পরিচিত ও উল্লেখযোগ্য কিছু বাংলাদেশি সবজির নাম হলো- কাঁচকলা, কলমী শাক, গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, পানি কচু, দুধ কচু, মৌলভী কচু, ঢেঁড়শ, বরবটি, মুখীকচু, মানকচু, ওলকচু, মিষ্টি কুমড়া, শশা, উচ্ছে ও করলা, পেঁয়াজ পাতা, ওলকপি, মূলা, গাজর, শালগম, বীট, লাউশাক, আলু, মেটে আলু, শিমুল আলু, লেটুস, পালংশাক, মাসরুম, লালশাক, মিষ্টিআলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, খেসারি শাক, মটর শাক, থানকুনী, পেঁপে, পটল, পুঁইশাক, পুদিনা, বেগুন, সাজিনা, হেলেঞ্চা, ডাঁটা, সাজিনা শাক, কলার মোচা ও শাঁস, ফার্ন শাক, শাপলা ফুল, বক ফুল, সর্ষে শাক, টমেটো, লাউ, কাঁকরোল, ধুন্দল, শিম, মটরশুটি, বথুয়া শাক, নটেশাক, পেচাই শাক, পাটশাক ইত্যাদি।
নিম্নে ৫৮টি বাংলাদেশি সবজির নাম এর তালিকা দেওয়া হলো-
(১) কাঁচকলা
কাঁচকলা বাংলাদেশের পরিচিত সবজি। পেটের পীড়া বা রক্তশূন্যতার সময় এই সবজি বেশি খাওয়া হয়। নানাভাবে কাঁচকলাকে খাওয়া যায়। সবভাবেই এর খাদ্যগুণ ঠিক থাকে।
(২) কলমী শাক
সবচেয়ে পরিচিত শাকের একটি হলো কলমি। এটি নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে অন্যান্য শাকের ভিড়ে এই শাক খুব একটা কদর পায় না।
(৩) গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি
বাংলাদেশে এটি এটি পাতাকপি নামেও পরিচিত। একটি শীতকালের জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশে ১৯৬০-এর দশকে এর চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশের বাঁধাকপির উন্নত জাতগুলো হচ্ছে বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতি), বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত), বারি চীনা কপি, ইপসা বাঁধাকপি-১ প্রভৃতি।
(৪) চালকুমড়া
সবজি হিসাবে দেশে চালকুমড়ার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। গ্রামে ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এটি চাল কুমড়া নামে পরিচিত। তবে জমিতে (মাচায়) এর ফলন বেশি হয়। কচি চাল কুমড়া (ঝালি) তরকারী হিসেবে এবং পরিপক্ব কুমড়া মোরব্বা ও হালুয়া তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
(৫) চিচিঙ্গা
বাংলাদেশে শীতের কয়েক মাস বাদ দিলে; বছরের যেকোন সময় চিচিঙ্গার চাষবাদ যায়। মোটামুটি শুষ্ক আবহাওয়ায়ও ভালো জন্মে চিচিঙ্গা। বাংলাদেশে চিচিঙ্গা প্রধানত খরিফ মৌসুমেই হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে জুন পর্যন্ত চিচিঙ্গার বীজ বপন করা যায়। চিচিঙ্গা গোড়ার দিকে হালকা একটু বেঁকে থাকে।
(৬) ঝিঙ্গা
ঝিঙ্গা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সবজি। প্রায় সব এলাকাতেই ঝিঙ্গা চাষ করা হয়। ঝিঙা সবজির ওপরের দিকের তুলনায় গোড়ার দিকটা মোটা।
(৭) পানি/দুধ/মৌলভী কচু
পানি কচু বা দুধ কচু বা মৌলভী কচু ডাটা দিয়ে ইলিশ মাছ রান্না অথবা মৌলভী কচু পাতা ভর্তা ইত্যাদি বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। গ্রাম ছাড়া শহরে মৌলভী কচুর ডাটা পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
(৮) ঢেঁড়শ
