প্রকৃতিতে গাছপালা ঘেরা বিস্তৃত এলাকা যেখানে প্রাকৃতিকভাবে বন্য পশুপাখি সহ কীট পতঙ্গ একত্রে বসবাস করে তাকে বন বলা হয়।
বন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি হিসেবে সাড়ে বাইশ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি বনভূমি বিদ্যমান। ভূমির উচ্চতা ও বিবিধ প্রাকৃতিক কারণে দেশের বনভূমির অধিকাংশ পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত।
বাংলাদেশে কয়েক ধরণের বন আছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পাহাড়ি বন, ম্যানগ্রোভ বন, শালবন ও কৃত্রিম বন।
নিম্নের আলোচনায় বন কি, বনের বৈশিষ্ট্য, বনের গুরুত্ব, বনায়ন কাকে বলে, বনায়ন কত প্রকার ও কি কি প্রভৃতি বিষয় দিয়ে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
(১) বন কি?
সাধারণভাবে লোকালয় থেকে দূরে যখন বনজ গাছপালা একত্রে একই জায়গায় জন্মায় এবং প্রাকৃতিকভাবে যেখানে বন্য পশুপাখি সহ কীট পতঙ্গ একত্রে বসবাস করতে পারে তাই বন।
বনে সাধারণত এক গাছের মুকুট অন্য গাছের মুকুটকে ঢেকে দিলে গাছের ছায়ার সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ সুন্দরবন, শালবন, পাহাড়ি বন ইত্যাদি। ইদানিং সামাজিক বনায়নের ধারণা বিস্তৃত হওয়ায় বাড়ীর আশেপাশের গাছপালাকে গ্রামীণ বনও বলা হয়ে থাকে। ফলে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দু-ভাবেই বন সৃষ্টি করা যায়।
বন সৃষ্টি জগতের এক অপার সৌন্দর্য ও সম্পদ। বৃক্ষরাজি, বন্য পশুপাখি, কীট পতঙ্গ ও অন্যান্য জীবের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক বনজ পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং বনে নাম জানা ও অজানা বৃক্ষরাজি বিদ্যমান থাকে।
(২) বনের বৈশিষ্ট্য
প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যেভাবেই বন সৃষ্টি হউক না কেন, একটি বনের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা নিম্নরূপ-
- বনের আয়তন বিশাল হবে এবং যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বৃহদাকার বৃক্ষরাজি থাকবে।
- বড় বৃক্ষের পাশাপাশি ছোট-বড় ঝোপঝাড় থাকবে।
- বনে বৃক্ষরাজির স্তরবিন্যাস থাকবে অর্থ্যাৎ গাছপালা উচু, নীচু ও মাঝারী স্তরে বিন্যস্ত থাকবে।
- বনে বিভিন্ন ধরণের বন্য প্রাণী, পাখি ও কীট-পতঙ্গ থাকবে।
- বনের ভূ-প্রকৃতি বিচিত্র হবে অর্থ্যাৎ কোথাও উচু, কোথাও নীচু বা শুকনা, কোথাও জলাবদ্ধ থাকতে পারে।
- বনের গাছপালা ও পশু পাখির খাদ্য স্তর ও খাদ্য শিকলের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া থাকবে।
- বনের ভূ-পৃষ্ঠে বৃক্ষগুল্মের পচা পাতার ও আধা পচা পাতার স্তর থাকবে। সেজন্য বনের মাটি সব সময় খাদ্যোপদানে পরিপূর্ণ থাকে।
(৩) বনের গুরুত্ব
ক) বনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
i) সভ্যতার বাহন হিসেবে
অরণ্যচারী মানুষ যেদিন পাথর ঘষে আগুন জ্বালায় সেদিন থেকে সভ্যতার উন্মেষ ঘটতে শুরু করে। মানব সভ্যতার সেই উষালগ্ন থেকেই সভ্যতার বিকাশে বনের গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক সভ্যতার বাহন যে কাগজ তা বনজ সম্পদ থেকেই প্রধানত তৈরী হয়। বিভিন্ন ধরণের বনজ উদ্ভিদ ও বাঁশ কাগজ উৎপাদনের অন্যতম উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই সভ্যতার বাহন হিসেবে বন তথা বনজ সম্পদের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় বনজ সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কাঠ ও বাঁশ ঘরবাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে যানবাহন তৈরি, আসবাবপত্র প্রস্তুতকরণ সহ নানাবিধ কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। নির্মাণ কাঠ হিসাবে শাল, সুন্দরী, সেগুন, গর্জন, গামার, তেলশুর, চিকরাশি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আমাদের নিত্য ব্যবহার্য আসবাবপত্র অনাদিকাল ধরে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে মানুষের কাছে আদৃত হয়ে আসছে। ইদানিংকালে ধাতব ও সিনথেটিক আসবাবপত্র যদিও জনপ্রিয় হচ্ছে, নান্দনিকতার বিচারে কাঠের আসবাবপত্র আজও সেরা বলে বিবেচিত। সেগুন, মেহগনি, চাপালিশ, শিশু কাঠের আসবাবপত্র সিনথেটিকের তুলনায় অনেক বেশি দৃষ্টিনন্দন, দীর্ঘস্থায়ী ও আরামদায়ক।
