Skip to content

 

মরিচের জাত কি কি? মরিচের জাতের নাম পরিচিতি ও মরিচ গাছের বৈশিষ্ট্য (বারোমাসী + শীতকালীন + উন্নত/উচ্চ ফলনশীল জাত)

মরিচের জাত কি কি নাম পরিচিতি ও গাছের বৈশিষ্ট্য (বারোমাসী + শীতকালীন + উন্নতউচ্চ ফলনশীল জাত)

মরিচ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আমাদের বাংলাদেশে মূলত মরিচ মসলা ফসল হিসেবে পরিচিত। কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

পুষ্টিমানে কাঁচা মরিচ ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ। দৈনন্দিন রান্নায় রং, রুচি ও স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য মরিচ একটি অপরিহার্য উপাদান।

আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত মরিচ ছাড়া কোন তরকারি রান্না চিন্তা করা হয় না। এছাড়া বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য মরিচের সসের অনেক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া এর ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে।

(১) মরিচের জাত কি কি?

উন্নত জাত সমূহের মাঝে রয়েছে বারি মরিচ-১, বারি মরিচ-২, বারি মরিচ-৩ ও বারি মরিচ-৪ ইত্যাদি।

নিম্নে এই উন্নত জাতের মরিচসমূহের নাম পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

এছাড়া দেশের স্থানীয় মরিচের জাতগুলোর মধ্যে শেরপুরের বালুঝরি, মানিকগঞ্জের বিন্দু, কুমিলার ইরি মরিচ, মিঠা মরিচ, বালুঝুরি, নরসিংদীর বাওয়া, বালিঝুরি মরিচ, পাবনার হলেন্দার, বিন্দু মরিচ, কুষ্টিয়ার গোলমরিচ, আলমডাঙ্গা মরিচ, মাগুরার টেঙ্গাখালি, জামালপুরি, মাঠউবদা (মোটা জাত, কালোজাত, সাদা জাত) মরিচ, বগুড়ার তরনি, নয় মাইল, ঝালশুকা এবং বগুড়া দীঘলা উল্লেখযোগ্য।

(২) মরিচের জাতের নাম পরিচিতি ও উক্ত মরিচ গাছের বৈশিষ্ট্য

ক) বারি মরিচ-১

মরিচের এ জাতটি ২০০১ সালে অবমুক্ত হয়।

বারি মরিচ-১
বারি মরিচ-১
  • জাতটির গাছ খাটো, ঝোপালো, উচ্চতা ৩০-৩৫ সেমি এবং পার্শ্ব বিস্তৃতিতে ৫৫-৬০ সেমি।
  • প্রতি গাছে ৪০০-৫০০টি মরিচ ধরে।
  • মরিচের ত্বক পুরু।
  • গাছপ্রতি ৭০০-৭৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ পাওয়া যায়।
  • কাঁচা এবং পাকা মরিচের ঝাল সহনীয়।
  • জাতটি সারা বছর চাষোপযোগী।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১০-১২ টন কাঁচা মরিচ এবং ২.৫-৩ টন শুকনা মরিচ।
See also  মরিচের উন্নত/উচ্চ ফলনশীল জাত বারি মরিচ-৪ চাষ পদ্ধতি ও মরিচ গাছের পরিচর্যা

খ) বারোমাসী মরিচের জাত: বারি মরিচ-২

বাংলাদেশে রবি ও খরিফ-১ মৌসুমে মরিচ সহজলভ্য হলেও খরিফ-২ (জুলাই-অক্টোবর) মৌসুমে বাজারে মরিচের স্বল্পতা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাই এই সময়ে মরিচের দাম বেশি থাকে।

বর্ষা ও শীত মৌসুমের পূর্বে এই সময়টিতে মরিচের উৎপাদন অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীগণের নিরলস প্রচেষ্টায় ৭টি মরিচের জার্মপ্লাজম পাতা পেঁয়াজের কুশি (বামে) ও মাঠে বীজ উৎপাদন (ডানে) কেন্দ্রের গবেষণা মাঠে ৫-৬ বছর যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে C0445 জার্মপ্লাজমটি নির্বাচন করা হয় এবং মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপকেন্দ্রে দুই বছর পরীক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। পরবর্তীতে এটি বারি মরিচ-২ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৩ সালে মুক্তায়িত হয়। জাতটি দেশে কাঁচা মরিচের মোট উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

