে সরাসরি রোদ না লাগে। এরপর বাছাই ও গ্রেডিং করার পর বাঁশের মাচা, ঘরের সিলিং, প্লাস্টিক বা বাঁশের তাক অথবা ঘরের পাকা মেঝেতে শুষ্ক ও বায়ু চলাচল যুক্ত স্থানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়।
  • তবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে আর্দ্রতার পারিমাণ বেশি থাকে বলে ইহা এক মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page