Skip to content

বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড কি? বালাইনাশক কাকে বলে? জৈব, অরাসায়নিক বালাইনাশকের পরিচিতি ও রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের কুফল

বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড কি, বালাইনাশক কাকে বলে, জৈব, অরাসায়নিক বালাইনাশকের পরিচিতি ও

(১) বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড কি? বালাইনাশক কাকে বলে?

বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড কি: বালাইনাশক মূলত ফসলের ক্ষতিকর উদ্ভিদ বা প্রাণী, যেমন- পোকামাকড়, জীবাণু, আগাছা, ইঁদুর ইত্যাদি দমন বা তাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ব্যবহৃত দ্রব্য বা দ্রব্যের মিশ্রণ বা কৌশল।

বালাইনাশক কাকে বলে: ফসলের ক্ষতিকর উদ্ভিদ বা প্রাণী, যেমন- পোকা-মাকড়, জীবাণু, আগাছা, ইঁদুর ইত্যাদি দমন বা তাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য যে দ্রব্য বা দ্রব্যের মিশ্রণ বা কৌশল ব্যবহার করা হয়, তাকে বালাইনাশক বলে।

বালাইনাশক কত প্রকার: বালাইনাশক তিন প্রকার, যথা- জৈব, অরাসায়নিক এবং রাসায়নিক।

জৈব বালাইনাশক কি: যেসব বালাইনাশক বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের রস/নির্যাস, প্রাণিজ উপজাত এবং বিভিন্ন জৈবিক কলাকৌশল থেকে তৈরি করা হয় তাদেরকে জৈব ও অরাসায়নিক বালাইনাশক বলে।

জৈব ও অরাসায়নিক বালাইনাশক ফসলের জন্য অত্যন্ত উপকারী; কিন্তু ব্যাপকভাবে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারে কৃষিতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হয়।

অরাসায়নিক বালাইনাশক কি: বিভিন্ন কলাকৌশল থেকে তৈরি প্রক্রিয়াকে অরাসায়নিক বালাইনাশক বলে। যেমন আলোর ফাঁদ পেতে পূর্ণবয়স্ক পোকা মেরে ফেলা, জমিতে গাছের ডাল বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে পাখি বসিয়ে পোকা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা, ধানক্ষেতে মাছের চাষ করা।

রাসায়নিক বালাইনাশক কি: কৃত্রিমভাবে তৈরি বালাইনাশককে রাসায়নিক বালাইনাশক বলে।

রাসায়নিক বালাইনাশককে বলা হয় নীরব ঘাতক। রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগে পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে। এ ক্ষতি কোনোভাবেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

রাসায়নিক বালাইনাশক মাত্রই বিষ। বিষ প্রয়োগে যেমন ফসল উৎপাদিত হয় বিষমুক্ত নয়। বিষ শব্দটা যেমন আতঙ্কের তেমনি তার ভয়াবহতাও মারাত্মক। কাজেই পরিবেশকে বাঁচাতে এবং বিষমুক্ত ফসল ফলানোর জন্য জৈব ও অরাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত।

(২) জৈব ও অরাসায়নিক বালাইনাশকের পরিচিতি

আসুন আমরা জৈব ও অরাসায়নিক বালাইনাশক সম্পর্কে জানি।

ক) জৈব বালাইনাশক

  • অ্যালামান্ডা গাছের নির্যাস ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
  • রসুনের নির্যাস ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ানাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
  • নিমের নির্যাস (বাকল, পাতা, ফুল ও ফল) জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শুকনা নিমপাতার গুঁড়া বীজ ফসল/গুদামজাত শস্যের সাথে মিশ্রিত করে কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিমের তেল ও খৈল ফসলের মূলের কৃমিনাশক। যেমন: নিমবিসিডিন।
  • তামাক পাতার নির্যাস ‘নিকোটিন সালফেট’ ব্যবহার করে ফসলের কান্ড বা পাতায় কীটপতঙ্গের আক্রমণ রোধ করা যায়।
  • মুরগির পচনকৃত বিষ্ঠা ও সরিষার খৈল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি ফসলের মাটিবাহিত রোগ দমন করা যায়।
  • সুগারবিটের শিকড় থেকে আহরিত লাইমো ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি উদ্ভিদের মাটিবাহিত ‘ড্যাম্পিং অফ’ রোগ দমনে একটি কার্যকরি ব্যাকটেরিয়াম। এটি পোষক উদ্ভিদ, যেমন- পালংশাক ও সুগারবিটের শিকড়াঞ্চলে যুক্ত হয়ে কলোনি তৈরি করে এবং জীবাণুনাশক এন্টিবায়োটিক নিঃসরণের মাধ্যমে উদ্ভিদ রোগ দমন করে থাকে।
  • ট্রাইকোডারমা জাতীয় প্রজাতি ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সার প্রয়োগ করে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

