হাজার বছর ধরেই ফুলকে সৌন্দর্যের প্রতীক ও আধ্যাত্মিক বস্তু হিসেবে ধরা হয়।
ফুল অনেক রকমের হয়। ফুলের প্রকারভেদ নির্ভর করে তাদের আকার-আকৃতি ও রঙের সংমিশ্রনের উপর তাদের প্রতিটির নিজস্ব নাম ও শ্রেণী থাকে।
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক এ শাপলা ফুলের উপস্থিতি বিদ্যমান। ফুল আমাদের পরিবেশেও অনেক বড় অবদান রাখে। পৃথিবীতে খাদ্য হিসেবে ফুলের মধুর কোনো তুলনা নেই। এমনকি ফুলের মধু এমন একটি খাদ্য যা অনেক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব।আবার ফুলকে কখনো কখনো ভালবাসার প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। বর্তমানে প্রেমিক-প্রেমিকাগণ গোলাপ ফুল এর মাধ্যমে ভালবাসার প্রকাশ করে থাকে।
ফুল আমাদের জীবনে নানাভাবে কাজে লাগে। এর মধ্যে রয়েছে:
- সৌন্দর্যবর্ধন: ফুলের রঙ, আকার, গন্ধ আমাদের চারপাশের পরিবেশকে সুন্দর করে তোলে। বাড়ি, অফিস, পার্ক, রাস্তাঘাট, এমনকি কবিতা, ছবি, গান, চলচ্চিত্রেও ফুলের ব্যবহার করা হয়।
- অনুভূতি প্রকাশ: ফুল আমাদের বিভিন্ন অনুভূতি প্রকাশ করতে সাহায্য করে। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা, দুঃখ, শোক ইত্যাদি প্রকাশ করতে আমরা ফুল উপহার দেই।
- চিকিৎসা: অনেক ফুলের ঔষধি গুণ রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, গোলাপ, চন্দন, তুলসী, ল্যাভেন্ডার, ক্যামোমাইল ইত্যাদি।
- খাদ্য: অনেক ফুল খাওয়া যায়।
- উৎসবে: বিভিন্ন উৎসবে ফুলের ব্যবহার করা হয়। যেমন, বিয়ে, জন্মদিন, পূজা-পার্বণ, নববর্ষ, বিজয় দিবস ইত্যাদি।
- শিল্প: ফুলের ব্যবহার দিয়ে বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়। যেমন, ফুলের মালা, ফুলের টুপি, ফুলের ছবি, ফুলের গহনা ইত্যাদি।
ফুল আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর, আনন্দময় ও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
নিচে ১১টি ফুলের নাম ও ছবি উপস্থাপন করা হলো-
(১) গ্লাডিওলাস ফুল
বিভিন্ন ফুলের মধ্যে ইদানিং গ্লাডিওলাস ফুলটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আকর্ষণীয় রঙ, গঠন এবং দীর্ঘ সময় এটি সজীব থাকে বলে এই ফুলটি বেশ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। গ্লাডিওলাস ফুল বিভিন্ন রংয়ের হতে পারে, যেমন-সাদা, হলুদ, গোলাপী, ফিকে লাল, লাল, গাঢ় লাল, কমলা, বেগুনী ইত্যাদি।
(২) অর্কিড ফুল
ফুলের রাজ্যে রঙিন, সুগন্ধি আর বহুলবিস্তৃত বৈশিষ্ট্য অর্কিড পুরানো গাছ, পাথর খন্ড বা গাছের ডাল আঁকড়ে ধরে আদ্রতা শুষে বেঁচে থাকে। অর্কিড পানি, বাতাস ও আলো থেকে খাবার তৈরী করে। ফুলটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আকর্ষণীয় রঙ, বিভিন্ন ধরনের গড়ন, সুগন্ধ, ঔষধি গুণাগুণ, দীর্ঘ স্থায়িত্বকাল।
এই অর্কিড ফুলের গঠন বৈচিত্র্যে বিস্মিত হয়ে প্রাচীন চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস ‘সেরাফুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। দার্শনিক প্লেটো, এরিস্টোটল, থিওফ্রাসটাস আদর করে এ ফুলের নাম দিয়েছিলেন অর্কিস। কালক্রমে এ নামটিই বিবর্তিত হয়ে অর্কিড হয়েছে।
(৩) চন্দ্রমল্লিকা ফুল
এটি একটি অতি পরিচিত ফুল। এই ফুলের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে। বেশিরভাগ প্রজাতির উৎপত্তি পূর্ব এশিয়া থেকে এবং এই ফুলের বৈচিত্র্যের কেন্দ্রস্থল হল চিনে। এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। বিভিন্ন রংয়ের এই ফুলগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমূল্য রয়েছে প্রথম সারিতে। অক্টোবরে কুঁড়ি আসে এবং নভেম্বরে ফুল ফোটে৷ গাছে ফুল তাজা থাকে ২০ থেকে ২৫ দিন৷ ফুলদানি সাজানোর জন্য লম্বা ডাঁটাসহ এবং মালা গাঁখার জন্য ডাঁটা ছাড়া ফুল তোলা হয়। অন্যান্য স্থানীয় ভাবে এটিকে চন্দ্রমুখী নামেও ডাকা হয়।
(৪) রজনীগন্ধা ফুল
সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ফুলগুলির মধ্যে রজনীগন্ধা অন্যতম। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং ফুলদানী সাজাবার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এফুলের নির্যাস হতে সুগন্ধিও তৈরি হয়ে থাকে। সারা বছরই বাজারে এ ফুলের চাহিদা বেশি থাকে এরং সারা বছরই এ ফুল চাষ হয়ে থাকে। তবে শীতকালে কিছুটা কম ফোটে। রজনীগন্ধার কন্দ লাগিয়ে বংশবৃদ্ধি করা হয়। মার্চ-এপ্রিল মাস কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়।
(৫) জারবেরা ফুল
সারাবিশ্বের ফুলের বাজারে চাহিদার তুঙ্গে যে ফুলগুলো রয়েছে তারমধ্যে জারবেরা অন্যতম। এজন্যই দিন দিন সারা বিশ্বেই জারবেরা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জারবেরা ফুলের পূর্ণ বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয়।শীতকালেই সাধারণত জারবেরা ফুলের চাষ করা হয়। তবে সারা বছরই গ্রিন/পলি হাউসে জারবেরা উৎপাদন করা সম্ভব।
(৬) এ্যানথুরিয়াম ফুল
এ্যানথুরিয়াম এ্যারেসী (Araceae) পরিবারভুক্ত বহুবর্ষজীবী কান্ডহীন হারবেসিয়াস জাতীয় বাহারী পাতা ও ফুলের গাছ। এ গাছের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হল স্প্যাথ (Spathe)। স্প্যাথ আসলে পাতার পরিবর্তিত রূপ। বছরে একটি ঝাড় থেকে ৫-৬টি ফুল পাওয়া যায়। পাতা গাঢ় সবুজ, হৃদয়াকৃতির ভেলভেটী পাতায় শিরাগুলি সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।
(৭) ডালিয়া ফুল
ডালিয়া সর্বজন প্রিয় ফুল। শীতকালীন মৌসুমী ফুলের মধ্যে ডালিয়াই সর্ববৃহৎ আকার ও আকর্ষণীয় রঙের ফুল। ডালিয়ার ৪২টি প্রজাতি রয়েছে, সাধারণত সংকর প্রজাতিগুলি বাগানের গাছ হিসাবে দেখা যায়। ডালিয়া ফুলের গঠন পরিবর্তনশীল, যেখানে প্রতি ডাঁটায় একটি করে মাথা থাকে, এগুলি ৫ সেমি (২ ইঞ্চি) ব্যাসের মতো বা ৩০ সেমি (১ ফু) (“ডিনার প্লেট”) পর্যন্ত হতে পারে।
(৮) লিলি ফুল
বাহ্যিক রঙ আর বৈচিত্র্যের সাথে রয়েছে লিলির মাদকতাপূর্ণ গন্ধ – সব মিলিয়ে লিলি এতটাই হৃদয়গ্রাহী যে, বৈশ্বিক ফুলের বাজারে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান দখল করে নিয়েছে এ ফুল। লিলি ফুল লাল, হলুদ, গোলাপী, নীল, বেগুনী বিভিন্ন রঙয়ের হয়ে থাকে। স্টিকসহ এই ফুলটি লম্বায় হয় প্রায় এক হাত সমান। একেকটি স্টিকে থাকে প্রায় ছয় থেকে সাতটি ফুল। তাছাড়া, এর পাতাগুলো হয় ছুরির মতো ঊর্ধ্বমুখী।
(৯) এলপিনিয়া ফুল
এটি একটি কন্দজাতীয় গ্রীষ্মকালীন ফুল। কাট-ফ্লাওয়ার হিসেবে এ ফুলের ব্যবহার বেশি। গাঢ় লাল রঙের ১৭.০-১৮.০ সেমি লম্বা মঞ্জুরী বিশিষ্ট ফুল। প্রতি গাছে ফুলের সংখ্যা প্রায় ১০-১২ টি। ফুলের সজীবতা থাকে ১২-১৪ দিন। আধো আলোছায়া এরূপ স্থানে এই ফুল ভালো জন্মে।
(১০) গাঁদা ফুল
গেঁদা বা গাঁদা বা গন্ধা একটি সুগন্ধী ফুল যা সর্বত্র সহজে জন্মায় এবং গৃহসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। গাঁদা ফুল বিভিন্ন জাত ও রঙের দেখা যায়। এই ফুল সাধারণত উজ্জল হলুদ ও গাঢ় খয়েরী হয়ে থাকে। সাধারণতঃ এটি শীতকালীন ফুল হলেও বর্তমানে এটি গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালেও চাষাবাদ হয়ে থাকে। বাগানের শোভা বর্ধন ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বন ও গৃহসজ্জায় এর ব্যাপক ব্যবহার ফুলটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
(১১) লিলিয়াম ফুল
লিলিয়াম হল একধরণের গুল্মজাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ যা প্রধানত কন্দ থেকে উৎপন্ন হয়। কন্দ থেকে ফুল ফোটাতে যায়। এটি একটি বড় সুগন্ধি ফুল এবং সারা পৃথিবীতে সাদা, হলুদ, কমলা, গোলাপী, লাল, ও বেগুনী বর্ণের ফুল দেখা যায়। এই জাতের ফুলে ছয়টি পাপড়ি থাকে যারা বেশ প্রসারিত হয়। অপরূপ সৌন্দর্য, নজরকাড়া রঙ আর ঘ্রাণের কারণে বিশ্বজুড়ে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে লিলিয়াম ফুল।
[সূত্র: বিএআরআই]