(১) বাঁশ গাছের বৈশিষ্ট্য
গৃহ নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে বাঁশ পরিচিত। গরিবের কুটির থেকে বড় বড় অট্টালিকা তৈরিতেও বাঁশের ব্যবহার অপরিহার্য। আমাদের দেশের সর্বত্রই বঁশ চাষ হয়।
- সাধারণত মোথা বা রাইজোম থেকে চাষ করা হয়। বীজ থেকেও বাঁশের চাষ হয়ে থাকে।
- বাঁশ গাছে একশত বছরে একবার ফুল ও বীজ হয়।
- প্রাকৃতিকভাবেও বাশ বাগান তৈরি হয়।
- বাঁশ সাধারণত ৫ থেকে ৭ মিটার লম্বা হয়।
- বাঁশ খুবই শক্ত।
- কাঁচা বাঁশ সবুজ হয়। পরিপক্ব বাঁশ হালকা ঘিয়ে রঙের হয়।
- বাঁশের চিকন চিকন ভালকে কঞ্চি বলা হয়।
- বাঁশের পাতা চিকন ও নাটে আকৃতির।
(২) বাঁশ কত প্রকার ও কি কি?
বাংলাদেশে প্রায় ২৩ রকমের বাঁশ দেখা যায়। এলাকা ভিত্তিক বাঁশ প্রধানত দুই প্রকার।
ক) বন জঙ্গলের বাশ: যেমন- মুলি, মিতিঙ্গা, ডলু, নলি তল্লা, বেতুয়া, মালা, এসব বাঁশের দেয়াল পাতলা।
খ) গ্রামীণ বাশ: যেমন- উরা, বরাক, বড়ুয়া, মরাল এসব বাঁশের দেয়াল পুরু।
(৩) বাঁশ গাছের গুরুত্ব
বাঁশকে গরিবের কাঠ বলা হয়। গ্রামীণ অর্থনীতিতে বাঁশ বিরাট ভূমিকা রাখে। গৃহ নির্মাণ থেকে শুরু করে গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক ব্যবহার্য প্রায় সকল ক্ষেত্রে ধাপের ব্যবহার রয়েছে।
- বাশ গ্রামীণ কুটির শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। ধংশ দিয়ে ঝুড়ি, কুলা, ঝাঁপি, মাখাল প্রভৃতি তৈরি হয়। খাল পারাপারে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করা হয়। বাঁশের বাঁশি গ্রামের শিশু-কিশোরদের বাদ্যযন্ত্র।
- কৃষি উপকরণ যেমন লাভাগ, জোয়াল, আঁচড়া ও কোদাল তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার হয়।
- শস্য ও উদ্ভিদ সংরক্ষণে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়।
- কাগজ ও রেয়ন তৈরির কাঁচামা হিসেবে শিল্প কারখানায় বাঁশ ব্যবহৃত হয়।
(৪) বাঁশ গাছ চাষ বা বাঁশ গাছ লাগানোর পদ্ধতি
বশ আমাদের দেশের অতি প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী। বাংলাদেশের সর্বত্রই বাঁশের চাষ হয়। বাঁশ ৩টি উপায়ে চাষ করা হয়। যথা- মোথা ও অফসেট পদ্ধতি, প্রাককঞ্চি কলম পদ্ধতি, টি কলম পদ্ধতি।
ক) মোথা বা অফসেট পদ্ধতিতে বাশ চাষ পদ্ধতি
বাঁশের গোড়ার দিকে ৩-৪টি গিঁটসহ মাটির নিচের মোথাকে অফসেট বলে।
- বাঁশ চাষের জন্য ১-৩ বছর বয়সী মোথা বা অফসেট সগ্রহ করতে হয়।
- অফসেটের জন্য নির্বাচিত বাশ অবশ্যই সতেজ হতে হবে। চৈত্র মাস অফসেট সপ্তাহের উপযুক্ত সময়। বর্ষা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সংগৃহীত অফসেট অস্থায়ী নার্সারিতে বালির বেড়ে দাগানো আবশ্যক।
- ১৫-২৫ দিনের মধ্যে অধিকাংশ অফসেট থেকে নতুন পাতা ও কুঁড়ি গজায়। এ অফসেট আষাঢ় মাসে তিনভাগ মাটি ও একভাগ গোবর দিয়ে তৈরি গর্তে লাগাতে হয়।
খ) প্ৰাকমূল কঞ্চি কলম করে বাঁশ গাছ লাগানোর পদ্ধতি
বাঁশের অনেক কঞ্চির গোড়ায় প্রাকৃতিকভাবেই শিকড় গজায়। এ ধরনের শিকড় ও মোখাসহ কঞ্চিকে প্ৰাকমূল কঞ্চি বলে।
- ফাল্গুন হতে আশ্বিন মাস পর্যন্ত সময়ে এক বছরের কম বয়সী বাঁশ থেকে করাত দিয়ে সাবধানে শিকড় ও মোথাসহ কঞ্চি কলম কেটে নিতে হবে।
