ভুট্টা একটি অধিকতর ফলনশীল দানা শস্য। ভুট্টা গ্রামিণী গোত্রের ফসল। বৈজ্ঞানিক নাম Zea mays L. একই গাছে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল জন্মে। পুরুষ ফুল একটি মঞ্জুরী দন্দে বিন্যস্ত হয়ে গাছের মাথায় বের হয়। স্ত্রী ফুল গাছের মাঝামাঝি উচ্চতায় কান্ড ও পাতার অক্ষ-কোণ থেকে বের হয়।
ভুট্টার ফল মঞ্জুরীকে মোচা বলে। মোচার ভিতরে দানা সৃষ্টি হয়। ভুট্টার দানা ক্যারিওপসিস জাতীয় ফল। এতে ফলত্বক ও বীজত্বক একসাথে মিশে থাকে। তাই ফল ও বীজ আলাদা করে চিনা যায় না।
ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। কিউপিএম (QPM) ভুট্টার আমিষে প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড যথা ট্রিপটোফেন ও লাইসিন অধিক পরিমাণে আছে। এছাড়া হলদে রঙের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন থাকে।
ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
ভুট্টার জাত সংগ্রহ, সংকরায়ন ও বাছাইকরণের মাধ্যমে বিএআরআই বেশ কয়েকটি মুক্ত পরাগায়িত জাত এবং হাইব্রিড ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করেছে ও করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী ভুট্টা জাতের চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।
(১) হাইব্রিড ভুট্টার জাত
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০:
এই নন-কনভেনশনাল সিঙ্গেল ক্রস হাইব্রিড জাতটি আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র (CIMMYT) হতে সংগৃহীত ও বাছাইকৃত মুক্তপরাগায়িত জাত ও বারির নিজস্ব উদ্ভাবিত ইনব্রিড লাইনের সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশে এ জাতটি ২০০৯ সালে অবমুক্ত হয়।
- জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ১০০-১১০ দিন।
- গাছের উচ্চতা ১৮৫-২২৫ সেমি এবং মোচার উচ্চতা ৮৫-৯৭ সেমি (রবি মৌসুম)।
- মোচার প্রতি সারিতে বীজের সংখ্যা ৪২-৪৯টি।
- প্রতি মোচায় বীজের সংখ্যা ৭০০-৭৮০টি।
- জাতটির দানা আকর্ষণীয় হলুদ রঙের এবং ফ্লিন্ট প্রকৃতির।
- জাতটির ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ১০.০-১১.৫০ টন।
(২) হাইব্রিড ভুট্টার জাতের নাম
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১:
আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র (CIMMYT) হতে সংগৃহীত ও বাছাইকৃত মাতৃ-পিতৃ লাইনের একমুখী-সংকরায়ণের (Single cross) মাধ্যমে এই জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশে এ জাতটি ২০০৯ সালে অবমুক্ত হয়।
- জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৫০-১৫৫ দিন এবং সিল্ক আসার সময় ৯০-৯৫ দিন।
- উদ্ভাবিত এ জাতটি তুলনামূলকভাবে খাটো।
- গাছের গড় উচ্চতা ১৭০-২০৫ সেমি এবং মোচার উচ্চতা ৮০-৯৫ সেমি (রবি মৌসুমে)।
- প্রতি সারিতে বীজের সংখ্যা ৪২-৪৯ টি।
- দানাগুলো হলুদ রঙের ও ফ্লিন্ট প্রকৃতির।
- রবি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ফলন ১০.৫-১১.৫০ টন।
(৩) উচ্চফলনশীল ভূট্টার জাত
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২:
বাংলাদেশে খরা সহিষ্ণু এবং কম সেচে উৎপাদনক্ষম ভুট্টার কোনো জাত ছিল না। তাই খরা সহনশীল ভুট্টার জাত উদ্ভাবনের গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ স্বল্প সেচে উৎপাদনক্ষম এবং মধ্যমাত্রার খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল সাদা দানা বিশিষ্ট বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২ উদ্ভাবন করে।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২ সিঙ্গেল ক্রস পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত একটি জাত। আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র (CIMMYT), মেক্সিকো থেকে ২০০৭ সালে বেশ কিছু সাদা দানা বিশিষ্ট ইনব্রিড লাইন (কৌলিতাত্ত্বিকভাবে বিশুদ্ধ) সংগ্রহ করে নির্বাচিত কয়েকটি লাইনের মধ্যে সংকরায়ণ করা হয়। পরবর্তীতে আইএপিপি (IAPP) প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক বছরের মাঠ মূল্যায়ন ও ল্যাবরেটরীতে জৈব রসায়ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর P1×P4 ক্রসটি স্বল্প সেচে উৎপাদনক্ষম ও মধ্যমাত্রার খরাসহিষ্ণু হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