ঢেঁড়শ বা ভিন্ডি একটি সবজি যা মালভেসি পরিবারের একটি প্রজাতি। এটি প্রায়ই সবুজ রঙের হয়। এটি শীতকালীন সবজি হলেও বাংলাদেশে বর্তমানে সারা বছর ঢেঁড়স চাষ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের কারও কারও এই সবজি খুব পছন্দ, কেউ কেউ এই সবজিটি একদমই পছন্দ করেন না।
(৯) বরবটি
বাংলাদেশেে এক প্রকার তরকারি সবজি যা ভাত এবং রুটির সঙ্গে পরিবেশিত হয়। বরবটি সাধারণত হলুদ রঙের এবং দৈর্ঘ্য সাধারণত সাত ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। বরবটি বাংলাদেশের প্রধান সবজির মধ্যে একটি।
(১০) মুখীকচু
মুখী কচু বাংলাদশে গুড়া কচু, কুড়ি কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বন্নি কচু, ইত্যাদি নামে ও পরচিতি। বাংলাদেশে মুখীকচুর অসংখ্য স্থানীয়জাত আছে। তবে আশানুরুপফলন পেতে উচ্চফলনশীল জাতের চাষ করা হয়। মুখীকচু খরিপ মৌসুমে সবজির অভাব পূরণে সাহায্য করে থাকে।
(১১) মানকচু
বাংলাদেশে মানকচু একটি অত্যন্ত পরিচিত সবজি। নানান জায়গায় একে বাষ্প কচু বা লম্বা কচু নামে ডাকা হয়ে থাকে। এটি আসলে একধরনের গাছের লম্বা শিকড়। আমাদের বাংলাদেশে গ্রামে গজ্ঞে এটি জন্মাতে দেখা যায়। তবে এটি এখন বান্যিজিক ভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। কচু মূলত বাংলাদেশ , ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশেই দেখতে পাওয়া যায়। কচু মূলত সবজি হিসেবে ও খাওয়া হয়।
(১২) ওলকচু
বাংলাদেশে ওলকচু সাধারণত সেদ্ধ বা ভাজা হিসাবে খাওয়া হয়। এর তরকারিও করা হয়। তবে আচারে বা ওল চিপস তৈরি করতে এটি খুব কম ব্যবহৃত হয়। ওলকচু সাধারণত সেদ্ধ বা ভাজা হিসাবে খাওয়া হয়। এর তরকারিও করা হয়। তবে আচারে বা ওল চিপস তৈরি করতে এটি খুব কম ব্যবহৃত হয়। এর সবুজ পাতা ও কাণ্ড সবজি হিসাবে কোন কোন পরিবারে রান্না করা হয়। আয়ুর্বেদ, সিদ্ধ এবং ইউনানী এই শাখায় এর ব্যবহার বেশি। বাংলাদেশের প্রায় সব স্থানেই এর চাষ হয়।
(১৩) মিষ্টি কুমড়া
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বছরের যে কোনো সময় মিষ্টি কুমড়ার বীজ বোনা যায়। বাংলাদেশে চাষযোগ্য জমি ও বাড়ির আঙিনায় বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ মিষ্টি কুমড়া চাষ হয় ব্যাপকভাবে। শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করা হয়। বাংলাদেশে মিষ্টি কুমড়া সবার পছন্দনীয় সবজি। সুস্বাদু সবজি মিষ্টি কুমড়া সারা বছরই পাওয়া যায়।
(১৪) শশা
বাংলাদেশে এটি কাঁচা খাওয়া হয় বা শশা প্রধাণত সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলটি লম্বাটে আকৃতির হয়ে থাকে। এর বাইরের রঙ সবুজ। তবে পাকলে হলুদ হয়। ভেতরে সাদাটে সবুজ রঙের হয়, এবং মধ্যভাগে বিচি থাকে। এর উৎপত্তি ভারতবর্ষে হলেও বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই জন্মে। এটি সাধারণতঃ গরমের সময় বেশি পাওয়া যায়।
(১৫) উচ্ছে/করলা
উচ্ছে বা করলা ঔষধি গুন সম্পন্ন এবং উচ্চ মাত্রার খাদ্যমান সম্বলিত একটি সবজি। করলা তেতো স্বাদযুক্ত এবং এর শরীর কাঁটার মত ওয়ার্টে ভরা। বাংলাদেশে এই সবজি অনেকেই নিয়মিত খান। আবার অনেত এর তিক্ত স্বাদের কারণে এড়িয়ে চলেন।
(১৬) পেঁয়াজ পাতা
