(১) কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন
কৃষিতে গবেষণার বহুবিধ বিষয় রয়েছে। গবেষণালব্ধ ফল প্রয়োগের ফলেই কৃষির অগ্রগতি সাধিত হয়।
অর্থনৈতিক ও কারিগরি দৃষ্টিকোণ থেকে কৃষিখাতের প্রধান গবেষণা ক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে-
- ফসল;
- মৎস্য;
- পশু সম্পদ;
- বন ও
- পরিবেশ।
যার প্রতিটি ক্ষেত্রেই গবেষণার অনেক বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এবং গবেষণার সকল অর্থ যোগান দেয় সরকার।
বাংলাদেশে মোট ১৩টি সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার অনেকগুলোই ফসল ভিত্তিক (ধান, পাট, আখ, চা ইত্যাদি)। এসব প্রতিষ্ঠানে নানাবিধ বিষয় নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
(২) জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম
বাংলদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আইন ২০১২ এর আওতায় বিএআরসিকে সর্বোচ্চ সংস্থা এবং ১২টি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে বিএআরসির সংবিধানিক ইউনিট হিসাবে গণ্য করে জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম- National Agricultural Research System (NARS) পুনর্গঠিত হয়।
নার্সভুক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের নাম-
- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ঢাকা;
- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর;
- বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর;
- বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা;
- বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ;
- বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী, পাবনা;
- মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা;
- বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ;
- বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভার;
- বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম;
- বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৌলভিবাজার;
- তুলা উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা; এবং
- বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, রাজশাহী।
(৩) বাংলাদেশের কৃষি প্রতিষ্ঠানসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ক) গবেষণা সংশ্লিষ্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠান
i) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল
ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল একটি গভর্নিং বডির মাধ্যমে নার্সের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে।
জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেমের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও জবাবদিহিতামূলক করার উদ্দেশ্যে সংশোধিত সর্বশেষ আইনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলকে গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের সার্বিক সমন্বয়, পরিকল্পনা প্রণয়ন, মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতাও অর্পণ করা হয়েছে।
ii) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৭৬ সালে গাজীপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের সর্ববৃহৎ এই কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ১৬টি বিভাগ এবং ৭টি গবেষণা কেন্দ্র, ৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ৩০টি উপকেন্দ্র।
বিএআরআই ২০০ এর বেশি ফসল নিয়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত বিভিন্ন শস্যের ৪৫১টি উন্নত জাত এবং ৪৪২ ফসল উৎপাদন প্রযুক্তিসহ মোট ৮৯৩টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।
গবেষণার আওতায় শস্যের মধ্যে গম, ভুট্টা, চীনা, কাউন, ডালশস্য, ভেলফসল, কন্দাল জাতীয় ফসল, ফল, ফুল, সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল অন্যতম।
iii) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
দেশের প্রধান খাদ্য ধানের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ, উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে ১৮টি গবেষণা বিভাগসহ ১৯টি আঞ্চলিক কেন্দ্র রয়েছে।
এ যাবত বিভিন্ন মৌসুমের উপযোগী চারটি হাইব্রিড ধানসহ ৭২টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।
iv) বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাট উৎপাদন সম্পর্কিত গবেষণা এবং পাটের বহুমুখী পণ্য উদ্ভাবন ও উন্নয়ন-এর উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ৪০টি উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে ১৬টি জাত মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে।
v) বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৭২ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ময়মনসিংহে স্থানান্তর করা হয়।
পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও জীবপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বংশগতি ধারায় পরিবর্তন করে অধিক ফলনশীল ও মানসম্মত ধান, পাট, তৈলবীজ, ডাল ও সবজি জাতীয় শস্যের জাত উদ্ভাবনে গবেষণা সফলতা অর্জন করেছে।
ইনস্টিটিউট কর্তৃক এ যাবৎ ১২টি ফসলের ওপর ৮২টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
vi) বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট
ক্রমবর্ধমান গুড় ও চিনি শিল্পের জন্য ইক্ষু উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৫১ সালে ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউট পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আখ চাষ দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে স্বল্প বৃষ্টিপাত এলাকার জন্য উপযোগী এক নির্ভরযোগ্য অর্থকরী ফসল। গুড় বা চিনির ওপর নির্ভর করেই দেশের রসনা তৃপ্তকারি মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন খাবার তৈরি হয়ে থাকে।