- খরা অবস্থায় একটি মাত্র সেচ প্রয়োগে (ফল আসার আগে) জাতটির ফলন ৮.১-৮.৫ টন/হেক্টর এবং স্বাভাবিক সেচ প্রয়োগে ফলন ১০.০-১১.১ টন/হেক্টর।
- রবি মৌসুমে জাতটির জীবনকাল ১৪০-১৪৫ দিন।
- জাতটির দানার রং সাদা এবং ফ্লিন্ট প্রকৃতির।
হাইব্রিডটি বেশ কয়েক বছর ধরে রাজশাহীর খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলসহ (High Barind Tract) দেশের বেশ কয়েক জায়গায় স্বাভাবিক সেচ প্রয়োগে এবং শুধুমাত্র একটি সেচে খরা সহিষ্ণু হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় জাত হিসেবে মুক্তায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয় এবং পরবর্তীতে জাতীয় বীজ বোর্ড ২০১৬ সালে এই ক্রসটি বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২ নামে অবমুক্ত করে।
(৪) খরা সহিষ্ণু ভালো ভুট্টার জাত
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩:
ভুট্টা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দানা ফসল যা বিশ্বব্যাপী মানুষ ও প্রাণিসম্পদের পুষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ভুট্টা এখন দেশে ব্যাপকভাবে গড়ে ওঠা হাঁস-মুরগির খামারে ও পশু খাদ্যে ব্যবহার হচ্ছে। এসবক্ষেত্রে হলুদ দানা বিশিষ্ট ভুট্টা ব্যবহার হচেছ। তবে সাদা ভুট্টা গমের আটার সাথে মিশিয়ে রুটি তৈরি করে খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী।
দেশে বেশিরভাগ ভুট্টাই রবি মৌসুমে সেচের মাধ্যমে আবাদ করা হয়ে থাকে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রাকৃতিকভাবেই দেশে পানির প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে। তাই ভুট্টা দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চল ও অন্যান্য খরাপ্রবণ এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার অভাবে এর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ খরা সহিষ্ণু বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩ জাতটি উদ্ভাবন করে, যা কেবলমাত্র একটি সেচেই (ফুল আসার আগে) অধিক ফলন দিতে সক্ষম।
- খরা অবস্থায় একটি মাত্র সেচ প্রয়োগে জাতটির ফলন ৮.২-৮.৯ টন/হেক্টর।
- জাতটির জীবনকাল ১৪৫-১৫২ দিন।
- মোচা পরিপক্ক হওয়ার পরও জাতটির গাছ ও পাতা সবুজ থাকে যা গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের উপযোগী।
- জাতটির দানার রং সাদা এবং ফ্লিন্ট প্রকৃতির।
উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় বরেন্দ্র অঞ্চলে এর চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে সেখানের মাটির নিচে পানির উপর চাপ কমবে এবং খরা সহনশীল হওয়ায় আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
(৫) তাপ সহনশীল ভুট্টার জাত
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪
ইউএসএইড (USAID) এর আর্থিক সহায়তায় এবং CIMMYT-India কর্তৃক পরিচালিত Heat Tolerant Maize for Asia (HTMA) প্রকল্পের আওতায় প্রাপ্ত তাপ সহিষ্ণু হাইব্রিড সমূহ হতে খরিফ-১ মৌসুমে বহুস্থানিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই জাতটি বাছাই করা হয় এবং পরবর্তীতে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৭ সালে বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪ নামে অবমুক্ত হয়।
জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিবর্তিত জলবায়ুগত পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ভুট্টার ফলন ঠিক রাখতে অধিক তাপ সহনশীল জাতের বিকল্প নেই।
- নতুন এই জাতটি খরিফ মৌসুমে ফুল আসার পর্যায়ে অধিক তাপ সহিষ্ণু (দিনের তাপমাত্রা >৩৫০ সে. এবং রাতের তাপমাত্রা >২৩০ সে.) এবং মধ্যম ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন।
- দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো আবহাওয়াতে এ জাতের গাছ সহজে হেলে ও ভেঙ্গে পড়ে না। জাতটি সাদা বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির।