পেঁয়াজ হয় মাটির তলায়। তবে পেঁয়াজের সবুজ পাতা মাটি ভেদ করে ওপরে উঠে আসে। তরকারিতে পেঁয়াজের পাতা মিশিয়ে দিলে স্বাদ বেড়ে যায় অনেকটা। বাংলাদেশে সবজি হিসেবে এর কদরও আছে। পেঁয়াজের পাতা ও কন্দ খুবই সুস্বাদু এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে উচ্চ মাত্রার সালফার থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এই নরম কচি পেঁয়াজে ক্যালরি কম থাকে। পেঁয়াজ পাতা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২ এবং থায়ামিন সমৃদ্ধ।
(১৭) ওলকপি
ওলকপি শীতের অন্যান্য সবজির চেয়ে শক্ত ধরনের সবজি। এটি ইউরোপীয় দেশগুলো ও বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে চাষাবাদ ও খাওয়া হয়। মূলত এটি বাঁধাকপির একটি বিশেষ প্রজাতি, কপি জাতীয় সবজি যেমন ব্রোকলি, ফুলকপি, পাতা-কপি, শালগম গোত্রের। কপির চেয়ে মোটামুটি শক্ত আবরণের মধ্যে বেড়ে ওঠে। সেদ্ধ হতে বেশ সময় নেয়। অনেকটা ব্রোকলির মত ও আপেলের মত কচকচে খেতে।
(১৮) মূলা
মূলা গাছের শেকড় বা মাটির ভিতরের মূলাটুকু খাওয়া হয়, যদিও পুরো গাছের সবকিছুই খাওয়া যায় এবং উপরের পাতা, পাতা জাতীয় সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
(১৯) গাজর
গাজর একটি শীতকালীন সবজি। তবে এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। নানা প্রকার খাদ্য তৈরিতে গাজর ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে সালাদে এর ব্যবহার ব্যাপক।স্যালাড, তরকারি, পুডিং বা জুস হিসেবেও খাওয়া হয়ে থাকে।
(২০) শালগম
একপ্রকারের মূল জাতীয় সবজি। ছোট ও ভাল জাতটি মানুষ গ্রহণ করে; বড় আকারের শালগম পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(২১) বীট
বীট সবজিটি বাংলাদেশে খুব বেশি জনপ্রিয় নয়। তবে অল্প পরিশরে চাষে হয়, যা দিন দিন বাড়ছে। সব ধরনের সবজির মধ্যে বীটে সবচেয়ে বেশি চিনির উপাদান থাকলেও বেশিরভাগ মানুষই নির্দ্বিধায় সপ্তাহে অন্তত কয়েকবার বীট খেতে পারেন। এর সুস্বাদু মিষ্টি স্বাদের পাশাপাশি এর অনেক পুষ্টি উপাদান শরীর সুস্থ রাখতে নানাভাবে কাজে দেয়।
(২২) লাউশাক
বাংলাদেশে লাউ শাক খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। লাউয়ের স্বাস্থ্যগুণ অনেক। ঠিক একইভাবে এর শাকেও আছে প্রয়োজনীয় নানা পুষ্টিগুণ। লাউ পাতারি ভাজি বা তরকারি বা ভর্তা কেমবেশি সবাই খেয়ে থাকেন।
(২৩) আলু
বাংলাদেশে আলুকে জাতীয় সবজি হিসেবে বলা হয়ে থাকে। কারণ এমন কোন তরকারি নেই যেখানে বাংলাদেশিরা আলু ব্যবহার করনে না। এট বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজলভ্য ও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সবজি।
(২৪) মেটে আলু
মেটে আলু কন্দালজাতীয় ফসল। আমাদের বাংলাদেশে এটি সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষবাস তেমনটি দেখা যায় না। মানুষ তাদের বসত বাড়িতে বা ব্যক্তিগত বাগানে এর আবার করে থাকেন।
(২৫) শিমুল আলু
বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ কাসাভার কন্দকে শিমুল আলু বলেই জানে। গাছটির পাতা অনেকটা শিমুল গাছের মতো দেখতে বলেই হয়তো এরকম নামকরণ। বাংলাদেশেদেশে এই ‘আলু’ একেবারে নতুন নয়। পাহাড়ি অঞ্চলে এই আলু হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে কাসাভার ব্যবহার আছে অনেক আগে থেকেই। কাসাভা স্টার্চ থেকে অ্যারারুট ও সাগুদানা প্রস্তুত করা হয়। কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে এই সবজি। এর থেকে পাওয়া স্টার্চ থেকে তৈরি হতে পারে পাঁপর, চিপস, নুডলস, ক্র্যাকার্স, বিস্কুট, কেক, পাউরুটি ইত্যাদি।
