Skip to content

 

ফসলের রোগ ও তার প্রতিকার

ফসলের রোগ ও তার প্রতিকার

(১) ফসলের রোগের ধারণা

আমরা কি জানি ফসলের রোগ হয়? আমরা হয়তো ভাবতে পারি মানুষের রোগ হয়, পশু-পাখির রোগ হয়, ফসলের আবার রোগ হয় নাকি? হ্যাঁ, ফসলেরও রোগ হয়।

প্রত্যেক জীবেরই জীবন আছে, রোগ আছে আবার মরণও আছে। জীবের চারপাশে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ আরও অনেক অণুজীব আছে যারা রোগ-বালাই ছড়ায়। মানুষ, জীবজন্তু, পাছপালা অণুজীব দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

রোগাক্রান্ত মানুষ ও জীবজন্তুকে যেমন চিকিৎসা করে সুস্থ করা হয় তেমনি ফসলেরও চিকিৎসা করা হয় এবং নিরোপ করা হয়। অনেক সময় সুচিকিৎসা না হলে ফসল মরে যায়।

আমরা যদি ফসলের মাঠে যাই তবে অনেক রোগের লক্ষণ দেখতে পাব-

  • কোনো কোনো ফসলের পাতায় বা কাণ্ডে নানা প্রকার দাগ;
  • কোনো কোনো ফসলের পাতার ঘরের মেঝের মোজাইকের মতো হলুদ-সবুজ মেশানো ছোপ ছোপ রং;
  • কোনো ফসলের শিকড় পচা;
  • আবার বীজতলায়ও দেখতে পাব অনেক ঢলে পড়া বা পচা চারা গাছ।

এগুলো হচ্ছে গাছের রোগের লক্ষণ। এই লক্ষণ দেখেই কৃষকেরা সতর্ক হবে এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে।

এখন আমরা নিশ্চয় জানতে চাইব ফসলের রোগ বলতে কী বোঝায়? যদি ফসলের শারীরিক কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা দেয়। যেমন-ফসলের বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে না, দেখতে দুর্বল ও লিকলিকে ফুল অথবা ফল ঝরে যাচ্ছে, তখন বুঝতে হবে ফসলের কোনো না কোনো রোগ হয়েছে।

নানা লক্ষণে ফসলের রোগ প্রকাশ পায়। ভিন্ন ভিন্ন ফসলের ভিন্ন ভিন্ন রোগ হয়, ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণও দেখা দেয়।

(২) রোগাক্রান্ত ফসলের লক্ষণ

নিচে কতকগুলো রোগাক্রান্ত ফসলের লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:

  1. দাগ: ফসলের পাতায়, কাণ্ডে বা ফলের গায়ে নানা ধরনের দাগ বা স্পট দেখা দেয়। দাগের রং কালো, হালকা বাদামি, গাঢ় বাদামি কিংবা দেখতে পানিতে ভেজার মতো হয়। ফসলের এসব দাগ বিভিন্ন রোগের কারণে হয়। যেমন- ধান গাছের বাদামি দাগ একটি ছত্রাকজনিত রোগের লক্ষণ।
  2. ধ্বসা রোগ: পাতা ঝলসে যায়। যেমন- ধান ও আলুর ধ্বসা রোগ।
  3. মোজাইক: ফসলের পাতায় যখন পাঢ় ও হালকা হলদে-সবুজ এর ছোপ ছোপ রং দেখা যায় তখন এই লক্ষণকে মোজাইক বলা হয়। ঢেড়শ ও মুগে মোজাইক রোগ দেখা যায়। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ।
  4. ঢলে পড়া: অনেক সময় ফসলের কাণ্ড ও শিকড় রোগে আক্রান্ত হলে ফসলের শাখাগুলো মাটির দিকে ঝুলে পড়ে। এই অবস্থাকে চলে পড়া রোগ বলে। যেমন- বেগুনের ঢলে পড়া রোগ
  5. পাতা কুঁকড়িয়ে যাওয়া: ভাইরাসজনিত কারণে ফসলের পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। পেঁপে, টমেটো এসব ফসলে পাতা কুঁকড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
See also  ফসল বিন্যাস কাকে বলে? ফসল বিন্যাসে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা

(৩) রোগাক্রান্ত ফসলের প্রতিকারের ব্যবস্থা

রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে ফসলের রোগের প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হয়। কারণ, ফসল একবার রোগাক্রান্ত হয়ে গেলে প্রতিকার করা কঠিন। তাই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার আগে নিচে উল্লিখিত প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করা জরুরি:

  1. জীবাণুমুক্ত বীজ ব্যবহার করা: বীজের মাধ্যমে অনেক রোগ ছড়ায়। তাই কৃষককে নীরোগ বীজ সংগ্রহ করতে হবে বা বীজ শোধন করে বুনতে হবে।
  2. বীজ শোধন: অনেক বীজ আছে নিজেরাই রোগ বহন করে। বীজবাহিত রোগ জীবাণু নীরোগ করার জন্য বীজ শোধন একটি উত্তম প্রযুক্তি। এজন্য ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা হয়।
  3. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ফসল আবাদ করা: ফসলের ক্ষেতে আগাছা থাকলে ফসল রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। কারণ আগাছা অনেক রোগের উৎস। তাই আগাছা পরিষ্কার করে চাষাবাদ করতে হবে।
  4. রোগাক্রান্ত গাছ পুড়িয়ে ফেলা বা মাটিতে পুঁতে ফেলা: এক গাছ রোগাক্রান্ত হলে অন্য গাছেও ছড়িয়ে পড়ে। যাতে রোগ পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য নির্দিষ্ট রোগাক্রান্ত গাছটি তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নতুবা মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলতে হবে।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page