ii) জ্বালানি হিসেবে
সভ্যতার অন্যতম প্রধান উপকরণ হলো এনার্জি বা শক্তি। বাংলাদেশে শক্তির উৎস হলো জ্বালানি কাঠ যার প্রধানতম উপকরণ হলো উদ্ভিদ দ্রব্য। দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় জ্বালানি হিসাবে কাঠের কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসাবে বর্ধিত জনগোষ্ঠীর খাদ্য, জ্বালানি ও বাসস্থানের চাহিদা পূরণে দেশের বনজ সম্পদের উপর সর্বাত্মক চাপ বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বনজ সম্পদ ও বনাঞ্চলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কাঠ ও জ্বালানি কাঠের ঘাটতি মোকাবেলায় বনের গুরুত্বও বাড়ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে জ্বালানি কাঠের চাহিদা ১৫.১ মিলিয়ন ঘনমিটারেরও বেশি যার সিংহভাগ বৃক্ষজাত। এ বিপুল পরিমাণ জ্বালানি চাহিদার একটি বড় অংশ আসে দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চল হতে। যেমন- বাংলাদেশের দক্ষিণা লের জনগণের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সুন্দরবনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
সুন্দরবনের গরান, কেওড়া, বাইন প্রভৃতি উৎকৃষ্ট মানের জ্বালানি কাঠ। গরান সুন্দরবনের একটি প্রধান ও অন্যতম জ্বালানি কাঠ। গরান জ্বালানি মানে ও গুণে উন্নত। প্রতি বছর সুন্দরবন হতে লক্ষ লক্ষ মন জ্বালানি আহরণ করা হয়।
যুগ যুগ ধরে সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট ও বরিশালের জনগণ সুন্দরবনের গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। সুতরাং জ্বালানি কাঠের সরবরাহে বনের অপরিসীম গুরুত্বের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
iii) শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে
বন এবং বনজ সম্পদকে ঘিরে প্রতিটি দেশেই অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও বনজ সম্পদ নির্ভর অনেক শিল্পকারখানা আছে যার কাঁচামাল বিভিন্ন বন থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। দেশের দু’টি বৃহৎ কাগজ কলের একটি হচ্ছে কর্ণফুলী পেপার মিল ও অন্যটি খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। কর্ণফুলী পেপার মিলে প্রতি বছর আনুমানিক ৪০-৫০ হাজার ঘনমিটার বাঁশ সরবরাহ করতে হয় যার পুরাটাই আসে পার্বত্যবন থেকে। অন্যদিকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের জন্য সুন্দরবন থেকে ১৪-১৫ হাজার ঘনমিটার গেওয়া কাঠ প্রতি বছর আহরণ করা হয়ে থাকে।
রাঙ্গামাটিতে প্রতিষ্ঠিত রেয়ন শিল্পের জন্য বিশেষ ধরণের বাঁশ ও কাঠের প্রয়োজন হয়, যার সরবরাহও হয়ে থাকে পার্বত্যবন থেকে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা ছোট বড় ম্যাচ ফ্যাক্টরির জন্য প্রচুর কাঠের প্রয়োজন হয়। সাধারণত শিমুল, কদম, বট, চাকুয়া কড়ই কাঠ এসব কারখানায় ব্যবহৃত হয়।
গ্রামীণ কুটির শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহে বনের গুরুত্বও অপরিসীম। কুটির শিল্পের কাঁচামাল হচ্ছে বাঁশ, বেত, কাঠ, শাখা, ফুল, ফল ও বীজ ইত্যাদি। এছাড়াও প্রক্রিয়াকরণ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প যেমন ফ্লাইউড, ভিনিয়ার, হার্ডবোর্ড তৈরীতেও কাঠ ও কাঠজাত দ্রব্যের ব্যবহার বনের গুরুত্বকে অপরিহার্য করে রেখেছে।