বারি মরিচ-২
বারি মরিচ-২
  • এটি একটি গ্রীষ্মকালীন জাতের মরিচ।
  • গাছ লম্বা ও ঝোপালো।
  • উচ্চতা ৮০-১১০ সেমি, গাছের পাতার রং হালকা সবুজ।
  • গাছে প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৭টি, প্রতি গাছে মরিচের সংখ্যা গড়ে ৪৫০-৫০০টি (গড়ে ওজন ১১০০ গ্রাম)।
  • প্রতিটি মরিচের ফলের দৈর্ঘ্য ৭.০-৭.৫ ও প্রস্থ ০.৭-১.০ সেমি, ওজন গড়ে ২.৫ গ্রাম।
  • জাতটির ১০০০ বীজের ওজন প্রায় ৪.৫ গ্রাম।
  • এই জাতের মরিচের ত্বক পুরু।
  • কাঁচা অবস্থায় মরিচের রং হালকা সবুজ এবং পাকা অবস্থায় লাল রঙের হয়ে থাকে।
  • কাঁচা মরিচ সংগ্রহের পর ৫-৭ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যবহার উপযোগী থাকে।
  • এ জাতের মরিচের জীবনকাল প্র্রায় ২৪০ দিন (মার্চ-অক্টোবর)।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ২০-২২ টন (সবুজ অবস্থায়)।

গ) শীতকালীন মরিচের জাত: বারি মরিচ-৩

বারি মরিচ-৩
বারি মরিচ-৩
  • গাছ লম্বা, ঝোপালো ও প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হয়।
  • শীতকালে চাষ করা যায়।
  • গাছের উচ্চতা ৭০-৮০ সেমি।
  • প্রতি গাছে গড়ে পাকা মরিচের সংখ্যা ৬০-৭০টি এবং গড় ফলন ১৮০-২০০ গ্রাম।
  • মরিচের রং হালকা সবুজ।
  • ১,০০০ বীজের ওজন ৪-৪.৫ গ্রাম।
  • জীবনকাল ১৮০-২১০ দিন।
  • ফলন ৮-১০ টন/হে. (পাকা মরিচ) ও বীজের ওজন ৪০০-৫০০ কেজি/হেক্টর।
See also  মরিচ চাষ পদ্ধতি, মরিচ গাছে সার দেওয়ার নিয়ম, মরিচ গাছের পরিচর্যা এবং টবে মরিচ চাষ পদ্ধতি

ঘ) মরিচের উন্নত/উচ্চ ফলনশীল জাত: বারি মরিচ-৪

মরিচের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীগন মরিচের বেশ কয়েকটি লাইনের উপর গবেষণা চালিয়ে ‘বারি মরিচ-৪’ নামে মরিচের উচ্চ ফলন শীল শীতকালীন জাত উদ্ভাবন করেছে যা চরাঞ্চলসহ কম বেশী সারা দেশে চাষ করা সম্ভব। জাতটি বাংলাদেশ থেকে প্রবর্তিত এবং মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়ার গবেষণা মাঠে C0677 নামে লাইনটি যাচাই করা হয়।

পরবতীতে বগুড়া, গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহ চর অঞ্চলে এর ফলন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট যেমন রোগবালাই, পোকামাকড়ের আক্রমন ইত্যাদি যাচাই করা হয়। উচ্চ ফলনশীল ও আপেক্ষাকৃত কমরোগ ও পোকার আক্রমন হওয়ায় লাইনটি (C0677) বারি মরিচ -৪ জাত হিসেবে ২০১৮ সালে অবমুক্ত হয় করা হয়। জাতটির বৈশিষ্ট ও উৎপাদন প্রযুক্তি নিম্নে বর্ননা করা হলো।

বারি মরিচ-৪
বারি মরিচ-৪
  • গাছ লম্বা, ঝোপালো ও প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ঠ।
  • গাছ লম্বায় ৮০-১০০ সেমি এবং পাতার রং সবুজ।
  • প্রতিটি মরিচের ফলের দৈর্ঘ্য ১০.০-১২.০ সেমি, ওজন গড়ে ১.৮-২.০ গ্রাম।
  • ১০০০ বীজের ওজন ৪.৫-৫.০ গ্রাম।
  • প্রতি গাছে মরিচের সংখ্যা ৪৮০-৫২০ টি এবং ওজন ১২০০-১৪০০ গ্রাম।
  • এই জাতের গাছের মরিচের ত্বক পাতলা।
  • এটি শীতকালে চাষ উপযোগী জাত।
  • এই জাতটি মাঠে ১৪০-১৫০ দিন পর্যন্ত (নভেম্বর- মার্চ) থাকে।
  • তুলনামুলকভাবে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়।
  • কচি অবস্থায় ফল সবুজ রঙের এবং পাকা অবস্থায় চকচকে লাল রঙের হয়।
  • হেক্টর প্রতি সবুজ অবস্থায় ফলন ১৮-২০ টন (কাচা মরিচ), ৪.৫-৫.০ টন (শুকনা মরিচ)।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page