- রবি ও খরিফ মৌসুমে জাতটির গড় উচ্চতা যথাক্রমে ১৮৪ সেমি ও ১৬০ সেমি যা বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত অন্যান্য প্রায় সব জাতের চেয়ে খাটো।
- জাতটিতে মোচা শক্তভাবে খোসা দ্বারা আবৃত থাকে বিধায় খরিফ মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম।
- জাতটি পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল।
- রবি ও খরিফ মৌসুমে পরিপক্ক হতে এ জাতের যথাক্রমে প্রায় ১৪০ দিন ও ১১৫ দিন সময় লাগে।
- জাতটির গড় ফলন রবি ও খরিফ মৌসুমে যথাক্রমে ১০.৮৪ টন/হেক্টর এবং ১০.৫২ টন/হেক্টর।
(৬) তাপ সহনশীল নতুন ভুট্টার জাত
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫:
ইউএসএইড (USAID) এর আর্থিক সহায়তায় এবং CIMMYT-India কর্তৃক পরিচালিত Heat Tolerant Maize for Asia (HTMA) প্রকল্পের আওতায় প্রাপ্ত তাপ সহিষ্ণু হাইব্রিড সমূহ হতে খরিফ-১ মৌসুমে বহুস্থানিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই জাতটি বাছাই করা হয় এবং পরবর্তীতে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৭ সালে বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫ নামে অবমুক্ত হয়।
জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিবর্তিত জলবায়ুগত পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ভুট্টার ফলন ঠিক রাখতে অধিক তাপ সহনশীল জাতের বিকল্প নেই।
- নতুন এই জাতটি খরিফ মৌসুমে ফুল আসার পর্যায়ে অধিক তাপ সহিষ্ণু (দিনের তাপমাত্রা> ৩৫০ সে. এবং রাতের তাপমাত্রা > ২৩০ সে.) এবং উচ্চ ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন।
- পরিপক্ক অবস্থায় গাছটির বেশির ভাগ পাতা সবুজ থাকে (Stay green) বিধায় গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার উপযোগী।
- জাতটির দানা হলুদ বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির।
- রবি ও খরিফ মৌসুমে জাতটির গড় উচ্চতা যথাক্রমে ২১৪ সেমি এবং ১৬৫ সেমি।
- জাতটিতে মোচা শক্তভাবে খোসা দ্বারা আবৃত থাকে বিধায় খরিফ মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে দানা নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম।
- জাতটি পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল।
- রবি ও খরিফ মৌসুমে পরিপক্ক হতে এ জাতটির যথাক্রমে প্রায় ১৪৮ দিন ও ১২১ দিন সময় লাগে।
- জাতটির গড় ফলন রবি ও খরিফ মৌসুমে যথাক্রমে ১২.৭৫ টন/হেক্টর এবং ১২.০৭ টন/হেক্টর।
(৭) ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৬:
বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৬ সিঙ্গেল ক্রস পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত একটি জাত। প্রথমে বাণিজ্যিক ভুট্টার জাত QY-11 এবং 900M থেকে স্ব-পরাগায়ন (সেলফিং) এর মাধ্যমে ইনব্রিড লাইন তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন লাইনগুলো সনাক্ত করে তাদের মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে তৈরিকৃত হাইব্রিডগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে বহুস্থানিক মাঠ মূল্যায়ন করা হয়।
সেখান থেকে মাঝারি উচ্চতা বিশিষ্ট উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিডটি বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী হিসেবে প্রতীয়মান হওয়ায় এবং পরবর্তীতে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধনের পর ২০১৮ সালে ‘বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৬’ নামে অবমুক্ত করা হয়।
- রবি মৌসুমে পরিপক্ক হতে ১৪০-১৪৫ দিন সময় লাগে।
- জাতটি সহজে হেলে ও ভেঙ্গে পড়েনা।
- গাছ মাঝারী উচ্চতা সম্পন্ন (১৮৬ সেমি) এবং মোচার উচ্চতা ৮৪ সেমি।
- রবি মৌসুমে জাতটির গড় ফলন ১১.৫৭ টন/হেক্টর।
- মোচা পরিপক্ক অবস্থায়ও গাছ ও পাতা সবুজ থাকে (Stay green)।
- মোচা অগ্রভাগ পর্যন্ত শক্তভাবে খোসা দ্বারা আবৃত থাকে এবং সকল মোচা গাছের একই উচ্চতায় থাকে।
- মোচার মাথায় সিল্কে মধ্যম মাত্রার এন্থোসায়ানিন বিদ্যমান।