iv) ভেষজ হিসেবে
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই বনজ উদ্ভিদ বা এর অংশ বিশেষ যেমন বাকল, পাতা, ফুল ও ফল ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক সভ্য সমাজেও ভেষজ ঔষধের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। এখনো আদিবাসি মানুষ যারা বন বা বনাঞ্চলের পাশে বসবাস করছে তাদের চিকিৎসার অন্যতম উপকরণ হলো বনজ উদ্ভিদ ও লতা পাতা।
বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগেও গ্রামা লের মানুষের নিকট ভেষজ এখনও অত্যন্ত জনপ্রিয়। অসংখ্য ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অর্জুন, আমলকি, হরিতকী, বয়রা, নিম, বাসক, কালমেঘ, তুলসী, ধুতুরা, আকন্দ, থানকুনী, পিতরাজ ইত্যাদি গ্রামীণ জনপদের মানুষের চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। অর্জুন হৃদরোগে; আমলকি, হরিতকি, বয়রা পেটের পীড়া, অজীর্ণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, আমাশয় ও চর্মরোগে; বাসক, তুলসি সর্দি-কাঁশি হাপানি রোগে; নিম, থানকুনি পেটের পীড়া, চর্মরোগ ও ক্রিমিনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
v) প্রসাধন হিসেবে
প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষ করে সুগন্ধি দ্রব্য তৈরীতে বনের গুরুত্ব অপরিসীম। আগর গাছ থেকে তৈরী সুগন্ধি ও আতর মানুষের অত্যন্ত প্রিয় প্রসাধনী সামগ্রী।
খ) বনের পরিবেশগত গুরুত্ব
i) আবহাওয়ার উপর বনের প্রভাব
যে কোনো এলাকার আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট এলাকার বনাঞ্চলের দ্বারা দারুনভাবে প্রভাবিত হয়। সাধারণভাবে বলা হয় যে কোন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অন্ততঃ ২৫% বনভূমি থাকা অত্যাবশ্যক। বনের বৃক্ষরাজি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন উৎপাদনের মাধমে পরিবেশ নির্মল রাখে এবং বায়ুমন্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে গ্রীন হাউন গ্যাসের বিরূপ প্রতিক্রিয়া কমায়। বনের গাছপালা বায়ুমন্ডলে জলীয়বাষ্পের আধিক্য ঘটায় বলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ে। যে সমস্ত এলাকায় গাছপালা কম সেখানে মরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। গাছপালা মাটিতে জৈব পদার্থের সংযোজন করে মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং প্রাণিজগতের খাদ্য শিকলের ভারসাম্য রক্ষা করে।
ii) প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে বনের অবদান
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে বনের ভূমিকা ব্যাপক। বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, সিডর এর প্রলয়ংকারী আঘাত প্রাথমিকভাবে বন বা দেশের বনাঞ্চল প্রতিহত করে। সমসাময়িক সময়ের সবগুলো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সুন্দরবনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হয়েছে। ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পদ অনেকাংশে রক্ষা পেয়েছে। তাছাড়া বন বা বৃক্ষরাজির শিকড় মাটি আটকে রেখে ভূমিক্ষয় রোধ করে। বন পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বস রোধ করে। এছাড়া বন মাটির উপরে বায়ুপ্রবাহ হ্রাস করে ফসলাদির ক্ষয়ক্ষতি কমায়।
iii) চিত্ত বিনোদনে বনের গুরুত্ব
