(১) ভূমিক্ষয় কি/কাকে বলে?
ভূমিক্ষয় কাকে বলে: বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক কারণ যেমন- বায়ুপ্রবাহ, পানি প্রবাহ, বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য কারণে ভূমির উপরিভাগের উর্বর মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যাওয়াকে ভূমিক্ষয় বলে।
ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণ কি: ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণ হলো বৃষ্টিপাত।
প্রধানত বায়ু এবং পানির বিভিন্ন নিয়ামক দ্বারা এ ভূমিক্ষয় ঘটে।
কৃষি জমির উপরিভাগ থেকে ১৫-২০ সে.মি. গভীরতা পর্যন্ত উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বেশি পরিমাণে সঞ্চিত থাকে। ভূমিক্ষয়ের ফলে এ পুষ্টি উপদানের স্থানান্তর ঘটে, ফলে জমি অনুর্বর হয়ে পড়ে। ভূমিক্ষয়ের ফলে পুষ্টি উপাদানের স্থানান্তর ঘটে এবং জমি তার উর্বরতা হারায়। পর্যায়ক্রমে ফসলের ফলন হ্রাস পায়।
ভূমিক্ষয়ের ফলে অপেক্ষাকৃত ভারী কণাগুলি নদীর তলদেশে জমা হয়ে গভীরতা হ্রাস করে এবং ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
(২) ভূমিক্ষয় কত প্রকার? ভূমিক্ষয়ের প্রকারভেদ
ভূমিক্ষয়ের প্রকারভেদ: ভূমিক্ষয় প্রধানত দু’ভাগে হয়ে থাকে। যথা- ১। পানি দ্বারা ভূমিক্ষয় ও ২। বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয়।
ক) পানি দ্বারা ভূমিক্ষয়
পানির চলাচল অথবা দ্রুত পানি প্রবাহের ফলে যে ভূমিক্ষয় হয়ে থাকে তাকে পানি দ্বারা ভূমিক্ষয় বলে।
পানি দ্বারা ভূমিক্ষয় কত প্রকার: পানি দ্বারা ভূমিক্ষয় ভূমিক্ষয়কে আবার ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১। আস্তরণ বা পাত ভূমিক্ষয়; ২। রিল ভূমিক্ষয়; ৩। গালী ভূমিক্ষয়; ৪। নদীকূলের ভূমিক্ষয়; ও ৫। সাগরকূলের ভূমিক্ষয়।
i) আস্তরণ বা পাত ভূমিক্ষয়
আস্তরণ বা পাত ভূমিক্ষয় কাকে বলে: বৃষ্টিপাত বা সেচ কার্যের পর ভূমির পানি যখন চারদিকে সরে যেতে থাকে তখন উপরিভাগের মাটির ক্ষয় হয়। এ ক্ষয়ক্রিয়া খুব ধীরে ধীরে ঘটে বলে সহজে দেখা যায় না। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় মাটির উপরিভাগের অতি সারবস্তু অপসারিত হয় বলে মাটি ব্যাপকভাবে তার উর্বরতা শক্তি হারায়। এ জাতীয় ভূমিক্ষয়কে পাত ভূমিক্ষয় বা আস্তরণ ভূমিক্ষয় বলে।
সমতল ভূমির চেয়ে কিছুটা ঢালু জমিতে এরূপ ভূমিক্ষয় অধিক পরিমাণে সংঘটিত হয়ে থাকে।
ii) রিল ভূমিক্ষয়
রিল ভূমিক্ষয় কি: মাটির উপরের স্তর ক্রমাগতভাবে ক্ষয় হতে থাকলে কিছু দিন পর জমির উপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক নালার সৃষ্টি হয়। এসব সরু নালা চলাচলের বেগে ধীরে ধীরে দৈর্ঘ্য, প্রস্ত ও গভীরতায় বড় হয়ে প্রশস্ত নালার সৃষ্টি করে। মাটির এ ধরণের ক্ষয়কে বলা হয় রিল ভূমিক্ষয়। একে পাত ভূমিক্ষয়ের দ্বিতীয় পর্যায় বলা যেতে পারে।
iii) গালী ভূমিক্ষয়
রিল ভূমিক্ষয় অবাধে চলতে থাকলে ছোট ছোট নালাগুলি প্রতি বছর ক্ষয়ে ক্ষয়ে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বৃদ্ধি পেয়ে বড় বড় নালার সৃষ্টি করতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় ভূমিক্ষয়কে গালী ভূমিক্ষয় বলে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অধিক হলে কয়েকবছরের মধ্যে এরূপ অনেক নালার সৃষ্টি হয়ে ফসলী জমি আবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