- দানা হলুদ, সেমি-ডেন্ট প্রকৃতির এবং সম্পূর্ণ মোচা দানা দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে।
- জাতটি ৮-৯ ডিএস/মি. লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং এই পরিবেশে গড় ফলন ৭.০৬ টন/হেক্টর।
- জাতটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা-ক্যারোটিন বিদ্যমান (33.13 mg/kg)।
- দানা পুষ্ট ও বড়।
- হাজার দানার গড় ওজন ৪২২ গ্রাম এবং প্রতি মোচায় গড়ে ৬৩২ টি দানা থাকে।
- জাতটি পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল।
(৮) তাপ সহনশীল হাইব্রিড উন্নত ভুট্টার জাতের নাম
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৭:
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৭ জাতটি ইউএসএআইডি (USAID) এর আর্থিক সহায়তা এবং CIMMYT-India কর্তৃক পরিচালিত Heat Tolerant Maize for Asia (HTMA)
প্রকল্পের আওতায় প্রাপ্ত তাপ সহিষ্ণু হাইব্রিড সমূহ হতে রবি ও খরিফ-১ মৌসুমে বহুস্থানিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয় এবং পরবর্তীতে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৯ সালে বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৭ নামে অবমুক্ত করা হয়।
জাতটি সিঙ্গেল ক্রস হাইব্রিড।
জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ফলে ফসল উৎপাদন সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এরুপ পরিবর্তিত আবহাওয়ায় তাপ সহনশীল ও অধিক ফলনসমৃদ্ধ ভুট্টার জাতের বিকল্প নেই। এ ধরনের তাপ সহনশীল জাতের চাষাবাদ হলে তা অধিক খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
- নতুন এই জাতটি খরিফ মৌসুমে ফুল আসা পর্যায়ে অধিক তাপ সহিষ্ণু (দিনের তাপমাত্রা >৩৫০ সে. এবং রাতের তাপমাত্রা >২৩০ সে.)।
- রবি ও খরিফ মৌসুমে জাতটির গড় ফলন প্রতি হেক্টরে যথাক্রমে ১২.৪৪ টন ও ৯.৯১ টন এবং পরিপক্ক হতে যথাক্রমে ১৪৫ দিন ও ১১২ দিন সময় লাগে।
- জাতটির গড় উচ্চতা রবি ও খরিফ মৌসুমে যথাক্রমে ২২৪ সে.মি. ও ১৭৪ সে.মি.।
- দানা হলুদ বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির।
- মোচা শক্তভাবে খোসাদ্বারা আবৃত থাকে বিধায় খরিফ মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হবার সম্ভাবনা নেই।
- জাতটি পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল।
(৯) মিষ্টি ভুট্টার উন্নত জাতের নাম
বারি মিষ্টি ভুট্টা-১:
মিষ্টি ভুট্টা একটি বিশেষ ধরনের ভুট্টা যা সবজি হিসেবেও খাওয়া যায়। আবার মাছ, মাংস প্রভৃতি স্যুপের সাথে মিশিয়ে অথবা স্ন্যাক্সের উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। থাইল্যান্ড থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ সিনথেটিক জাতটি নির্বাচন করা হয় এবং বারি মিষ্টি ভুট্টা-১ নামে ২০০২ সালে অনুমোদিত হয়।
মিষ্টি ভুট্টা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। তাই দানা যখন অল্প নরম থাকে (Milk and dough stage) তখনই মোচা সংগ্রহ করতে হয়। সিল্ক বের হবার ২০-২৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ বপনের মাত্র ১১৫-১২০ দিনে খাওয়ার উপযোগী মোচা গাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়।
মিষ্টি ভ্ট্টুার দানাতে সবচেয়ে বেশি মিষ্টতা থাকে যখন খোসা ছাড়িয়ে সরাসরি কাঁচা অবস্থায় অথবা প্রক্রিয়াজাত বা হিমায়িত অবস্থায় খাওয়া হয়। তবে মাঠ থেকে সংগ্রহের পর পরই যদি দানা না খাওয়া যায় অথবা প্রক্রিয়াজাত বা হিমায়িত না করা হয় তবে মিষ্টি ভ্ট্টুার স্বাদ ও গুণাগুণ কমে যায়।
- কচি দানায় চিনির ভাগ গড়ে ১৮%।
- হলুদ দানা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “এ” (ক্যারোটিন) সমৃদ্ধ।
- জাতটি হেলে পড়া প্রতিরোধী এবং মোচার অগ্রভাগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ খোসা দ্বারা আবৃত থাকে।
- জাতটির ফলন প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ১০.০ থেকে ১০.৫ টন (খোসা ছাড়ানো কচি মোচা) এবং প্রায় ২৫ টন/হেক্টর সবুজ গো খাদ্য পাওয়া যায়।
[সূত্র: বিএআরআই]