খ) অরাসায়নিক বালাইনাশক

  • ধানের পাতার লালচে রেখা রোগমুক্ত করতে হলে ধানের বীজ ৫৪° সে. তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে ব্যাকটেরিয়া জনিত বীজবাহিত এ রোগ দূর করা যায়।
  • জাব পোকা দমনে লেডিবার্ড বিটল পোকা ডাল ও তেল জাতীয় ফসলে বৃদ্ধি করা যায়।
  • ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমনে প্রেইং ম্যানটিড এর সংখ্যা বাড়ানো যায়।
  • ডালিম ফলের চারদিকে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলে ডালিমকে পোকা আক্রমণ করতে পারে না।
  • জমিতে সুষম সার ব্যবহার করলে পোকামাকড় ও রোগজীবাণু অনেক কম হয়।
  • পোকার আশ্রয়স্থল হলো আগাছা। কাজেই জমি থেকে সবসময় আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • আলোর ফাঁদ পেতে পূর্ণ বয়স্ক পোকা মেরে ফেলা যায়।
  • হাতজাল ব্যবহার করে পোকা ধরে ফেলা যায়।
  • জমিতে গাছের ডাল বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে পাখি বসিয়ে পোকা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
  • ধান ক্ষেতে মাছের চাষ করা যায়।
  • ফসল সংগ্রহের পর নাড়া পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • কলম চারা ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুন ও টমেটোর ব্যাকটেরিয়াল উইন্ট রোগ দমন করা যায়।
  • ফেরোমোন ও মিষ্টি কুমড়ার ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে কুমড়া জাতীয় ফসলের মাছি পোকা দমন করা যায়।
  • মেহগনি ফল থেকে সংগৃহীত নির্যাস ও তেল ভেষজ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার ও প্রয়োগ করা হয়।
  • পরভোজী পোকা যেমন- নেকড়ে মাকড়সা, ঘাসফড়িং, ড্যামসেল মাছি, মিরিডবাগ ইত্যাদির সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
  • জমিতে ব্যাঙের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়।

(৩) রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের কুফল

ব্যাপকভাবে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের কারণে কৃষিতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি হয়।

কৃষিতে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের অসুবিধা বা ক্ষতিকর দিকগুলো হলো-

  • দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে শস্য ক্ষেতে বালাই বা কীটপতঙ্গ বালাইনাশককে বাধাদানের ক্ষমতা অর্জন করে। ফলে ঐ বালাইনাশক দিয়ে আর নির্দিষ্ট কীট বা বালাইকে ধ্বংস করা যায় না।
  • অধিকাংশ কীটনাশক প্রাকৃতিক শিকারি জীব ও মৃত্তিকার উপকারী অণুজীবগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে।
  • শস্য ক্ষেতে প্রয়োগকৃত কীটনাশক ও বালাইনাশকের খুব সামান্য অংশ (১% বা এর কাছাকাছি) কাঙ্ক্ষিত কীট বা বালাইয়ের কাছে পৌঁছাতে পারে।
  • প্রয়োগকৃত রাসায়নিক বালাইনাশকের একটি বড় অংশ বাতাসে, ভূপৃষ্ঠের পানিতে, ভূগর্ভস্থ পানিতে অনুপ্রবেশ করে এবং জীবের খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ে।
  • বালাইনাশক মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার মাধ্যমে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস করে।
  • রাসায়নিক বালাইনাশক জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে।
  • রাসায়নিক বালাইনাশক সার্বিকভাবে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts