(১) ভেড়া পালন
- ভেড়া একটি নিরীহ প্রাণী। এরা চারণ ঘাস খেতে খুব পছন্দ করে এবং দলগতভাবে ঘুরে বেড়ায়।
- এদের প্রজনন ক্ষমতা বেশি, ১৫ মাসে ২ বার বাচ্চা দেয়। তাই ভেড়া পালন শুরু করলে কয়েক বছরের মধ্যে খামারের আকার বড় হয়ে উঠে এবং ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায়।
- এরা শুধু ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। তবে কিছু দানাদার খাদ্য সরবরাহ করলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়।
- ভেড়া পশম (Wool) ও মাংসের জন্য পালন করা হয়। বাংলাদেশে ভেড়ার তেমন কোনো ভালো জাত নেই।
- বাংলাদেশের ভেড়া মোটা পশম উৎপাদন করে। তাই এরা পশমের জন্য জনপ্রিয় নয়। এখানে ভেড়া মাংসের জন্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে। তবে পৃথিবীর শীতপ্রধান দেশগুলোতে ভেড়ার পশম খুব মূল্যবান ও জনপ্রিয়।
- ভেড়ার পশম দিয়ে কম্বল, শাল, সোয়েটার, জ্যাকেট তৈরি করা হয়। মোটা পশম কার্পেট তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। ভেড়ার এত গুণাগুণ থাকলেও চারণভূমি ও উদ্যোগের অভাবে বাংলাদেশে এর পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
(২) ভেড়ার বাসস্থান
ভেড়ার বাসস্থান তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ এরা খাবারের জন্য সারাদিন মাঠে ঘুরে বেড়ায়। তবুও নিম্ন লিখিত কারণে এদের বাসস্থান প্রয়োজন হয়।
- রাতের বেলায় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য
- বন্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য
- ঝড় ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য
- বেশি উৎপাদনক্ষম ভেড়ার দুগ্ধ দোহন করার জন্য
- গর্ভবতী, প্রসূতি ও বাচ্চা ভেড়ার পরিচর্যার জন্য
- ভেড়ার পশম কাটার জন্য
- চোরের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য
ভেড়া পালনের জন্য তিন ধরনের ঘর ব্যবহার করা হয়। যথা-
- উন্মুক্ত
- আধা উন্মুক্ত
- আবদ্ধ ঘর
আবহাওয়া ও জলবায়ুর কথা চিন্তা করে রাতে আশ্রয়ের জন্য ভেড়ার ঘর তৈরি করা হয়। ভেড়ার ঘরের মেঝে ভূমি সমতলে বা মাচার তৈরি হয়ে থাকে।
ক) উন্মুক্ত ঘর
যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয় সেখানে এ ধরনের ঘর উপযোগী। একটি নির্দিষ্ট জায়গার চারদিকে বেড়া দিয়ে উন্মুক্ত ঘর তৈরি করা হয়। এধরনের ঘরে কোনো ছাদ থাকে না। সারাদিন চরে খাওয়ার পর রাতে ভেড়ার পাল এখানে আশ্রয় নেয়। এখানে মেঝেতে খড় ব্যবহার করা হয়।
খ) আধা উন্মুক্ত ঘর
উন্মুক্ত ঘরের নির্দিষ্ট স্থানের এক কোণে কিছু জায়গা যখন ছাদসহ তৈরি করা হয় তখন তাকে আধা উন্মুক্ত ঘর বলে। যেসব এলাকায় মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হয় সেখানে আধা উন্মুক্ত ঘর ব্যবহার করা যেতে পারে।
গ) আবদ্ধ ঘর
যেসব অঞ্চলে প্রচুর ঝড়বৃষ্টি হয়, সেখানে এ ঘর বেশি উপযোগী। আবদ্ধ ঘরের পুরো অংশেই ছাদ থাকে। ঘরের পাশ দিয়ে প্রচুর আলো বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা থাকে। আবদ্ধ ঘরের মেঝে পাকা ও আধা পাকা হয়ে থাকে।
বয়স্ক ভেড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাপ:
মাচার মেঝে | ভূমিসমতলে খড়ের মেঝে |
০.৪৫ – ০.৫৫ বর্গমিটার | ০.৬৫ – ০.৯৫ বর্গমিটার |
(৩) ভেড়ার পরিচর্যা
- ভেড়াকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখার জন্য এবং এদের থেকে বেশি উৎপাদন পেতে হলে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে।
- নিয়মিত ব্রাশ দিয়ে ভেড়ার পশম পরিষ্কার করতে হবে। এতে পশমের ময়লা বেরিয়ে আসবে।
- ভেড়ার দেহে মাঝে মধ্যে বহিঃপরজীবীনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
- ভেড়ার পশম কাটার পূর্বে গোসল করাতে হবে।
(৪) ভেড়ার খাদ্য তালিকা
- ভেড়া যে কোনো ধরনের খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এটি গরু, মহিষ ও ছাগলের মতোই জাবরকাটা প্রাণী।
- ভেড়ার খাদ্যের শ্রেণিবিন্যাস গরু ছাগলের মতোই। এদের রেশনে আঁশযুক্ত খাদ্যের পরিমাণ দানাদার খাদ্যের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
- গর্ভবতী ভেড়ির তুলনায় প্রসূতির খাদ্য তালিকায় অধিক পরিমাণে দানাদার খাদ্য প্রদান করা হয়। বাচ্চা প্রসবের একমাস পূর্ব থেকে ভেড়ির খাদ্য তালিকায় দৈনিক ২০০-২৫০ গ্রাম হারে দানাদার খাদ্য যোগ করতে হয়।
- একটি বয়স্ক ভেড়ার দৈনিক ২.০-২.৫. কেজি সবুজ ঘাস এবং ২৫০-৩০০ গ্রাম দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
ক) মাংস উৎপাদনকারী ভেড়ার খাদ্য তালিকা
উপাদান | পরিমাণ (%) |
ভুট্টার গুঁড়া | ৪০ |
চিটা গুড় | ৫ |
গমের ভুসি | ১০ |
খৈল | ১ |
শুকানো লিগিউম ঘাস | ৩৬ |
মোট | ১০০ |
খ) গর্ভবতী ভেড়ির খাদ্য তালিকা
উপাদান | পরিমাণ (%) |
ভুট্টার গুঁড়া | ৪৫ |
খৈল | ১০ |
চিটা গুড় | ৫ |
ভুট্টার সাইলেজ | ২০ |
শুকানো লিগিউম ঘাস | ২০ |
গ) প্রসূতি ভেড়ির খাদ্য তালিকা
উপাদান | পরিমান % |
ভালো মানের শুকানো লিগিউম ঘাস | ৮০ |
ভুট্টার গুঁড়া | ১৩ |
খৈল | ৪ |
গমের ভুসি | ৩ |
(৫) ভেড়ার যত্ন, রোগব্যাধি প্রতিরোধ ও দমন
- নবজাত মেষ শাবককে জন্মের পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত ওজন অনুপাতে শালদুধ পান করাতে হয়। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে।
- ভেড়াকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে।
- সকল বয়সের ভেড়াকে নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে ও সময়মতো টিকা প্রদান করতে হবে।
- ভেড়া বাদলা, তড়কা, ম্যাস্টাইটিস, খুরা রোগ, চর্মরোগ, কৃমি, বহিঃপরজীবী ইত্যাদিতে বেশি আক্রান্ত হয়।
- রোগাক্রান্ত ভেড়াকে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।
[সূত্র: এনসিটিবি]