সামাজিক জীব হিসেবে মানব সমাজের জন্য চিত্ত বিনোদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিত্ত বিনোদনের জন্য বন, বনভূমি বা গাছপালা বেষ্টিত ছায়া সুনিবিড় স্থান সব সময়ই আর্কষণীয়। বনবীথির ছায়া ঘেরা পরিবেশ, নির্মল বায়ু, বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ বনাঞ্চল ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের সব সময় কাছে টানে। তাইতো নির্মল আনন্দ উপভোগের জন্য বনভোজন ও বন বিহারের বিকল্প নেই।
মানুষের চিত্ত বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে যে সমস্ত পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে তার অধিকাংশই হলো বন ও বৃক্ষরাজি শোভিত স্থান। যেমন-
- জাতীয় উদ্যান, ভাওয়াল ও মধুপুর;
- জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান;
- হিরণ পয়েন্ট, সুন্দরবন;
- রামসাগর, দিনাজপুর;
- হিমছড়ি, কক্সবাজার;
- ফয়েস লেক, চট্টগ্রাম;
- জাফলং, সিলেট;
- লাউয়াছড়া, মৌলভীবাজার;
- সীতাকুন্ডু, চট্টগ্রাম।
ঐতিহাসিকভাবে বনের গুরুত্ব অপরিসীম। মানব সভ্যতার উন্মেষ, এর ক্রমবিকাশ ও উন্নয়নে বনের অবদান অনস্বীকার্য। আদিম মানুষের প্রাথমিক আশ্রয় ছিল বন। বন মানুষের চিকিৎসার মত মৌলিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট কারণে বনভূমি ধ্বংস হওয়ার প্রেক্ষিতে বনের গুরুত্ব বিবেচনায় সামাজিক বনায়নের নামে আরও এক ধরণের কৃত্রিম বনের প্রসার ঘটানো হচ্ছে। কৃত্রিম বনের প্রসারের জন্য বনজ বৃক্ষের চারা রোপণের কৌশল, বনজ বৃক্ষের সঠিক ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরী।
(৪) বনায়ন কাকে বলে?
বনায়ন কাকে বলে: সাধারণভাবে বনভূমির পরিমান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বর্ত মান বনভূমিসমূহের বৃক্ষ শূন্য স্থানে অথবা নতুন ভূমিতে বিজ্ঞান সম্মতভাবে বৃক্ষ লাগানো, বৃক্ষের পরিচর্যা ও বৃক্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচীকে বনায়ন বলা হয়।
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কারণে বনজ সম্পদের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অধিকহারে কাঠ আহরণের কারণে প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ দ্রুতহারে কমে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই বনজ সম্পদের সরবরাহ বৃদ্ধি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনায়নের গুরুত্ব প্রতিদিনই বাড়ছে। এ ধরণের বনায়নকে সাধারণভাবে কৃত্রিম বনায়ন বলা হয়ে থাকে।
(৫) বনায়ন কত প্রকার ও কি কি?
বনায়ন পদ্ধতিকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। যথা: ১। প্রচলিত বনায়ন ও ২। সামাজিক বনায়ন।
প্রচলিত বনায়ন কাকে বলে: সাধারণভাবে প্রচলিত বন অর্থাৎ সরকারি নিয়ন্ত্রাধীন বনের ক্ষয়িষ্ণু অংশে অথবা নতুন সৃষ্ট ভূমিতে যে বনায়ন কর্মসূচী বন বিভাগের উদ্দ্যোগে বাস্তবায়ন করা হয় তাকে প্রচলিত বনায়ন বলে। এ ধরণের বনায়ন কার্যক্রমে জনসাধারণের অংশগ্রহণ থাকে না।
সামাজিক বনায়ন কাকে বলে: সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকে। বন বিভাগের উদ্দ্যোগে জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে বনায়ন কর্মসূচী বাস্তবায়িত হয় তাকেই সামাজিক বনায়ন হয়।
লোকালয় থেকে দূরে যখন অনেক গাছপালা একত্রে জন্মায় এবং যেখানে বন্য পশুপাখি একত্রে বসবাস করে তখন তাকে বন বলা হয়।
উপরোক্ত আলোচনায় আসরা বন কি, বনের বৈশিষ্ট্য, বনের গুরুত্ব, বনায়ন কাকে বলে, বনায়ন কত প্রকার ও কি কি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানলাম।
বন আয়তনে বিশাল হয় এবং অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষরাজি সেখানে থাকে। বন অর্থনৈতিকভাবে একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন যে এলাকায় গড়ে ওঠে সে এলাকার পরিবেশকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]