(২৬) লেটুস
লেটুস পাতা নামক আঁশযুক্ত এই সবজিটিকে মোটামুটি পরিতিন ও অনেকেই এটি কাঁচা খায়। লেটুস প্রায়শই সালাদে ব্যবহৃত হয়। এটি অন্যান্য ধরনের খাবার যেমন স্যুপ, স্যান্ডউইচ ও র্যাপেও দেখা যায়।
(২৭) পালংশাক
বাংলাদেশে শীতকালে এর চাষ হয়। এর পাতা একান্তর, সরল, ডিম্বাকার বা ত্রিভূজাকার। বাংলাদেশের সবুজ শাকসবজির মধ্যে পালংশাক ব্যাপক ব্যবহৃত শাকসমূহের মাঝে একটি।
(২৮) মাসরুম
মাসরুমে চাষ ও ব্যবহার বাংলাদেশে খুবই সীমিত। তবে বাংলাদেশে মাশরুম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের অত্যন্ত উপযোগি।
(২৯) লালশাক
লালশাক দেখতে লালচে-গোলাপি ধরনের হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিনে পূর্ণ এই শাক। বাংলাদেশে অতি পরিচিত শাকগুলোর মধ্যে লালশাক এর তুলনা মেলা ভার।
(৩০) মিষ্টিআলু
মিষ্টিআলু বাংলাদেশের অধিক ফলনশীল ফসলের মধ্যে অন্যতম। এ ফসলটি অত্যধিক খরা সহিষ্ণু এবং এটি ভাত ও আলুর চেয়ে অধিক পুষ্টিকর। বাংলাদেশে মিষ্টি আলু খাওয়া হয় এটিকে পানি দ্বারা সিদ্ধ করার মাধ্যমে।
(৩১) ফুলকপি
শীতের এক প্রধান জনপ্রিয় সবজি হল ফুলকপি। বাংলাদেশে তরকারি তৈরি কর ফুলকপি খাওয়া হয়। ফুলকপির পুষ্পাক্ষ অর্থাৎ সাদা অংশটুকুই খাওয়া হয় আর সাদা অংশের চারপাশে ঘিরে থাকা ডাঁট এবং পুরু, সবুজ পাতা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
(৩২) বাঁধাকপি
বাংলাদেশে ১৯৬০-এর দশকে এর চাষ শুরু হয়। বাঁধাকপির ওজন সাধারণত ৫০০ থেকে ১,০০০ গ্রাম (১ থেকে ২ পাউন্ড) পর্যন্ত হয়। বাংলাদেশের বাঁধাকপির উন্নত জাতগুলো হচ্ছে বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতি), বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত), বারি চীনা কপি, ইপসা বাঁধাকপি-১ প্রভৃতি।
(৩৩) ব্রকোলি
শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম ব্রকোলি। ফুলকপির মতো দেখতে হলেও স্বাদে ফুলকপির চেয়েও সুস্বাদু। সবুজ রঙের এই সবজির ডাট এবং ফুল বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। অনেকে কাঁচাও খেয়ে থাকেন।
(৩৪) খেসারি শাক/মটর শাক
শীত মৌসুমের অন্যতম মজাদার শাক হলো কলই শাক। খেসারি ডালের শাকই মূলত কলই শাক। তবে সব এলাকায় এই শাক সমান প্রচলিত বা সমাদৃত নয়। এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে এই শাক খাওয়ার প্রচলন একেবারেই নেই।
(৩৫) থানকুনী
বাংলাদেশে বেশিরভাগ সময় থাকুনী পাতাকে একটি ঔষধি ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও সবজি হিসেবে থানকুনী পাতার ভাজী, ভর্তা ও ঝোল করে খাওয়া হয়ে।
(৩৬) পেঁপে
পেঁপে একটি উপকারী ফল ও সবজি হিসেবেও ব্যবহার হয়। কাঁচা অবস্থায় সবজি ও পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয় পেঁপে। পেঁপে তরকারি অনেক বাংলাদেশির কাছেই পছন্দনীয়।
(৩৭) পটল
পটল বাংলাদেশে ব্যবহৃত সবজিগুলির মধ্যে অন্যতম। পটলের দিয়ে নানা ভাবে নানা পদে রান্না করে খাওয়া হয়। পটলের তরকারী, ভাজা এমনকী মিষ্টান্ন প্রস্তুতিতেও ব্যবহৃত হয়।