iv) নদীকূলের ভূমিক্ষয়
নদীকূল ভূমিক্ষয় কাকে বলে: প্রবল স্রোতের বেগ, ঢেউ বা জলোচ্ছাসের কারণে নদীর পাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ও ভেঙ্গে যায়। নদীতে জোয়ার শুরু ও শেষ হবার সময় এমন ভাঙ্গনের গতি বৃদ্ধি পায়। এ ধরণের ভূমিক্ষয়কে নদীকূল ভূমিক্ষয় বলে।
নদী ভূমিক্ষয় দু’ভাবে হতে পারে। যথা-
১। নালা বা খালের পথে নদীর ধারা বেগে বয়ে এসে নদীতে পড়ে তখন এসব পানি পথের সাথে নদীর মিলনস্থান পানির প্রবল বেগ সইতে না পেরে কিছুদুর পর্যন্ত দু’পাড়ে ভেঙ্গে পড়ে।
২। নদীর পাড় নিজ হতেই ভেঙ্গে পড়ে, এ অবস্থা নদীর বাঁধের মুখেই সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়।
v) সাগরকূলের ভূমিক্ষয়
সাগরকূলের ভূমিক্ষয় কি: সাগরের উপকূলভাগ জলোচ্ছাস ও ঢেউ এর ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। সমুদ্রের উপকূলীয় দ্বীপসমূহে এরূপ ভূমিক্ষয় হতে দেয়া যায়।
খ) বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয়
বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয় কাকে বলে: বায়ুর প্রভাবে জমির মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যাওয়াকে বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয় বলে। উন্মুক্ত স্থান বা অল্পসংখ্যক বৃক্ষপূর্ণ স্থানে বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয় অধিকহারে পরিলক্ষিত হয়।
মরু অঞ্চলের ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণ হলো বায়ু প্রবাহ। এ সমস্ত স্থানে জমির উপরিভাগের মাটি বায়ু প্রবাহ দ্বারা একস্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। ধুলিময় অথবা বেলে প্রকৃতির মাটি বায়ু প্রবাহ দ্বারা অধিকহারে ক্ষয় হতে থাকে। এ ছাড়া চাষাবাদের পর মাটি চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে মিহি হলে বায়ু প্রবাহ দ্বারা ভূমিক্ষয় হতে পারে।
(৩) ভূমিক্ষয়ের ফলাফল/কুফল
আমরা জানি, বিভিন্ন কারণে ভূমির উপরিভাগের উর্বর মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যাওয়াকে ভূমিক্ষয় বলে।
ভূমিক্ষয়ের ফলাফল বা কুফল হলো-
- ভূমিক্ষয়ের ফলে জমির উপরিভাগের উর্বর ও নরম মাটি অপসারিত হয়ে থাকে। কৃষি জমির উপরিভাগের সাধারণত ১৫- ২০ সে.মি গভীরতা পর্যন্ত মাটিতে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মজুদ থাকে। ভূমিক্ষয়ের ফলে জমির এ স্তরের মাটি পুষ্টিসহ অন্যত্র অপসারিত হয়, ফলে জমি ধীরে ধীরে তার উর্বরতা হারায় এবং পর্যায়ক্রমে ফলন হ্রাস পায়।
- ভূমিক্ষয়ের ফলে পানিবাহিত মাটির অপেক্ষাকৃত ভারী কণাগুলো তলদেশে জমা হয়ে নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট হয়ে যায়। ফলে বর্ষাকালে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায় এবং শুষ্ক মৌসুমে নৌ-চলাচল, মৎস চাষ ও কৃষিকাজে অসুবিধা দেখা দেয়।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]