ফার্টিগেশন/ড্রিপ সেচ বাংলাদেশের একটি নতুন সেচ প্রযুক্তি। এতে পানির সাথে দ্রবণীয় রাসায়নিক সার যেমন-ইউরিয়া, পটাশ একত্রে মিশিয়ে ফসলে প্রয়োগ করা হয়। ফলে ফসলের জমিতে সেচ এবং সার একই সঙ্গে প্রয়োগ করা যায়। প্রতি ১৪০ লিটার পানিতে ১ কেজি সার মেশাতে হয়।
ফার্টিগেশন/ড্রিপ সেচ উচ্চ মূল্যের ফসলে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষের জন্য খুবই উপযোগেী পদ্ধতি। ক্যাপসিকাম একটি খুবই উচ্চ মূল্যের সবজি ফসল। তবে এটি একটি আবহাওয়া সংবেদনশীল ফসল। সাধারণত দিনের তাপমাত্রা ১৬-২৫০ সে. থাকলে ভাল জন্মে। সেজন্য উন্মুক্ত/অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ক্যাপসিকাম ভাল ফলন দেয় না। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ড্রিপ সেচের মাধ্যমে চাষ করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া এবং অধিক মানুফা অর্জন করা সম্ভব।
নিম্নে ক্যাপসিকাম চাষে ফার্টিগেশন/ড্রিপ সেচ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
রোপণের সময়:
সাধারণত মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর পর্যন্ত ক্যাপসিকাম রোপণের উপযুক্ত সময়। মাটি শোধিত বীজতলায় চারা তৈরি করে ২৫-৩০ দিনের বয়সের চারা বেডে রোপণ করতে হয়।
ড্রিপ সেচের বেডের সাইজ ৭-১০ মিটার লম্বা এবং ২.২ মিটার প্রস্থ হওয়া বাঞ্ছনীয় যাতে প্রতি বেডে ৪টি লাইনে গাছ রোপণ করা যায়। প্রতি লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৫০ সেমি হওয়া উচিত।
সার প্রয়োগ:
ফার্টিগেশন/ড্রিপ পদ্ধতিতে ফারো/প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ইউরিয়া এবং পটাশ কম লাগে কারণ এতে সারের ব্যবহার ক্ষমতা অনেক বেশি।
সারের তুলনামূলক ব্যবহার:
ইউরিয়া এবং পটাশ ছাড়া বাকি সারগুলো সমুদয় পরিমাণ জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে।
ইউরিয়া এবং পটাশ চারা রোপণের ২০ দিন, ৪০ দিন এবং ৬০ দিন পর সমান ৩ ভাগে সেচের পানির সঙ্গে মিশিয়ে ড্রিপ সেচের মাধ্যমে ফসলে প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম | ফারো/প্রচলিত পদ্ধতি | ফার্টিগেশন/ড্রিপ পদ্ধতি |
গোবর | ১০ টন/হেক্টর | ১০ টন/হেক্টর |
ইউরিয়া | ২২০ কেজি/হেক্টর | ১৬০ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি | ২০০ কেজি/হেক্টর | ৩৩০ কেজি/হেক্টর |
এমওপি | ২০০ কেজি/হেক্টর | ১৫০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ১০০ কেজি/হেক্টর | ১০ কেজি/হেক্টর |
জিংক অক্সাইড | ৫ কেজি/হেক্টর | ৫ কেজি/হেক্টর |
প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ:
- প্লাস্টিক বা টিনের তৈরি অথবা ২০০-৫০০ লিটারের মবিলের ড্রাম পানির ট্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রতি ৩ শতাংশ জমিতে সেচ দেয়ার জন্য ১৭৫-২০০ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি ট্যাংকের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি ট্যাংকের দাম বাজারে ৪০০-৫০০ টাকা। প্রতিটি পানির ট্যাংক মাটি হতে ন্যূনতম ৩ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করতে বাশেঁর ৪টি খুঁটিঁ এবং আড়াআড়ি বাশেঁর সাপোর্ট প্রয়োজন হয়।
- পানির ট্যাপ ট্যাংক থেকে মেইন লাইনে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়। পিভিসির তৈরি। প্রতিটির দাম ৮-১০ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ)।
- মেইন লাইন ৩/৪ ইি ব্যাস বিশিষ্ট পিভিসি পাইপ। প্রতি ফুটের দাম ৫-৬ টাকা।
- সাব মেইন ১০-১২ মিমি ইি ব্যাস বিশিষ্ট পিভিসি পাইপ। প্রতি ফুটের দাম ২.২৫-২.৫০ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ)।
- পিভিসির তৈরি জয়েন্টার মেইন লাইন ও সাব-মেইন লাইনের মধ্যে সংযোগের জন্য ব্যবহৃত হয় যার প্রতিটির দাম ১০-১২ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ)।
- মাইক্রোটিউব ০.২৫ মিমি ব্যাসের প্লাস্টিক পাইপ। প্রতি ফুটের দাম ০.৮০০-১.০০ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ)।
- কানেক্টর (পিভিসির তৈরি) মাইক্রোটিউব ও সাব-মেইনের সংযোগের জন্য ব্যবহৃত যার প্রতিটির দাম ১.৫০ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ)।
- পিভিসির তৈরি ড্রিপার গাছের গোড়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় পানি দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় যার প্রতিটির দাম ১.৫০ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ)।
সুবিধাসমূহ:
- ফার্টিগেশন/ড্রিপ পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে ১৫-১৬ টন (প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ৪০-৪৫% অধিক) ক্যাপসিকাম উৎপাদন করা যায়।
- প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ইউরিয়া ও পটাশ কম লাগে (৩৫-৪০%) এবং সেচের পানি কম লাগে (৪৫-৪৮%)।
- ফার্টিগেশন/ড্রিপ পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষের আয়-ব্যয়ের অনুপাত ৫:১ এবং প্রতি হেক্টর জমিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে (পলিসেড) ফার্টিগেশন/ড্রিপ পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ করে নিট মুনাফা ৪.০-৪.২৫ লক্ষ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ) পাওয়া সম্ভব।
- ব্যাকটেরিয়াজনিত নুয়ে পড়া রোগের বিস্তার কম হয়। বর্তমানে এ উন্নত পদ্ধতির যাবতীয় উপকরণ স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয় এবং প্রতি ৩ শতক জমিতে ফসলের জন্য এ পদ্ধতিতে সেচ খরচ মৌসুমে ৮৫০-১,০০০ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ) হয়।
[সূত্র: বিএআরআই]