(৩৮) পুঁইশাক
চৈনিক ও বাঙালি রান্নায় এটি বহুল ব্যবহৃত। বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে, আসামে এবং ত্রিপুরায় সর্বত্র এর চাষ হয়ে থাকে। এর ভাজি এ সব এলাকার মানুষের প্রিয় সহযোগী খাদ্য।
(৩৯) পুদিনা
বাংলাদেশে সবজি হিসেবে পুদিনা পাতা অনেকেই ব্যবহার কেরে থাকেন। মূলত গরম ভাত দিয়ে খাওয়ার মত অত্যন্ত উৎকৃষ্টমানের, স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু একটি খাবার পুদিনা পাতার ভর্তা।
(৪০) বেগুন
বহুল ব্যবহৃত সবজি সমূহের মাঝে অন্যতম হলো বেগুন। বেগুন ভর্তা, বেগুন পোড়া, এবং বেগুনী বানাতে এর ব্যবহার রয়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে ইফতারের জন্য বেগুনী একটি জনপ্রিয় খাবার। বেগুন এর ভর্তা অনেক জনপ্রিয়।
(৪১) সাজিনা
সজনের কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় সবাই সজনে ও নিয়মিত খেয়ে থাকেন। সজিনা তরকারিতে রান্না করে খাওয়া হয়। েএটা সবার পপছন্দের একটি সবজি।
(৪২) হেলেঞ্চা
এটি শাক ভাজা এবং ঝোল রান্না করে খাওয়া হয়। ডাল মিশিয়ে বড়া বানিয়েও এটি খাওয়া হয়।
(৪৩) ডাঁটা
লতাজাতীয় এই উদ্ভিদের পাতা ও কাণ্ড (ডাঁটা) শাক হিসেবে খাওয়া হয়।
(৪৪) সাজিনা শাক
বাংলাদেশে সজনে শাক বা পাতা বিভিন্ন ভাবে, যেমন ভাজা, রান্না, বড়া, ভর্তা ও শুকিয়ে গুড়ো করে খাওয়া হয়ে থাকে।
(৪৫) কলার মোচা ও শাঁস
কলার মোচার ঘণ্ট, ভর্তা, মোচার কোফতা, মোচার চপ। বাংলাদেশে কলা গাছের প্রায় প্রতিটি অংশই কোনো না কোনোওভাবে ব্যবহার করা যায়।
(৪৬) ফার্ন শাক
ঢেঁকি শাক বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গের মানুষের একটি প্রিয় খাদ্য। এটি একটি ফার্ণ বর্গীয় গাছ। স্যাঁতসেঁতে ছায়াময় এলাকাসমূহ এবং জঙ্গলে এর দেখা মেলে। থাইল্যান্ডে ভীষণ জনপ্রিয় এই শাক। সেখানে একে পাকু বলে। সারা বছর চুপসে থাকলেও বর্ষার মৌসুমে বেশ তরতাজা হয়ে উঠে ঢেঁকিশাক। সাধারনত এই শাক ভাজা খাওয়া হয়।
(৪৭) শাপলা ফুল, বক ফুল
শাপলার মূল ফুলেল অংশটি চালের গুঁড়া বা বেসন দিয়ে ডুবো তেলে ভেজে বড়া খাওয়া হয়। তেমনি এর ডাঁটাগুলোও ফেলে দেওয়ার নয়। কেটে, হালকা ভাপে সেদ্ধ করে শুঁটকি বা মাছসহ বা অন্য কোনো বাড়তি জিনিস ছাড়া, সাধারণ মশলাপাতি দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়। বকফুল ভেজে খাওয়া হয়। বেশিরভাগ সময় যদিও ফোটার আগেই ভোজনরসিকদের পেটে যায় এ ফুল, তবে ফোটার পর খাওয়ার রীতিও রয়েছে।
(৪৮) সর্ষে শাক
সর্ষে শাক ভেজে গরম ভাতের সাথে খাওয়া বাংলাদেশের অনেকরই পছন্দের খাবার।
(৪৯) টমেটো
অধিকাংশ দেশেই টমেটো অন্যতম প্রধান সবজি। টমেটো হল এমন একটি ফল যা আমরা সবজি হিসেবে খাওয়াা হয়। কম বেশি সকলের বাড়িতে বিভিন্ন তরকারিতে টোমেটোর ব্যবহার হয়েই থাকে। শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্যে নয়, টমেটো দিয়ে তৈরি হয় নানা সুস্বাদু সস।
(৫০) লাউ
শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। লাউ এক প্রকার লতানো উদ্ভিদ যা এর ফলের জন্যে চাষ করা হয়, যা কিনা কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, আর পরিপক্ব অবস্থায় শুকিয়ে এটি বোতল, পাত্র বা নল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লাউকে কোন কোন স্থানে আঞ্চলিক ভাষায় কদু বলা হয়। কচি লাউয়ের রং হালকা সবুজ, ভেতরে সাদা রঙের শাঁস। এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। শুধু লাউ নয়, লাউয়ের বাকল, লতা, এমনকি পাতাও খাওয়া যায়।
(৫১) কাঁকরোল
কাঁকরোল (Teasel gourd) এক ধরনের কুমড়া গোত্রীয় ছোট সবজি যা মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বাংলাদেশে চাষ হয়ে থাকে। র খোসা ছোট ছোট ঘন নরম কাঁটায় ভরা থাকে। ভেতরের শাঁস সাদাটে সবুজ,বিচি নরম ও ছোট। কাঁকরোল গাছের কাঁচা ফল তরকারী, ভাজি বা সিদ্ধ করে ভর্তা হিসেবে খাওয়া হয়।
(৫২) ধুন্দল
অপরিপক্ক ফল, কচিপাতা এবং ফুলের মুকুল সবজিরূপে খাওয়া হয়। তবে সব্জির থেকেও ধুন্দলের ছোবড়া বেশি বিখ্যাত। গ্রামে পাকা ধুঁধুঁল ফলকে শুকিয়ে ছোবড়া তৈরি হয়। গা ঘষার জন্যে ধুঁধুঁল ছোবড়ার ব্যবহার সম্ভবতঃ অতি প্রাচীন।
(৫৩) শিম
ঘরে ঘরে শিম অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্রধান শীতকালীন সবজি। দেশের সর্বত্র ব্যাপক আকারে এর চাষ হয়। শিম আলোক সংবেদনশীল ফসল। সাধারণত অক্টোবরের শেষ দিকে শিমগাছে ফুল আসতে শুরু করে।
(৫৪) মটরশুটি
মটরশুটি শীতকালের অন্যতম একটি সবজি। এটি তরকারি, স্যুপ কিংবা সালাদে ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি সাধারণত সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হয়।
(৫৫) বথুয়া শাক
বাংলাদেশে একটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাওয়া শীতকালীন শাক। এটি প্রায়ই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত শাকগুলোর মধ্যে একটি। এটি আলাদাভাবে চাষ না করলেও এটি প্রাকৃতিক ভাবেই পাওয়া যায়।
(৫৬) নটেশাক
নটেশাকের ভাজায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি পাওয়া যায় ৷ বেশিরভাগ সময় ভাজার মত চচ্চড়ি করে খাওয়া হয় ৷ এটি রক্ত পরিষ্কার করে, শরীর ঠান্ডা রাখে ৷ বাংলাদেশিরা ছাড়াও অন্যান্য ভাষাভাষির মানুষেরা নটে শাক অত্যন্ত বেশি পরিমাণে পছন্দ করে ৷
(৫৭) পেচাই শাক
পেচাই শাক হল একটি শাক, যা বাংলাদেশে খুব একটা জনপ্রিয় নয়। এটি সাধারণত পাতা সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি স্বাস্থ্যকর এবং সম্পূর্ণ বেগুনি রঙের হয়। এটি ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফোলেট, আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের উৎস। এটি সাধারণত ভাজা হিসেবে খাওয়া হয়।
(৫৮) পাটশাক
পাটশাক বা নাইল্যা শাক বাংলাদেশের একটি প্রধান শাক। পাটের বিটা ক্যারটিন, থিয়ামাইন বা এ, বি, সি এর মতো ভিটামিনি যা প্রতিরোধ করে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি। দেশি পাটশাক সামান্য তিতা তবে তোষা বা বগী পাটশাক খেতে বেশ সুস্বাদু। ডালের সঙ্গে কচি পাটশাক খেতে দারুণ। এ ছাড়া ভাজি, ছোট মাছ দিয়ে রান্না করেও খাওয়া যায়।
[সূত্র: বিএআরআই]
প্রিয় পাঠক, প্রতিটি সবজির সাথে ছবি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পরামর্শের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। জাজাকাল্লা খায়রান।
প্রতিটি সবজির সাথে ছবি দিলে আরও ভালো হতো।