এ যাবৎ ইনস্টিটিউট ৪১টি ইক্ষুর জাত উদ্ভাবন করেছে।
vii) মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট
১৯৬১ সালে যাত্রা করে কয়েকবার নাম পরিবর্তনের পর ১৯৮৩ সালে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটউট নামকরণ করা হয়।
ইনস্টিটিউট মৃত্তিকা সম্পদের যুক্তিযুক্ত ও লাভজনক ব্যবহার এবং মৃত্তিকা পরিবেশ সুরক্ষায় সরাসরি কৃষক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মাঠপর্যায়ে সেবা প্রদান করে থাকে।
viii) বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট
মৎস্য সম্পদের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের লক্ষে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর চারটি গবেষণা কেন্দ্র এবং চারটি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে মিঠা পানি ও লোনা পানিতে মাছ চাষের ওপর বিভিন্ন সফল প্রযুক্তি হস্তান্তর করে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।
ix) বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট
দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্য ও পুষ্টি ঘাটতি পূরণ, প্রাণিজ কৃষি উন্নয়ন ইত্যাদির লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিএলআরআই ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রতিষ্ঠানটি সেই থেকে প্রাণিসম্পদের উৎপাদন সমস্যা চিহ্নিতকরণ, জাত উন্নয়ন, টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও পরামর্শ-সেবা প্রদান করছে।
গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিএলআরআই ৬৩ টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। দেশের আবহাওয়া উপযোগী প্রথমবারের মত বছরে ২৯০ টি ডিম উৎপাদনে সক্ষম নতুন লেয়ার মুরগির জাত শুভ্রা উদ্ভাবন করে খামারি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমিষের ঘাটতি পূরণে মুরগির পাশাপাশি হাঁসের জাত উন্নয়ন করা হয়েছে।
x) বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট
বন ব্যবস্থাপনা ও বনজ সম্পদ দুটি উইং-এর অধীনে ১৭টি গবেষণা বিভাগের মাধ্যমে বনজ সম্পদের বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, বাঁশ, বেত, ভেষজ উদ্ভিদ ও অকাষ্ঠল সম্পদের উন্নয়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার ইত্যাদির লক্ষ্যে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
xi) বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট
গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদিত চা-এর গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করে। এই ইনস্টিটিউট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এবং বিএআরসির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ইনস্টিটিউট এ যাবৎ উচ্চ ফলনশীল ও গুণগত মান সম্পন্ন ১৮টি ক্লোন উদ্ভাবন, বাইক্লোনাল ও পলিক্লোনাল বীজ উদ্ভাবন করেছে।
xii) বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট
রেশম শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হয়।
জন্মলগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠানটি রেশম শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে উচ্চ ফলনশীল তুঁত ও রেশমকীটের জাত উদ্ভাবন, খুঁতচাষ প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, পলু পালন কলাকৌশল, রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯টি উচ্চ ফলনশীল খুঁতজাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
xiii) তুলা উন্নয়ন বোর্ড
তুলা চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়।
বর্তমানে তুলা উন্নয়ন বোর্ড অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করবার লক্ষ্যে গবেষণা বিশেষ করে উন্নত জাত উদ্ভাবন, সম্প্রসারণের কাজ করছে। বীজ উৎপাদন ও বিতরণ এবং বাজারজাতকরণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
খ) অন্যান্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান
i) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)
১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন (ভিএআইডি) প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের সম্প্রসারণ শিক্ষা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়, পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে উদ্ভিদ সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ১৯৬১ সালে বিএডিসি, ১৯৬২ সালে এআইএস, ১৯৭০ সালে ডিএইএম এবং ডিএআরই সৃষ্টি হলেও কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন তেমন কোনো পরিকল্পিত সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।
স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকাণ্ডকে জোরদার করার লক্ষ্যে তুলা উন্নয়ন বোর্ড, তামাক উন্নয়ন বোর্ড, হর্টিকালচার বোর্ড এবং ১৯৭৫ সালে কৃষি পরিদপ্তর (পাট উৎপাদন), কৃষি পরিদপ্তর (সম্প্রসারণ ও ব্যবস্থাপনা) নামে ফসল ভিত্তিক স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানসমূহ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু একই কৃষকের জন্য বিভিন্নমুখী/রকম সম্প্রসারণ বার্তা ও কর্মকাণ্ড মাঠ পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে ১৯৮২ সালে ফসল প্রযুক্তি সম্প্রসারণে নিয়োজিত ছয়টি সংস্থা যথা ডিএ (ইএন্ডএম), ডিএ (জেপি), উদ্ভিদ সংরক্ষণ পরিদপ্তর, হর্টিকালচার বোর্ড, তামাক উন্নয়ন বোর্ড এবং সার্ভি একীভূত করে বর্তমান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সৃষ্টি করা হয়।
ঢাকার খামারবাড়িতে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে প্রশাসন ও অর্থ উইং, সরেজমিন উইং, ক্রপস উইং, হর্টিকালচার উইং, উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং, প্রশিক্ষণ উইং, পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইং এর মাধ্যমে দেশব্যাপী এর কার্যাক্রম পরিচালনা করছে।
ii) বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), ১৯৬১ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকার দিলকুশায় অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কৃষি খাতের অন্যান্য উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হতে কার্যক্রমের দিক থেকে ভিন্নতর বিবেচিত হওয়ায় ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং সেবা কর্পোরেশন (বিএআইএসএসসি) হিসেবে পুনঃনামকরণ করা হয়। কিন্তু ১৯৭৬ সালে পুনরায় এর নাম পরিবর্তন করে বিএডিসি করা হয়।
iii) কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম)
কৃষি বিপণন উপদেষ্টা বিপণন বিভাগ নামক প্রকল্পের আওতায় যাত্রা শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটি ১৯৪৩ সালে স্থায়ী ভিত্তিতে কৃষি ও শিল্প অধিদপ্তরের অধীনে কৃষি বিপণন বিভাগ নামে পুনর্গঠন করা হয়।
তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৯৫৪ সালে, কৃষি, সমবায় এবং ত্রাণ অধিদপ্তরের অধীনে কৃষি বিপণন পরিদপ্তরের অনুমোদন দেয় পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে, প্রাদেশিক পুনর্গঠন কমিটি কৃষি বিপণন পরিদপ্তরের উপ-বিভাগ এবং জেলা পর্যায়ে লোকবল নিয়োগের অনুমোদন দেয়।
১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর করা হয়।
iv) বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি (এসসিএ)
বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বীজের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে ১৯৭৪ সালে বীজ অনুমোদন সংস্থা নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে এর বর্তমান নামকরণ করা হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদিত ও বাজারজাতকৃত নিয়ন্ত্রিত ফসলের (ধান, গম, পাট, আলু, আখ, মেস্তা ও কেনাফ) বীজের প্রত্যয়ন ও মান নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
(৪) কৃষি সম্প্রসারণ এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রম
কৃষি সম্প্রসারণ হচ্ছে বিদ্যালয়-বহির্ভূত ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কর্মজীবী মানুষদের তাদের কর্মস্থলে শিক্ষিত করে তোলা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা বা সেবা যা কৃষকদের খামার পদ্ধতি ও প্রযুক্তির উন্নয়নসহ উৎপাদন ক্ষমতা ও আয় বৃদ্ধি করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করে।
সম্প্রসারণ একটি প্রায়োগিক বিজ্ঞান যেখানে মানুষের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করা হয়।
ক) কৃষি সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠান
বর্তমানে সম্প্রসারণ শিক্ষার সাথে যেসব পেশা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে তা হলো-
- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর;
- মৎস্য অধিদপ্তর;
- প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর;
- তুলা উন্নয়ন বোর্ড;
- বন অধিদপ্তর;
- রেশম বোর্ড;
- চা বোর্ড;
- পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ও
- কৃষি তথ্য সার্ভিস।
খ) গবেষণা ও সম্প্রসারণ সংযোগ
সম্প্রসারণ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তির জ্ঞান ও দক্ষতায় পরিবর্তন আনয়ন করা। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় কৃষকদের তাদের সনাতন চাষাবাদ পদ্ধতির পরিবর্তন করে তার স্থলে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির প্রবর্তন করতে শিক্ষা দেওয়া হয়। ফলে কৃষক ক্রমাগতভাবে উন্নত জাতের বীজ, সুষম সার, সেচ, বালাইনাশক ব্যবহার করে পরিবর্তন আনছে।
কৃষি সম্প্রসারণ হচ্ছে জনগনের চাহিদা নিরূপন ও চাহিদা পূরণের উপায় শেখানো। ব্যক্তির ও নেতৃত্বের উন্নয়ন ঘটানো।
মানুষের জানা ও শেখার শেষ নেই। তাই কৃষি সম্প্রসারণ একটি অবিরাম শিক্ষা প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃষকের উন্নয়নের জন্য উদ্ভাবিত প্রযুক্তি গ্রহণোপযোগী আকারে দ্রুত জনগণের নিকট পৌঁছে দেওয়া ও ব্যবহারে সহযোগিতা করা হয়।
জনগণের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে অর্থাৎ তাদের সমস্যার সমাধান দিতে প্রয়োজনীয় সেবা ও প্রযুক্তি যথাসময়ে ধারাবাহিক ও অব্যাহতভাবে তাদের মাঝে পৌঁছাতে হয় ও যথানিয়মে প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া দেখিয়ে দিতে হয়। এ প্রক্রিয়ার একটি অংশ হচ্ছে সম্প্রসারণ আর অপর অংশটি হচ্ছে গবেষণা।
সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের তথা কৃষকের সমস্যা চিহ্নিত করে যেগুলোর সমাধান নিতে সম্প্রসারণ কর্মী অপারগ সেগুলো গবেষণাগারে পৌঁছে দেয়া হয়। গবেষণাগারে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সংগ্রহ করে কৃষকদের গ্রহণ উপযোগী আকারে তাদের নিকট পৌঁছে দেওয়ার কাজ সম্প্রসারণ কর্মীকে করতে হয়।
সম্প্রসারণ ও গবেষণার মধ্যে প্রযুক্তিগত তথ্যের আদান প্রদান নিশ্চিত করার কার্যপদ্ধতি-
- গবেষণা, সম্প্রসারণ, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি খাতের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি জাতীয় কৃষি কারিগরি কমিটি কাজ করছে।
- একই কৃষি পরিবেশভুক্ত জেলার সম্প্রসারণ সংস্থার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে আঞ্চলিক কৃষি কারিগরি কমিটি গঠিত হয়েছে এবং কাজ করছে।
অঞ্চল ও জাতীয় পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিয়ে গবেষণা সম্প্রসারণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
[সূত্র: এনসিটিবি]