- সংগৃহীত কঞ্চি দেড় হাত লম্বা করে কেটে বালি দিয়ে প্রস্তুত অস্থায়ী বেডে ৭-১০ সেমি গভীরে খাড়া করে বসাতে হবে। নিয়মিত দিনে ২-৩ বার পানি দিলে এক মাস পরে সতেজ চারা তৈরি হবে।
- পলিব্যাগে ৩:১ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণে চারাগু স্থানান্তর করতে হবে। এভাবে এক বছর রাখার পর কঞ্চি কলম বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে মাঠে লাগাতে হবে।
গ) গিঁট কলম করে বাঁশ গাছ লাগানোর পদ্ধতি
বাঁশের কাউকে টুকরা টুকরা করে চারা তৈরির পদ্ধতিকে পিঠ কলম পদ্ধতি বলে।
- ১-০ বছরের সবল বাঁশ নির্বাচন করতে হবে।
- সদ্য কাটা বাঁশকে ৩ গিঁট সহ লম্বা লম্বা খণ্ডে ভাগ করতে হবে।
- চৈত্র-বৈশাখ মাসে বিভক্ত খণ্ডগুলো সাথে সাথে অস্থায়ী বেড়ে সমান্তরাল ভাবে বসিয়ে দিতে হবে।
- নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে।
- বাঁশের টুকরার গিঠের কুড়ি সতেজ ও অক্ষত আছে কিনা তা লক্ষ রাখতে হবে।
- আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের দিকে অধিকাংশ গিঁট কলমে শিকড় গজাবে।
- বর্ষা শেষ হওয়ার আগেই শিকড়সহ গিঠ কলম বেড থেকে উঠিয়ে নিয়ে মাঠে লাগাতে হবে।
ঘ) বাঁশের পরিচর্যা
নতুন বাঁশঝাড়ে খরার সময় পানি সেচ দিতে হবে। মোথার গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা করতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ মোখাসহ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বাঁশের ঝাড়ে নতুন মাটি নিলে সুস্থ সবল নতুন বাঁশ পাওয়া যাবে।
ঙ) বাঁশ সংগ্রহ
বাঁশ পরিপত্ত্ব হতে ৩ বছর সময় লাগে। এ জন্য বাড় থেকে ৩ বছর বয়সী বাঁশ সংগ্রহ করতে হবে। বাঁশ গজানোর মৌসুমে কখনো বাঁশ কাটা উচিত নয়। একবারে ঝাড়ের সব পরিপক্ব বাঁশ কাটাও উচিত নয়।
(৫) বাঁশের ব্যবহার
বাঁশ আমাদের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজে লাগে। তোমরা প্রত্যেকে বাঁশের একটি করে ব্যবহার বলো। এবার এসো আমরা বাঁশের ব্যবহার সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জেনে নেই।
ক) নির্মাণ কাজে বাপ: গ্রামীণ বক্স আয়ের মানুষেরা ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য ধাপের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে বরাক ও এ জাতীয় শক্ত বাঁশ গৃহনির্মাণে বেশি ব্যবহার হয়।
খ) আসবাবপত্র তৈরিতে বাঁশ: প্রধানত মূলি, মরাল ও তল্লা বাঁশ নিয়ে আসবাবপত্র তৈরি হয়। বুকশেলফ, সোফা, মোড়া, চেয়ার প্রভৃতি এসব বাঁশ দিয়ে তৈরি করা যায়।
খ) সজ্জিতকরণে বাণ: মরাল, তল্লা ও সূক্ষ্ম আঁশসম্পন্ন বাশ দিয়ে সজ্জিতকরণ করা হয়। ঘরবাড়ি ও অফিস সজ্জিতকরণে এসব বাঁশের প্রচুর ব্যবহার হয়ে থাকে।
গ) যন্ত্রপাতি তৈরিতে বাঁশ: শক্ত ধরনের বরাক বাঁশ দিয়ে যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়। লাঙ্গল, জোয়াল, কোদাল, মই, আঁচড়া প্রভৃতি বরাক বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়।
ঘ) যানবাহন তৈরি ও জ্বালানি হিসেবে: বাঁশ শক্ত ধরনের বরাক বাঁশ যানবাহন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। রিকশা, নৌকা, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার হয়ে থাকে। সব ধরনের বাঁশ, বাঁশপাতা ও অন্যান্য অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
[সূত্র: এনসিটিবি]